জেদ” পর্ব-১৯

0
965

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৯
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
মাস দুয়েক কেটে গেছে।বাবা আরদ্ধের ব্যাপারে টু শব্দ পর্যন্ত করেন নি বরং কথা তুলতে গেলেই দেখি বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।হয়তো বাবা অপেক্ষায় আছেন আমার প্রোজেক্ট শেষ হওয়ার।হয়তো বাবার সময় দরকার আরো সিদ্ধান্ত নিতে৷ তাতে অবশ্য আমার কোন সমস্যা নেই৷ আরদ্ধকে পাওয়ার জন্যে আমি হাজার বছর অপেক্ষা করতে পারি।সেখানে মাস কয়েক তুচ্ছ। এদিকে আমার কাজের চাপও বেড়েছে ইদানীং।দম ফেলার সময় টুকু ঠিক ভাবে পাই না। অবসর সময়টুকুতেও মাথা গুজে থাকি ল্যাপটপে। তা নিয়ে অবশ্য আরদ্ধ খুব একটা মাথাব্যাথা নেই।সে চুপচাপ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক গুজে থাকে। এখনো মাস চারেক এর খাটাখাটুনি বাকি। আমার বিয়ে সাময়িক এড়ানো গেলেও আরদ্ধ বেশ প্রেশার খাচ্ছে বিয়ে নিয়ে৷ আরদ্ধর বাবা রেগুলার কোন না কোন মেয়ে খুজে আনে তার জন্যে। আরদ্ধর বাবা বেশ বড় মাপের একজন লোক।তার আশেপাশে সুখের মাছির অভাব নেই।অনেক নামি দামী হাই ক্লাস ফ্যামিলির লোকেরা তাদের মেয়েকে আরদ্ধের ঘাড়ে ঝুলাতে ব্যস্ত।কিন্তু আরদ্ধ শুরু থেকেই ব্যাপারগুলো খুব ভালোভাবে ম্যানেজ করে এসেছে।আমাকে টু শব্দ টুকু জানতে দেয় নি।ছেলেটা সব সময়ই এরকম করে।আমার ছোট খাটো বিপদ গুলো সানন্দে তুলে নেয় নিজের ঘাড়ে আর নিজের ভিতরে বয়ে যাওয়া ঘূর্নিঝড় গুলোকে হাসিমুখে দাবিয়ে রাখে।
কিন্তু সেদিনের ঘটনাটা যেন একটু ব্যতিক্রম ছিল।আরদ্ধর বাবার পেন্ট হাউজে কিটি পার্টি এরেঞ্জ করেছিলেন তার এক বন্ধু। উপলক্ষ ছিল তার মেয়ের জন্মদিন।আরদ্ধর মোটেও ইচ্ছ ছিল না যাওয়ার। কিন্তু বাবার জোড়াজুড়িতে অবশেষে বাধ্য হয় সে। সেজেগুজে টিপটপ হয়ে পার্টিতে গেলেন ফুলবাবু।পার্টিতে পৌছেই আরদ্ধ ছুট লাগাল এক কোনে।ফাকা পেয়ে আমাকে ভিডিও কল দিল।আমি কল রিসিভ করতেই ব্যাক ক্যামেরা অন করে নাক ফুলিয়ে বলতে লাগল
-এই মেয়ের সমস্যা কি?তখন থেকে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!জীবনে কোনদিন ছেলে দেখিনি নাকি?
কল রিসিভ করেই আমি একটা ফাইল চেক করছিলাম। আরদ্ধের কথায় পুরো থ বনে গেলাম আমি।ছেলে বলে কি!
স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা এক সুন্দরী ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আরদ্ধর দিকে।আরদ্ধের চাদমুখ খানি এই মুহুর্তে দেখতে না পেলেও আমি বেশ অনুমান করে বলতে পারছি ভ্রু কুচকে বেশ উষখুষ করছে সে। আরদ্ধের কাহিনি শুনে বেশ হাসি পাচ্ছে আমার। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-কি করবে বল!তুমি এতটাই হট যে তোমার দিকে তাকালে চোখে পলকই ফেলা যায় না।
আমার কথা শুনে আরদ্ধ সাথে সাথে ক্যামেরা রোটেট করে ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করল
-ফ্লার্ট করছ?
আমি হাসি মুখে মাথা নাড়ালাম।আরদ্ধ রেগে গিয়ে বলল
-বের হতে দেও একবার এই চিড়িয়াখানা থেকে তারপর দেখাচ্ছি তোমাকে ফ্লার্ট করা।
-বারেহ!আমার বয়ফ্রেন্ড আমিই ফ্লার্ট করতে পারব না!যাও গে তুমি তোমার কমলা সুদরীর কাছে।
আরদ্ধ অবাক জিজ্ঞেস করল
-Now who is this কমলা সুন্দরী?
আরদ্ধর কথা শুনে বুঝতে পারলাম সে মেয়েটার দিকে ঠিকভাবে তাকায়নি এখনো।তাহলে হয়তো জানতে পারত যার নালিশ নিয়ে সে আমাকে কল করেছে সেই মেয়ে কমলা রংগের ড্রেস পরে আছে।

আমি কিছু বলব তার আগেই দূর থেকে হালকা স্বরে আরদ্ধর নাম শুনতে পেলাম।ওর বাবা ডাকছে।আরদ্ধ কল না কেটে দিয়েই সেদিকে এগোলো।
আমিও কাজের দিকে মন দিলাম।বেশ কিছুক্ষন পর হালকা শোরগোল শুনে চোখ বেশ অবাক হলাম আমি।আরদ্ধকে জিজ্ঞেস করলাম
-কি হল?
আরদ্ধ শান্ত গলায় জবাব দিল
-Nothing .Relax
আরদ্ধ ফোনটা বেশ সুবিধামত এংগেলে ধরল যাতে আমি সবটুকু দেখতে পাই।কিছুক্ষন পরেই নজরে পরল সবাই সাজানো একটা ছোট টেবিলের সামনে জড়ো হয়েছে।টপস জিন্স পরা এক সুন্দরী কেকটা কাটল সানন্দে।মোমবাতি নিভিয়ে চোখ বুঝে মনের ইচ্ছাটুকুও চেয়ে নিল।Pure western culture.
কেক কাটার পর্ব শেষ হতে না হতেই স্যুট পড়া একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন সামনে।সবার মনযোগ আকর্ষন করে বললেন
-ladies and gentlemen as you all know আজকে আমার একমাত্র মেয়ে আলিসার বার্থডে।Please pray for her long and happy life .But I have another good news.আমি আমার বন্ধু আহমাদ রেজানে চাচ্ছি আমাদের সম্পর্কটাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে।তাই জিসার সাথে রেজানের একমাত্র ছেলে আরদ্ধর বিয়ে ঠিক করেছি।
কথাটা বলেই তিনি হাততালি দিলেন।সাথে যোগ দিলেন উপস্থিত সবাই।
.
.
হাতের পাশে পরে থাকা কোল্ড কফির কাপটা হাতে নিয়েছি মাত্র হঠাত এই কথা শুনে বিষম খেলাম আমি ।হাত ফসকে কিছু কফি ছিটকে পরল আমার হাতে আর ফ্লোরে।হঠাত কি হল কিছু বুঝতে পারলান না।আরদ্ধও দেখি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আমি অবাক হয়ে আরদ্ধকে জিজ্ঞেস করলাম
-এসব কি আরদ্ধ?তুমি জানতে আগে থেকে?
-I guessed so.
-তাহলে কিছু বলছ না কেন?
আরদ্ধ ধীরে সুস্থে জবাব দিল
-Relax Ina.এনাউন্সমেন্ট করছে শুধু কাজী ডেকে বিয়ে পড়াচ্ছে না এখন।
আরদ্ধের কথা শুনে আমি যেন বলদ বনে গেলাম।আল্লাহ জানে এই ছেলের মাথায় কখন কি চলে!
আরদ্ধ এক কোনে চুপচাপ গ্লাস হাতে মোবাইল টিপছে।খুব মনযোগ সহকারে সে কিছু একটা দেখছে।হঠাত করে তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল।যেন খুব মহামূল্যবান কিছু পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেকেন্ড দুয়েক পরেই তা আবার মিলিয়ে গেল।আরদ্ধ ফোনটা ছেড়ে চুপচাপ চারদিকে তাকতে লাগল।
কিছুক্ষন পরে আরদ্ধের বাবা তার হবু পুত্রবধুর হাত ধরে আরদ্ধের কাছে এল।উনার চোখে রাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেলেও হাসি মুখে বললেন
– আহ মাই সান।এত সুন্দর একটা মেয়ে কয়েকদিন পর তোমার বউ হতে যাচ্ছে। কোথায় একটু নিজেদের জানবে ভালো মন্দ গল্প করবে আর তুমি তাকে একা ছেড়ে এইখানে কি করছ?
আরদ্ধ তার বাবার জবাবে বলল
-বিয়ের আগে ছেলের বউএর ভালো মন্দ জানা তোমার কাজ বাবা। আমার জানার জন্যে তো সারাজীবন পরে আছে।
আরদ্ধর জবাবে তার বাবার মুখখানা বেশ কালো হয়ে গেল।কিন্তু নেহায়েত এ নিজেকে সামলে বললেন
– Anyways. You guyz talk আমি ওদিকটা একটু দেখে আসি। Enjoy.
বলেই আরদ্ধর বাবা সেখান থেকে চলে গেলেন।জিসা আরদ্ধের বেশ কাছে এগিয়ে আসতেই আরদ্ধ তাকে বার্থডে উইশ করল।জিসা ধন্যবাদ জানিয়ে বলল
-তখন থেকে দেখছি চুপচাপ এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছ? কোন সমস্যা?
আরদ্ধ বাকা হেসে বলল
– Actually I’m missing Piyash.ওর গার্লফ্রেন্ড এর বার্থডে অথচ ও নেই। How sad!
পিয়াসের নাম শুনে চমকে উঠল জিসা।অবাক চোখে সেকেন্ড কয়েক আরদ্ধর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে সামলে বলল
– কে…কে…মানাফ?কি বলছ তুমি?
আরদ্ধ এবার জিসার দিকে ফিরে বলল
– Oh come on baby doll.I know those nights were fun for you.Don’t be so shy.
আরদ্ধের কথা শুনে এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখি আরদ্ধের ঠোটের বাকা হাসিটা প্রসারিত হয়েছে। জিসাকে অবাক হতে দেখে আরদ্ধ বলে উঠল
– কি হল?অবাক হচ্ছ কেন? এত জলদি ভুলে গেলে?
Wait lemme show you.
বলেই আরদ্ধ জিসার সামনে তার ফোনটা তুলে ধরল।জিসা যেন এবার ভুত দেখার মত চমকে উঠল।কাপা কাপা গলায় বলে উঠল
– Call off this marriage. আমাদের দুইজনের জন্যেই ভালো। Otherwise i don’t care actually if my future wife is sleeping with some other guy but our dads must be.
আরদ্ধ কিসের প্রতি ইংগিত করছে জিসার বুঝতে অসুবিধা হয় নি। সে চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল।আরদ্ধ ঠোটে একটা হাসি ফুটিয়ে ফোনের স্ক্রীন সামনে এনে বলল
– ১৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে নামো।আমি আসছি।
বলেই টুক করে ফোনটা কেটে দিল আরদ্ধ।…
চলবে
(আমার পরীক্ষা চলতেছিল তাই গল্প দিতে পারিনি।কালকে থেকে রেগুলার গল্প দিব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here