সৃজা” পর্ব – ১৭

0
1345

#সৃজা
পর্বঃ১৭
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী

সাফওয়ান বেলকনিতে দাড়িয়ে, হাতে তার জলন্ত সিগারেট।বেশ অনেক সময় ধরে সে সিগারেটের কয়েকটা প্যাকেট শেষ করেছে।নিকোটিনের ধোয়া তার চিন্তিত মস্তিষ্ককে শান্তনা দিচ্ছে।বহুদূরে দৃষ্টি তার।

অন্য সময় হলে হয়তো সিগারেট দেখলে সৃজা নাক কুচকে বলতো,ছিঃ আপনার হাতে সিগারেট কেনো।দূরে সরান বলছি।সিগারেট খেলে আমার কাছে আসবেন না।আর সাফওয়ান ও জোর করে সৃজাকে ছুঁয়ে দিতে চাইতো।সৃজাও তার থেকে পালাতে চাইতো।অথচ আজ একটা কথাও বলছেনা।সবসময়ই এই মেয়ের ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

সৃজার উপস্থিতি টের পাচ্ছে সে।এই মেয়েটাকে সে মনে প্রাণে ধারণ করছে।মন থেকে সে এই মেয়েটাকে খুব করে চায়। অথচ তার অতীতের কিছু বিষয় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছে।মেয়েটা কষ্ট পেলে ওর ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যায়।
সৃজার দিকে না তাকিয়েই অস্ফুট স্বরে বললো

“বলো…

অবাক হয়নি সৃজা।তাই কোনো ভণিতা ছাড়াই পেছন থেকে বললো

“আমার ডিভোর্স চাই।”

কথাটা বলতে দেরি হলেও সাফওয়ানের প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি হলো না।সাথে সাথে পেছনে ঘুরে সৃজার গলা চেপে ধরলো।ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো

“এই কি বললি তুই হ্যা?আরেক বার বল।”

“সৃজা তারপরও বললো ডিভোর্স চাই আমার।”

সাফওয়ান আরো জোরে গলাটা চেপে ধরলো।রক্তলাল চোখ করে বললো

“এতক্ষণ অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি।কিন্তু তুই ভদ্রতার যোগ্য না।আরেকবার ডিভোর্স নেয়ার কথা বললে তোকে খুন করে ফেলবো।আমি যদি মরেও যাই তবুও তুই আমার থাকবি।”

হাতের বাঁধন খুবই শক্ত ছিলো।সৃজা খামচেও ছাড়াতে পারলো না।শুধু মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ করলো।

কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সাফওয়ান খেয়াল করলো সৃজার মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে যেনো টোকা দিলেই রক্ত পরবে গাল থেকে।চোখ থেকে পানি পরছে।কিন্তু সৃজা কিছু বলতে পারছে না।পরক্ষণেই হাতটা আলগা করে দিলো।

ছাড়া পেয়েই বিছানার চাদর আকড়ে কাশতে লাগলো সৃজা।একহাত গলায় আরেক হাতে চাদরটা আকরে ধরা।পানি নেয়ার শক্তিও হয়তো তার নেই।

নেতিয়ে পরেছে মেয়েটা। সাফওয়ান পুরোটাই খেয়াল করলো।এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।সৃজা সেটা সরিয়ে দিলো।অর্থাৎ সে নিবে না।সাফওয়ান জোর করে এক হাতে সৃজার গাল দুটো চেপে ধরে আরেক হাতে পানি খাওয়ালো।কিছুটা স্বাভাবিক হতেই বললো

“খুন করুন আর যা ই করুন আমার ডিভোর্স চাই।আপনার মতো জঘন্য মানুষের সাথে আমি থাকতে পারবোনা।”

সাফওয়ান এবার কাচেঁর টি টেবিলটায় জোরে লাথি মারলো।সেটা শব্দ করে ভেঙে গেলো।

“এই তুই কাকে জঘন্য বলছিস?এর আগে তোর গায়ে হাত তুলেছি আমি?”

“শুধু গায়ে হাত তুললেই জঘন্য হয়না।আপনার চরিত্র খারাপ।কোনো চরিত্রহীনের সাথে আমি থাকতে পারবোনা।”

ভেঙে যাওয়া কাচ মারিয়ে সাফওয়ান সোফায় গিয়ে বসলো।শান্ত গলায় বললো

“আমি তোমাকে বিয়ের আগে অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়েছি এটা যেমন সত্যি।তেমন বিয়ের পর আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ছুই নি এটাও সত্যি। ”

“তাহলে গতকাল মাঝ রাতে কেনো ওর ঘরে গিয়েছিলেন আপনি?

“এলিজার সাথেই প্রথম আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো তাও বুবুর বিয়ের পর। সেটাও এলিজার আগ্রহেই।গতকাল তুমি ঘুমিয়ে পরার পর ও আমাকে মেসেজ দিয়েছিলো, না গেলে বিয়ের আগের সম্পর্কের কথা তোমাকে বলে দিবে।ইট ওয়াজ এন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।তুমি যাতে আবারও হার্ট না হও সেজন্য আমি গিয়েছিলাম।কিন্তু ও যে আবার আমাকে কাছে চাইবে সে ধারণা ছিলো না।বিলিভ মি অর নট ইটস আপ টু ইউ।”

“আমি বিশ্বাস করি না আপনাকে।আপনি একটা খারাপ লোক।”

“যেটা সত্যি সেটাই বললাম তোমাকে।বাট মাইন্ড ইট।ডিভোর্সের কথা আর একবারও তুলবেনা।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।ভালো আছি ভালো থাকতে দাও।”

“আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।চোখ বন্ধ করলেই আমার মনে হয় কেউ আমার স্বামীকে আমার মতো করে জড়িয়ে ধরছে,কেউ তার খুব কাছে আছে।এসব আমাকে প্রচন্ড যন্ত্রণা দেয়।” কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে উঠলো সৃজা।

…………………….

“আমার কি দোষ ছিলো?আমি তো কখনো কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে যাইনি।ছুঁয়ে দেয়া তো দূর।তাহলে আমার ভাগ্যেই কেনো এমন স্বামী হলো যে অন্য মেয়েকে ছুঁয়ে দেখেছে।কি দোষ বলুন আমার?” কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে সৃজার।তবুও কথা থামাচ্ছে না।

একটা ছেলে যেমন চায় তার বউ সকল অপবিত্রতা থেকে বেচে থাকুক।তেমন একজন মেয়েরও স্বপ্ন থাকে একজন চরিত্রবাণ স্বামীর।মেয়েদের ভার্জিনিটি চেক করা হয় কিন্তু ছেলেদের ভার্জিনিটি চেক করার কোনো নিয়ম নেই।এ সমাজে মেয়েরা কলঙ্কিনী হয় কিন্তু যে কলঙ্ক লাগালো তাকে কেউ দেখেও না কারণ সে ছেলে।ছেলেরা হাজার মেয়ের কাছে গেলেও সে বীর পুরুষ।

সাফওয়ানের এখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।সৃজা যা বলেছে কথাগুলো তো সত্য। বিয়ের আগেতো সে এসব ভাবেনি।তার এই নিষ্পাপ বউটা কষ্ট পাচ্ছে।মনের কোথাও তারও খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু নিজেকে সামলে বললো

“কান্না থামাও।এর জন্য তুমি চাইলে যেকোনো শাস্তি দিতে পারো আমায়।কিন্তু ডিভোর্সের কথা বলবেনা।মাইন্ড ইট।”

বলতে বলতে সৃজার কাছে আসলো।দুহাতের আজলায় সৃজার মুখটা পুরে নিলো।সৃজা মুখটা ফিরিয়ে নিলো।গালটা এখনো লাল।গলায় পুরো দাগ বসে গেছে।চেপে ধরার জায়গাগুলো ফুলে উঠছে।আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিলো জায়গা গুলোতে।সৃজা এখনো ফুপিয়ে কাঁদছে।

নিজের কাছেই খারাপ লাগছে এখন সাফওয়ানের।রাগের বসে সৃজাকে আঘাত করে ফেলেছে।

সাফওয়ান খেয়াল করেছে এই মেয়েটা সবার সামনে শক্ত আবরণে ঢাকা থাকলেও ওর কাছে আসলে একদম নরম হয়ে যায়।কিন্তু আজ একটু বেশিই সাহস দেখিয়েছে।

ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বক্সটা এনে মলম লাগিয়ে দিলো ফোলা জায়গা গুলোতে।সৃজা বারবার হাত সরিয়ে দিলেও সাফওয়ানও নাছোড়বান্দা। সে মলম লাগিয়েই উঠেছে।মলমটা ড্রয়ারে রেখে এসে বললো

“যাও শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আসো, আমার ঘুম পাচ্ছে।গতকাল থেকে চোখের পাতা এক হয়নি।”

…………

“তুমি কি চাইছো আমি কোলে করে তোমাকে ওয়াশরুমে দিয়ে আসবো?যদিও সমস্যা নেই।”
বলেই কোলে উঠিয়ে নিলো সৃজাকে।সৃজা শক্ত হয়ে রয়েছে।যতকিছুই হয়ে যাক সে হার মানবে না।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here