মায়ারণ্যে পর্ব-১০

0
801

#মায়ারণ্যে
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
#পর্ব-১০

★ আজ রাইসার মেহেদী অনুষ্ঠান। সারাবাড়ি ফুল আর ফেইরি লাইটস দিয়ে জমকালো আয়োজন করা হয়েছে । মেহমানে মেহমানে পুরো বাড়ি প্রায় ভরে উঠেছে। সবাই নানান কাজে ব্যাস্ত। মায়া বাড়ির কাজে অনেক হেল্প করছে। কখনো সাজসজ্জার কাজে তো কখনো বাড়ির মহিলাদের অন্য কাজে।

মায়াকে এমন প্রফুল্লচিত্তে সবার কাজে সাহায্য করতে দেখে তনিমা বেগমের অনেক ভালো লাগছে। যেখানে তার নিজের ছেলের বউই এসব ব্যাপারে উদাসীন। বাড়ির কোন কাজে হাত দেয় না। অথচ তারই ফুফাতো বোন হয়েও মায়া কত সুন্দর সবার সাথে মিশে গেছে। সবার ভালো মন্দের কতো খেয়াল রাখে। কাল তনিমা বেগমের অনেক মাথা ব্যাথা করছিল দেখে মায়া কতো সুন্দর করে তার মাথায় তেল মালিশ করে দিয়েছিল। যার দরুন তনিমা বেগমের মাথা ব্যাথা একদম বিনা টিকেটে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তনিমা বেগম আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এভাবে আরও অনেক রকম মন ছুয়ে যাওয়া কাজ করে মায়া। মা বাবা না থাকা সত্বেও মেয়েটা কতো সুশৃঙ্খল আর মায়াময়ী। তাইতো সবাই মায়ার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে।

ছাদের রেলিং এর কাছে দাঁড়িয়ে আছে ইরিন। নিচে সব আয়োজন চলছে সন্ধ্যার মেহেদী অনুষ্ঠানের জন্য। ইরিন কেমন মনমরা হয়ে তাকিয়ে দেখছে সবকিছু। এসব দেখে তার অসফল বিবাহিত জীবনের কথা না চাইতেও মনে পড়ে যায়। নিজের ভুলের মাশুল হয়তো সারাজীবনই ওকে ভোগ করতে হবে। মায়ার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কেউ একটা ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ ইরিনের সামনে ধরলো। ইরিন ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকিয়ে দেখলো এটা মায়া। ইরিন একটু অবাক সুরে বললো।
–তুমি??

মায়া হাসিমুখে বললো।
–হ্যাঁ আমি। আসলে সবার জন্য চা করেছিলাম। আপনাকে নিচে কোথাও পেলাম না। তাই এখানেই নিয়ে এলাম।

–তুমি কি করে জানলে আমি এখানেই আছি?

–আগে চা নেন তারপরে বলছি।

ইরিন মুচকি হেসে চায়ের কাপ হাতে নিল। দুজন ছাদের দোলনায় গিয়ে বসলো। চা খেতে খেতে ইরিন আবারও জিজ্ঞেস করলো।
–হুমম, তো এখন বলো কিভাবে জানলে।

মায়া নিজের হাতে থাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।।
–কারণ যারা নিজের দুঃখ সবার থেকে লুকাতে চায় তারা সবসময় ভীড় থেকে আলাদা থাকতেই পছন্দ করে। কারণ তারা ভাবে হয়তো তার জন্য অন্যের খুশিতে আঘাত পরতে পারে। আর এটা আমার থেকে ভালো আর জানে।

মায়ার কথায় ইরিন অনেক অবাক হলো। মেয়েটা কিভাবে তার অবস্থার কথা বুঝে গেল? ইরিন ফেক হাসি দিয়ে বললো।
–আরে না। এমন কিছুই না। তুমি হয়তো একটু বেশিই ভাবছ। আসলে এমনিতে আমার ভিড়ভাড় তেমন পছন্দ না। তাই এখানে বসে আছি।

–আমার কাছে মিথ্যে বলে লাভ নেই আপু। আমি জানি আপনি ভয় পান আপনার জন্য আপনার পরিবারকে লোকের নানান কথা শুনতে হবে। তাই লোকজনের সামনে না গিয়ে এখানে বসে আছেন। আমি যেদিন এবাড়িতে এসেছি সেদিনই আপনাকে দেখে বুঝে গিয়েছিলাম আপনার মাঝে অনেক বড়ো কষ্ট লুকিয়ে আছে। তাই সারার কাছে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন সারা আপনার ব্যাপারে আমাকে বলে।

ইরিন বলে উঠলো।
–ওহহ, তো তুমিও জেনে গেছ। তাই বুঝি আমাকে সিমপ্যাথি দেখাতে এসেছ?

মায়া স্মিথ হেসে বললো।
–মোটেও না।জানেন মানুষ যতই বলুক আমি আপনার কষ্ট টা বুঝতে পারছি। আসলে কেউই কারোর কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে না। শুধুমাত্র যে ওইরকম কোন কষ্টের ভুক্তভোগী, শুধু সেই ব্যাক্তিই আরেকজনের কষ্ট বুঝতে পারে। তাই আমিও আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি। তবে একটা কথা কি জানেন। আপনি কিন্তু অনেক লাকি। কারণ আপনার কাছে একটা পরিবার আছে। যার কাছে আপনি সিকিউর। যাদের কাছে আপনি আপনার সুখ দুঃখ শেয়ার করতে পারেন। হ্যাঁ হয়তো একটা ভুল করে ফেলেছেন। তবে ভুলতো মানুষেরই হয়। তবে সবাই কিন্তু ভুল শুধরে নেওয়ার দ্বিতীয় চাঞ্চ পায়না। সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু লাকি। জীবন আপনাকে আরেকটা চাঞ্চ দিয়েছে। তাই এভাবে নিজের ভেতর গুম না হয়ে সবার সাথে মন খুলে মিশুন।অতীত কে ভুলে সামনে এগুবার চেষ্টা করুন। লুকিয়ে না থেকে নিজেকে প্রমান করুন। দেখবেন আপনাকে খুশি দেখে আপনার পরিবারও খুশি হবেন। সবাই কিন্তু আপনার মতো এতো লাকি হয়না। জীবন সবাইকে দ্বিতীয় চাঞ্চ দেয়না। সবার আপনার মতো এতো কেয়ারিং পরিবার নেই। আমার কথাগুলো ভেবে দেখবেন। ছোট হয়ে যদি বেশি কিছু বলে ফেলি তাহলে ছোটবোন ভেবে মাফ করে দিয়েন।

কথাগুলো বলে মায়া চায়ের কাপ দুটো নিয়ে আবার উঠে চলে গেল। আর ইরিন অবাক চোখে মায়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। মায়াকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে ও।কতো সুন্দর করে এতবড় একটা বিষয় বুঝিয়ে গেল। মেয়েটা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান আর সুচিন্তার অধিকারী। অথচ রিয়া এর পুরো উল্টো। ইরিনের মাথায় হঠাৎই একটা ভাবনা ঢুকে পড়লো। অরণ্যের তো সবসময় মায়ার মতো চিন্তাধারার কোনো মেয়ের খোঁজ ছিল। তাহলে রিয়াকে কিভাবে পছন্দ করলো অরণ্য? এর মধ্যে কোন কিন্তু নেই তো?
___

সব কাজ সেরে মায়া গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকেছে। হঠাৎ পানির ট্যাপ টা মোচড় দিতেই পাইপ থেকে ট্যাপ টা খুলে পড়ে গেল। আর পাইপ থেকে ভীষণ বেগে পানি বের হতে লাগলো। আচমকা এমন একটা কান্ড হওয়ায় মায়া অনেক ঘাবড়ে গেল। দুই হাতে পাইপের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তবে তাতে সফল হচ্ছে না মায়া।পানিতে ওর শরীর প্রায় ভিজে যাচ্ছে। মায়া কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এইভাবে ভেজা কাপড়ে তো বাইরেও যেতে পারছে না।আর পানি এভাবে ছেড়ে দিয়ে গেলে রুমেও পানি ঢুকে পরবে। কিন্তু এটা ঠিক না করলে তো গোসলও করতে পারবে না। তাই মায়া বাথরুমের ভেতর থেকেই জোরে জোরে সারা আর রাইসাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু রুমে কেউ না থাকায় ওর ডাক কারোর কানে যাচ্ছে না।

ঠিক সেই মুহূর্তে অরণ্য সারাদের রুমে ঢুকলো। ওর ল্যাপটপের চার্জার কাজ করছিল না। তাই রাইসার চার্জার নিতে এসেছিল। কিন্তু রুমে ঢুকতেই বাথরুম থেকে মায়ার আওয়াজ শুনতে পেল অরণ্য। মায়ার এভাবে জোরে জোরে ডাকা দেখে একটু চিন্তা হলো অরণ্যের। মায়া এভাবে ডাকছে কেন? ও ঠিক আছে তো? বাথরুমে পড়ে টরে গেল নাতো? কথাটা ভেবে অরণ্য ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললো।
–মায়া কি হয়েছে? ওরা তো কেউ রুমে নেই। তুমি ডাকছ কেন? কোন সমস্যা হয়েছে? আমাকে বলো।

মায়ার এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই।আপাতত এটা ঠিক করা দরকার। তাই অরণ্যের কন্ঠ শুনে মায়া পাইপ ছেড়ে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে দিয়েই আবারও পাইপের ওপর হাত চেপে ধরলো। অরণ্য বাথরুমে ঢুকে মায়ার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললো।
–কি হয়েছে? তুমি কি পড়ে গিয়েছ?

মায়া পানি ঠেকানোর চেষ্টা করতে করতে বললো।
–না না আমি ঠিক আছি। আসলে এই ট্যাপ টা হঠাৎ খুলে গেছে। আর পানি কিছুতেই ঠেকাতে পারছিনা।

–ও ওকে তুমি একটু থাক, আমি এখুনি ঠিক করার কিছু নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে অরণ্য দ্রুত বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরেই হাতে একটা প্লাস আর একটা টেপ নিয়ে এলো। মায়ার সামনে বসে মায়াকে হাত সরাতে বললো।মায়া হাত সরাতেই পানি এসে সোজা অরণ্যের শরীরে লাগছে। অরণ্যও ভিজে গেল। কোনরকমে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে ট্যাপ টা আবার পাইপের মাথায় লাগিয়ে দিয়ে, প্লাস আর টেপ দিয়ে ভালোভাবে আটকিয়ে দিল। কাজ হয়ে গেলে অরণ্য বলে উঠলো।
–নাও এখন ঠিক হয়ে গেছে।

–ধন্যবাদ।

অরণ্য এবার মায়ার দিকে তাকালো। এতক্ষণ খেয়াল না করলেও এবার পানিতে ভেজা মায়াকে চোখে আবদ্ধ করে ফেললো। ভেজা কাপড় আর চুলগুলো লেপ্টে আছে। পানির কনা জমে আছে মায়ার শ্যামল বদনে। এ যেন এক মরণঘাতী দৃশ্য। অরণ্যের ভেতর টা যেন নাড়া দিয়ে উঠছে। এতদিন শুধু মায়ার মনের মাধুর্যেই মেতে ছিল অরণ্য। তবে আজ মায়ার এমন আবেদনীয় রুপের মোহে ডুবে যাচ্ছে অরণ্য।কেমন নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। চেয়েও চোখ ফেরাতে পারছে না। অবাধ্য আর বেহায়া চোখ দুটো মায়াতেই আবদ্ধ।

অরণ্যের এভাবে তাকিয়ে থাকায় মায়া অনেক টা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। যদিও সেদিনের মতোই মায়ার কোন অস্বস্তি হচ্ছে না। শুধুই চারদিক থেকে লজ্জায় ঘিরে ধরেছে। অরণ্যের এই চাহুনি যেন মায়ার হৃদয় ভেদ করে দিচ্ছে। হৃদকম্পনের গতি অস্বাভাবিক বেগে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়তো ওর দমই বন্ধ হয়ে যাবে। মায়া লজ্জায় জড়সড় হয়ে ফ্লোরে দিকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

মায়াকে এভাবে দেখে অরণ্যের হুঁশ এলো। অরণ্য দ্রুত বেরিয়ে যেতে নিল। কিন্তু ফ্লোরে শাবান পড়ে থাকায় অরণ্যের পা শাবানে পড়তেই, অরণ্য পা পিছলে গিয়ে মায়াকে সহ নিয়ে পড়ে যেতে নিল। অরণ্য দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে নিজেকে আর মায়াকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে সক্ষম হলো। দেয়ালে হাত দেওয়ার সময় ভুলবশত হাত লেগে শাওয়ার চালু হয়ে গেল। অরণ্যের দুই হাতের মাঝে মায়া আটকা পড়ে আছে। দুজনের মুখ সামনাসামনি,ওদের মাঝে শুধু দুুই ইঞ্চি ফাঁক আছে।মায়া অনেক আগেই চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। অরণ্যের এতো কাছে আসায় মায়ার হৃদকম্পন যেন এবার ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সারা শরীর প্রচন্ড পরিমাণে কাঁপছে ওর। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে ওর সাথে? এমনটা তো আগে কখনো হয়নি? একটা পুরুষ মানুষের সন্নিকটে এসেও আমার খারাপ লাগছে না কেন? বরং কোথাও যেন একটা সুখময় অনুভূতি কাজ করছে। তবে কি সে আমার স্বামী বলে এমনটা হচ্ছে?

শাওয়ারের পানি দুজনকেই ভিজিয়ে দিচ্ছে। পানি মায়ার মুখের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। মায়ার ভেজা অধরযুগল যেন সর্বনাশের ডাক দিচ্ছে। অরণ্যের গলা শুঁকিয়ে আসছে। শুকনো ঢোক গিলছে শুধু। নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে ওর। নিজের ওপর সব নিয়ন্ত্রণ যেন হারিয়ে ফেলছে অরণ্য। তার মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে সরে যা তুই। এটা ঠিক না। কিন্তু তার মন মস্তিষ্কের কথা শুনতে মোটেও আগ্রহী না। তার মন বলছে এটাই ঠিক। এতে কোন ভুল নেই। অতঃপর মন আর মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মনই জিতে গেল। অরণ্য ধীরে ধীরে নিজের মুখটা ঝুকিয়ে মায়ার অধরের দিকে এগুতে লাগলো। মায়ার চোখ বন্ধ থাকায় সে কিছু টের পাচ্ছে না। তবে দুজনেরই নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। মায়ার ঠোঁট ছুঁইছুঁই প্রায়। তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ এলো। হুঁশ এলো অরণ্যের। ঠাস করে চোখ খুলে তাকালো সে। ছিটকে সরে এলো মায়ার কাছ থেকে। কি করতে যাচ্ছিল সে? ছিহহ। অরণ্য আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। অরণ্য যেতেই চোখ মেলে তাকালো মায়া। দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো সে। কোন এক অজানা কারনেই চোখ দুটো দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়লো তার। হৃদয়ের কোনে আবারও ব্যাথার অনুভব হলো।আচ্ছা সেকি না চাইতেও তার মায়ায় জড়িয়ে পড়লো?
______

মেহেদীর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। বাইরে লনে মেহেদীর জন্য বড়ো স্টেজ সাজানো হয়েছে। সবাই সেজে গুঁজে চলে এসেছে মেহেদীর জন্য। মেহেদী আর্টিস্ট আনা হয়েছে। তারা রাইসা আর বাকিদের মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ নাচ গানও করছে। ইরিনও এসেছে মেহেদী দিতে। ইরিনকে আজ অনেক টা হাসিখুশিই লাগছে। যেটা দেখে বাকি সবারও ভালো লাগছে। বিশেষ করে ইহানের। ইরিনকে আজ অনেক দিন পর এভাবে কোন অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখে ওর মনটা ভরে উঠছে।

সারা ব্রাউন কালারের লেহেঙ্গা পড়ে সারা বাড়ি ধেই ধেই করে নেচে বেড়াচ্ছে। অথচ তার জন্য যে আরেকজনের বুকে হাহাকার হচ্ছে, সেটার কোন ধারণাই নেই সারার। সাহিলের চোখ শুধু তাঁকেই ঘিরে আছে। তার পিচ্চিটাকে আজ সত্যিকারের পরী লাগছে। সাহিল যেখানেই থাকুক তার নজর সবসময় সারার ওপরেই থাকে। যেন চোখের আড়াল হলেই হয়তো সারা হারিয়ে যাবে। সারা রাইসার কাছে গিয়ে সেলফি তুলছে। রাইসার গালের সাথে গাল লাগিয়ে ঠোঁট চোখা করে পাউট করে সেলফি নিচ্ছে। সারার কান্ড দেখে সাহিল শুধু ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসছে।

অরণ্য একপাশে চুপচাপ বসে আছে। বারবার শুধু তখন কার ঘটনা টা চোখের সামনে ভাসছে। নিজের মনে অনেক অপরাধ বোধ হচ্ছে ওর। কি করতে যাচ্ছিল তখন সে? কি হয়ে গিয়েছিল তখন? মায়া আমার ভালোবাসা হলেও, ওর প্রতি কোন শারীরিক চাহিদা রাখার অধিকার আমার নেই। যদি মায়া জেনে যেত তাহলে কি হতো? সে আমাকে নিশ্চয় ক্যারেক্টারলেস ভাবতো। এখন আমি ওর দিকে মুখ তুলে তাকাবো কিভাবে? অরণ্যের ভাবনার মাঝেই মায়া স্টেজের কাছে এলো। পরনে তার অরণ্যের দেওয়া সেই নীল শাড়ী। যদিও মায়া জানে এটা রাইসা দিয়েছে। মায়াকে দেখে অরণ্য আবারও সব গুলিয়ে ফেললো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ার দিকে। মস্তিষ্কের ওপর আবারও মনের জিত হয়ে গেল।

সারা আর রাইসার জোরাজুরিতে মায়াও মেহেদী লাগাতে বাধ্য হলো। স্টেজের সামনে তখন সবাই মিলে #মেহেদী লাগাকে গানটাতে নাচছে। সাহিল আর ইহান একসময় অরণ্য কেউ টেনে নিয়ে এলো নাচতে। ওদের মন রক্ষার্থে অরণ্যও হালকা পাতলা নাচছে। মায়ার চোখ অরণ্যের হাসিমাখা মুখটাতে আটকে গেল। লোকটাকে হাসিমুখে কতো সুন্দর লাগে। হাসলে গালে টোল পড়ে তার। মায়া কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহেদী আর্টিস্ট বললো,
–ম্যাম আপনার হাতে কি কারোর নাম লিখবেন?

মায়া অরণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনেই বললো।
–অরণ্য।
___

মেহেদী শুকিয়ে গেলে মায়া রুমে আসে মেহেদী ধুতে। মেহেদী ধুয়ে হাতের দিকে তাকাতেই চমকে গেল মায়া। মেহেদীর ডিজাইনের মাঝে জ্বলজ্বল করতে থাকা অরণ্যের নামটা দেখে থমকে গেল সে। এটা কিভাবে হলো? কখন হলো? মায়া মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়লো তখনকার কথা। যখন সে আনমনেই অরণ্যের নাম বলে ফেলেছিল। কথাটা মনে আসতেই আফসোসে চোখ কুঁচকে নিল। কি হচ্ছে ওর সাথে? না চাইতেও কেন মিথ্যে মায়ায় জড়িয়ে পরছি আমি? কেউ এটা দেখে ফেললে কি ভাববে? না না আমাকে এটা ঢাকতে হবে। মায়া বাইরে থেকে একটু মেহেদী নিয়ে এলো। অরণ্য লেখা জায়গা টায় মেহেদী দিয়ে ভরাট করে ঢেকে ফেলতে চাইলো। কিন্তু অরণ্য নামটার দিকে তাকাতেই কেমন যেন একটা মায়া হচ্ছে। মায়ার চেয়েও মেটাতে পারছে না নাম টা। থাকনা। জীবনে জায়গা না পেল হাতে নাহয় তার নামটা জায়গা পাক। মায়া আর পারলোনা নাম মেটাতে। শুধু তাকিয়ে রইল তার জীবনের সাথে হঠাৎ জুড়ে যাওয়া নামটার দিকে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here