#ভোরের_আলো
৩০.,
– এই, তুমি বৃষ্টি পছন্দ করো?
– আগে ভাল্লাগতো। এখন আর বৃষ্টি হলে সেভাবে অনুভূতি কাজ করে না।
– কেনো কেনো?
– এমনি।
– চলো না বাহিরে যাই।
– চুপচাপ বসে লাঞ্চ করো।
– উহুম। আমি যাবোই। তোমাকেও যেতে হবে।
– পাগলামি করো না অর্পি৷ চুপ করে বসে খাবার শেষ করো।
– তোমার প্রেমিকা তোমার কাছে আবদার ধরছে একসাথে বৃষ্টিতে ভেজার। তার এই সামান্য আবদারটুকু কি তুমি পূরন করতে পারো না?
– রেগে যাচ্ছো কেনো?
-……………
– উফফ! আচ্ছা বাকি খাবারটুকু ফিনিশ করো। আমি যাবো।
চেহারায় একরাশ উচ্ছ্বলতা ফুটে উঠেছে অর্পিতার। খুব দ্রুত প্লেটের খাবারগুলো শেষ করছে সে।
– আস্তে খাও। গলায় আটকাবে তো।
– না, দ্রুত শেষ করতে হবে। যদি বৃষ্টি থেমে যায়?
– থামবে না। তুমি ধীরে সুস্থে খাও।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো সেদিন। সেইসাথে দমকা হাওয়া৷ খাওয়া শেষ করেই আশফাকের হাত টানতে টানতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো অর্পিতা। লেকের ধারের রাস্তাটা ধরে হাঁটছে দুজন। হুট করে রাস্তায় থমকে দাঁড়ালো অর্পিতা।
– এই জুতা খুলো।
– কেনো?
– খালি পায়ে হাঁটবো আমরা।
– খালি পায়ে হাঁটবো কেনো?
– খুলেই দেখো।
জুতো খুলতে চাচ্ছিলো না আশফাক। অর্পিতা একপ্রকার জোর করেই আশফাকের জুতোগুলো খুলিয়েছে। দুজন হাতে জুতো নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পিচ ঢালাই করা রাস্তায়। আশফাকের কাছে এগিয়ে এসে হাতটা জড়িয়ে ধরলো অর্পিতা।
– বহুদিনের ইচ্ছে ছিলো প্রেমিকের সাথে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবো।
– বহুবছর পর বৃষ্টিতে ভিজছি। চৌদ্দ বছর আগে শেষবারের মতো বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম৷ সবসময় বৃষ্টিতে ভিজার অনুভূতিগুলো সুন্দর হয়না অর্পিতা। কখনো কখনো চোখের পানি সবার আড়াল করতেও লোকে বৃষ্টিতে ভিজে।
থমকে দাঁড়ালো অর্পিতা। আশফাকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুহাত চেপে ধরে বললো,
– তোমার জীবনের বড় একটা অধ্যায় আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছো তাই না?
– অতীতটাকে আলোর মুখ দেখাতে চাই না। মনের এককোনের অন্ধকারেই লুকিয়ে রাখতে চাই।
– আপন ভাবো না আমাকে?
– কিছু গল্প থাকে মনের গহীনের ঘরটাতে তালাবদ্ধ করে রাখতে হয়। সেই গল্প কারো কাছে বলার মতো না। ধরে নাও আমার গল্পটাও তেমন।
– জোর করবো না। তবে এতটুকু বলবো যে গল্প তোমাকে কষ্ট দেয় সেই গল্প মনের গহীনে পুষে রেখে লাভ কি? বের করে দিলেই তো হয়। আমি হাসিখুশি আশফিকে ভালোবাসি। এমন গোমড়ামুখো আশফিকে না। তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে আমার সহ্য হয় না৷ কান্না পায়। একটা কথা মাথায় রেখো আশফি, অর্পিতা তোমাকে ভালোবাসে। সে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসতে জানে। কখনো নিজেকে একা ভাববে না। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো অর্পিতা তোমার হাত ছাড়বে না। যদি কখনো মনে হয় মনের গহীনের বাজে গল্পটা আমাকে বলতে চাও, তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারো। গল্প যতই খারাপ হোক না কেনো তোমার প্রতি কখনোই আমার বাজে কোনো ধারনা আসবে না। আমি আমার আশফিকে চিনি।
রাত গভীর হচ্ছে। অর্পিতার সেদিনের বলা কথাগুলো স্মৃতির দোরগোড়ায় বারবার ঘুরঘুর করছে। অর্পিতা তো বলেছিলো পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো কখনো অর্পিতা তার হাত ছাড়বে না। কখনো বাজে ধারনা আসবে না। তাহলে কি সব ভুলে তার হাতটা সেদিনের মতো শক্ত করে আঁকড়ে রাখবে? ফিরে এসে বলবে,
– নিজের সবটা উজাড় করে তোমাকে ভালোবাসি। তোমার শত অন্যায়েও কি করে তোমাকে ফেলে চলে যাই বলো তো?
হসপিটালে বসে আছে লিপি আর মুক্তা৷ অর্পিতার অবস্থার খুব বেশি একটা উন্নতি হয়নি৷ সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভেঙেছিলো অর্পিতার। মেয়ের কপালে হাত রেখে লিপি জিজ্ঞেস করেছিলেন,
– এখন কেমন লাগছে তোর?
ঘুমের ঘোরে অর্পিতা উত্তর দিলো,
– শোনো, তুমি একটা ভ্রম ছিলে। ভ্রমকে দিনভরে ভালোবেসেছি। দিনশেষে সত্যিটা জেনেছি। চলে যাও। কারো ভ্রমের মোহে ফের ডুবতে চাই না।
মেয়ের উত্তরে যা বুঝার বুঝে নিয়েছেন লিপি। এতক্ষণ আমজাদ সাহেব হসপিটালেই ছিলেন। তাই ব্যাপারটা চেপে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ আগেই বাসায় গিয়েছেন রাতের খাবার খেতে৷ উনি বেরিয়ে যাবার পরপরই মুক্তার পাশে এসে বসেছেন তিনি। যে ব্যাপারটা বহুদিন যাবৎ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো এখন বোধহয় সময় হয়ে গেছে ব্যাপারটা খোলাসা করার। মুক্তাকে খুব শান্ত জিজ্ঞেস করলেন,
– ছেলেটা কে মুক্তা?
খানিকটা হচকচিয়ে গেলো মুক্তা। সারাটাদিন যে প্রশ্নের ভয়ে ছিলো দিনশেষে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই গেলো।
মাথা নিচু করে উত্তর দিলো মুক্তা।
– কোন ছেলে মামী?
– অর্পিতার কার সাথে সম্পর্ক চলছে?
– নাহ, কারো সাথে না তো।
– তোর গলার স্বরেই বুঝা যাচ্ছে তুই কতটা ঘাবড়ে আছিস৷ যদি ওর জীবনে কেও না থাকতো তাহলে তোর গলা কাঁপতো না। যাই হোক, আমাকে বলতে চাচ্ছিস না তো বলিস না৷ আবিদ আসুক। তোদের পেট থেকে সেই কথা বের করবে।
(চলবে)