ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব:৫৫

0
1792

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৫৫

বিকেলে লিভিং রুমে বসে থেকে ডগিদের চুল কাটা দেখছি।রাযীন ভাইয়া আর আপু সাজেক থেকে ফিরে এসেছে এক ঘন্টাও হয়নি এর মধ্যেই রাযীন ভাইয়া ডগিদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছেন।ওদের চুল নাকি বড় হয়েছে সেগুলো সাইজ করতে হবে তাই কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে সাইজ করছেন। আমি দূরে বসে থেকে এসব দেখছি, নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে বসে থেকে প্রোগ্রামিং করছেন।হঠাৎ অ্যাঙ্কেল বাসায় এসে নির্ভীক ভাইয়াকে বললেন,

অ্যাঙ্কেল:তুমি আবার মারামারি শুরু করেছো?ছেলেটার হাত ভেঙে দিয়েছো,কয়েকদিন পর ওর পরীক্ষা ও কিভাবে লিখবে?নালিশ করেছে তোমার নামে।কেন মেরেছো ওকে?(রেগে)

নির্ভীক:নালিশ করেছে তাও জানোনা কেন মেরেছি?(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে)

অ্যাঙ্কেল:অসাবধানতা বশত অন্তর হাত কেটেছে তাই বলে তুমি ওর হাত ভেঙে দিবে?তোমার নামে যদি পুলিশ কেস করতো, পুলিশের খাতায় নাম উঠলে তোমার এই হার ভাঙ্গা পরিশ্রম জেলে বসে করতে হতো।(রেগে ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে)

নির্ভীক:উফ্ বাবা!কাজ করছি তো।আর আমি হাত ভাঙতে চাইনি অসাবধানতা বশত ভেঙ্গে গিয়েছে।আমি সরি বলেছি আর ওর ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি আর কি করবো?(অ্যাঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে)

অ্যাঙ্কেল:এই চুপ,বেয়াদব ছেলে কোথাকার।এপর্যন্ত কত জনকে মেরেছো তুমি হ্যা?বাবা ভার্সিটির ভিসি বলে যা ইচ্ছে তাই করবে?উন্মাদ বলে সবাই তোমাকে। (রেগে উঁচু গলায়)

নির্ভীক:যে যা বলে বলুক, আমার তাতে কি?(ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে)
অ্যাঙ্কেল রাগী মুৃখ করে কিছুক্ষণ নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে রুমে চলে গেলেন।রাযীন ভাইয়া আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,

রাযীন:কিরে ছোটু এখনও মারামারি করিস?ভাল হবিনা কোনদিনও?

নির্ভীক:আমি ভাল নয় বলছো?(ভ্রু কুচকে)
রাযীন:মারামারি করা ভাল নয় বলছি।(মুচকি হেসে উনার অন্যপাশে বসে)

নির্ভীক:কেউ তোমার বউ এর হাত কেটে দিলে কি করতা?এমনি ছেড়ে দিতা?তোমার বউ তাও বড় আছে আমার বউ কত পিচ্চি দেখেছো?এই যে দেখ কত বড় কাটার দাগ।(আমার হাত টেনে নিয়ে রাযীন ভাইয়াকে দেখিয়ে)

রাযীন:অনেক কেটেছে তো.?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:বায়োলজি বক্সে যেই ধারালো ব্লেড থাকে ওটা লেগে কেটেছে।ল্যাব করে ব্লেডটা পরিষ্কার ও করেনি।কীটতত্ত্বের ল্যাব ছিল মানে কোন পোকা মাকড়ই কেটে ছিল। আমি তাও কিছু বলতাম না কিন্তু ও কি করেছে জানো?অন্তর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল এইজন্য তো ওর চোখ তুলে নিতে ইচ্ছে করছিল।(রাগী কন্ঠে)

রাযীন:তাহলে তুই ঠিকই করেছিস,ছেলেটার দোষ আছে। আচ্ছা তোরা থাক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

বলেই রাযীন ভাইয়া চলে গেলেন।আমি ভ্রু কুচকে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:তাই বলে আপনি ছেলেটার হাত ভেঙে দিবেন?

নির্ভীক:অনেক বলেছো। ওই ছেলের হয়ে আর একটা কথা বললে তোমার ঠোঁট ছিড়ে দিবো।(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)

আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে এক দৌঁড় দিয়ে উপরে চলে আসলাম।উনাকে কোন বিশ্বাস নেই,যা বলেন তাই করেই ছাড়েন।অসভ্য লোক একটা।

.
আম্মু আর ভাইয়া ঢাকা চলে যাচ্ছে। আমিও ওদের সাথে যাবো বলে জেদ ধরে বসে আছি কিন্তু ওরা আমাকে নিয়ে যাবেনা,নিয়ে যাবে কি করে নির্ভীক ভাইয়া যেতে দিবেননা।ফুপ্পি ইচ্ছে আর আরাফ ভাইয়াও এসেছে।আমি রাগ করে আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি।আমি রাগ করেছি দেখে আরাফ ভাইয়াকে খুশি দেখাচ্ছে অথচ নির্ভীক ভাইয়ার উপর রাগ করলে উনি তো আমাকে উল্টো রাগ দেখিয়ে দাবিয়ে রাখেন।তাহলে কি উনি আমাকে ভালোবাসেন না?

সোফায় মন খারাপ করে বসে আছি। আম্মু আর ভাইয়া যাওয়ার জন্য রেডি।সবার সাথে কথা বলে আমার কাছে এসে ভাইয়া আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে গাড়িতে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিল।আমি বললাম,
আমি:তুমি বলেছিলে ঢাকায় আর যাবানা।

জারিফ:বাবা একা ওদিক টা সামলাতে পারে না তাই আমাকে যেতে হবে।আতিককে এখানে পাঠিয়ে দিবো।আর শোন সাবধানে থাকবি।আফ্রা রা চলে গেল মন খারাপ করবি না।
আমি:আপু চলে যাবে মানে?(ভ্রু কুচকে)

জারিফ:রাযীনের সাথে কানাডা চলে যাবে আর তুই চাঁদের কথা শুনতে চাস না কেন?ও কি তোর খারাপ চায় নাকি?এখন ভার্সিটি যেতে নিষেধ করছে যাস না।কয়েকদিন পর চাঁদের ফাইনাল এক্সাম ওকে একদম বিরক্ত করবিনা,ওর সব কথা শুনবি।তুই বাসায় পড়াশুনা কর,ইংলিশটা ভাল করে দেখিস।

ভাইয়ার উপর আমার রাগ হলো।ভাইয়া কি করে ভুলে গেল আমার সাবজেক্ট ইংলিশ নয় কেমিস্ট্রি। আমি মুখ ফুলিয়ে কিছু বলবো তখনই নির্ভীক ভাইয়া পেছন থেকে কথা বললেন,
নির্ভীক:ভাইয়া শোনো।এই পিচ্চি তুমি যাও,ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি ভাইয়ার একহাত ধরে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:যাবো না দাঁড়ান আজকে আমি ভাইয়াকে সব বলে দিবো।….ভাইয়া তুমি জানো উনি আমাকে সকালে ….

আর কিছু বলতে পারলাম না।উনি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,
নির্ভীক:ভাইয়া তোমার সাথে ফোনে কন্টাক্ট করবো,ওকে?(মুচকি হেসে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

জারিফ:আচ্ছা, ভাল থাকিস তোরা।(হেসে)

আমি মুখ থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।উনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরে আছেন অন্যহাতে আমার একহাত ধরে আছেন।ভাইয়া দেখেও কিছু বলছেনা।আমাদের ভাল থাকতে বলে গাড়িতে উঠে গেল,ভাইয়াকি দেখতে পেলনা আমি ভাল নেই।আম্মু আসতেই উনি আমার মুখ ছেড়ে দিলেন।আম্মু আমাদের সাথে কথা বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো।গাড়ি ছাড়লেই আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।

রাত আটটায় একপাশ হয়ে মন খারাপ করে শুয়ে আছি।ভাইয়া আর আম্মু চলে যাওয়ার পর থেকে কিছু ভাল লাগছেনা।শুয়ে ছিলাম তাই আপু দরজায় এসে বলছে,
আফ্রা:অন্ত নিচে আয়,বাবা ডাকছে।

আমি অন্যপাশ ফিরে বললাম,
আমি:কেন?(আপুর দিকে তাকিয়ে)

আফ্রা:আরে আয় আগে,দারুণ প্ল্যান আছে।ফ্যামিলি ট্যুরে যাবো আমরা।(আনন্দিত হয়ে)

বলেই আপু চলে গেল।ট্যুরের কথা শুনে আমার মন ভাল হয়ে গেল।আমার তো ঘুরতে খুবই ভাল লাগে।আমি একলাফে উঠে বসে আপুর আগেই নিচে চলে আসলাম।

নিচে এসে দেখি সবাই সোফায় বসে আছে।নির্ভীক ভাইয়াও বসে আছেন,উনি বাসায় ছিলেন না হয়ত এখনই এসেছেন।আমি গিয়ে অ্যান্টির পাশে বসলাম।

অ্যান্টি:তুই বল কোথায় যাবি?তুই যেখানে বলবি সেখানেই যাবো আমরা।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:আমি?তোমরা যেখানে যাবা আমিও সেখানে যাবো।(অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

নির্ভীক:আমরা কোথাও যাবো না।(অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখ করে)

রাযীন:আচ্ছা তুই না গেলে না যা ওকে আমাদের সাথে যেতে দে।(নির্ভীক ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে)

অ্যান্টি:আমি তো ওকে নিয়েই যাবো।অন্ত তুই আমার সাথে যাবি(আমার হাত ধরে)।আর তুই?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)এখনও সময় আছে ভেবে দেখ কি করবি।কখনও তো আমাদের সাথে যাসনি, একবার তো যেতে পারিস আর কাল তো ছুটির দিন।

উনি উঠে এসে আমার অন্যহাত ধরে বললেন,
নির্ভীক:তোমরা যাও,আমারা যাবোনা।অন্ত চলো।

অ্যান্টি:তুই তাহলে যাসনা আমি ওকে নিয়ে যাবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:কোন লস না হলে তোমরা খুশি হওনা তাইনা?(রেগে)

অ্যান্টি:এই আবার যদি কিছু ভেঙ্গেছিস তোর পিঠের ছাল আমি তুলে নিবো।(দ্বিগুণ রেগে)

অ্যাঙ্কেল: কি শুরু করেছো তোমরা?ও যাবেনা না যাক।ওকে কোথাও নিয়ে যেয়ে শান্তি আছে?একটা কাজিনের সাথেও ভাল সম্পর্ক নেই। সব সময় ঝামেলা করে।এই তোমার যেতে হবেনা।তোমাকে আমরা রিজেক্ট করলাম। যাও তোমাকে এসবের মধ্যে থাকতে হবে না।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:আগে তোমার বউকে বলো আমার বউকে ছেড়ে দিতে তারপর তোমরা প্যারিস যাবে না লন্ডন যাবে সেটা তোমাদের ব্যাপার,আই ডোন্ট কেয়ার।(রাগী কন্ঠে)

নির্ভীক ভাইয়ার কথা শুনে অ্যাঙ্কেল বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে বললেন,
অ্যাঙ্কেল:অন্ত আমাদের সাথেই যাবে।

ব্যস শুরু হয়ে গেল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সবাই এক পক্ষ আর নির্ভীক ভাইয়া একাই এক পক্ষ।অ্যাঙ্কেল ঠিকই বলেন নির্ভীক ভাইয়া আসলেই একটা অভদ্র আর বেয়াদব ছেলে।বড়দের কোন কথা শোনেন না উনি।নিজের যা ইচ্ছা তাই করেন।আর একটু কিছু হলেই রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ভাঙচুর শুরু করে দেন।বিশ্বরাগী কোথাকার!!!

সবাই উনার জেদের কাছে হার মেনে আমাকে ছেড়ে দিল।নির্ভীক ভাইয়া বিজয়ের হাসি হেসে আমাকে নিয়ে উপরে চলে আসলেন।সবাই কাল সোমপুর বিহারে যাবে।একটা বড় বাস ভাড়া করেছে।আমাদের ফ্যামিলি,টোয়া আপু,শৈবাল ভাইয়া,প্রান্ত ভাইয়াদের ফ্যামিলি যাবে।অ্যান্টি আমার ফুপ্পিকেও ইনভাইট করেছে,ফুপ্পিও যেতে চেয়েছে। সবাই যাবে শুধু আমিই যেতে পারবোনা।রুমে এসে আমি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি আর নির্ভীক ভাইয়া আমাকে বকাবকি শুরু করে দিয়েছেন।উনার বকাবকি শুনে আমার কান্না আরও বেড়ে যাচ্ছে আর কান্না বেড়ে যাওয়ায় উনার বকাবকিও বেড়ে যাচ্ছে,যেন কোন রেসে নেমেছি আমরা।শেষমেশ উনি বকাবকি থামিয়ে লাইট অফ করে আমাকে নিয়ে কম্বলের মধ্যে ঢুকে ঘুমিয়ে গেলেন।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here