#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব: ৫৩
রাতে লিভিং রুমে সোফায় শুয়ে থেকে টিভিতে টম অ্যান্ড জেরী দেখছি।অ্যান্টি আর খালা কিচেনে রান্না করছে।অ্যাঙ্কেল আমার পাশে বসে থেকে খুব মনোযোগের সাথে কি সব পেপার দেখছেন।কিছুটা দূরে জাফর চাচা ডগি দুটোকে খাওয়াচ্ছে।দরজার দিক থেকে নির্ভীক ভাইয়ার আওয়াজ পেতেই আমি মুখ ফোলালাম।এতক্ষণে আসার সময় হলো উনার।কিন্তু উনার উপর রাগ পুষে রাখতে রাখতে সেগুলো গলে পানি হয়ে গেছে।এখন আর রাগ নেই কিন্তু রাগ তো দেখাতেই হবে নাহলে উনি আবার সকালের মতো অসভ্যতামি করতে পারেন।
উনার সাথে কথা বলবো না দেখে ঘুমের ভঙ ধরলাম।উনি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে অ্যাঙ্কেলকে বললেন,
নির্ভীক:প্রবাল ভাইয়া আসছে,তুমি ডেকেছো?
অ্যাঙ্কেল:হ্যা একটু দরকার আছে।
নির্ভীক:এটা তো এখানেই ঘুমিয়ে গেছে।অন্ত?অন্ত?রুমে চলো।এখানে লোক আসবে, অন্ত?(আমার গাল ধরে)
আমি বিরক্ত হয়ে উল্টো দিকে ঘুরলাম আর ভাবলাম কোন লোক আসবে আসুক আমি উঠবোনা এখান থেকে কিন্তু একি উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি ঘুৃম ভাঙার ভান করে উনার দিকে রেগে তাকালাম। উনি মুচকি হেসে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,
নির্ভীক:ইশ!কি কিউট বউ আমার!
বলেই আমার গালে কিস করলেন।আমি রেগে হাতপা ছুড়তে লাগলাম।উনি আমাকে রুমে এনে নামিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আজকে আর নিচে যাবানা আর এখন ঘুম যখন ভেঙ্গেই গিয়েছে পড়ো বসে থেকে।তুৃমি কিন্তু ঠিক ঠাক পড়াশুনা করছো না।(শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে)
আমি কিছু বললাম না।রাগী মুখ করে বই খাতা নিয়ে বসলাম।আড় চোখে দেখলাম উনি টিশার্ট পরে টেবিলে গিয়ে বসলেন।আমি আজাইরা জোরে জোরে বই এর পাতা উল্টাতে থাকলাম।হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো,তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করলাম না।আবার কল আসতেই নির্ভীক ভাইয়া এদিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কে ফোন করছে?(ভ্রু কুচকে)
আমি উনাকে কিছু না বলে রাগী ফেইস করে কল রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ছেলে কন্ঠ পেলাম,
ওপাশ:অন্ত?
আমি:জি আপনি কে?(ভ্রু কুচকে)
ওপাশ:অন্ত আই আম সরি।আমার জন্য তোমার হাত কেটেছে।আই আম রিয়েলি সরি। আসলে তোমাকে দেখায় এতই ব্যস্ত ছিলাম যে খেয়ালি করিনি আমি তোমাকে আঘাত দিয়ে ফেলেছি।
আমি:কিন্তু আপনি কে?আর আমার হাত কাটলেন কেন?(রেগে)
নির্ভীক ভাইয়া ছো মেরে আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলেন।চোখমুখ শক্ত করে লোকটার কথা শুনে যাচ্ছেন।আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা তাই চিন্তিত হয়ে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।একটু পর উনি রেগে বললেন,
নির্ভীক:ওই কে তুই?শেষ করে দিবো তোকে,চোখ তুলে নিবো তোর।(রেগে চিল্লিয়ে)
আমি উঠে দাঁড়ালাম।ফোনের ছেলেটা হয়তো কল কেটে দিয়েছে তাই উনি ফোন কান থেকে সরিয়ে নিজের ফোনে নাম্বারটা নিয়ে আবার ফোন দিলেন কিন্তু কল ঢুকলো না।উনি তো রেগে ফ্যায়ার হয়ে গেলেন,ছেলেটা কি এমন বলল উনাকে যে এত রেগে যেতে হবে।ফোন রেখে উনি আমার হাত টানে কাটা জায়গা দেখতে লাগলেন।দুদিনে ব্যাথা অনেকটা কমে এসেছে কিন্তু উনি ক্ষতটা হাত দিয়ে ফাক করার চেষ্টা করছেন যার জন্য ব্যাথা লাগছে।আমি এক ঝটকায় উনার থেকে হাত নিয়ে বললাম,
আমি:কি করছেন?লোকটা কি বলছিল?(ভ্রু কুচকে)
উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসলেন।আমাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে উনি আমার পাশে বসলেন।এন্টিসেপ্টিকের বোতলের মধ্যে কটন বাড ঢুকিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ওটা দিয়ে আমার ক্ষতের ভেতরের দিকে পরিষ্কার করতে লাগলেন।
আমি:উফ্ লাগছে।এটা আর পরিষ্কার করতে হবে না।ইন্জেকশন তো দিয়েছি ইনফেকশন হবেনা ছাড়ুন।(চোখ মুখ কুচকে)
নির্ভীক:আর একটু প্লিজ,এখানে ময়লা থাকতে পারে।(পরিষ্কার করতে করতে)
আমি:দুদিনে ভালই হয়ে গিয়েছিল শুধু শুধু আপনি আবার খারাপ করে দিলেন।আহহহ্……কি করছেন….আআআ লাগছে তো, লাগছে ছাড়ুন..উফ্।(চিৎকার করে)
উনি আমার হাতের ছোট খাটো একটা অপারেশন করলেন।একদম চেঁছে পরিষ্কার করা যাকে বলে সেটা করলেন।এখন রক্ত বের হচ্ছে,কাঁটার সময়ও এত রক্ত বের হয়নি।উনি হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে একটা দম ছেড়ে বললেন,
নির্ভীক:উফ্ মাথা ঘুরছে আমার।
আমি ভেজা চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
নির্ভীক:খুব কষ্ট হয়েছে না তোমার?একদম ভাল করে পরিষ্কার করে দিয়েছি একটুও জীবানু নেই।কিছু হবেনা।
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে কিস করে ফোন নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলেন।আমি ভ্রু কুচকে বেলকুনির দরজার দিকে তাকিয়ে তাকলাম।একটু পরই উনার কথা শুনতে পেলাম,
নির্ভীক:হ্যালো পলাশ ভাই?…..এই তো আলহামদুলিল্লাহ,তুৃমি?শোন আমাকে একটু হেল্প করতে হবে।রাবির জুয়োলজি ডিপার্টমেন্ট,টুউসডে ১২:০০-০২:০০ কোন লেভেল কোন সেমিস্টারের ল্যাব হয়েছে আমাকে জানাতে পারবা?আর একটা ছেলেকে খুঁজতে হবে।হ্যা হ্যা। তুমি তাহলে রানা ভাইকে একবার বলে দিও আমি কাল যেয়ে কথা বলবো।আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না।উনি রুমে এসে আমাকে বললেন,
নির্ভীক:আমি খাবার নিয়ে আসছি,তুমি কিন্তু নিচে যাবা না।খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।(দরজার দিকে যেতে যেতে)
দশ মিনিটেও উনার কোন পাত্তা নেই।তাই আমি পরতে বসলাম কিন্তু একটু পরই অ্যান্টি রুমে এসে বলল,
অ্যান্টি:অন্ত?নিচে চল,তোদের খালু মানে প্রবালের বাবা আর প্রবাল এসেছে।দেখা করবি চল।(আমার দিকে এগিয়ে এসে।)
আমি উঠে দাঁড়ালাম।অ্যান্টি আমার গলায় ঝুলানো পাতলা ওড়নাটা রেখে দিয়ে আলমারি থেকে আমার গোলাপি কুর্তির সাথে ম্যাচিং করে একটা গোলাপি রঙের জর্জেটের মতো পাকিস্তানি ওড়না মাথায় দিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে নিচে আসলো।নিচে এসে দেখি সবাই সোফায় বসে কথা বলছে।আমি অ্যাঙ্কেলকে সালাম দিয়ে কথা বললাম,প্রবাল ভাইয়ার সাথেও কথা বললাম।প্রবাল ভাইয়া বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে, হাতে কি হয়েছে এসব বলছে আর এদিকে নির্ভীক ভাইয়া প্রবাল ভাইয়ার পাশে বসে থেকে রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।অ্যান্টিকে বলে আমি উপরে আসবো কিন্তু কেউ আসতে দিল না।একবারে ডিনার সেরে নির্ভীক ভাইয়ার সাথে রুমে আসলাম।রুমে আসতেই উনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,
নির্ভীক:কেন গিয়েছিলা নিচে?বারণ করেছিলাম না।(চোখ মুখ শক্ত করে)
আমি:আমি আমি,অ্যান্টি নিলে গেল সেজন্য।(ভয় পেয়ে)
নির্ভীক:অ্যান্টি বললেই যেতে হবে?আর এই ওড়না দিয়ে এভাবে বউ সেজে যেতে হবে?প্রবাল ভাইয়া কিভাবে বার বার হা করে তাকাচ্ছিল!(রেগে ধমক দিয়ে)
বলেই উনি দেয়ালে একটা পান্চ মারলেন।ভয়ে আমার ভেতরটা চুপসে গিয়েছে।উনি আমার দুই গাল ধরে বললেন,
নির্ভীক:ভাল করে শুনে রাখো,আজকের পর আমার নিষেধ করা কাজ তুমি আর করবা না।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু বললাম না।উনার ধমক খেয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে।উনি আমার কপালে কিস করে আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি বেলকুনিতে চলে গেলাম।কোথায় আমার উনাকে রাগ দেখানোর কথাছিল আর উল্টো উনিই বার বার আমাকে রাগ দেখাচ্ছেন।অনেকক্ষণ বেলকুনিতে একা একা বসে থেকে রুমে আসলাম।এসে দেখি উনি একটা মোটা বই নিয়ে স্টাডি করছেন।আমি চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পরলাম।উনি ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আজকে ঘুমাও কাল থেকে পুরো দমে পড়াশুনা শুরু করবা।
আমি কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে মনে মনে উনার কথা গুলো ভেংচি কেটে রিপিট করে মরার মতো শুয়ে থাকলাম।উনি তো আজ সারারাত স্টাডি করবেন।কাল ফ্রাইডে তাই পুরো সকাল ঘুমোবেন। সপ্তাহে এই একদিন পুরো বেড আমার,একা একা শান্তি মতো ঘুমাই আমি।আহ্ কি শান্তু!!
চলবে……….!