জেদ” পর্ব-২৬

0
886

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
সকাল থেকে আরদ্ধকে ফোন করার চেস্টা করছি।কিন্তু কোন না কোন ঝামেলা লেগেই আছে।ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখি চার্জ ২%.চার্জার খুজছি এমন সময় মুনতাহা আপু দরজায় নক করলেন।দরজা খুলতেই আপু বলে উঠলেন
-ঘুম ভেংগেছে তোমাদের?আরাজ ওঠেনি এখনো ঘুম থেকে?ফ্রেশ হয়ে নেও জলদি। তোমাদের রিসিপশন আজকে। সেখান থেকে আরাজ তোমাকে তোমার বাবার বাসায় নিয়ে যাবে। রেডি হয়ে নেও জলদি।
আমি কিছু বলতে যাব তখনি নিশিতা পেছন থেকে একটা পার্সেল হাতে এসে বলল
-ভাবী আপনার নামে পার্সেল এসেছে।
আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম
-আমাকে কে পার্সেল পাঠাবে?
নিশিতা ঠোট ঊল্টিয়ে বলল
-কে আবার৷ তোমার বর। ধর তোমার জিনিস৷
বলে আমার হাতে বাক্সটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল নিশিতা।মুনতাহা আপুও আর কিছু না বলে ঠোট উল্টিয়ে চলে গেলেন। আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে রুমে এসে দেখি আরাজ ওয়াশরুমে গেছে।প্যাকেটটার গায়ে ছোট একটা চিরকুট লেখা। তবে তাতে কোন নাম ঠিকানা নেই।
-“No matter what happens
my love for you will never die.”
চিঠিটতে কেমন একটা চেনা গন্ধ ভেসে আসছে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও অজানা এক কৌতুহল থেকে প্যাকেটটা খুললাম। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল নীল রঙ্গা একটা শাড়ি।তবে শাড়ীটা পুরোটা নিল নয়৷ শাড়ির পাড় আর আচলের দিকটা black shadow দেওয়া আর পুরো শাড়ি জুড়ে ছোট ছোট সাদা কালো স্টোন বসানো। শুধু শাড়িই নয় শাড়ির সাথে জুয়েলারি সেট ও রয়েছে৷ এক জোড়া প্লাটিনামের ইয়ারিং আর দুটো চুড়ি।আমি জিনিস গুলো হাতে নিয়ে বসে আছি৷অজানা একটা ভয় কাজ করছে মনের মধ্যে। প্লিজ যেটা আমি ভাবছি সেটা যাতে না হয়।
.
.
সেজেগুজে পুতুল সেজে বসে আছি স্টেজের মাঝখানে ।বিয়েটা কোন ভাবে কাটানো গেলেও রিসিপশনের কথা ঘূর্নাক্ষরেও আমার মাথায় আসেনি ।ভেবেছিলাম বিয়ে নিয়ে আমার নিতান্ত অনিচ্ছা দেখে আরাজ এর ফ্যামিলি রিসিপশন নিয়ে মাথা ঘামাবে না।কিন্তু বিধি বাম ।উলটো আমাকে এখানে কাঠপুতুলের মত সাজিয়ে রাখা হয়েছে।তবে আরাজ বেশ উপভোগ করছে সবকিছু।ওর ফ্রেন্ডরা এসেছে ।সবাই হাসি মুখে ছবি তুলছে ।কিছু ক্ষনপর আগমন ঘটল আমার আব্বু আম্মুর ।বাবা এসে হাসিমুখে আরাজ এর সাথে কোলাকুলি করলেন ।মনমত মেয়ে জামাই পেয়ে অনেক খুশি সে।মায়ের চেহারায়ও হাসি খুশি ভাব ।বাবা আমার কাছে এগিয়ে এলেন ঠিকই কোন কথা বললেন না।মা আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
-কেমন আছিস?
আমি শুধু ঠোটে হাসি টেনে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম ।বাবা মাকে দেখে আরাজের বাবা মা এগিয়ে এলেন ।বাবার খুশি যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল ।মা এগিয়ে গিয়ে আরাজের মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিলেন ।লাস্ট কবে বাবা মাকে এতোটা খুশি দেখেছিলাম এই মুহুরতে মনে করতে পারছি না।তাদের হাসি দেখে এত কষ্টের ভেতরেও যেন আমার মনটা ভরে উঠল ।আরদ্ধের কথা গুলো খুব মনে পরছে এই মুহুর্তে ।আমি স্বার্থপরের মত শুধু নিজের কথা চিন্তা করে গেছি ।অথচ আরদ্ধ নিজের না হয়েও নিজের চেয়ে আমার বাবা মায়ের খুশিটাকে প্রাধান্য দিয়েছে।একটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসলে মানুষ এই সীমা পর্যন্ত যেতে পারে আমার জানা নেই ।কথাগুলো ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল ।আবার শূন্যতা গ্রাস করে নিল আমাকে ।
ফোনে চার্জ নেই ।অযথা হাতে নিয়ে বসে আছি।আরদ্ধর সাথে কথা বলাটা জরুরি খুব ।না জানে ছেলেটা কোথায় আছে।কি করছে ।ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে ছুটে পালাই ।শক্ত করে আরদ্ধকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকাই ।আমি চাইলেও তা সম্ভব না ।আমার হাত পা বাধা।নিজেকে এতটা অসহায় হয়তো আগে কখনো অনুভূত হয় নি।
মাথা নিচু করে কথা গুলো ভাবছি ।ঠিক তখনি একটা চির পরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে এল
-How are you babygirl?
মাথা তুলে তাকাতেই আমি যেন পিলে চমকে উঠলাম ।আমার সামনে হাসিমুখে আরদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে ।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।তার চেয়েও অবাক করা বিষয় আরদ্ধ একটা ডার্ক ব্লু স্যুট পরেছে।আমি পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আরাজ ব্লাক কালারের একটা কোর্ট পরে আছে ।নিচে চকলেট কালারের শার্ট ।আমি একবার নিজের দিকে তাকালাম আরেকবার আরদ্ধর দিকে।আরদ্ধর ড্রেস কোড আমার সাথে মিলে যাচ্ছে ।তার মানে আমাকে শাড়ি আরাজ নয় আরদ্ধ পাঠিয়েছে !!
আরদ্ধ আমার দ্বিধাদন্দ বেশ বুঝতে পারছে ।ওর ঠোটের কোনে বাকা হাসি লেগে আছে।আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
-আরদ্ধ…।
আরাজ এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল
-Hey man .Thank’s for coming .It;s really a pleasure to have you here.It means a lot really.
-আমি তোমার জন্যে আসিনি আরাজ ।I’ve come to see my love if she is okay or not.
-Pardon please but তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ …
-Yeah I know she is married to you .But she will always be my girl .Just because you’re her husband doesn’t mean you own her .আর একটা জিনিস যদি ওর আগে ভুলেও একটা আচড়ও লাগে you will see my worst and I mean it .
আরদ্ধর কথা শুনে আরাজ বেশ অবাক হয়ে গেছে ।কোণ রকমে নিজেকে সামলে বলল
-আরদ্ধ তুমি এসব কি বলছ?ইনায়াত আমার…।মানে আমি কেন…?কি সব বলছ তুমি?!
আরদ্ধ আরাজের কথা কে পাত্তা না দিয়েই আমার দিকে ফিরে তাকাল ।ঠোটে হাসি ধরে রাখলেও আরদ্ধর চোখের মধ্যে একটা গভীর কষ্ট লুকিয়ে আছে।আরদ্ধ যতই চেস্টা করুক না কেন সেটা আমার কাছ থেকে লুকাতে পারবে না।আমরা দুজন দুজনের মুখোমুখি ।ইচ্ছে করছে দুজন দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি ।আরদ্ধ গাড় করে চুমু একে দিক আমার কপালে।কিন্তু আমরা দুজনেই জানি এর কোণটাই সম্ভব না।দুজন কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও মধ্যকার দূরত্ব অনেক বেশি ।মাঝখানে রয়েছে হাজার কারন ।অনেক বাধাধরা নিয়ম।আরদ্ধ জানে এভাবে ঠিক বেশিটা সময় দুজনের পক্ষেই নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।সে আমার হাত দুটো চেপে ধরে বলল
-আমি সব সময় তোমার সাথে আছি ।হুম?যাই হোক না কেন Don’t be afraid .Be brave.I love you always.
কথাটা বলেই আরদ্ধ আমার ঠোটের কোনে আলতো করে চুমু খেল ।পুরো শরীর কেপে উঠল আমার আরদ্ধর ছোয়া পেয়ে ।আরদ্ধ একটা সিদ্ধ হাসি দিয়ে চলে গেল।আশেপাশের সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার আর আরাজের দিকে ।আরাজ পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠল
-আরে আপনারা সবাই চুপচাপ কেন এত ?Please enjoy the party.আরে ফটোগ্রাফার সাহেব ছবি তুলেন ।
আশেপাশের মানুষজন ব্যাপারটা হজম করে ফেললেও চারজন মানুষ এখনো তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে আমার উপর বজ্রপাত ফেলছেন আমার আর আরাজের বাবা মা।…………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here