সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৪
Writer-Afnan Lara
.
-আপনার বন্ধু কি দুনিয়াতে আমি ছাড়া আর কোনো মেয়ে পেলো না আপনার বাগদত্তা বানানোর জন্য?
.
-মিশকা রিয়েলে আমার উড বি কে দেখতে চেয়েছিলো বলেই এমনটা করতে হলো
.
-বুঝলাম।এখন চলুন শপিংয়ে যাই।আমার আবার জামা পছন্দ করতে ঢের সময় লেগে যায়।বিকাল পাঁচটাও বেজে যেতে পারে
.
-ফান করলে?যদি ফান করে থাকো তাহলে ঠিক আছে আর যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমি শপিংয়ে যাচ্ছি না।আমার হাতে ওতো সময় নেই।বিশ মিনিটের ভেতরে গায়ে হলুদে পরার জন্য একটা শাড়ী,বিয়ে আর বৌভাতে পরার জন্য দুটো জামা আর মেহেদিতে মানে কালকে পরার জন্য একটা জামা কিনে নেবে।
সেখানে এক মিনিট দেরি হলে তোমাকে ওখানে ফেলে আমি বাসায় ফিরে আসব
.
-এমন কেন আপনি?একটু তো সময় দেবেন।পছন্দ করতে সময় লাগে কারণ শুরুতেই ভুলভাল জিনিস কিনে ঠকতে চাই না।তাছাড়া দামাদামি বলেও তো কিছু আছে নাকি?
.
-ওসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমার বাজেট ভালো তোমায় নিয়ে।সুতরাং টাকার কথা ভেবো না
আর একটা কথা,কাস্টমার তিন হাজার বললে তুমি তোমার দাম পাঁচশ বলে বসে থাকবা এরকম যদি করো তো তোমাকে আমি ফেলে দেবো সাত তলা বিল্ডিং থেকে
.
-আরেহ না।টেনসন নিয়েন না।দাম বরং তিনশ চাইবো
.
তুমি!!
ওকে আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।চা খেয়ে নাও সোজা বসুন্ধরায় যাব
.
না।নিউমার্কেটে যাব।বসুন্ধরাতে সব জিনিসের কড়া দাম জানা আছে আমার।ইভান ভাইয়া বলেছিল নিউমার্কেটে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যাবে
.
নাহ।কম দাম হলে কি?সেটা বেশি দিন টিকবে না।ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়
.
দিবা আর কিছু বললো না।
চা শেষ করে দুজনে এবার বসুন্ধরাতে এসেছে
শাড়ীর দোকানে বসে দিবা পছন্দ করতে চেয়েও পারছে না।
এমনিতে অনেক সময় লাগায় সে আর আজ বিশ মিনিটের কথা শুনে জলদি করবে না কি করবে সেটা ভাবতে ভাবতেই দশমিনিট শেষ করে ফেলেছে সে
.
আহনাফ দূরে বসে বসে ফোন টিপছিলো।দিবার এরকম এদিক ওদিক তাকানো দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে দিবা এখন পর্যন্ত কিছুই পছন্দ করে উঠতে পারেনি
তার মানে তাকেই কিছু একটা করতে হবে
তাই সে এগিয়ে এসে ফটাফট একটা শাড়ী দিবার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”এটা ভালো”
তারপর জামার কর্নারের দিকে গিয়ে তিনটা জামা হাতে নিয়ে বললো”এগুলো ও ভালো”
.
দিবা চোখ বড় করে চেয়ে আছে
.
-কি হলো পছন্দ হয়নি?
.
-আপনার পছন্দ করা গুলো এতক্ষণ আমার নজরেই পড়েনি।বেশ দেখতে
.
-ব্যস হয়ে গেলো।নিন এগুলো প্যাক করে দিন
.
দোকানদার প্যাক করে দিতেই আহনাফ দিবার হাতে ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিয়ে বললো হাঁটা শুরু করতে। সে বিল পে করে আসছে
দিবা বললো সে দেখবে কত বিল হয়েছে।আহনাফ আর কি করবে ওকে দেখিয়েই বিলটা দিলো
পাঁচহাজার ছয়শ টাকা!!
দিবা চোখ কপালে তুলে বললো”এত??”
.
-তো?কি হয়েছে,তোমাকে বললাম না টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববে না।যাও হাঁটো।
.
দিবা হাঁটা ধরেছে আহনাফের কথা মতন।তার বেশ ভালোমতন মনে আছে কয়েকবছর আগে ইভান সবাইকে ঈদের শপিংয়ে নিয়ে গেছিলো।দিবাকেও নিয়েছিলো
ইতিকে ভালো দামের জামা কিনে দিলেও দিবাকে একদম কম দামি একটা জামা কিনে দিয়েছিলো সে
দিবাকে বোন বলে মানতে না পারাটাই বুঝি এর কারণ
কম দামি জামা পরতে পরতে দিবার অভ্যাস হয়ে গেছে
আর আজ এত দামি জামা পেয়ে তার অন্যরকম লাগছে
তাও একসাথে তিনটে জামা আবার শাড়ী ও
সব যেন স্বপ্নের মতন
এবার আহনাফের বাইকের উপর বসে দিবা মিটমিট করে হাসছে।নতুন জামা পেলে তার অনেক ভাল্লাগে আর আজ তো একসাথে এত!
.
আহনাফ বিল পে করে এসে দেখলো দিবা মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে
বুঝতে পারলো হাসির কারন তাও কিছু বললো না সে
নিজে নিজেই কিঞ্চিত হেসে বাইকে উঠে বসেছে এবার
দিবা একটু নড়ে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো
.
-কাল তো আমার সাথে একেবারে মণুদের বাসায় যাবে তাই না?
.
-হুম
.
-তোমার ঐ মিনিকে কি করবে তাহলে?
.
-খালামণি তো বললো উনি সাথে করে নিয়ে যাবে।মিনিকে তো একা রেখে যাওয়া রিস্কি
.
-হ্যাঁ।ভালো হয়েছে মা নিয়ে যাবে তা নাহলে আমাকে হাঁচির উপর হাঁচি দিয়ে যেতে হতো পুরো রাস্তায়
.
দিবার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে গেলো
কোনো মতে মুখটা চেপে হাসি থামালেও আহনাফ ঠিক বুঝতে পেরে গেলো
ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”হাসছো কেন?”
.
-না আসলে ঐদিন মিনি আপনার বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো তারপর আপনি জড়িয়ে ধরেছিলেন
.
-জঘন্য অতীত ছিল
.
-হাহাহাহাহাহা!!
.
-হাসি থামাও।একদম তোমার মত হয়েছে ঐ বিড়ালটা
.
বাসায় আসতে আরও সময় লেগে গেলো
একেবারে এখন বিকেল চারটা বাজে।আহনাফ সেই আগের মতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খাবার খেয়ে ডিউটির দিকে ছোটার জন্য।তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিলো সে
-আজ অনেক কাজ।কারণ কাল বারে অনুষ্ঠান আছে মিঃজহিরের
মণিতার মেহেদিতে অল্প কিছু সময় থেকে আবার ডিউটিতে চলে আসতে হবে আমায়
♣
দিবা তার জামাগুলো খালামণিকে দেখিয়ে আলমারিতে তুলে রাখলো।ঠিক করে রেখেছে সবুজ রঙের জামাটা কাল মেহেদি অনুষ্ঠানে পরে যাবে সে
.
-হ্যালো আদনান,কিরে এসময়ে ফোন করলি?আমি এখন অফিসে যাচ্ছি
.
-আরে ভাই আমি আর আরিফ মিলে মহাবিপদে পড়েছি।এত কাজ একা সামলানো যায়?তুই প্লিস আয়
.
-ইম্পসিবল!এমনিতেই আমি মনুর বিয়ের জন্য ছুটি নেবো
আজ আবার ছুটি নিলে বস আমাকে মনুর বিয়ের দিনই ছুটি দেবে না।আমি পারবো না মাফ কর।আর আরিফ ওখানে কি করে?নিশ্চয় ফোন ঘাটঘাটি করছে।ওরে ধোলায় দিয়ে কাজে লাগা।ব্যাটা অনেক কাজের শুধু একটু আইলসা এই আর কি।কিন্তু মাইর দিলে ওর শরীরে জোশ আসে।ধুুরুম করে মাইর দিয়ে দে দেখবি আজকেই বিয়ের জন্য স্টেজ বানাই ফেলতে পারবে
.
-ধুরু মিয়া!তোরে কইলাম তুই আয় আর তুই আমাকে উদাহরণ দিচ্ছিস।যা তোরে বিয়ের দিন লেগ পিস দেবো না।বাই
.
-দিস না।বাই
.
আহনাফ চলে গেছে মাকে অফিসের কথা বলে
এদিকে দিবা ভাবছে আজ আবার আহনাফের রুমটা চেক করবে নাকি করবে না
পরে ভাবলো
-না থাক।কি দরকার জেনে।হয়ত সত্যি উনি ব্যাংকে চাকরি করেন
এত কিছু খোঁজ নিয়ে তো আমার কিছু লাভ হবে না
হ্যাঁ আগে জানতে চেয়েছিলাম কারণ ব্ল্যাকমেইল করবো বলে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লোকটা ওতোটাও খারাপ না।আমাকে কত কি কিনে দিলো তাহলে শুধু শুধু তাকে বিরক্ত করা কিংবা তার কথা অমান্য করা একদমই মন্দ হবে
কি বলিস মিনি?
.
-মিঁয়াও
.
-তোর নখে মেহেদি লাগিয়ে দেবো।অরগানিক।লাগাবি?
.
-মিঁয়াও
.
-না থাক।তোকে ওসব লাগাবো না।তুই তো এমনেই সুন্দর।একটা বউ খুঁজলেই তো পারিস।তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে।তোর উচিত বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার পাতার, সেটা আমার কাছে থেকেই।তোকে কখনও দূরে যেতে দেবো না বুঝলি?
♣
আহনাফ আজ রিসিপশানে না বসে কন্ট্রোল রুমে এসে বসেছে।নাহিদকে বলেছে রিসিপশানে বসতে আর মিশকা আসলে বলতে যে আজ নাফি আসেনি
.
ঠিক যেমন ভাবা তেমন কাজ।বিকাল শেষ হতে না হতেই মিশকা এসে হাজির বারে।
রিসিপশানে নাফিকে না দেখে সে পেরেশান হয়ে নাহিদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ওর কথা
নাহিদ তো মিশকাকে দেখে তোতলানো শুরু করে দিয়েছে।তার মুখ দিয়ে মিথ্যা কথাই বের হচ্ছে না
তাও ঢোক গিলে আতঙ্কিত হয়ে সে বলেই দিলো আজ নাফি আসেনি
মিশকা গেলো চটে।মাথার চুলগুলোর ভিতর হাত ঢুকিয়ে টানতে টানতে একটা চেয়ার টেনে বসলো সে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার
নাহিদ আস্তে করে উঠে গিয়ে এক গ্লাস জুস এনে এগিয়ে ধরে বললো”নো এলকোহল,অনলি পিউর জুস।খেয়ে দেখেন ম্যাম”
.
মিশকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো নাহিদ নিজের জায়গায় ফেরত এসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওকে দেখছে
.
-তুমি আমাকে পছন্দ করো?
.
–
-না আসলে…
.
-আই নো।বাট কি করবো।আমি লাইক করি ওরে আর তুমি লাইক করো আমাকে।আমার আসলে কি করা উচিত সেটাই বুঝছি না
.
-” যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে বিয়ে করোনা
যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করো”
.
মিশকা হাসলো তারপর বললো”যাকে ভালোবাসিনা সে আমাকে বাসলে আমি কি করবো?শুধু তার ভালোবাসা দিয়ে তো আর হবে না।আমার নিজের ও তো মন আছে নাকি?”
.
-সে মন দিয়ে কি লাভ হলো ম্যাম।নাফি তো আপনাকে লাইক করে না
এখন সেই ক্ষেত্রে আপনার কথাটা আমি কপিপেস্ট করে দিতে পারি।যেখানপ নাফি আপনাকে লাইক করে সেখানে আপনি কেন শুধু শুধু ওকে ভালোবেসে পড়ে আছেন
.
-হুম।ভাববার বিষয়।
♣
-এই মেয়েটা কখন যাবে?কন্ট্রোল রুমের কাজ তো শেষ।এবার আমায় রিসিপশানে গিয়ে বসতে হবে
কিন্তু এখন যাওয়া যাবে না।গেলেই পড়বো মাইনকাচিপায়
.
-চলো নাহিদ, আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে।নাও ধরো আমার কারের চাবি।লেটস্ গো
.
মিশকা বেরিয়ে গেলো বার থেকে।
নাহিদ চাবিটা নিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে
আহনাফ পা টিপে টিপে ওর সামনে এসে বললো”এ তো সোনায় সোহাগা!! জলদি যা”
.
-বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।একটা চিমটি কাটবি?
.
-নে দিলাম চিমটি, যা দেরি করিস না।
.
নাহিদ ছুটে গেলো।আহনাফ খুশি হলো এই ভেবে যে মিশকা নাহিদকে সুযোগ দিয়েছে।এবার এতে করে যদি তাকে ভোলে
♣
দিবাকে মণিতা ফোন করে বললো কাল জলদি আসতে,মেহেদি লাগাতে সময় লাগবে বলে দিবাকে আগেই আসতে বললো সে
দিবা বললো সে আহনাফের সাথে আসবে,একা আসা কোনো মতেই সম্ভব না
মণিতা আর কি বলবে তাতেই রাজি হলো।আসলে তাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলো আদনান
কিন্তু তাও কাজ হলো না।দিবাও আসবে না,আহনাফ ও না
আসলে একেবারে রাত করেই আসবে ওরা
আর কি লাভ হলো।
.
খালামণি মায়ের সাথে কথা বলছে ভিডিও কলে
তা বুঝতে পেরে দিবা ছুটে গেলো।খালামণিকে ইশারা করলো যাতে ওর এই রুমে আসার কথা না বলে
দিবা দূর থেকে মাকে দেখছে।গায়ে হালকা হলুদ রঙের শাড়ী পরে মা বিছানায় বসে বসে খালামণির সাথে কথা বলছেন
মা একটা সময়ে জিজ্ঞেস করলেন-দিবা কেমন আছে
.
খালামণি ফোনটা দিবার দিকে ধরে বললো”দেখো তোমার মেয়েকে।ভালো ভালো খাইয়ে মোটা করে ফেলেছি”
.
-মা দিবাকে দেখে চমকে উঠলেন।এভাবে দিবার কথা জিজ্ঞেস করেই সাথেসাথে ওকে দেখতে পাবেন তা একদমই ভাবেননি তিনি
তাও দশ সেকেন্ড ওকে দেখে নিয়ে লাইনটা কেটে দিলেন
দিবা খুশি হলো মা ওকে দেখেছে।খুশি হয়ে ছুটে চলে গেলে নিজের রুমের দিকে
-মাকে দেখেছি এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে
হয়ত আমি আরও বেশি খুশি হতাম নিজের চোখে নিজের বাবাকে দেখতে পেলে।আচ্ছা তিনি কি অন্য একজনকে বিয়ে করে সন্তানাদি নিয়ে এখন সুখে আছেন?
তিনি কি জানেন তার একটি মেয়ে আছে?হয়ত জানেন না।জানলেও বা কি।উনি কি সেধে খবর নিতে আসবেন?
নাহ!ভুল ভাবছি।হয়ত জানলে তার বুকে ধাক্কা লাগবে কিন্তু তার সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে হয়তবা বুকের ভেতরই চেপে রাখবেন
আই উইস জীবনে একটিবার তার দেখা যদি আমি পেতাম
চলবে♥