জেদ” পর্ব-১২

0
1129

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
.

-ভালোবাসি।
আরদ্ধের কথায় ঘোর ভাংল আমার।জানালার মিষ্টি খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে চোখ বুজে জীবনের রঙ্গিনতম মুহুর্তগুলোকে স্মরন করছিলাম।আরদ্ধ পেছন থেকে এসে দুহাতে আমাকে জাপটে ধরে ঘাড়ে ঠোট ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল।
আরদ্ধের গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে।নিদারুন ভালোবাসার উষ্ণতায় ছেলেটা আমাকে ডুবিয়ে রেখেছে। অথচ এই ছেলেই কিনা একদিন আমাকে বলেছিল ভালোবাসা কি তা সে জানে না।
-আমি চলে গেলে কখনো ফেরাবেনা আমাকে ?
আরদ্ধ অভিমান মেশানো কন্ঠে বলল।
-উহু।
-কেন?
বিষ্ময় উপচে পরছে তার কথায় ।আমি আমার পুরো ভার তার উপর ছেড়ে দিয়ে বললাম
-কারন আমার তোমাকে কখনো খোজার দরকার হবে না।তুমি কখনো আমাকে হারাতে দিবে না।থাকতে পারবে আমাকে ছেড়ে?
আমার প্রশ্নের জবাবে আরদ্ধ ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল
-ইনা তুমি আমার লাইফে অক্সিজেনের মতই ইম্পরট্যান্ট ।তোমাকে ছেড়ে এক সেকেন্ডও আমি নিজেকে চিন্তা করতে পারি না।
আমি আরদ্ধের দিকে ফিরে হেসে তার ঠোটে ঠোট ডুবালাম।আরদ্ধ দুহাতে আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে নিল।
.
.
বাসায় ফিরতে আজকেও একটু লেট হয়ে গিয়েছে।কিন্তু কাউকে কোন কৈফিয়ত দেওয়ার কোন ইচ্ছে করছে না।আরদ্ধ খুব যত্ন করে আমার জন্যে আজকের দিনটা সাজিয়েছে।ওর দেওয়া সারপ্রাইজ ,গিফট,সবকিছুর চেয়ে দামি ওর বাহুডোরে আবদ্ধ থাকা সেই মুহুর্ত গুলো আমার আজকের দিনটাকে বেশ স্মরনীয় করে তুলেছে।
বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপতেই আম্মু এসে হাসিমুখে দরজা খুলে দিলেন।আম্মুর আচরন দেখে বেশ অবাক হলাম আমি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই দেরী হয়ে গেছে।সন্ধ্যা হয়েছে আরও ঘন্টা খানেক আগে।কিছুক্ষন পর চারদিক এশার আযানে মুখোরিত হবে।তবে রহস্য উদঘাটন করতে বেশি বেগ পেতে হল না আমার ।বাসার ভেতরে গিয়ে দেখি ইমতিয়াজ আংকেল আর ফ্যামিলি এসেছেন আমাদের বাড়ীতে।আমি কিছু বলার আগে মা বলে উঠল
-আজ তোর জন্মদিন তাই জন্যে তোর বাবা ইমতিয়াজ আংকেলকে বাসায় দাওয়াত করেছেন।আরায ও এসেছে।ও ওয়াশরুমে গেছে।
মার কথার জবাবে আমি হালকা।
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।
বলেই আমি রুমের দিকে পা বাড়াতে যাব পেছন থেকে বাবা বলে উঠলেন
-ইনায়াত তুমি না সকালে কুর্তি আর জিন্স পরে গিয়েছিলে অফিসে তো শাড়ী কোথায় পেলে?
বাবার কথায় আমি থমকে গেলাম।পেছন ফিরে বললাম
-অফিস শেষে পার্টি ছিল।তো সেখানেই চেঞ্জ করেছিলাম।
বাবা কিছু বলার আগেই আরাজ এসে বলল
-আমি ইন্সটাগ্রামে ছবি দেখেছি আংকেল ।ওর কলিগরা বেশ জাকজমকের সাথে ওর বার্থডে সেলিব্রেট করেছে।আমার বার্থডেতে আমার কলিগরা খালি ফুল দিয়েই হাওয়া হয়ে গিয়েছিল।I must say Ina you’ve got very supportive colleagues.
আমি হেসে মাথা নাড়ালাম।
-ওহ ইনা আমাকে তোমার রুম দেখাবে না?আন্টি বলল তুমি নাকি অনেক সুন্দর করে রুম গুছিয়ে রাখ!
আরাজের কথার কোন জবাব না দিয়ে আমার পিছু পিছু রুম পর্যন্ত চলে আসল।
-That’s so rude,Ina.আমি তোমাকে আংকেলের হাত থেকে বাচালাম আর তুমি কিনা থ্যাংকিউ না দিয়ে হন হন করে এখানে চলে এলে।
আমি আরাজের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম
-দেখ আরাজ আমি সকালেও বলেছি তোমাকে আবারও বলছি Don’t call me Ina.Call me Inayat.
-ও তাহলে ম্যাডাম এ জন্যে রেগে আছেন!ওকে ফাইন ।ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম ।আর হবে না ।এখন একটু হাসেন।Come on Inayat Its your birthday.তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও চল আমরা কেক কাটব।
-আরাজ আমার প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে।আম সরি।বাট আমি কেক কাটতে পারব না ।
-বাট ইনায়াত আমি তোমার জন্যে কেক অর্ডার করেছি।Its on way .তাছাড়া আংকেল আন্টীকেই বা…..
-I’m extremely sorry Araz but আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমার পক্ষে আর দুই মিনিটও দাড়িয়ে থাকা পসিবল না।তুমি বাবা মা কে বলে দিও আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা।আমি মেডিসিন খেয়ে ঘুমাব।Hope they will understand If আমার হেলথ এর চেয়ে তোমাদের কাছে কেক কাটাটা বেশি ইম্পরট্যান্ট না হয়।
-Ok.you take rest.Health comes first.আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলব ।অকে?বাই।
-বাই ।আর আরাজ?
-yeah?
-তুমি বিয়ের ব্যাপারে বড়দের সাথে কথা বলেছিলে?
একরাশ উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।আরাজ পেছনে ফিরে বলল
-Leave that to me.You take rest.
আরাজ চলে যেতেই আমি দরজা লাগিয়ে দিলাম রুমের।
মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।মনে হচ্ছে যেকোন মুহুর্তে মাথা বিস্ফোরিত হয়ে লিটল ম্যান এর মত ফেটে যাবে।কোণরকমে শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি ।একটূ ফ্রেশ লাগছে কিন্তু মাথা ব্যাথা যেন পিছুই ছাড়ছে না ।ফার্ট এইড বক্স হাতড়েও কোন পেইন কিলার পেলাম না।আম্মুর কাছে থাকতে পারে।কিন্তু এখন রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না।অগ্যতা লাইট অগ করে ঘুমাতে যাব তখনি ফোনটা বেজে উঠল।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরদ্ধ বলে উঠল
-তোমার ব্যাগের সাইড পকেটে পেইন কিলার আর প্যারাসিটামল রাখা আছে।আর মিড পকেটে দুটো ডোনাট রাখা আছে।খালি পেটে মেডিসিন খাবে না ।ডোনাট খেয়ে তারপর খাবে।রাত জেগো না বেশি তাহলে মাথা ব্যাথা বাড়বে আরও ।ওকে?
-আরদ্ধ?
-হুম…
-I love you.
-Love you too babe.Happy birthday my love.

.
.
আজ আরাজ আরদ্ধের সাথে দেখা করতে চেয়েছে।আরদ্ধকে আগেই বলে রেখেছিলাম যে আমার এক ফ্রেন্ড তার সাথে দেখা করতে চায়।আরদ্ধ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেছিল
-আমার সাথে?কেন?
-তেমন কিছু না জাস্ট ক্যাজুয়াল মিট আপ।
-ইনা আমার জানা মতে তুমি তোমার কোন ফ্রেন্ডকেই তোমার আর আমার ব্যাপারে কিছু জানাওনি।এনিওয়েজ তুমি যখন বলছ আমার কোন প্রব্লেম নেই।‘ll be there.
আরাজ আমাকে লোকেশন এড্রেস করে দিয়েছে আগেই।অফিস শেষ করে আমি এখানে চলে এসেছি।আরাজ আর আমি আরদ্ধের জন্যে অপেক্ষা করছি ।আরদ্ধ একটা ইম্পরটয়ান্ট মিটিং এ আটকে গিয়েছে তাই তার দেরী হচ্ছে।
১০ মিনিট পর আরদ্ধ এসে পৌছাল।তার পেছনে দুজন গার্ড।আরদ্ধ ঢুকেই আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল আমার দিকে।আরদ্ধকে আসতে দেখে আরাজ উঠে দাঁড়াল।আরদ্ধ এসে আরাজের সামনে দাড়াল।আরাজ আর আরদ্ধ দুইজন মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে ।হঠাত করেই আমার মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।আরাজ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরদ্ধের দিকে। আরদ্ধের চোখে মুখে বিরাজ করছে নিদারুন যান্ত্রিকতা।….
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here