ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৫৪

0
1743

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৫৪

ফোনের রিংটনে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঘুমের জন্য চোখ খুলতে ইচ্ছে করছেনা আর তাছাড়াও আমার ফোন নয় নির্ভীক ভাইয়ার ফোন বাজছে তাই উঠার কোন মানেই হয়না কিন্তু কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে ঘুমটা ভেঙেই গেল।বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখি আমি বেড থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে উপুর হয়ে শুয়ে আছি।মাথা তুলে তাকাতেই আমি শকড কারন আমি নির্ভীক ভাইয়ার উপরে শুয়ে আছি।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।আমি তড়িঘড়ি করে উঠে নিচে নামবো তখনি উনি আমার হাত ধরে আটকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:ওপাশ দিয়ে যেওয়া না।ফোন নিতে গিয়ে হাত লেগে গ্লাস পরে ভেঙে গেছে।ভাঙা কাচ আছে ওখানে।(ঘুম ঘুম কন্ঠে)

আমি নিচে তাকিয়ে দেখি গ্লাস টা ভেঙ্গে গেছে আর গ্লাসের পানি দিয়ে আমার টেডিটা ভিজে গেছে।

আমি:ওহ এটা নিচে পরেছে কখন,ভিজে গেছে।(বেডের উপর থেকেই টেডিটা হাতে নিয়ে)

তখনই উনার ফোন আবার বেজে উঠলো। উনি উঠে বসে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে বললেন,
নির্ভীক:আরাফ ভাইয়া,হোয়াটস্ আপ?(ভ্রু কুচকে)
আরাফ:…………..
নির্ভীক:হুম উঠেছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আরাফ:………..
নির্ভীক:নো প্রবলেম,তোমার যখন ইচ্ছে ফোন দিবা। দাঁড়াও দিচ্ছি ওকে।

উনি আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে ইশারায় আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বললেন।আমি মাথা আর হাত নাড়িয়ে ইশারায় না করলাম যার অর্থ আমি কথা বলবোনা তাও উনি জোর করে আমাকে ফোন দিলেন।

আমি:আরাফ ভাইয়া?
আরাফ:জানপাখি,আই মিস ইউ।তুমি চলে আসো প্লিজ,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।

আমি:তুমি আবার এসব বলছো?আমি কিন্তু আর কখনও তোমার সাথে কথা বলবো না।(রেগে)

আরাফ:তুমি শুধু আমার।একবার বলো তুমি আমার,আমি ঠিক হয়ে যাবো।বলো প্লিজ।

আমি:হুম আমি তোমার।আমি কি বলেছি নাকি আমি তোমার নয়?আমি এখনই যাচ্ছি তোমার কাছে।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে)

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া মলিন হাসলেন।উনার হাসি দেখে রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো।আর এদিকে আরাফ ভাইয়াও উল্টো কথা বলছে।কি চায় কি এরা আমার কাছে!

আরাফ:জানপাখি,কি বলছো?রাগ করেছো আমার উপর?আম সরি।আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।আসতে হবেনা।আচ্ছা পরে কথা বলবো। তুমি প্লিজ রাগ করো না।রাখছি বাই।

আরাফ ভাইয়া ফোন কাটতেই আমি রেগে ঠোঁট ফুলিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার ফোন সজোরে ফ্লোরে আছাড় মারলাম আর সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ডিসপ্লে ফেঁটে চৌচির হয়ে গেল।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি মনে হয় ভাবতেও পারেননি আমি এমনটা করবো।বেড থেকে নেমে দরজার কাছে আসতেই উনি আমার হাত ধরে আটকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:কোথায় যাচ্ছো?(কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে)
আমি:হাত ছাড়ুন,আমি বাসায় যাবো।(রেগে)
নির্ভীক:ওয়াহ্!এত রাগ!!(মুচকি হেসে)

আমি এক ঝটকায় উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বললাম,
আমি:আপনি একটা জঘন্য লোক।আমাকে ভাল না লাগলে বলে দিবেন আমি এমনিই চলে যাবো,এত ভণিতা করে অন্যের পেছনে লেলিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।আমাকে কি আপনার চরিত্রহীন মনে……….

গালটা খুব জ্বলছে আর সাথে উনিও আগুনের মতো দাও দাও করে জ্বলছেন।গালে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ফ্লোরে বসে পরলাম।সোফার সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম,চোখ দিয়ে গল গল করে জল পরছে।উনি রেগে সোফার টেবিলে লাথি দিয়ে আমার সামনে হাঁটু গেরে বসে আমার গাল থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

নির্ভীক:এসব নোংরা কথা কোথায় শিখেছো তুমি।এসব কথা আর কখনও বললে খুন করে ফেলবো।(উনার বুকে আমার মাথা চেপে ধরে)

আমি হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলাম।উনি আমার মুখ তুলে গালে অসংখ্য কিস করতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে নিয়ে সোফায় বসলেন।আমার কান্না কিছুতেই থামছে না,থাপ্পড়ের কথা মনে হতেই নতুন করে কান্না পাচ্ছে। আমি হেঁচকি তুলছি আর উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।

দুপুর প্রায় দুটো বাজে,ছাদের উপর সিঁড়ির ঘরের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছি।রোদের মধ্যে এখানে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এই কষ্টের জন্য আমার শান্তি লাগছে।নিজেকে কষ্ট দিতে তখনই ভাল লাগে যখন নিজের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষ কষ্ট পায়।সকালে আমি কান্না থামাচ্ছিলাম না জন্য নির্ভীক ভাইয়া ড্রেসিং টেবিলের কাঁচে দুটো পান্চ মেরে নিজেকে শাস্তি দিলেন।২য় বার পান্চ মারায় উনার হাতে কাচ ফুটে ক্ষত বিক্ষত হয়েগেছে।আমি সব বুঝেও উনাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি।এখানে উনার কোন দোষ নেই,কারও কোন দোষ নেই।নির্ভীক ভাইয়াকে কষ্ট পেতে দেখে এখন আমারই কষ্ট হচ্ছে।

রোদে গা জ্বলে যাচ্ছিল তখনই নির্ভীক ভাইয়া ছাদে আসলেন।এত কিউট আর নিষ্পাপ লাগছে উনাকে!!মনে হচ্ছে কোন স্বর্গীয় দূত এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।উনি জুম্মার নামাজ পরতে মসজিদে গিয়েছিলেন।ধবধবে সাদা পান্জাবি পরে আছেন,মাথায় সাদা টুপি।কপালের উপর একটা চুলও দেখা যাচ্ছে না, সামনের দিকের সব চুল উনি টুপি বন্দি করেছেন।।গরমে আর রোদে উনার নাক মুখ গোলাপি হয়ে আছে।উনার শরীর থেকে যেন আলোর ছটা বের হচ্ছে,আমি ঠিক করে তাকাতে পারছিনা উনার দিকে।উনি আমাকে এখানে দেখে বুকে হাত দিয়ে হাফ ছেড়ে বললেন,
নির্ভীক:তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো বাসা খুঁজলাম।এই তুমি হাসছো?রাগ কমেছে?

উনার কথা শুনে আমার হুশ ফিরলো।কখন থেকে হাসছি জানি না আর আমি কোথায় আছি কি অবস্থায় আছি সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম।উনি আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার দুই গাল ধরে আমার কপালে কিস করে বললেন,

নির্ভীক:নিচে চলো।

বলেই উনি আমাকে নিয়ে যেয়ে লাগলেন।সিঁড়িতে এসে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম কারন ছায়ায় এসে আমি সব অন্ধকার দেখছি।অনেকক্ষণ রোদে থাকার জন্য এমন হচ্ছে।আমাকে দাঁড়াতে দেখেই উনি বললেন,
নির্ভীক:কি হল?

আমি:আপনি যান আমি আসছি।সব অন্ধকার হয়ে আছে কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়ালেই ঠিক হয়ে যাবে।(উনার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)

হুট করে উনি আমাকে কোলে নিলেন।আমি উনার পান্জাবি খামছে ধরে বললাম,
আমি:আরে কি করছেন?হাতে লাগছে আপনার।নামান আমি হেঁটে যাবো।

উনি আমাকে রুমে এনে বেডে নামিয়ে দিলেন।আমার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে হালকা রেগে বললেন,
নির্ভীক:রোদে বসে ছিলা কেন?কষ্ট হচ্ছিল না?ইচ্ছে করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিলা?আমাকে মেরে ফেলতে চাও তুমি?

আমি মাথা নিচু করে থাকলাম।উনি টুপি খুলে বেডের উপর রেখে আমার পাশে আর একটু এগিয়ে এসে বললেন,
নির্ভীক:কেন বুঝনা?আমার বাঁচার স্বপ্ন তুমি।তুমি কষ্ট পেলে আমার বেঁচে থাকতে কষ্ট হয়।আর কখনও এমন করবা না।(আমার হাত ধরে)

উনার কথা শুনে আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি আমার গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
নির্ভীক:তোমার মুখ এটা কি রং ধারণ করেছে বলো তো?লালও নয় গোলাপিও নয়,পৃথিবীতে এমন রং আমি আগে দেখিনি।আর তোমার ঠোঁট,উফ্ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।একবার খাই?প্লিজ প্লিজ প্লিজ জাস্ট একবার,কামড় দিবোনা প্রমিজ।(ইনোসেন্ট ফেইস করে)

আমি তড়িৎ গতিতে উঠে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রেগে বললাম,
আমি:নিচে অনেক খাবার আছে যান গিয়ে সেসব খান।আবার ওইরকম করলে আমি কিন্তু এবার জারিফ ভাইয়াকে বলে দিবো।

নির্ভীক:ভাইয়াকে বলবা?কি বলবা?(দুষ্টু হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে)

উনার এগিয়ে আসা দেখে আমি এক দৌড়ে নিচে চলে আসলাম।নিচে এসে দেখি সবাই খেতে বসেছে।আমিও গিয়ে বসলাম।নির্ভীক ভাইয়াও এসে আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে প্লেট টেনে নিলাম।উনি অ্যান্টিকে বললেন,

নির্ভীক:আম্মু,আমার খাবার অন্তর প্লেটে দাও।ও আমাকে খাইয়ে দিবে।(মুচকি হেসে)

আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।এই হাত দিয়ে উনি সব করতে পারছেন আর তুলে খেতে পারবেন না, এটা কোন কথা হলো?সব আমাকে জ্বালানোর জন্য করছেন।সকালেও সবার সামনে নির্লজ্জের মতো আমার হাতে খেয়েছেন।খাওয়ার সময় আবার কত কি সব বলছিলেন।উফ্ অ্যাঙ্কেল আর চাচার সামনে কি লজ্জাটায় না পেয়েছি।

অ্যান্টি আমার প্লেটে খাবার দিয়ে প্লেট বাটি ট্রেতে তুলে দিয়ে বলল,
অ্যান্টি:তোরা রুমে গিয়ে খা যা।(মুচকি হেসে)

নির্ভীক ভাইয়া ট্রে নিয়ে উঠে চলে গেলেন।আমিও মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে উঠে চলে আসলাম।

রুমে এসে উনাকে খাওয়াতে আমার জীবন জাহান যায় যায় হয়ে গিয়েছিল।লোকটা আসলেই একটা ডাইনোসর,বার বার আমার হাত খেয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন।

বিকেলে একটা রেস্টুরেন্টে আমি আর নির্ভীক ভাইয়া আরাফ ভাইয়ার জন্য ওয়েট করছিলাম।আরাফ ভাইয়া আমাদের এখানে ডেকেছিল।প্রায় এক ঘন্টা ধরে বসে থাকার পর ফোন করে বলছে দেখা করবেনা।আমার তো মনে হচ্ছিল ফুপ্পির বাসায় যেয়ে আরাফ ভাইয়ার মাথাটা ফাটিয়ে আসি।রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসছিলাম তখনই টোয়া আপু আর শৈবাল ভাইয়ার সাথে দেখা।শৈবাল ভাইয়া আমার দিকে বখাটে দের মতো হা করে তাকিয়ে আছে।আমি নির্ভীক ভাইয়ার পেছনে দাঁড়াতেই শৈবাল ভাইয়া বলল,
শৈবাল:হেই ভাবি ইউ আর লুকিং সো প্রিটি।(হাসতে হাসতে)

নির্ভীক ভাইয়া উনার কালো শার্টের ফোল্ড করা হাতা আর একটু উপরে উঠিয়ে শৈবাল ভাইয়ার এক কাঁধে হাত রাখতেই শৈবাল ভাইয়া আবুলের মতো হাসতে হাসতে বলল,
শৈবাল:না মানে ভাবিকে সুন্দর লাগছে তাই সুন্দর বলেছি।মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে,তুই তো জানিস আমি একটু এইরকমই।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

টোয়া:বিয়ে করলা আমাদের ট্রিট দিলা নাতো?চলো চলো ট্রিট দিবা চলো।(নির্ভীক ভাইয়ার হাত ধরে ন্যাকা কন্ঠে)

নির্ভীক ভাইয়া এক ঝটকা দিয়ে টোয়া আপুর হাত ছাড়িয়ে নিলেন।প্যান্টের পকেট থেকে উনার ফাঁটা ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:হ্যা শোনো,দুজন যাচ্ছে যা খেতে চায় দাও বিল আমাকে পাঠিয়ে দিও।আর একটা পিৎজা প্যাক করে দিবা।….ওকে

ফোন কেটে উনি টোয়া আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:পিৎজা বাসায় যেয়ে তরীকে দিবি।আর তোরা রেইনট্রিতে যেয়ে আমার নাম বলে যা ইচ্ছা অর্ডার দিস।(দুজনের দিকে তাকিয়ে)

টোয়া:তুমি যাবানা?অন্তকে নিয়ে চলো।(আমাদের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:উই হ্যাভ ওয়ার্ক।

বলেই উনি আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন।গাড়িতে এসে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।টোয়া আপু আমার দিকে হিংসায় হিংস্র হয়ে তাকিয়ে আছে।আমাকে নিয়ে কিসের এত হিংসা ওর?এমন ভাব করছে যেন আমি সরে গেলে নির্ভীক ভাইয়া ওকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে,রিডিকিউলাস….!

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here