#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৩
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
ঠিক ২৭ দিন ৫ ঘন্টা ৩৪ মিনিট পর আমি আর আরদ্ধ মুখোমুখি।বাবার অনিচ্ছায় নয় বরং অনুমতি নিয়েই এসেছি আজ ।আরদ্ধর মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই আমার।আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছি।আরদ্ধ চুপচাপ ফোন টিপছে।অফিস আওয়ার শেষ ।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আরদ্ধর ড্রাইভারকে ফোন করে জানতে পারলাম সে এখনো অফিসেই আছে। ।আরদ্ধ ইদানিং দেরী করে বাসায় ফিরে।নিজের কষ্ট লুকাতে কাজে ডুবে থাকে সে ।
আমি এক পা দু পা করে অফিসে ঢুকলাম।আরদ্ধ কেবিনে বসে ফাইল চেক করছে।দরজায় নক করতে যাব তখনি ভেতর থেকে আওয়াজ এল
-দুনিয়া ওলট পালট হয়ে গেলেও আমার কেবিনে ঢুকার জন্যে তোমার পারমিশন লাগবে না।
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ ওর সামনে গিয়ে বসলাম।এই ক দিনে সব কিছু কেমন যেন পালটে গেছে।আরদ্ধ আর মার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে হাজারো প্রশ্ন ভীর করছে।উত্তর জানতে চাচ্ছে সব অজানার ।আমি ছোট্ট একটা দম ফেলে আরদ্ধের দিকে তাকাতেই আরদ্ধ বলে উঠল
-জব ছেড়ে দিয়েছ?
-হ্যা
-কেন?
-যেখানে অস্তিত্বের ঠিক নাই সেখানে যোগ্যতা নিয়ে টানাটানি করা বেমানান।
আরদ্ধ নিষ্পলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বাবা ছোট থেকে আমার সব বিষয়েই আমার ইচ্ছার চেয়ে নিজের জেদকে প্রাধান্য দিয়েছেন।ভেবেছিলাম হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাতে হয়তো তিনি আমার মতামত জানতে চাইবেন।আমার ভালোলাগা মন্দ লাগাটাক প্রাধান্য দিবেন।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ।বাবার কাছে আমার ভালোবাসার চেয়ে তার জেদ বড় ।
-ডাক্তার কি বলেছেন?
-বাবাকে কোন প্রকার স্ট্রেস না দিতে।নেক্সট টাইম বাবার মেজর এটয়াক হতে পারে।তখন আর বাবাকে বাচানো জাবে না।
গলা ভারী হয়ে আসছে আমার।ঠিকিভাবে শব্দ বের হচ্ছে না মুখ থেকে।কান্না দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায় ।
-ইনা।
আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ঠোটে একটা হাসি ধরে রেখেছে।কিন্তু সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে বেদনা।না পাওয়ার যন্ত্রনা।
-আরদ্ধ…
-আরাজ ফিরে এসেছে?
-হ্যা সপ্তাহ খানেক আগের ফ্লাইটে ঢাকা এসেছে।বাবা ইমারজেন্সী কলে ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।
আরদ্ধ কোন কথা বলল না।চুপচাপ সে উঠে গিয়ে গ্লাসের পাশে দাড়াল।আমি গিয়ে তার কাধে হাত ছোয়ালাম।
-বিয়েটা কোনভাবে আটকানো যায় না ইনা?
-প্লিজ চলো অন্য কোথাও চলে যাই ।এই দেশ এই শহর ছেড়ে দূরে।যেখানে কেউ থাকবে না তুমি আর আমি ছাড়া।আরদ্ধ প্লিজ চলো সব কিছু ছেড়ে চলে যাই।আমার টাকা পয়সা গাড়ী বাড়ি কিচ্ছু চাই না।শুধু তুমি থাকলেই হবে।
আরদ্ধ পিছন ফিরে ছোট্ট একটা হাসি দিল।খুব কষ্ট করে হাসিট ফুটালেও আরদ্ধের মায়াবী চেহারাটা দেখেই আমার মন ভরে গেল।আরদ্ধ আমার দুগালে হাত দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-এরকম যদি করতেই হতো তবে কবেই তোমাকে নিজের করে নিতাম।এত অপেক্ষা করতাম না!
-তোমার আর বাবার এই জেদের মাঝে আমার লাইফ আটকে আছে।আমি কি চাই এইটা কেউ দেখে না।
-Hey Ina.Listen.I know তুমি কি চাও ।Trust me তুমি যেটা চাও আমিও সেটাই চাই।But the thing is you owe to your parents.They love you right?They have raised you .
-Aroddho Please.I don’t wanna hear those parenting things.সন্তান লালন পালন আর গুড প্যারেন্টীং এর মধ্য huge difference আছে।এটা তুমিও ভালো করে জানো ।আমার লাইফের স্ট্রাগল সম্পর্কে তুমি ভালো করেই জানো।ইভেন জব জয়েন করার জন্যে কতটা কাঠ খড় পুড়িয়ে বাবাকে রাজী করাতে হয়েছে সেটাও তমার অজানা না।শুধু বাবার জেদের জন্যে আমি নিউইওর্কের জবটা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছি।বাবা ছোট থেকেই আমার চেয়ে বেশি ইমতিয়াজ আংকেলের কথাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।মানুষ কি বলবে ,ইমতিয়াজ আংকেল কি ভাববে এর জন্যে বাবা আমাকে কখনো বাসা থেকে বের হতে দিত না ।আমার কখনো কোন খেলার সাথী ছিল না।কোণ ভালো ফ্রেন্ড ছিল না ।দুই দিন কারও সাথে ঘুরতে দেখলেই বাবা নিষেধাজ্ঞা জারি করত যাতে তার সাথে আর কখনো কথা না বলি।কত রাত আমি নিরবে কেদেছি এটা শুধু আমিই জানি ।
কাদতে কাদতে মাটিতে বসে পরলাম আমি ।আরদ্ধ তাড়াহুড়া করে আমার কাছে এসে বসল।দু হাতে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
-ইনা তুমি সব সময় নিজের দিক থেকে চিন্তা করেছ।তাই হয়তো আংকেলের দিকটা দেখোনি।তার দিক থেকে একবার চিন্তা করে দেখ ,তার কনসার্নটা একবার বুঝে দেখ।সবকিছু নরমাল মনে হবে।
আরদ্ধর কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠছে আমার ।হাত ছাড়িয়ে চেচিয়ে উঠলাম
-কিছু চেঞ্জ হবে না আরদ্ধ ।আমি চাইলেও আমার অতীত বদলাতে পারব না।কিচ্ছু পাল্টাবে না।আর বাবা যখন আমার দিকটা চিন্তা করেনি আমি কেন তার দিক চিন্তা করব?তার চেয়েও বড় কথা কি জানো ?I thought out of the entire world আমার মা আমাকে সাপোর্ট দিবে।বাট না।আমি ভুল ছিলাম ।সেও পরে আছে বাবার মত তার জেদ নিয়ে ।ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড নিয়ে ।
-ইনা ইনা ইনা রিলাক্স।শুহহহহহহহ…..Relax My girl relax.
আরদ্ধ দু হাতে আমাকে আগলে নিল।খুব শক্ত করে হড়িয়ে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে।
-Ina দুনিয়া এদিক হোক বা ওদিক আমি সব সময় তোমাকে ভালোবাসছি।আরদ্ধ সব সময় ইনার ছিল ইনারই থাকবে ।কিন্তু হয়তো আরদ্ধের ভাগ্যে ইনা লেখা ছিল না !
আরদ্ধর কথা শুনে আমি চোখ খুলে তাকাল্ম।আমি কিছু বলার আগেই আরদ্ধ বলে উঠল
-ইনা আমি জানি আমরা চাইলেই অনেক দূরে কোথাও গিয়ে নিজেদের ম করে থাকতে পারব।কিন্তু ইনা ট্রাস্ট মি তাতে তোমার মা বাবা কষ্ট পাবেন ।তুমি নিজেও হ্যাপি থাকবা না।ইনা আমি চাইনা আমার জন্যে তোমার বাবা মা তোমাকে হারাক ।আমি এত বড় দায় কখনোই নিতে পারব না।তোমার বাবার কিছু হয়ে গেছে তুমি নিজেকে মাফ করতে পারবে?
-বাট আরদ্ধ…
আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিল না সে।টুপ করে ঠোট দুটো মুখে পুরে নিয়েছে সে।তার গরম নিশ্বাস এসে পরছে আমার মুখে ।ঠোট ছেড়ে আরদ্ধ কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-ভালোবাসি ইনা।তবে হয়তো পূর্নতার প্রাপ্তি ছিল না ।
আরদ্ধর কথা শুনে আমি সরে আসলাম।উঠে দাঁড়িয়ে চোখমুখ মুছে নিজেকে সামলে নিলাম।ব্যাগ থেকে বিয়ের লাল কার্ডটা বের করে এগিয়ে দিলাম আরদ্ধর টেবিলের উপরে।এক তরফা আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে চলে আসতে লাগলাম।আরদ্ধ পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল
-ইনা হয়তো এই দুনিয়ায় আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন নি ।কিন্তু খুব করে চাইব যাতে ওপার দুনিয়ায় তোমাকে পাই।
টুপ টুপ করে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে আমার ।আর একমুহুর্তও থাকা সম্ভব না আমার।আমি একছুটে বেরিয়ে এলাম অফিস থেকে।পেছনে পড়ে রইল আমার ভালোবাসা,একটা দীর্ঘশ্বাস আর অনেক অপূর্নতা।…….
চলবে
{পার্ট টা দিতে দেরী হয়ে গেল।তার জন্যে সরি ।কেন জানি এই পার্টটা লিখতে ইচ্ছা হচ্ছিল না ।সরি এগেইন}