#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৯
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
মানুষ ঠিক কতটা নরক যন্ত্রনা সহ্য করলে মৃত্যুকে সোজা পথ হিসেবে চিন্তা করতে পারে সেটা পুরোপুরি ভাবে বোধগমা না হলেও সেই অনুভূতিকে খুব ভালো ভাবে অনুভব করছি আমি ।কোন এক নিকষ কালো আধারে আমি সজ্ঞাহীন অবস্থায় শুয়ে আছি আমি ।চোখের পাপড়ি জোড়া খোলার জন্যে টিমটিম করছে ।কিন্তু মন কোন ভাবেই সায় দিচ্ছে না।অজানা একটা ভয় তীব্রভাবে জেকে বসে আছে আমার পুরো শরীর জুড়ে।চোখ খুললে হয়তো কোন এক অনাকানঙ্খিত বাস্তবতার সম্মূখীন হবো।মুখোমুখি হবো এক নিদারুন যন্ত্রনার ।আমি চাই না কোন ভাবেই সেই তিক্ত সত্যতার সামনে দাড়াতে।চাইনা নিজের অস্তিত্বকে একেবারেই ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ।যদি এভাবেই বদ্ধ চোখে কাটিয়ে দিতে পারতাম বাকিটুক সময়!কতই না ভালো হত যদি অস্তিত্বের সাথে উপস্থিতিও মিলিয়ে যেত !হারিয়ে যেত কালের অতল গহ্বরে।
নিজের সাথে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ পেরিয়ে চোখ মেললাম আমি ।নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা সাজানো গোছানো ঘরে ।হাত নাড়াতে গিয়ে টান পরল কিছুতে ।ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি সরু একটা লম্বা নল আমার হাত বেয়ে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে স্যালাইনের বোতলে।কি হচ্ছে চারপাশে!কি বা হচ্ছে আমার সাথে! সব কিছু সম্পর্কে সন্ধিহান আমি ।শুধু একটা ভয় একটা অজানা আশংকা প্রতিটা মুহুর্তেই নাড়া দিচ্ছে।যেন এই বুঝি শেষ হয়ে যাবে সবকিছু ।ঘাড় ফিরিয়ে চারপাশটা দেখা শুরু করলাম ।হঠাত করে দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম আমি ।ঠিক যেন এই মুহুর্তটার ভয়ে পৃথিবী কুকড়ে যাচ্ছিল আমার ।ভয়ে একপাশে সরে গেলাম আমি ।আবছা আধার ঠেলে কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমার দিকে।এক সেকেন্ড তারপর আর এক সেকেন্ড এর প্রতীক্ষা।সবকিছু কে মিথ্যা করে আমার সামনে এসে দাড়াল আরদ্ধ ।নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ।দুহাতে চোখ দুটো ডলে নিয়ে আবার সামনে তাকালাম ।না এটা সেই চির পরিচিত চেনা মুখ ।আরদ্ধ ঠোটে একটা হাসি টেনে আমার সামনে এসে বসল ।মুহুর্ত দেরী না করে আমি জাপটে ধরলাম তাকে ।সব ভয় সব শংকাকে ফেলে আমি তার উষ্ণতায় ডুবে গেলাম ।
.
.
আরদ্ধ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল ।তার আলিংগনে আমি যেন নিজেকে ফিরে ফেলাম ।
-You ok?
আরদ্ধ দুই হাতে আমার গাল জড়ীয়ে জিজ্ঞেস করল ।আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম তার কথায় ।আরদ্ধ যেন এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল ।আলতো করে ঠোট ডুবাল আমার ঠোটে।সেকেন্ড কয়েক ঠোট বুলিয়ে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল ।
-আরদ্ধ আমরা কোথায়?আমি এইখানে কিভাবে এলাম?আর আরাজ……?
আরদ্ধ যেন জানতো আমার প্রশ্নগুলো সম্পর্কে।ওকে মোটেও বিচলিত হতে দেখলাম না।খুব শান্ত ভাবেই জবাব দিল সে
-টানা দশ দিন পর ঘুম ভেংগেছে তোমার ইনা।আরাজ তোমার শরীরে হেভি ডোজের ড্রাগ পুশ করেছিল আরাজ।আর ইঞ্জেকশন পুশ করার ঠিক পর মুহুর্তেই তোমার প্যানিক এট্যাক হয় ।দুই এ মিলে তোমার বডি রেসপন্স করা অফ করে দেয়।তোমাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলেছিল তোমার মেডিসিনের এফেক্ট কেটে গেলেও হয়তো তোমার জ্ঞান ফিরবে না।
কথাটা বলে থামল আরদ্ধ ।গলা ভারী হয়ে আসছে তার ।মাথা নিচু করে চোখের পানি আড়াল করল সে।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
-তুমি রেস্ট করো ।তোমাকে কিছুর চিন্তা করতে হবে না ।তোমার প্রতিটা চিন্তা প্রতিটা সমস্যা আমার ।তোমাকে এত টুকু আচড় ও লাগতে দিব না আমি ।হু?
আরদ্ধ আমার গাল জড়িয়ে বল কথাগুলো ।আমি উতসুক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি ।আরদ্ধ প্রতি উত্তরে আমাকে শুধু হালকা হাসি দিল ।আরদ্ধ উঠে চলে যাচ্ছিল আমি পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলাম ।
-আমার সাথে থাকবে প্লিজ?আমার ভয় করছে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেদে ফেললাম আমি ।আরদ্ধ মুহুর্ত দেরী না করে বুকে লুকিয়ে নিল আমাকে ।দুহাতে খুব যত্নে বাহুডোরে বন্দি করে নিল ।
-There’s nothing to worry about love.আমি প্রতিটা মুহুর্তে তোমার সাথে আছি ।After all you’re Mrs. Inayat Aroddho Reowyat.
আরদ্ধর কথায় চমকে উঠলাম আমি ।
-আরদ্ধ তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে ।আমি আরাজের ওয়াইফ ।আরাজ আর আমার বিয়ে হয়েছে।আমি জানি তুমি আর আমি খুব গভীরভাবে এক জন আরেকজন কে ভালোবেসেছি ।বাট ……
-আরাজ এখন জেলে ইনা।
-কিন্তু তাতে সম্পর্ক বদলে যায় না আরদ্ধ ।আমি মানছি তুমি আমি অন্তরং সময় কাটিয়েছি but that doesn’t change the fact. সে জাহান্নামে গেলেও আমার……
-কিচ্ছু না ।He is just nothing .Just nothing.আমি তোমার হাসবেন্ড ।তুমি আমার ওয়াইফ ।মিসেস ইনায়াত আরদ্ধ রেওয়াত ।
আরদ্ধ আমার দুই বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলল।ওর চোখে স্পষ্ট রাগ ফুটে আছে ।চোয়াল শক্ত হয়ে আছে তার।আমি চোখে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।আরদ্ধ একটা দম ফেলে বলল
-ইনা অস্তিত্ব যেখানে অনিশ্চিত বিয়ের বৈধতা সেখানে অমূলুক ।তোমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে তার নাম আরাজ নয় ।সুতরাং ভিন্ন নামের এক জন মানুষ নিজেকে তোমার স্বামী বলতে দাবি করতে পারে না।তাছাড়া ধর্ম বা আইন দুই মোতাবেক একজন বিবাহিত নারী দ্বিতীয় কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে না।
আরদ্ধর কথা শুনে সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার ।কোন কিছুর হিসাব মিলাতে পারছি না আমি ।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম
-যদি আরাজের সাথে আমার বিয়ে না হয় তবে আমি ম্যারিড হলাম কিভাবে?আর আরাজ যদি দ্বিতীয় জন হয় then who is the first one?
আমার কথায় হাসল আরদ্ধ ।ওর ঠোটের হাসি ধীরে ধীরে প্রাসারিত হলো ।যেন আমার করা প্রশ্নগুলো খুব পছন্দ হয়েছে তার ।
আমার কাধের চুলগুলো সরিয়ে গলায় ঠোট ডুবালো আরদ্ধ ।ওর ডান হাত আমার কোমড় জড়িয়ে আছে।বাম হাতের পিঠ দিয়ে আমাকে নিজের আরও কাছে টেনে নিল সে।ঘোর লাগানো কন্ঠে আমার কানে বলল
-ইনায়াতের লাইফে প্রথম বা দ্বিতীয় বলতে না কিছু ছিল না কিছু থাকবে ।ইনায়াতের সব কিছুতে সব সময় শুধু একজনেরই অধিকার ।And he is Aroddho.ইনায়াত শুধু আরদ্ধর ।You’re married to Aroddho……
চলবে