#ভোরের_আলো
৪১.
নাস্তার টেবিলে বসে আছে অর্পিতার বাসার সবাই। অর্পিতার মা আর পাখি টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে। গতরাতে একটুও ঘুম হয়নি অর্পিতার। বহু জল্পনা-কল্পনা করেছে কিভাবে বাবাকে বিয়ের কথা জানাবে? কোত্থেকে শুরু করবে? ফলাফল শূন্য। শত জল্পনা কল্পনা করেও লাভ হয়নি৷ কিছুই মাথায় আসেনি অর্পিতার। নিজেকে বেশ বুদ্ধিশূন্য মনে হচ্ছে। চোখের সামনে বিশাল তুফান বারবার ভেসে উঠছে। আশফাক নামক তুফান।
বাসার কলিংবেল বাজছে। সকাল সোয়া আটটা। এত সকালে কে এলো? টেবিলে বসা প্রত্যেকেই বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠেছে। পাখি দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুললো। চোখজোড়া গোলগোল করে তাকিয়ে আছে আশফাকের দিকে। এই লোকটা এখানে কেনো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে পাখি চিনে। আমজাদ কাকার বন্ধু কবির। কবির কাকার সাথে আশফাক কেনো?
দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কবির সাহেব বেশ উঁচু গলায় বললেন,
– কই আমজাদ ভাই? আছেন নাকি?
কবির সাহেবের আওয়াজ পেয়ে চেয়ার ছেড়ে ড্রইংরুমে গেলো আমজাদ সাহেব। হাসতে হাসতে কবির সাহেবের সাথে কোলাকুলি করে বললেন,
– কেমন আছেন?
– এইতো ভালো। তা বলেন, আপনার খবর কি?
– খবর তো ভালোই। ছেলেদেরকেও সাথে নিয়ে এসেছেন দেখা যায়!
পাখি খুব দ্রুত পায়ে ডাইনিংরুমে এসে বললো,
– দুলাভাই আসছে। সাথে কবির কাকারেও নিয়ে আসছে।
বসা থেকে উঠে গেলো ওরা চার ভাইবোন। আবিদের গলা থেকে ক্ষীন কন্ঠে বেরিয়ে এলো,
– সর্বনাশ!
লিপি আর মিনু তাকিয়ে আছে ছেলেমেয়েদের দিকে। ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করছে তাদের। মিনু বেশ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কিসের সর্বনাশ আবিদ? আর এই দুলাভাইটা কে?
চাচীর কথার উত্তর না দিয়ে দ্রুত পায়ে ড্রইংরুমের দিকে এগিয়ে গেলো আবিদ। নিজের রুমে দৌঁড়ে চলে গেলো অর্পিতা। দরজা আটকে লেপ মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে খাটের উপর। ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে ওর। আগের জায়গাতেই বোকা বোকা ভাব নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সায়েম আর মুক্তা। এবারে কৌতুহল শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে লিপি আর মিনুর। লিপি শক্ত করে মুক্তার হাত চেপে ধরে বললো,
– ঘটনা কি রে? কোনো অঘটন ঘটিয়েছিস তোরা?
– আমাকে যেতে দাও মামী।
– কি আশ্চর্য! তুই এভাবে কাঁপছিস কেনো?
– জানি না। আমাকে যেতে দাও।
নিজের হাত লিপির হাত থেকে ছাড়িয়ে আরেক রুমে যেয়ে দরজা আটকে দিলো মুক্তা। এবার দুই জা এর নজর আটকিয়েছে সায়েমের দিকে। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে সায়েমের দিকে তাকিয়ে আছে দুজন।
– কি? আমাকে এভাবে দেখছো কেনো?
– কিছু তো বল?
– ড্রইংরুমে যেয়ে দাঁড়াও। মিনিট দশেকের মধ্যে সব জেনে যাবে। যাও।
কথাটা বলে সে নিজেও ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছু পিছু এসেছে লিপি আর মিনু।
লিপিকে দেখামাত্রই আমজাদ সাহেব বললেন,
– লিপি চা দাও তিনকাপ। নাস্তাও রেডি করো । উনাদের সাথে বসে নাস্তা করবো।
– সব খাবো। আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। সেগুলো শেষ করে নেই।
– কি কথা?
আবিদের ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহুর্তে কবির সাহেবের মুখটা চেপে ধরতে। কি শুরু করেছে এরা? সকাল সকাল ঝামেলা নিয়ে হাজির হয়েছে। এটা কিছু হলো? বাবাকে কি না কি বুঝাবে কে জানে?
আশফাকের দিকে আঙুল তুলে কবির সাহেব বললেন,
– একে চিনেছেন?
– না।
– এরশাদ ভাইয়ের ছোট ছেলে আশফাক।
– ওহহো! তুমি! কেমন আছো?
– জ্বি, আছি।
– ওকে নিয়েই কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।
– কি কথা?
– ভাই, আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। যা বলার সরাসরিই বলি কেমন?
খানিকটা মনোযোগী ভঙ্গিতে কবির সাহেবের দিকে তাকালেন আমজাদ। লোকটার কন্ঠের দৃড়তা শুনে মনে হচ্ছে জরুরী কিছু বলবেন।
– হ্যাঁ,,, হ্যাঁ। অবশ্যই। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে?
– আপনার মেয়ে অর্পিতাকে ও পছন্দ করে।
– ওহ্, আচ্ছা আচ্ছা! আপনি কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন?
– প্রস্তাব না৷ বিয়ের কথা জানাতে এসেছি।
– মানে?
– মানে ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো। এখন ওরা বিয়ে করে ফেলেছে।
– বিয়ে করে ফেলেছে!
বিস্ময়ের তাল সামলাতে না পেরে আমজাদ সাহেবের পাশে বসে পড়লেন লিপি। স্বামীর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে মুখ খুললেন আমজাদ সাহেব।
– ও না জানিয়ে বিয়ে কেনো করলো? ও আমাদের জানালে পারতো। আমরাই তো ওকে বিয়ে দিতাম। আমাদের না জানিয়ে কেনো করলো? কি ব্যাপার আশফাক? তোমরা আমাদের আগে জানাওনি কেনো?
মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে আশফাক। সায়েমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি রে তুই জানতি এসব?
– হ্যাঁ।
– জানাসনি কেনো আমাদের?
– অর্পিতা না করেছিলো।
– ও না কেনো করলো সেটাই বুঝতে পারছি না। এমন যদি হতো আমি ওকে আশফাকের সাথে বিয়ে দিবো না বলেছি তাহলে নাহয় ও পালিয়ে বিয়ে করতে পারতো। যা তো, অর্পিকে ডেকে আন।
– আমজাদ ভাই, কথা এখনো শেষ হয়নি। কথা শেষ হোক এরপর অর্পিতাকে ডাকবেন।
– কি কথা?
– সবার সামনে বলতে চাচ্ছি না। আপনার সাথে আলাদা কথা বললে ভালো হতো।
– কেনো আংকেল? আলাদা কেনো বলবেন? সবার সামনে বলেন।
– এগুলো কেমন ব্যবহার? মুরুব্বির সাথে কেও এমন রুডলি বিহেভ করে?
– কারন আছে করার। আংকেল ভালো করেই জানে আমি এমন বিহেভ কেনো করছি।
মুচকি হাসলেন কবির সাহেব। আবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– হুম জানি৷ এমন ব্যবহার করাটা খুব স্বাভাবিক। দোষ আমার ছেলের। যেই দোষ করেছে আমি তো মনে করি এরচেয়ে খারাপ ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য আমরা। তুমি ভালো শিক্ষা পেয়েছো বিধায় আমাকে আর আমার দুই ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দিয়েছো।
– আবিদ আমার পাশে এসে বসো। মুরুব্বিরা কি বলে আগে শোনো৷ এরপর নাহয় তুমি যা বলতে চাও বলো।
– না, কানন ভাই আমি এখানেই ঠিকাছি।
– আহ্, আসো তো। আমি তো তোমার বড় ভাইয়ের মতই। আমার পাশে এসে বসো। আসো।
– ভাই, আপনার রুমে যেয়ে কথা বললে ভালো হতো। আমি চাচ্ছি না সবার সামনে বলতে।
– বাবা, সবার সামনেই বলো। এগুলো কারো কাছেই লুকানো থাকবে না৷ অর্পিতা নিজেই সবাইকে জানাবে। এর চেয়ে ভালো হবে আমরাই জানাই।
ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন কবির সাহেব। সবই ঠিকাছে। কিন্তু,,, রাত্রির সাথে ঐ মুহুর্তের ঘটনাটা কিভাবে বলবেন? এতগুলো মানুষ সামনে। আমজাদ সাহেবের সাথে আড়ালে বলাটাই বেশি ভালো ছিলো। তবে কাননের কথাটাও ফেলে দেওয়ার মত না। কথা তো জানাজানি হবেই। তবু ইতস্তত বোধ করছেন তিনি। একটু কেঁশে নিলেন কবির সাহেব। আমজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
– ভাই, আপনি আমি আলাদা বসলেই ভালো হয়।
– আচ্ছা, আসেন।
– না আব্বু। সবার সামনে কথা হবে।
– এমন বেয়াদবির কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না আবিদ৷ কবির ভাই যেহেতু আলাদা কথা বলতে চাচ্ছেন তারমানে সমস্যা তো কিছু আছেই৷ আর তুই কেনো বড়দের মধ্যে পড়তে চাচ্ছিস? চুপ করে বসে থাক এখানে।
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন আমজাদ। কবির সাহেবকে নিয়ে তার বেডরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ঘরের দরজা আটকে মুখোমুখি বসে আছে দুজন। উৎসুক নজরে আমজাদ তাকিয়ে আছেন কবির সাহেবের দিকে। খানিকটা কেঁশে বলতে লাগলেন কবির,
– ভাই বিয়ে হয়েছে একমাসও হয়নি অর্পিতা তো ডিভোর্স চাচ্ছে।
– কেনো?
– ঝামেলা হয়েছে একটা।
– কি?
– ঝামেলা অবশ্য পুরোটাই আশফাক করেছে। ভাই আপনি আমার পুরো কথাটা মন দিয়ে শুনবেন প্লিজ।
– হুম।
– একটা ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে ওদের সম্পর্ক তৈরী হয়েছে৷ অনেক আগে আশফাক একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। সম্পত্তির লোভে মেয়েটা ওকে ছেড়ে ওর বড় ভাইকে বিয়ে করে৷ এরপর থেকে ছেলেটার একটা বাজে নেশা হয়েছে। মেয়ে মানুষের নেশা। যেসব মেয়ে টাকাওয়ালা ছেলেদের পিছনে ঘুরে ওদের সাথে প্রেম করে। কয়দিন পরপরই প্রেমিকা বদলায়। ঘুরে ফিরে, টাকা উড়ায়, ফূর্তি করে। এরপর পুরানটাকে ছেড়ে নতুনটাকে ধরে৷ একদিন রেস্টুরেন্টে বসে অর্পিতা কোন ছেলেকে ফাঁসানোর কথা বলছিলো সেটা আশফাক শুনে ধরে নিয়েছিলো অর্পিতাও ঐ ধাঁচের। প্রেম করার সময়ই ছেলেটা ওর প্রতি দুর্বল হচ্ছিলো কিন্তু ঐ দিনের শোনা কথাগুলো ভুলতে পারছিলো না৷ এরমাঝে কি মনে করে বিয়েটাও করে ফেলেছে। ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়ার পর একটা ছেলেকে ও পালক এনেছিলো। আশফাকের ইচ্ছা ছিলো নকল বিয়ে করবে। ও ওর পালক ভাইকে বলেছিলো নকল বিয়ের কাগজ তৈরী করতে। ও আসল কাগজ তৈরী করে এনেছে। এটা আশফাক জানতো না৷ ও ভেবেছিলো বিয়েটা নকলই।
– অর্পি জানে বিয়ে নকল?
– না, ও জানতো না।
– হুম, পরে?
– বিয়ের পর ছেলেমেয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া তো স্বাভাবিক তাই না? ওদের মাঝেও তেমন কিছুই হয়েছে।
– হুম, তো এখন সমস্যাটা কি হয়েছে? আশফাকের ক্যারেক্টারে সমস্যা সেটা আমার মেয়ে জেনে গিয়েছে?
– ব্যাপারটা তো ভাই আরো খারাপ হয়েছে।
– আমি তো সেটাই শুনতে চাচ্ছি হয়েছে টা কি?
– বিয়ের ষোলোদিনের মাথায় আশফাক জানতে পারে অর্পিতা সেদিন কাকে ফাঁসানোর কথা বলছিলো৷ পুরো ব্যাপারটা ওর কাছে ক্লিয়ার হয়ে যায়। এরপর ও অর্পিতাকে বলে দেয় নকল বিয়ে করেছে। ওর কাছে মাফ টাফ চেয়ে একেবারে বিদায় নিয়ে চলে আসে৷ অর্পিতা প্রথমে আশফাকের কথা বিশ্বাস করেনি ভেবেছিলো কোনো কারনে রাগ করেছে তাই হয়তো এসব বলছে। পরদিন সকালে উঠেই ও আশফাকের বাসায় যায় ওর সাথে কথা বলার জন্য। সেখানে গিয়ে আশফাককে আরেক মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেছে। এখন তো ভাই আপনার মেয়ে ডিভোর্স চাচ্ছে।
– তো আপনি এখন কেনো এসেছেন? ডিভোর্স ঠেকাতে?
– ভাই, ও তো তখন জানতো না বিয়েটা সত্যিই হয়েছে। অর্পিতা হসপিটালে এডমিট হওয়ার পর জেনেছে। ও তো অর্পিতাকে ভালোবাসতো। কিন্তু তখন তো ভুল ধারনা ছিলো তাই এমন একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। আর ভুলটা যখন ভেঙে গেলো তখন অর্পিতার ভালো ভেবে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলো। তাই ওর কাছে সব সত্যি কথা বলে চলে যেতে চেয়েছিলো৷ ছেলে তো এখন বিয়ের সত্যিটা জানে। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
-আমার মেয়েও তার ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তাই ডিভোর্স চাচ্ছে।
– আপনি যদি মুরুব্বি হয়ে এভাবে অবুঝের মত কথা বলেন তাহলে কিভাবে হয়? আশফাক যে একটা সময় স্ট্রাগল করেছে সেটা আপনি কিছুটা হলেও জানেন৷ ছেলেটা আপনার মেয়ের মধ্যে একটু সুখ পেয়েছে। প্লিজ এভাবে ডিভোর্সের কথা বলবেন না৷ অসুস্থ হয়ে গেছে বেচারা। ওকে না পেলে নির্ঘাৎ মারা যাবে।
– আর আমার মেয়ে? সেদিন যদি ও মারা যেতো?
– ভাই এটা নিয়ে সত্যিই আমরা লজ্জিত। আপনি যদি এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেন তাহলে চুপ করে আপনার কথা শোনা ছাড়া আমি আপনাকে কিছু বলতে পারবো না৷
– আমার মেয়ে ভুল করেছে। ভুলটা বুঝেছে। আমি বাবা হিসেবে মেয়েকে ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ অবশ্যই দিবো। আশফাকের কাছে আমি মেয়ে দিবো না।
বিছানা ছেড়ে উঠে বাহিরে এলেন কবির সাহেব। আশফাককে ডেকে রুমের ভিতর নিয়ে এলেন তিনি৷ দরজা আটকে একহাতে আশফাকের কাঁধ জড়িয়ে ধরে আমজাদ সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়ালেন।
– এটা আমার ছেলে৷ এরশাদ ভাই ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়ার পর এই ছেলের দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম৷ একজন বাবা মায়ের ছেলের প্রতি যতটা দায়িত্ব থাকে সমস্ত দায়িত্ব সেদিনের পর থেকে আমি আর আমার ওয়াইফ পালন করেছি। সে হিসেবে ও আমাদের সন্তান। আমার কৌশিক আর এই ছেলের মাঝে আমরা কখনো কোনো পার্থক্য করিনি৷ আপনি যতটা আপনার মেয়েকে ভালোবাসেন আমরাও আমাদের ছেলেকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি৷ আপনি যদি আপনার সন্তানকে শুধরানোর সুযোগ দিতে চান তেমনি আমরাও চাই আমাদের ছেলেটাও শুধরাক। আমার ছেলে এমন ছিলো না। দেখেন তো একটাবার ওর দিকে তাকিয়ে। আধামরা হয়ে গেছে। আপনি যথেষ্ট বিজ্ঞ মানুষ। যা সিদ্ধান্ত নেয়ার বুঝে শুনে নিবেন। বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই তালাক্বের জন্য আপনার মেয়ে এপ্লিকেশন করবে এটা লোকের কানে গেলে নিশ্চয়ই ভালো হবে না। তাছাড়া একজন মেয়ে চাইলেই ডিভোর্স দিতে পারে না। আমার ছেলে শুধরে গিয়েছে। অর্পিতা ওকে তালাক্ব দিতে পারবে না। যদি আমার ছেলে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক কন্টিনিউ রাখে সেক্ষেত্রে ও ডিভোর্স দিতে পারবে। আমার ছেলে যখন কোর্টে নিজেকে শোধরানোর কথা বলবে তখন কোর্ট থেকে ওদেরকে নিম্নে একমাস একসাথে থাকার নির্দেশ দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে ওদের থাকতেও হবে। তাহলে কেনো শুধু ডিভোর্সের জন্য এপ্লিকেশন করে পুরো এলাকা জানাবেন? এরচেয়ে ভালো হয় না আপনার আমার ছেলের সংসার করেই দেখুক ও শুধরিয়েছে কিনা? ভাই গার্জিয়ানরা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে সেই বিয়ে তালাক্ব হয়ে গেছে এটা এক বিষয় আর মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে আবার একমাসের মাথায় ডিভোর্সও চাচ্ছে সেটা আরেক বিষয়। মেয়েকে কি আজীবন ঘরে বসিয়ে রাখবেন? বিয়ে দিবেন না? এলাকায় খোঁজ নিয়ে যখন পাত্রপক্ষ জানতে পারবে ওর বিয়ে থেকে ডিভোর্সের কাহীনি তখন কেমন হবে? লুকিয়ে বিয়ে করা মেয়েকে সমাজে কেও ভালো নজরে দেখে না ভাই।অদূর ভবিষ্যৎ এ কিন্তু সমস্যা আপনার মেয়েরই হবে। তাছাড়া বিয়ে হলেও একটা ডিভোর্সি ছেলের সাথেই বিয়ে হবে৷ সেই ডিভোর্সি ছেলে যে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি? এমনও তো হতে পারে ছেলে খারাপ ছিলো তাই আগের ওয়াইফের সাথে ডিভোর্স হয়েছে। তখন কি করবেন? মেয়েকে কি সেখান থেকেও নিয়ে আসবেন?
– ও আমার মেয়েকে ভালো তার কি গ্যারান্টি?
– আপনি মেয়েটাকে ওর হাতে দিন। ছয়মাস একবছর সংসার করুক। বুঝবেনই তো আপনার মেয়ে ভালো আছে কি খারাপ? একটা মানুষ আপনার মেয়ের হাত ধরে ভালো হতে চাচ্ছে। একটা সুযোগ তো দেয়া উচিত তাই না?
দু’চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে আশফাকের। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। হুট করেই ফ্লোরে বসে আমজাদ সাহেবের পা জড়িয়ে ধরলো।
– বাবা, আপনার মেয়েটাকে ভিক্ষা দিন প্লিজ। ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। ওকে সুখে রাখার কোনো ত্রুটি আমি রাখবো না। আমার সাধ্যমত সমস্ত চেষ্টা আমি করবো। আপনার কাছে যদি কখনো মনে হয় আমি ওকে ভালো রাখছি না, কষ্ট দিচ্ছি আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে আইসেন৷ আমি একবার বাঁধাও তখন দিবো না। প্লিজ একটা সুযোগ আমাকে দিন।
– আমজাদ ভাই, আমার ছেলেকে আমি আর এভাবে দেখতে পারছি না। আমার সহ্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। হয় আপনি আমার ছেলেকে একটা সুযোগ দিন আর নয়তো ওকে এখনি মেরে ফেলেন। এভাবে তিলতিল করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
নিজের পা আশফাকের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলেন আমজাদ সাহেব। কবির সাহেবকে ক্ষীন কন্ঠে বললেন,
– আমাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিন। আমি আপনাকে জানাচ্ছি।
(চলবে)