সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-৩৫

0
440

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৫
Writer-Afnan Lara
.
-মা তোমার কি মনে হয় না আমাদের একবার খুলনায় যাওয়া উচিত?
.
-কেন যাবি সেটা তো জানি তাই জিজ্ঞেস করছি না। কিন্তু এখন গিয়ে কি হবে?মৌসুমী তার সংসার নিয়ে সব ভুলে এখন নিশ্চয় ভালো আছে।তাহলে কেন প্রতিদিন এক কথা বলিস তুই।মৌসুমীর ফুটফুটে বাচ্চা গুলো ও এখন বড় হয়ে গেছে। ওদের দেখে তোর আরও খারাপ লাগবে তাছাড়া ওর বাসা কোথায় সেটা তুই জানবি কি করে?
জানলেও বা কি!মৌসুমীর সাথে আমরা যেটা করেছি তোর কি মনে হয় জীবনে তোর মুখ দেখতে চাইবে?
.
-হুম।কি করবো।মনকে বোঝাতে পারি না যে
.
মা চোখের চশমাটা নিয়ে সাদা কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন”সব তো আমার দোষেই। আমি যদি সেদিন মেনে নিতাম, আমার ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট হতো না তাহলে।এই আঘাত আমি সইতে পারি না আর।বারবার তোর ফ্যাকাসে মুখটা দেখলে আমার সেসব মনে এসে যায়
কেন আমি সেদিন তোকে বাধ্য করেছিলাম মৌসুমীকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।যদি হাসিমুখে মেনে নিতাম তাহলে হয়ত আজ নাতিপুতি নিয়ে আমার বেশ ভালো দিন কাটত।
.
-মৌসুমীর বড় বোন মৌয়ের কথা মনে আছে তোমার?উনার শ্বশুর বাড়ি তো ঢাকায়।যদি একদিন তার দেখা পেতাম তাহলে তার থেকে মৌসুমীর কথা শুনতে পারতাম।মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম তাহলে।
আফসোস জীবনের সব কিছু হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব

মিঃ জহির ফোন করে জানালেন কাল যেন কোনো কিছুতে কমতি না থাকে।আর কেকের অর্ডারটা যেন বার থেকেই দেওয়া হয়
সব দায়িত্ব বারের কর্মচারীদের উপর ফেলে তিনি নিশ্চিন্তে ওয়াইফকে নিয়ে কক্সবাজার গেছেন একদিনের ছুটিতে
সে কারণে আহনাফ আজ অনেক ব্যস্ত।নিহাদ ও আসছে না।এদিকে প্রিতম আর বাকিরাও কাজে লেগে আছে
আরেকটা হেল্পিং হ্যান্ড হলে বেশ হতো
আহনাফ নিজের কাজ ফেলে কন্ট্রোল রুম থেকে টুটুলকে আনিয়ে রিসিপশানে বসিয়ে রেখে গেলো কেক অর্ডার দিতে
ব্যাকারিতে গিয়ে কেক অর্ডার করে চলে যাওয়ার সময় ওর নজর পড়লো ছোট একটা কেকের উপর।
ছোট সাইজের কেক।এক পাউন্ড হবে
আজ বসুন্ধরাতে দিবা খাবারের দোকানগুলোতে কেক দেখছিলো বারবার।লাল- হলুদ কেক দেখে বারবার ওসবের দিকে তাকাচ্ছিলো সে
পছন্দ নাহলে কেউ এতবার তাকায় না তা জানা আছে ওর
আর তাই এই কেকটা সে প্যাকেট করে নিয়ে নিলো
দিবাকে দিলে হয়ত সে অন্য কিছু ভাবতে পারে তাই ভেবে আহনাফ মাকে দিবে আগে সেটা ঠিক করলো
.
কেকটা সমেত আবারও বারে ফিরে এসে এক পাশে কেকের প্যাকেট রেখে কাজে মন দিলো সে
ওদিকে দিবা তার বাগানে ঝাড়ু দিচ্ছে লাইট মেরে মেরে
কারণ মিনি সবে মাত্র একটা টবে উঠতে গিয়ে টবের গাছ সমেত ফ্লোরে কাইত হয়ে পড়ে গিয়েছিলো
টবটা পাতলা ছিলো, মাটিও কম ছিল সেখানে যার কারণে মিনি সহ পড়ে তুলকালাম করপ ফেলেছে
মাটি আর মাটি এখন
অন্ধকারে ফোনের লাইট দিয়ে টবটার সব মাটি একসাথ করে আবার সেগুলো টবে তুলে নিল দিবা

-স্যার আজকের সব কাজ ডান।আর কিছু আছে?
.
বস নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললেন”নাহ।আজকের জন্য সব কাজ শেষ।তুমি আজ আসো তাহলে।এমনিতেও আজ অনেক কাজ হয়ে গেছে।অন্য কেউ হলে কাল ছুটি ঘোষণা করতো কিন্তু যেহেতু কালই অনুষ্ঠান তাই আর কিছু করার নেই আমার”
.
-ইটস্ ওকে স্যার।পরশুদিন আমি ছুটি নেবো এমনিতেও।আমার ছোট বোনের বিয়ে।
.
-সেটা ডান।ওসব নিয়ে ভেবো না।সাবধানে যেও
.
আহনাফ বার থেকে বেরিয়ে বাইকে বসে কেকটার প্যাকপট ঝুলিয়ে বললো”মিনি তো কেক খাবে না।ওর জন্য কিছু নিলে ভালো হতো।মিনির যেন কি পছন্দ?দুধ,তাহলে দুধের প্যাকেট একটা কিনে নিয়ে যাব”

-আজ যদি তুই আহনাফ ভাইয়ার রুমে গেছিস তো তোরে খুব মারবো।বুঝলি?
.
মিনি দিবার কথা না শুনার ভান করে বসেই আছে।দিবা মিনিকে ধমকিয়ে টিভি দেখায় মন দিলো আবার
তার প্রিয় একটা সিরিয়াল চলছে।খালামণি রান্নাঘরে তরকারি গরম করছেন।কলিংবেল বেজে উঠতেই দিবা টিভিটা অফ করে গেলো দরজা খুলতে
আহনাফ এসেছে।হাতের ব্যাগটা চেয়েও দিবাকে সে দিতে পারলো না।সোজা গিয়ে মাকে ডেকে টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো সে
দিবা উঁকি দিয়ে প্যাকেটটা দেখছে
মা রান্নাঘর থেকে এসে বললেন”কেক?আমি তো কেক খেতে পারি না আমার সুগার আছে।হঠাৎ আনলি কেন?”
.
-খেতে মন চাইলো তাই আনলাম।তোমরা খাও।বাকি যেটা থাকবে সেটা আমি খাব
.
-আমি আর কি খাব
তোর বাবা আর দিবাই খাবে।আমি তো খাই না
.
-ঠিক আছে
.
দিবা তো কেকের কথা শুনে খুব খুশি হলো।কারণ আজ তার কেক খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিলো।এতগুলো জামা কিনে দিয়েছে বলে আর মুক ফুটে আহনাফকে বলেনি সে
খালামণি দিবাকে খেতে ইশারা করে চলে গেলেন নিজের কাজে
দিবা ছুটে এসে প্যাকেটটা খুলে ছুরি এনে এক পিস কেটে বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
মিনি ড্যাবড্যাব করে দেখছে।মিনির জন্য মায়া হলো অনেক
পরে প্যাকেট হাতিয়ে একটা দুধের প্যাকেট পেলো দিবা
আহনাফ টিশার্ট পাল্টাতে পাল্টাতে বললো”ওটা মিনির”
.
ব্যস হয়ে গেলো।খুশির আর খুশি
দিবা নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে প্যাকেট থেকে দুধটা ঢেলে দিলো মিনির বাটিতে
প্যাকেটজাত দুধ গুলো এমনি এমনি খাওয়া যায়
মিনি তো দুধ পেয়ে এক ছুটে এসে পড়লো খাবে বলে খুলনায় দিবা চুরি করে মিনিকে খাওয়াতো।ইতি আর ইভানের জন্য ডেইলি দুধের ব্যবস্থা করতেন জসিম।আর দিবার জন্য শুধু শুক্রবার
কারণ হাফ লিটারে ইভান আর ইতির হয়ে যেতো।দিবা খেলে আবার এক লিটার নিতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে এই ভয়ে তিনি শুধু হাফ লিটারই নিতেন
দিবা যে টুকু পেতো সেটা মিনিকে খাওয়াতো চুরি করে।সপ্তাহে একদিন।পুরোটাই মিনিকে খাওয়াতো সে
মিনির প্রিয় বলে কথা
.
আহনাফ খুশি হলো মিনির খাওয়া দেখে।এতটা ভালোবাসে জানলে আরও এক প্যাকেট আনতো সে
মিনি চেটে পুটে পুরো বাটির দুধ শেষ করে এবার হাত বাড়িয়ে হাত চাটছে
.
দিবার কেক খাওয়া শেষ।বাকিটা ফ্রিজে রেখে সে গেলো খালামণিকে কাজে হেল্প করবে বলে
আহনাফ নিজের বই নিয়ে একটু বিছানায় গিয়ে বসেছে
মিনি লুকিয়ে ওর রুমের দরজার কাছে এসে বসে আছে।আহনাফকে দেখছে সে।
আহনাফ বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে দেখতে পেলো মিনিকে তাও খেয়াল না করার ভান করে পড়া শুরু করলো শব্দ করে
মিনি বুঝলো আহনাফ ওকে দেখতে পায়নি তাই পা টিপে টিপে ও আরেকটু এগিয়ে আসলো
আহনাফের সাথে সাথে হাঁচি এসে পড়েছে
হাঁচির আওয়াজ পেয়ে মিনি ভয়ে এক ছুটে পালিয়ে গেছে রুম থেকে
আহনাফ হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আসলে হাঁচির আওয়াজটা জোরেই হয়েছিলো।মিনির ভয় পাবারই কথা

পরেরদিন সকাল হতে না হতেই মা মণিতাদের বাসায় যাবে বলে জিনিসপাতি ঠিক করছেন।একপবারেই যাবেন সেখানে তাই জামাকাপড় সব ব্যাগে ভরছেন এক এক করে
দিবাও গুছিয়ে নিয়েছে সব
শুধু আজকেই ভার্সিটিতে যাবে এরপর একেবারে মণিতার বিয়ে শেষ হলে ভার্সিটিতে যাবে তারা
মেহেদিতে পরার জামাটা পরে নিয়েছে সে।আহনাফ আজ অনেক সকালে জগিংয়ে গেছে বলে উঠার পর থেকে দিবা ওকে দেখেনি এদিকে মিনি ও নেই
প্রতিদিন আহনাফের সাথে পার্কে যাওয়া ওর অভ্যাস হয়ে গেছে
ওড়নাটাকে আজ মাথায় দিয়ে পরেছে সে।যেমনটা আহনাফ পছন্দ করে ঠিক সেরকম
আহনাফের বাইক ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তাই আজ আর কাঁধে ওড়না নেওয়ার সাহস পেলো না দিবা
আহনাফ মিনিকে নিয়ে সবে ঢুকছে বাসায়।হাঁপিয়ে গেছে সে
আজ পার্কটাতে না গিয়ে আরও দূরে গেছিলো।সাথে মিনিও ছিলো
মিনির সাথে মজা করতে করতে কখন সে রাস্তা শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না
বাসায় ঢুকে নিজের তোয়ালেটা রুম থেকে এনে সোফায় এসে বসেছে সে
দিবা এক গ্লাস শরবত এগিয়ে ধরলো ওর দিকে
চমকে গিয়ে আহনাফ দিবার দিকে তাকালো কারণ এসময়ে দিবা রান্নাঘরে নাস্তা বানানোয় ব্যস্ত থাকার কথা আর সে কিনা শরবত নিয়ে হাজির।বিষয়টা ভাববার!
.
-ওভাবে কি দেখছেন।নাস্তা বানানো জলদি হয়ে গেছে বলে শরবতটা বানিয়ে ফেললাম আজ।মনে হয় বেশি হাঁটা হয়ে গেছে তাই না?
.
আহনাফ বলতে চাইছিল আজ সূর্য ঠিক কোন দিক থেকে উঠেছে কিন্তু পরে মাকে আসতে দেখে আর কিছু বললো না
চুপচাপ শরবতটা নিলো দিবার হাত থেকে
শরবত এক ঢোক গিলে এবার সে দিবার দিকে পুরোপুরি ভাবে তাকালো।ঘাড়ো সবুজ রঙের জামাটায় বেশ বানিয়েছে দিবাকে।তার সাথে মাথায় ঘোমটা দেওয়া যেমনটা আহনাফ আজ পর্যন্ত চেয়ে এসেছিলো
দিবা ঠিক তেমন করেই পরিপাটি হয়ে হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
অথচ এতদিন ধরে আহনাফ দিবাকে সঠিক পদ্ধতিতে ওড়না পরাতে গিয়ে কত কাঠখড় নাই পোড়ালো বাপরে বাপ
.
মা এগিয়ে এসে বললেন ফুফু নাকি বলেছে সকাল সকাল যেতে।তাই তারা এখনই রওনা হবেন মিনিকে নিয়ে
আহনাফ সেটাতেই রাজি হয়ে গেলো
দিবা মিনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো”আনাফকে জ্বালাবি না।খালামণির সাথে সাথে থাকবি ঠিক আছে?বাচ্চা কাচ্চা দেখলে ওদের সামনে যাবি না।বাচ্চারা দুষ্টুমির ছলে তোকে আঘাত করতে পারে।বুঝলি?আমি জলদি এসে যাব। কিন্তু ততক্ষণ তুই খালামনির কাছ থেকে নড়বি না একদম
ঠিক আছে?খালামণি তোকে ঠিকসময়ে খাবার দেবে খাওয়ার জন্য।”
.
আহনাফ গেছে রেডি হতে।আজ রেডি হয়েই একেবারে বের হবে।মা বলেছে আহনাফ আর দিবার ব্যাগ নিয়ে তারা যাবেন ওরা যেন ব্যাগ হিঁচড়ে ভার্সিটিতে না যায়
.
আহনাফ একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পড়লো আজ।পুরোনো এটা।সবুজ রঙের নেই বলেই এটা পরেছে সে
হাতে ঘড়িটা পরে চুলগুলোকে এলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলো সে। পরক্ষনেই মনে পড়লো বারে যাওয়ার আইডিকার্ডটা নেওয়া হয়নি
ছুটে এসে আইডিকার্ডটা পকেটে পুরে তারপর সে দিবাকে ডাকলো আসতে
দিবা মিনিকে আরও কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে আহনাফের সাথে বেরিয়ে গেলো
আহনাফকে এর আগেও সাদা পাঞ্জাবিতে সে দেখেছিলো বলে তেমন একটা অবাক হলো না
তবে আহনাফকে বেশ ভালোই লাগছে তারপরেও সেটা দিবা মুখে বলবে না।আহনাফ যদি ব্যাঁকা কথা বলে বসে
অবশ্য বলাটা এত জরুরি ও না
নিশ্চুপ হয় দুজনে ভার্সিটিতে পা রাখলো।দিবা তার ক্লাসের দিকে গেছে আর আহনাফ তার ক্লাসে
প্রথমে দুজনকে একসাথে এমন সাজে দেখে সবাই ধরেই নিয়েছে ওরা আজ কোথাও যাবে।
দিবা ক্লাসে বসে ভাবছে মিনির কথা।এভাবে এত সময়ের জন্য সে মিনিকে কখনও একা ছাড়েনি।চিন্তা হয় অনেক
.
-ভাই তোর জন্য সুখবর।আজ মিশকা আসেনি।
.
-বাহ!এটার চেয়ে ভালো কিছু আর হতেই পারে না
মনটাই ভালো করে দিলি জিসান
.
-সেই খুশিতে ট্রিট দে
.
-চল তোদের চা খাওয়াবো
.
-তোর ফোন রিসিভ কর।বাজছে সেই কখন থেকে।সাইলেন্ট করে রেখেছিস কেন?
.
-আরেহ আমি তো খেয়ালই করিনি
ওয়েট এ মিনিট!
.
আহনাফ দূরে গিয়ে রিসিভ করলো।বসের ফোন ছিল
বস বললেন জলদি আসতে।নাহিদ একা সামলাতে পারছে না।মিঃ জহির এসে এখনও এটা ওটা পাল্টাতে বলছেন
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here