#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
প্রায় মিনিট ২০ এক আগে আরাজের বড় বোন মুনতাহা আপু আমাকে আরাজের রুমে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।পুরো রুম গাদা ফুল আর রজনগন্ধ্যা স্টিক দিয়ে সাজানো ।আরাজের বিয়ে নিয়ে তাদের জাকজমকের শেষ নেই। বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা।আয়োজনের কোন কমতি নেই। শুধু আত্মীয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য৷ গাড়ি থেকে নেমেই মুনতাহা আপু আর আরাজের ছোট বোন নিশিতা দরজা আটকিয়ে ধরল। কড়ায় গন্ডায় ১০ হাজার টাকা বুঝে নিয়ে তবেই রাস্তা ছাড়ল।আরাজ বেশ হাসি মুখেই সব সামলাচ্ছে।মুনতাহা আপু চলে যেতেই আমি রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।আরাজের রুমের ব্যালকনিটা খুব একটা বড় না।তিন হাত লম্বা আর দেঢ় হাত চওড়া।ওপাশের কোনে ধুলো জমে একাকার অবস্থা।আমি আর সামনে এগোলাম না।ওখানেই গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।বাইরে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে।আরাজের বোন আর অন্য আত্মীয়রা নাচ গান করছে।
আরও ১০ মিনিট দেরী করে আরাজ এল ।দরজা আগে থেকেই খুলে রেখেছিলাম ।অযথা সীণ ক্রিয়েট করার কোন ইচ্ছে নেই আমার।আরাজ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েই যেন একটা বড় সড় ঝটকা খেল ।পুরো রুম এর সব ফুল আমি ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি ।বিছানার উপর বড় একটা ফুলের ঝালর লাগানো ছিল ।সেটাও খুলে ফেলেছি।ঘরের এক কোনে সেটা গড়াগড়ি খাচ্ছে।আরাজ পুরো রুমটাতে চোখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকাল ।ঠিক ভুত দেখার মত চমকে উঠল সে ।উঠারই কথা ।বাসর রাতে নতুন বউ কে লাল শাড়ী পরে লজ্জা পাওয়ার পরিবর্তে কেউ যদি কালো জামা পরে শোক করতে দেখে তাহলে অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না
পরিস্থিতি সামলাতে আরাজ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
-ইনা ।তুমি ওখানে ওভাবে …..
আমি ধুলো ঝারতে ঝারতে এগিয়ে এলাম।
-আরাজ বাবা তোমাকে কি বলেছে আমি জানি না।কিন্তু আমি তোমাকে পরিষ্কারভাবে একটা কথা বলতে চাই এই বিয়েটা আমার ইচ্ছেতে হয়নি।হয়েছে বাবার জেদের জন্য।তুমি বিয়ে নিয়ে আনন্দ করতেই পার ।আমার তাতে কোন আপত্তি নেই ।কিন্তু আমার উপস্থিতি কামনা করলে সেটা তোমার বোকামি ছাড়া আর কিছু না ।আর হ্যা আরেকটা কথা।আমার নাম ইনায়াত ।সুতরাং প্রয়োজন হলে ইনায়াত বলেই ডাকবে ।ইনা নয়।
আমার কথা শুনে আরাজ বিরক্ত হয়েছে বেশ বুঝা যাচ্ছে ।পাগরিটা মাথা থেকে খুলে একদিকে ছুড়ে মেরে দুই কদম এগিয়ে এসে বলল
-Come on Ina.I’m your husband.I have the right .আর তাছাড়া বিয়ের জন্যে আমিও প্রস্তুত ছিলাম না।ইনফ্যাক্ট আমি তো সবকিছু ছেড়ে চলেই গিয়েছিলাম ।বাবা একদিন হুট করে ফোন করে আমাকে জানালেন মা নাকি খুব অসুস্থ ।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি যেন ফিরে আসি ।আমি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দেশে এসে শুনি তুমি নাকি সব মেনে নিয়েছ।আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছ।আমাদের বিয়ে দুই সপ্তাহ পর।বিয়ের চার দিন আগে আংকেল এসে জানালেন উনি ভেবেছিলেন হয়তো তুমি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ের জন্যে রাজী হয়েছ।তাই ধুমধাম করে তোমার বিয়ে দিবেন ।কিন্তু তোমার জেদের জন্যে he kept it simple.
একনাগারে কথা গুলো বলে থামল আরাজ ।বেশ বুঝতে পারছে মাথা গরম করে ফেলেছে সে।নিজেকে শান্ত করে বলল
-দেখ ইনা…।
-ইনায়াত
-ওকে ইনায়াত ।দেখো ইনায়াত এভাবে হুট হাট ডেকে এনে বিয়ে নিয়ে আমারও কোন আইডিয়া ছিল না।আমি যদি একটূ হলেও জানতাম যে বিয়েতে তোমার মত নেই তাহলে হয়তো আটকানোর চেস্টা করতাম। ।বিয়ে নিয়ে আমিও প্রস্তুত ছিলাম না।হ্যা বিয়েতে আমি হাসি মুখে বিয়েটা করেছি but you can’t blame me for that আমরা যা চাই সব সময় তা হয় না।অনেক সময় আমরা ভুল জিনিসের প্রতি মোহজালে আটকে পরি।আমরা ভাবি হয়তো সেটাই ঠিক।বিয়ে আর জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে।You can’t do anything over that.
-আমি তোমাকে কোন কিছুর জন্যেই ব্লেম করছিনা আরাজ।যদি ব্লেম করতেই হত তাহলে এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম না।আমি আরদ্ধকে ভালোবাসি।প্রচন্ড ভালোবাসি।আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শুধু তাকেই ভালোবাসব। তার জায়গা কেউ কখনোই নিতে পারবে না।কিন্তু বিয়েতে আপত্তি শুধু আরদ্ধের সাথে না হওয়ার কারনেই ছিল না আমার।বিয়েটা ঠিক করা হয়েছিল আমাকে না জানিয়েই। বলতে পার আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার অস্তিত্বকে বিলিন করে শুধু উপস্থিতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷এই বিয়েটা আমি করেছি শুধু বাবার মান রাখতে। আমাদের বিয়ে হয়েছে।আইন এবং ধর্ম উভয় মতেই তুমি আমার স্বামি।কিন্তু আমাদের মধ্যাকার স্বামী স্ত্রীর যে বন্ধন সেটাতে বাধতে পারব না আমি৷
এতটুকু বলেই থামলাম আমি। আরাজ হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যা হয়েছে তাতে হয়তো আরাজের কোন দোষ ছিল না।হয়তো বা ছিল।আমার কথাগুলো হয়তো আরাজের জন্যে অযৌক্তিক হয়তো সেও আমার মত পরিস্থিতির হাতে বাধ্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি মাথা পেতে চুপচাপ সব মেনে নিব। আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে আর আমি সেটা মুখ বুঝে সহ্য করব।
আরাজ আমার কথাগুলো কোনভাবে হজম করে আরও দুই কদম এগিয়ে এসে বলল
-ইনা আমি তোমার সিচুয়েশন বুঝি।হুট করে একটা নতুন সিচুয়েশনে কোপ আপ করা ইজি না।তোমার যতটা সময় লাগে নিতে পারো আমার কোন আপত্তি নেই বাট শুধু একটা রিকুয়েস্ট।In the meantime আমরা কি বন্ধু হয়ে থাকতে পারি না?
আরাজের কথা শুনে আমি হালকা হেসে বললাম
-অনেক বড় বড় সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে পরেছি আরাজ। যতবেশি সম্পর্ক বাড়বে আমার দম নিতে ঠিক ততটাই কষ্ট হবে। আমি এখন সম্পর্ক গড়তে নয় ভাংতে বিশ্বাসী।আশাকরি উত্তর টা পেয়ে গেছ।
আরাজ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল।আমি সেটা উপেক্ষা করেই সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আরাজ এখনো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ফ্রেশ হয়ে লাইট টা অফ করে দিও। আলো বড্ড চোখে লাগে আমার।
কথাগুলো বলে আমি উলটো দিকে মুখ ফেরালাম।ঘড়িতে কেবল ১২টা বাজে। আজকের রাতটা অনেক বড়। আমার জীবনের ইতিহাসের এক জঘন্যতম কালো সময়।…
চলবে