জেদ” পর্ব-৩

0
1589

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট০৩
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
বেশ কিছু ক্ষন যাবত হাটছি।কোন অটো বা রিকশা কিছুই পাচ্ছি না।সামনে এগিয়ে গলির মুখে এগোতেই আরদ্ধের গাড়ী চোখে পড়ল।আমি ভ্রু কুচকে একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালাম।গাড়ীতে আরদ্ধই বসে আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে চুপচাপ আরদ্ধের সাথে ব্যাক সিটে উঠে পড়লাম।আমাকে দেখেই আরদ্ধ বলে উঠল
-কি ব্যাপার দেরী করলে যে!তুমি তো বলেছিলে আজ তাড়াতাড়ি অফিসে যাবে!
-আরে বোলানা সকালে……
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম আমি। আরদ্ধকে এখনে এসব বলা ঠিক হবে না।ছেলেটা এম্নিতেই টেনশনে আছে।আরদ্ধ ফোন থেকে মাথা তুলে বলল
-সকালে কি?
-সকালে ঘুম ভাংগে নি ।আজকে এলার্মও বাজে নি।
আরদ্ধ ফোনটা পকেটে গুজে আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল।আমার হাত দুটো টেনে নিয়ে ওর চুলে রাখল।আমি হালকা হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।
আমি জানি আরদ্ধ সারারাত ঘুমায় নি।ভোর চারটায় বাড়ী পৌছেই সে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছে।ঠিক সাড়ে সাতটার দিকে রেডি হয়ে আটটার মধ্যেই বাসার সামনে এসে পৌছেছে।এখন ওর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমি হালকা ঝুকে আরদ্ধের কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেলাম।
ছেলেটা কতই না সুন্দর করে প্রোফেশনাল লাইফ পারসোনাল লাইফ সামলাচ্ছে!অথচ এই আরদ্ধ আগে কতই না আগোছালো ছিল!আমার আজও মনে আছে সি দিনের কথা।
.
.
রেওয়াত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে ডিল ফাইনাল হওয়ার পর আমার জবটাও ফাইনাল হয়ে যায় ।শুধু তাই নয় ফার্স্ট দিনেই প্রমোশন পেয়ে যাই আমি। কারন আরদ্ধ সহজে কোন কোম্পানির সাথে ডিল সাইন করত না।কাজের মধ্যে সামান্যতম ভুলও তার পছন্দ নয়।ম্যানেজার অসুস্থ হওয়ায় ব্যাপারটাতে যেন আরও ভাটা পড়ে যায়।সবাই ধরেই নিয়েছিল যে এই ডিলটা হবে না।কিন্তু কাউকে তো ফেস করতে হবে! সে দায়টাই বা কে নেবে!তাই প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।নতুন ক্যান্ডিডেট হওয়ায় আমার উপর তেমন কারও কোন প্রত্যাশা ছিল না।দায়মুক্ত হওয়ার ব্যাপারটাও তেমন সহজ হয়েগিয়েছিল।
একটা ফাইলের কাজে সেদিন আমাকে আরদ্ধের অফিসে যেতে হয়েছিল।আমি যাওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগেই আরদ্ধ একটা ইম্পরটয়ান্ট মিটীং এ চলে যায়।মিটিং কখন শেষ হবে সেটা অজানা।এদিকে ফাইলের কাজটাও ইম্পরট্যান্ট ।ফেলে রেখে যেতে পারছি না।এদিকে আরদ্ধের স্ট্রিক্ট ইন্সট্রাকশন তার পারমিশন ছাড়া যেন কেউ রুমে না ঢুকে।তাই অগ্যতা বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আরদ্ধের রুমের সামনে।আরদ্ধের রুমটা ফ্লোরের ঠিক পশ্চিম দিকে।একটা গ্লাস পার্টিশন দিয়ে পুরো রুমটা ফ্লোর থেকে আলাদা করা। আরদ্ধের কেবিনটাও ব্লার গ্লাস ঘেরা ।বাইরে থেকে ভেতরটা দেখা যাচ্ছে না।রুমের ডান সাইডে ছোট একটা জানালা আছে ।তার এক পাশে ছোট একটা গাঢ় সবুক রঙের সাইকাস গাছ জায়গাটার শোভা বর্ধন করছে।আমি জানালাটার কাছে এগিয়ে গিয়ে আনমনে গুনগুনিয়ে উঠলাম
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায় ।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘ মাল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে ।।
কদম গুচ্ছ খোঁপায়ে জড়ায়ে দিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
তুমি চলে এসো, চলে এসো

এক ধ্যানে গুনগুন করছিলাম হঠাত পেছন থেকে কারও আওয়াজ শুনে আতকে উঠলাম আমি।পেছনে তাকিয়ে দেখি আরদ্ধ পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আরদ্ধ কিছু বলার আগেই আমি কাপা কাপা গলায় বলে উঠলাম
-মি. রেওয়াত।একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইলে আপনার সাইন লাগতো।
-আমার কেবিনে আসুন।
বলেই আরদ্ধ রুমে গিয়ে ঢুকল।আমি চললাম তার পিছু পিছু।
.
.
আরদ্ধের রুমে ঢুকতেই কড়া একটা স্মেল নাকে এসে লাগল।প্রথমে পারফিউম ভাবলেও ভালোভাবে তাকাতেই বুঝতে পেলাম এটা আসলে রুম ফ্রেশনার।এত কড়া একটা গন্ধের মধ্যে মানুষটা সারাদিন কীভাবে বসে থাকে কে জানে!
আরদ্ধ চেয়ারে গিয়ে বসতেই আমি ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম।আরদ্ধ ফাইল খুলে চেক করতে লাগল।আমি সেই ফাকে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি।রুমের দেওয়ালগুলো গাঢ় রংগে রাঙানো।অনেকটা নীলের মধ্যে কালো রঙ মেশানো।প্রথম দেখায় যে কেউ নীল আর কালোর মাঝে দিধা দ্বন্দে পরে যাবে।চারদিকে অনেকগুলো ফাইল ছড়ানো।যথাসম্ভব সবকিছু গুছিয়ে রাখার চেস্টা করা হয়েছে।কিন্তু রুমটা পরিপাটী মনে হলেও কেমন যেন অগোছালো।
-মিস ইনা!
আরদ্ধের কথায় আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম।
-ফাইলে বেশ কিছু ভুল আছে।আমি সেগুলো রেড মার্ক করে দিয়েছি।দুই ঘন্টার মধ্যেসব ঠিক করে আনেন।কালকে অফ ডে ।ফাইলটা যেভাবেই ওকে আজকেই কমপ্লিট করতে হবে।
শীতল যান্ত্রিক কন্ঠে কথাগুলো বলে ফাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিল আরদ্ধ।
আমি ফাইলটা হাতে নিয়ে চিন্তায় পরে গেলাম।ঘড়িতে এখন দুপুর দুইটা বাজে।অফিসে যেতে যেতেই তিনটা পার হয়ে যাবে।ফাইল ঠিক করে আবার নিয়ে এসে ফাইনাল করা কোনভাবেই সম্ভব না।হঠাত করে আরদ্ধ বলে উঠল
-আপনি চাইলে আমার কেবিনে বসে ঠিক করতে পারেন।অফিস গিয়ে ফিরে আসার মত টাইম নেই আপনার হাতে।You can sit and stay here if you want.Rest is up to you.
কথাটা বলেই আরদ্ধ আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল নিজ কাজে।
আমি ছোট্ট একটা হাসি ফেরত দিয়ে আরদ্ধের সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়লাম।
ভাবতেই অবাক লাগে যে আরদ্ধের রুমে ঢুকার জন্যে একদিন ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে ছিলাম সেই আরদ্ধের আজ সবকিছু তে আমার নির্দ্বিধায় যাতায়াত চলে।
গাড়ির ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙ্গল আমার ।নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরদ্ধের বুকে।ছেলেটা বাম হাতে শক্ত করে ধরে আছে আমাকে।আমি আগ বাড়িয়ে আলতো করে তার ঠোটের কোনে ঠোট ছুয়ে দিলাম।আরদ্ধ আমার কপালে একটা গাঢ় চুমু একে দিল………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here