সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪
Writer-Afnan Lara
.
মিনি হঠাৎ দিবার কোল থেকে নেমে দিলো এক দৌড়
দিবা ভয় পেয়ে গেলো মিনির এমন আচরণে,,তার ভাবনায় ছেদ ঘটালো মিনি,,দূরের একটা বাচ্চা বিড়ালের কাছে গিয়ে সে থেমেছে,মূলত ওকে দেখেই লাফ দিয়েছিলো মিনি
দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”প্রেমিকা দেখে এত তেজ বাড়লো??এমনিতে তো এমন ভাব করিস যেন দূর্বল বিড়াল তুই,আজ দেখলাম কেমন তোর অসুখ,শয়তান একটা”
.
দিবা মুচকি হেসে ওদিকে যাচ্ছে মিনিকে নেওয়ার জন্য
ওর চোখ ছিলো মিনির উপর,সামনের দিকে আর খেয়াল করেনি,,দু কদম ফেলতেই ধাক্কা খেয়ে গেলো আহনাফের সাথে
আহনাফ ফোনের দিকে তাকিয়ে আসছিলো,ধাক্কা খেয়ে দিবা সরে দাঁড়ালো সাথে সাথে
আহনাফ ব্রু কুঁচকে বললো”এসময়ে ফাঁকা রাস্তায় কি করো তুমি?”
.
মিনিকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম
.
ঢাকার শহরের তো কিছু চেনো না,তাহলে এত সাহস আসে কই থেকে?খালামণি বললো তুমি নাকি বোকা??তুমি বোকা হলে বোকা কে কি বলবো?
.
আপনি সবসময় এমন করে কথা বলেন কেন?কে বলে আপনাকে আমায় নিয়ে মাথা ঘামাতে,নিজের কাজে মন দিন না
.
আহনাফ রেগে গিয়ে বললো”যার বাসায় আছো ওটা আমার বাসা”
.
না আপনার না,আমার খালার বাসা এটা
.
আহনাফ জ্যাকেট গায়ের থেকে খুলে হাতে নিয়ে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বললো”আমার কথায় মা চলে,,বেশি বকরবকর করলে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার প্ল্যান করবো, চিনো আমায়?”
.
দিবা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”আমার সাথে আর কথা বলবেন না,তাহলেই তো হয়”
.
আর কিছু না বলে দিবা পাশ কাটিয়ে মিনিকে নিচ থেকে তুলে চলে গেলো,আহনাফ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে
দিবার ব্যবহার এমন কেন সেটাই মাথায় ঢুকে না আমার
সুন্দর করে মিষ্টি করেও তো কথা বলতে পারে
মায়ের সামনে ভেজা বেড়ালের মতন দাঁড়িয়ে ছিলো যেন সে ধোয়া তুলসি পাতা
বাট কথার ছিরি দেখো,যেন কাঁটাযুক্ত গাছ,আমার কি,জাস্ট ইগনর করতে হবে এই মেয়েটাকে,পড়াশুনা আর কাজের ফাঁকে যে সময়টাতে বাসায় থাকি ঐ সময়টাতেও মেজাজ বিগড়ে রাখতে চাই না আমি,ঠিক বলেছে ও,ওর সাথে কথা বলাই ভুল
♣
দিবা পায়ের গতি বাড়িয়ে লিফটের জায়গায় সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ৭ম তলার দিকে চললো
আহনাফ ভূত দেখার মতন লুক নিয়ে দিবাকে সিড়ি দিয়ে যেতে দেখে ভাবলো”এই মেয়েটা আসলেই বোকা”
তারপর সে লিফটে উঠে দিবার আগেই বাসায় পৌঁছালো
.
সোজা নিজের রুমে ঢুকতে ঢুকতে হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো সে,,তিনটা বাজে,জলদি করে লাঞ্চ সেরে হালকা ঘুমিয়ে ডিউটিতে দৌড়াতে হবে
গায়ের জ্যাকেটটা খুলে ফ্যান অন করলো আহনাফ,,,গরমে একেবারে শেষ করে দিবে,,গায়ের শার্ট টা আর হাতের ঘড়ি খুলে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে গেলো সে
দিবা চোরের মতন বাসায় ঢুকেছে মাত্র,,মিনি এক দৌড়ে দিবার রুমের বারান্দায় চলে এসোছে
দিবা ও চুপচাপ রুমে চলে এসেছে,,মিনির পিছু পিছু সেও বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,,কড়া রোদ এসে মুখে পড়ছে বলে জলদি করে দিবা তার গায়ের গোলাপি ওড়নাটা খুলে গ্রিলের সাথে লাগিয়ে ধুরলো,তারপর বললো”এবার আর রোদ আসবে না,আমি বরং একটা পর্দা বানিয়ে ঝুলাবো এখানে তাহলে আর ওড়না দিতে হবে না
.
আহনাফ গোসল সেরে তোয়ালে পরে বেরিয়ে ভেজা শরীরে এক ছুটে বারান্দায় গেলো তার লুঙ্গি আনতে,,টাঙানো লুঙ্গিটায় হাত দিতেই ওপাশ থেকে চিৎকারের আওয়াজে সেও লুকালো,দিবাও লুকালো
চিৎকারটা দিবা দিয়েছিলো আহনাফকে শুধু তোয়ালে পরায় দেখে
আহনাফ লুকানো থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে বললো”গডজিলা দেখেছিলা??এমন করে চেঁচালে কেন?”
.
না আসলে….
.
তোমরা মেয়েরা আমাদের এমন বডি দেখে এ্যাট্রাক্ট হও সেটা তো বলবা না,
বলবা যে খালি গায়ে দেখে ভয় পাইছো
.
দিবা চোখ উঠিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো”আপনার বডি এত সুন্দর না যে আমি সেটা দেখে চেঁচাবো,আমি চেঁচাইছি কারণ এমন বিচ্ছিরি বডি আর দেখি নাই আমি”
.
ওহ তাই??আমার বডি কেমন সেটার সার্টিফিকেট আমি তোমার থেকে নেবো না অন্তত ,,যদি এতই খারাপ হতো আমাকে জবে নিতো না অফিসের লোকেরা
.
আহনাফ লুঙ্গি নিয়ে রুমে ফেরত গেলো আবার
দিবা ভাবছে কি এমন চাকরি যে বডি দেখে ক্যান্ডিডেড নেয়?
.
আহনাফ লুঙ্গি পরে নিয়ে ডাইনিংয়ে এসে ঢেকে রাখা খাবার উদম করে নিজের প্লেটে নিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে,দিবা তার রুমের দরজা ফাঁক করে সেটা দেখছে
আহনাফ পানির গ্লাসে হাত নিতেই দিবাকে দেখলো গ্লাসের প্রতিচ্ছবিতে,তারপর দরজার দিকে তাকাতেই ও সরে গেলো সাথে সাথে,মিনিকে সরাতে পারলো না,মিনি দরজার বাহিরে বসে আহনাফের খাবার দেখছে
আহনাফ পানি খেয়ে বললো”এই বিলাই,আমার কাছে ঘেঁষবা না একদম,নাহলে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারবো তোমারে,কথা বুঝছো তো?”
.
মিনি হাত চাটছে আর আহনাফের পাতের মাছের কাঁটা টার দিকে নজর দিচ্ছে,আহনাফ ভেংচি কেটে ভাবলো মিনি মনে হয় শুধু দিবার কথাই বুঝে
.
খাওয়া শেষ করে এক ছুটে আহনাফ বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো,চোখ জুড়ে ঘুম এসে গেলো তার
দিবা পুরো বাসায় হাঁটাচলা করছে,,দুপুরে না ঘুম গেলে নিজেকে সব চাইতে বেশি অসহায় মনে হয়,আমি বাদে সবাই ঘুমায়,অথচ আমার চোখে ঘুম নেই
.
দিবা আহনাফের রুমের সামনে দিয়ে পাঁচবার গেলো
বারবার ঘুরছে আর এদিক ওদিক দেখছে,,আহনাফের রুমে জোরে ফ্যান চলছে,দরজা খোলা,তাও দিবা আসা যাওয়ার সময় একবারও তাকাচ্ছে না ভেতরে
আহনাফের সাথে সাথে ওর রুমটাকেও দিবা পছন্দ করে না
ফ্যানের বাতাসে আহনাফের রুম থেকে একটা রঙিন কাগজ এসে দিবার পায়ের কাছে আটকালো
কাগজটার রঙ নেভি ব্লু,,একটা কার্ডের মতন
ওটাতে ইংরেজীতে কিসব লিখা
দিবা পড়ে যা বুঝলো কোথায় যেন পার্টি আছে,পার্টির টাইমিং আর ড্রেস কোড লিখা কার্ডটাতে আর কিছু বুঝলো না সে
কাগজটা রেখে দিতে গিয়ে দেখলো বিকাল পাঁচটা লিখা,আর পাঁচটা বাজতে দশমিনিট বাকি যেখানে আহনাফ মরার মতন ঘুমাচ্ছে
দিবা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,আহনাফের রুমের দরজার কাছে এসে আহনাফের দিকে চেয়ে থাকলো সে
অনেক ভোবে আলতো করে পা রেখে একটু কাছে গেলো ডাকার জন্য
ঠিক সেসময় ধুরম ধারুম করে আহনাফের ফোনে এলার্ম বেজে উঠলো
দিবা ভয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে
আহনাফ চোখ খুলে দিবার দিকে তাকিয়ে বললো”আমার রুমে তুমি কি করো?”
.
এই কাগজটাতে লিখা ৫টায় কোথায় যেন পার্টি,আর আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন বলে উঠাতে আসলাম
.
আমি এত ইরেস্পন্সিবল না,,ফোনে এলার্ম দেওয়া ছিলো আমার,
.
দিবা কাগজটা রেখে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে,,কিসের পার্টিতে যাবে লোকটা!উনার না অফিস আছে?
.
দিবা তার রুম পর্যন্ত যাওয়ার আগেই টের পেলো আহনাফ চলে যাচ্ছে,সেই আগের বেশ,,কালো জ্যাকেট ভিতরে টিশার্ট,,হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে কিছুটা জলদিতেই সে বেরিয়ে গেলো
দিবা এক ছুটে বারান্দায় এসে নিচের রোডটার দিকে তাকিয়ে থাকলো,,আহনাফ বাসার নিচে এসে বাইকে উঠে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে চলে গেলো
মিনি ও উঁকি মেরে দেখছে আহনাফকে
.
দিবা মিনিকে নিয়ে সোফার রুমে এসে টিভিটা অন করলো,,ঠিক সেসময়ে আহনাফের মা আসলেন,,ঘুম ঘুম চোখে বললেন”কি গো তোমার ঘুম নেই?”
.
দিবা মুচকি হেসে বললো”আমি দুপুরে ঘুমাই না”
.
বোরিং লাগছে তাই না?আমরা বুড়া বুড়ি দুজন,আর আমাদের জোয়ান দুটো ছেলে সারাদিন বাহিরে থাকে,তোমার একা একা আর কতই বা ভাল্লাগবে
আহনাফ এই যে গেলো একেবারে রাত করে বাসায় ফিরবে,আরিফের কাজ থাকে না তাও সে বাহিরে বাহিরে থাকে,বাসায় ওকে রাখাই যায় না,ছেলে মানুষ তো!
.
দিবা মনে মনে ভাবলো আহনাফ বাহিরে বেশি থাকলেই ভালো,,বাসায় থাকলে হুদাই ও ঝগড়া করে
♣
হোয়াইটলকস্ বার,, ইউ.কে এর একটা নাম করা বার,,তবে ঠিক একই নামে ঢাকার একটি বার রয়েছে যেটা কিনা ওতটা নাম করা না হলেও জনপ্রিয়তা মোটামুটি আছে
যাই হোক আজকে বারে থাকা সকল কর্মচারী ব্যস্ত অনেক
কারণ এখানে একজন নাম করা বিজন্যাস ম্যান পার্টি রেখেছেন,,ম্যানেজার মিঃ নাফি প্রায় পাগল
পার্টিতে আসা সকলের হাত ধরে পার্টির সিল মারার দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পড়েছে এর সাথে পার্টিতে ইনবাইট করা লোক কতজন এসেছে তার লিস্ট ও করতে হবে তাকে
পানি খাওয়ার ও সময়টুকু তার নেই
নিহাদ এসে নাফির বদলে একটা মেয়ের হাত ধরে সিল মারতে মারতে বললো”এরকম পেরেশান হয়ে যাচ্ছিস কেন নাফি??”
.
পেরেশান হবো না??কত লোক দেখেছিস?জীবনে এই বারে এত লোক দেখলাম না আমি
.
সবই ঐ বিজন্যাস ম্যানের টাকার লীলাখেলা,,
তা এই গরমের মাঝে মাস্ক পরে আছিস কেন?আবার সানগ্লাস ও দিয়েছিস,তোর চেহারা কি আর জীবনে কাউরে দেখাবি না?
.
আমার পার্সোনালিটি বদলানোর ক্ষমতা আমার নিজেরই নাই,,
ওসব বাদ দিয়ে এটা বল যে আজকে কি টিপস পাবো এই বিজন্যাস ম্যান থেকে?
.
যে পরিমাণ কিপটারে,,কতজন বসলো,কতজন বিয়ার মুখে দিলো তার হিসাব তুলতে বলেছে স্যারকে,স্যার তাই আমাদের সেই দায়িত্ব দিছেন
♣
দূর থেকে নাফিকে খেয়াল করছে একটি মেয়ে,,,সে নাফির হাতের দিকে তাকাচ্ছে বার বার,,কারণ নাফি চোখ আর মুখ তো ঢেকেই রেখেছে,,মুখে মনস্টার মাস্ক আর চোখে কালো সানগ্লাস দিয়ে
হাতের দিকে তাকানোর কারণ হলো ওর হাতে ট্যাটু লাগানো,বেশ দেখতে ট্যাটুটা,,বারের লাল নীল আলোয় ফর্সা স্কিনের উপর সেই ট্যাটুটা অনেক সুন্দর লাগছে
মেয়েটা সেটাতেই ফিদা হয়ে গেছে
তাই দেরি না করে সে এগিয়ে এসে বললো”হাই হ্যান্ডসাম,হাতে সিল মারো আমার”
.
নাফি একটু দূরে থাকা চেয়ারে বসে নাহিদকে ইশারা করলো,নাহিদ মেয়েটার হাত ধরতে যেতেই মেয়েটা হাত সরিয়ে বললো”আমার হাতে সিল মারলে সেটা শুধু মিঃ নাফি মারবে,অন্য কেউ না”
.
নাফি চশমাটা ঠিক করে আরেকদিকে ফিরে গেলো যেন সে কথাটা শুনতেই পেলো না
মেয়েটা টেবিলে থাবা দিয়ে বললো”আমি অভিযোগ করতে পারি জানো সেটা?”
.
নাফি চশমাটা খুলে বললো”তোহ??করো অভিযোগ,আমার মুড নাই এখন সিল মারার”
.
মেয়েটা রেগে মেগে সিল না মেরেই ভিতরে ঢুকতে গেলো,নাহিদ অনেক করে বুঝিয়ে সিল মারিয়ে তারপর ঢুকতে দিলো,,তারপর নাফির কাছে এসে বললো”তোর মাঝে মাঝে কি হয় বল তো??বারে কাজ করস তাও মেয়েদের প্রতি তোর এত এলার্জি?”
.
আমার সব কিছুতেই এলার্জি,,সময় আসেনি,সময় আসলে ঠিকই এলার্জি কমে যাবে
.
কবে আসবে সেসময়?
.
যেদিন আমার জীবনের সেই মেয়েটা আমার জীবনে ঢুকবে ঠিক সেদিন
.
সেটা আর হচ্ছে!বিয়ার খাবি?
.
নাহ!ঐদিন তোর কারণে আমি বিপদে পড়েছিলাম
.
কিসের বিপদ?
.
আমাকে জোর করে বিয়ার খাইয়ে দিয়েছিলি,,সেন্টার ফ্রেশ খেয়ে,মাউথ ওয়াস দিয়ে কুলকুচি করেও মায়ের কাছে ধরা খেয়ে গেছিলাম,ঠিক ধরে ফেলেছে আমি বিয়ার খেয়েছিলাম
.
কি হয়েছে ধরলে,ছেলেরা একটু একটু খায়,,তা আপনার মাস্কটা সরান,,আপনার চাঁদ মুখটা দেখি
বাই দ্যা ওয়ে তোকে তো আমি আগেও দেখেছি তাও এরকম লুকাস কেন?
.
তোর থেকে লুকাই না,,আমার রিলেটিভ কেউ আমাকে দেখে ফেললে বিপদ,আমি চাই না তারা জানুক আমি বারে কাজ করি
.
অনেক ছেলেরা তো কাজ ও পায় না,,তুই তো তাও সংসারের হাল ধরেছিস,এটাই অনেক
.
আত্নীয়রা এটা বুঝবে না,তারা শুধু বুঝবে আমি ঠিক কিসের জব করি
.
তোর এই লুকেও তো মেয়েরা দিবানা হয়ে যায়,,মাস্ক সরালে মনে হয় বারে আসবে তোর হাতে সিল মারানোর জন্য
.
হাহা!হাসালি,,বারের একটা মেয়েও সুবিধার না,ওদের দিকে আমার নজর যায় না,জাস্ট হাতের দিকে তাকাই আমি,তাও সিল মারার জন্য,জীবনে মুখের দিকে তাকাই না
কারণ এদের কাউকেই আমার ভাল্লাগবে না,ভালো লাগার কথা ও না
চলবে♥