জেদ” পর্ব-১৮

0
920

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৮
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
বাবার জেদ সম্পর্কে যথাযথ অবহিত আমি।মানুষটা প্রচন্ড একগুয়ে।কোন কিছু যদি করার সিদ্ধান্ত নেন তবে সেটা উনি করেই ছাড়বেন। আমার বিয়ে নিয়ে তাই তোড়জোড় যেন একটু বেশিই।
আজ আরদ্ধ আমাকে ড্রপ করে চলে যায় নি। আজ ও এসেছে আমার সাথে। বাবার সাথে কথা বলার জন্যে।বাসায় ঢুকতে যাব তখনি আরদ্ধ পেছন থেকে হাত টেনে ধরল।আমি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই আরদ্ধ হালকা হাসল। এগিয়ে এসে আলতো করে আমার ঠোটের কোনায় ঠোট ছোয়ালো।
-My good luck chram.
কথাটা বলেই আরদ্ধ আমার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেল।
.
.
দুইবার কলিং বেল চাপতেই মা দরজা খুললেন। দাড়ালেন।আরদ্ধ মাকে দেখে হাসিমুখে সালাম দিল।আমার পাশে আরদ্ধকে দেখে বেশ অবাক হলেন মা।কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।চুপচাপ দরজা ছেড়ে দাড়ালেন।আমি আরদ্ধকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মা পেছন থেকে আমার হাত টেনে বললেন
-তুই জানিস না তোর বাবা বাসায় বন্ধু আসা পছন্দ করে না ।তারপরেও তুই ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছিস?তাও আবার ছেলে ফ্রেন্ড।আর ছেলেটা কে ?
আমি মার কথার জবাব দিয়ে বললাম
-সব জানতে পারবে ।বাবাকে ডাকো আগে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
কোন রকমে রুমে এসে হাত মুখে ধুয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ডাইনিং এ দৌড়ে আসলাম।
আরদ্ধ আর বাবা মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।আমি আরদ্ধর দিকে জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই ও আমাকে ইশারায় বলল সব ঠিক আছে।
আমি ধীরে সুস্থে গিয়ে আরদ্ধর পাশে বসলাম।
বাবা একনজর আমাদের দিকে চোখ বুলিয়ে আরদ্ধর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন
-তা বাবা তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
আরদ্ধ ঠোটে হাসি ফুটীয়ে বলল
-স্যার আমি আরদ্ধ।আরদ্ধ রেওয়াত।রেওয়াত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিক।লন্ডন থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বর্তমানে বিজনেস সামলাচ্ছি।ইনায়াত আর আমাদের কোম্পানি একসাথে কাজ করে।
এতটুকু বলে থামল আরদ্ধ।
বাবা আরদ্ধের দিকে আরেকবার সরু চোখে তাকালেন।কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই আবার বলে উঠলেন
-তা বাবা হঠাত আমার বাসায় যে!কোন কাজ ছিল?
বাবার এরকম অযাচাচিত প্রশ্নে বেশ অপ্রস্তুত হলাম আমি ।আরদ্ধ কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম
-বাবা বেশ কয়েকদিন ধরে তুমি আমার বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তা করছ।তোমার ঘাড়ের বোঝা নামাতে তাই ওকে বাসায় নিয়ে এলাম।দুই বছরেরও বেশি সময় আমরা একে অপরকে ভালোবাসি ।আমি আরদ্ধকে বিয়ে করতে চাই।
আমার কথা শুনে বাবা প্রচন্ড রাগ হলেন জানি।নিজের মেয়ের মুখে হঠাত করে এরকম কথা বলা বাবার মোটেও পছন্দের না ।কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে বলে উঠলেন
-খালি তুমি চাইলেই তো আর সব হবে না।সবার মত থাকতে হবে।
বাবা আরদ্ধের দিকে ফিরে বলতে লাগলেন
-দেখো বাবা আমার মেয়ে তোমাকে কি বলেছে আমি জানি না ।ও এখনো ছোট বাচ্চার মত ব্যবহার করে।এখনো সে নিজের ভালো মন্দ বুঝে উঠতে পারেনি ।তুমি ওর কথা শুনো না।
বাবার কথায় আরদ্ধ একটা স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলল
-জ্বি স্যার ঠিক বলেছেন আপনি।নিজের ভালো মন্দ ইনায়াত একটূও বোঝে না।সে জন্যেই আমি যখন ওকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলাম সে নানা অযুহাতে এরিয়ে যেত।কিন্তু আমিও হাল ছাড়ার পাত্র নই ।ওর একটা কথাও শুনিনি ।শেষমেষ ওকে বুঝাতে পেরেছি যে ভালোবাসাটা শুধু আমার একার না ।ও নিজেও আমাকে ভালোবাসে।
কথাগুলো বলে থামল আরদ্ধ।ওর ঠোটে এখনো সেই হাসিটা লেগে আছে।বাবা অবাক হয়ে আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছেন।তার কথার জবাবে এরকম প্রতিউত্তর কেউ কোন দিন দিবে বাবা তা ঘূর্নাক্ষরেও ভাবেননি।
নিজেকে সামলে নিয়ে বাবা নড়েচড়ে বসলেন।বেশ প্রস্তুত হয়ে আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন
-দেখ বাবা ইনায়াত আমার একমাত্র মেয়ে।আর আমি….
-আপনি অনেক যত্ন আর শাসনের সহিত ইনায়াতকে বড় করেছেন।আপনার শিক্ষা ইনায়াতের ব্যবহারের মধ্যেই প্রকাশ পায়।আপনি মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন যাতে সে মাথা উচু করে সমাজে দাড়াতে পারে।এ জন্যেই সে দিন রাত খেটে তার ড্রিম প্রোজেক্টে কাজ করছে।যাতে আপনাদের শ্রম আর অর্থ সার্থক হয় ।আপনি কখনোই চাইবেন না ইনায়াত কোন ভুল করুক।এমন কিছু করুক যেটা আপনার মর্যাদার হানি ঘটায়।ঠিক এই কারনেই আপনি অজানা একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করলেও সে আপনাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে নি।
বাবা যেন এবার আরদ্ধের কথায় থ বনে গেল ।কী বলবে ভাষা খুজে পাচ্ছেন না উনি ।শুধু অবাক দৃষ্টিতে আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
আরদ্ধ আবার এক রাশ হাসি টেনে বলল
-আংকেল ইনায়াতকে আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তখনি ঠিক করেছিলাম আমি ওকে বিয়ে করব।আমার ভালোবাসায় সাড়া দেবার পরেই আমি চেয়েছিলাম যেন পারিবারিক আর সামাজিকভাবে এক হয়ে যাই ।কিন্তু শুধু তার স্বপ্নের কথা ভেবে আমি চুপ ছিলাম ।
কথাগুলো বলেই আরদ্ধ এগিয়ে গিয়ে বাবার সামনে হাটু গেড়ে ভসে তার দুহাত নিজের দুহাতে নিয়ে চেপে বলল
-স্যার আমি আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশি আপনি ভালোবাসেন তাকে।আপনি যতটা আদর ভালোবাসা দিয়ে ওকে মানুষ করেছেন আমি সারাজীবন ওকে আগলে রাখলেও হয়তোবা তার সমান হবে না ।তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।আপনার সেই ভালোবাসা আর স্নেহ থেকেই বলছি
-এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না যেটা আপনার কষ্টকে ধূলোয় মিশিয়ে দিবে।আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনার পছন্দমত ছেলের সাথে বিয়ে দিলে সে সুখে থাকবে।কিন্তু শান্তি শুধু সে আমার কাছেই পাবে।I am her peace.আপনার কাছে অনুরোধ নিজের #জেদের জন্যে ইনায়াতের স্বপ্ন আর শান্তিকে বিসর্জন দিবেন না।প্লিজ ।
কথা শেষ করে আরদ্ধ উঠে দাড়াল।
-আমার যা বলার তা আমি বলে দিয়েছি।ভালো মন্দ নির্দ্বিধায় আপনি আমার থেকে ভালো বোঝেন।সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।আসি আসসালামু আলাইকুম।
আরদ্ধ আর কোন কথা না বলেই চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে গেল।ফিরে তাকালো না কোন দিকে।বাবা খানিকক্ষন চুপচাপ বসে থেকে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।মা চললেন তার পিছুপিছু ।আমি চুপচাপ বসে রইলাম।কেউ নেই শুধু আমি একা রয়ে গেলাম।এক রাশ শূন্যতা যেন নিমিষেই গ্রাস করে নিল আমাকে।তখনি টুং করে ফোনে একটা ম্যাসেজ এল।
আরদ্ধ খুদে বার্তা পাঠিয়েছে
-ভেবো না।তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছিনা কখনো।বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।
আমার অজান্তেই ঠোটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠল….
চলবে
{কালকে থেকে মানে আজকে সকাল ১০ টা থেকে আমার পরীক্ষা।আগে রিটেন দেন ভাইভা।সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here