সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-৩৬

0
470

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৬
Writer-Afnan Lara
.
-পড়লাম ঝামেলায়।এবার দিবাকে কি করবো?
.
ভাবতে ভাবতে আহনাফ পকেটে হাত দিয়ে দুইশ টাকা বের করলো তারপর জিসানের পাশে গিয়ে বসে পড়লো চায়ের অর্ডার দিয়ে
দিবাকে টাকাগুলো দিয়ে বলবে একা একা চলে যেতে।
-বেশি দূর না।আর রাস্তা তেমন অনিরাপদ ও না।মেইন রোড দিয়েই বাসটা যাবে।
কি আর করবো? আমি পড়েছি বিপদে।বসকে না করাও যায় না এদিকে দিবাকে এসব জানানো ও যাবে না
.
পিয়াস দিবাকে ডেকে ক্লাস থেকে নিয়ে আনলো আহনাফের কাছে
.
-আমাকে ডেকেছিলেন?
.
-হুম।আসলে আমার অফিসে একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ পড়ে গেছে।রাত ছাড়া ছুটি পাব না।তুমি এক কাজ করো, এই নাও টাকাগুলো।বাস ধরে ফুফুর বাসায় চলে যেও
ঠিকানা জানা আছে তো তোমার?
.
-দিবা টাকাটা হাতে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”কেন জানা থাকবে না
অবশ্যই জানা আছে
.
-তাহলে আমি আসি।সাবধানে যেও
.
আহনাফ চিন্তা করেও দেখলো না দিবা কেন হাসিমুখে রাজি হয়ে গেলো হঠাৎ
তার এমন হাসির কারণ হলো সে এখন আহনাফকে ফলো করে ওর কাজের মূল পর্যন্ত পৌঁছাবে
দিবা তাই নিজের ব্যাগটা নিয়ে ছুটতে ছুটতে গেলো আহনাফের পিছু পিছু
আহনাফ ভার্সিটির বাহিরে এসে বাইকে বসে সেটা স্টার্ট করছিলো। দিবা সেসময়ে একটা সিএনজি ধরলো।বললো বাইকটাকে ফলো করতে
ব্যস হয়ে গেলো।সিএনজি ড্রাইভার আহনাফের বাইককে ফলো করতে করতে “হোয়াইটলকস্ “বারে এসে হাজির
.
দিবা একটু দূরেই নামলো। আহনাফ ভেতরে চলে যাওয়ার পর সে সামনে এসে দাঁড়ালো বার টার
-হুম!নামটা তো সেম যেরকম আমি উনার রুমের ছবিটাতে দেখেছিলাম।তাহলে এখানে চাকরি করেন উনি।তবে চাকরি নাকি অন্য কিছু করে সেটা নিয়ে তো এখনও মনে সন্দেহ জাগছে আমার
ভেতরে যাওয়া তো যাবে না।এসব বারে কত খারাপ খারাপ লোকেরা আসে জানা আছে আমার।কিন্তু ভিতরে না গেলেও তো কিছুই বুঝবো না
.
-কেন বুঝবে না?আমি আছি না?আমি তোমায় অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দেবো
.
ইমরানের গলা শুনে দিবা ভয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো
ইমরান পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে এসে বললো”ভাবতেই পারিনি এখানে সাজানো গোছানো থালা পেয়ে যাব
বাই দ্যা ওয়ে!আজ এই বারে আমার চাচার এ্যানিভার্সারি পালন হবে।চলো তুমি সহ ইঞ্জয় করবে”
.
কথাটা বলেই ইমরান দিবার হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
-ছাড়ুন!আমি যাব না ওখানে
.
-তোমাকে তো যেতেই হবে।বাঘের গুহার সামনে এসে বলো ভেতরে যাবা না, আর বাঘ তোমায় যেতে দেবে?
তোমায় তো আজ যেতেই হবে
.
ইমরান দিবার হাত চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে গেলো
রিসিপশানে আজ আহনাফের জায়গায় নাহিদ বসেছে
আহনাফ গেছে মিঃ জহিরের সাথে কথা বলতে।উনার কি লাগে না লাগে তা উনি আহনাফকে বলতে পছন্দ করেন
.
-ছাড়ুন আমার হাত।ভালো হচ্ছে না কিন্তু
.
-নাহিদ ব্রো।আমার আর আমার জিএফের হাতে সিল মেরে দাও দেখি
.
-জোরজবরদস্তি করে আনছেন নাকি?
.
-আরে ওসব কিছু না।বারে ওর এলার্জি তো।আজ জোর করেই নিয়ে এলাম।জলদি সিল মেরে দাও
.
নাহিদ ইমরানের হাতে সিল মেরে দিবার হাতটা ধরতে যেতেই নাফি এসে বসলো চেয়ার টেনে।চোখে চশমা আর মুখে মাস্ক দিয়ে
দিবার হাতটা ধরে সে নিজেই সিল মারলো
দিবার চোখে পানি ছলছল করছে।সে একবার একদিকে তাকিয়ে আহনাফকে খুঁজে যাচ্ছে শুধু
আহনাফ থাকলে ওকে নিশ্চয় বাঁচাবে
.
ইমরান দিবাকে টেনে নিয়ে গেলো ওদিকে
.
-কিরে নাফি?ওদিকে কি দেখিস তুই?মেয়েটাকে চিনিস নাকি?
আমার মনে হয় ঐ ছেলেটা জোরজবরদস্তি করে এনেছে মেয়েটাকে।কিছু করবি?মেয়েটার হেল্প করা উচিত আমাদের
.
আহনাফ মাস্কটা একটু খুলে বললো”একদম নেশা ধরে যায় এরকম টাইপের ওয়াইন এনে খাওয়াই দে ছেলেটাকে আর মেয়েটার দিক আমি সামলাচ্ছি”
.
-ভাই সেটার কিন্তু দাম বেশি
.
-মিঃ জহিরের গেস্ট বলে কথা।খরচা উনি উঠাবেন।তুই তোর কাজ কর
.
নাহিদকে সব বুঝিয়ে আহনাফ উঠে চলে গেলো দিবার কাছে
দিবাকে বারে ঢুকতে দেখে প্রথমে ওর বিশ্বাসই হচ্ছিলো না
কারণ সে তো ওকে মণিতাদের বাসায় যেতে বলে এসেছিল
এখানে আসলো কি করে।চিনলোই বা কি করে
এখন কি করে ওকে বাঁচাবে সেটা ভাবতে গিয়েই ওর মাথায় আসলো এখানে সিনক্রিয়েট করলে সব ফাঁস হয়ে যাবে
তাছাড়া ইমরান ওকে এখানে দেখলে খবরটা পুরো ভার্সিটি করবে
সব সাইডে রেখে মাথায় রাখতে হবে যে দিবা আছে।দিবার ক্ষতি যাতে করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে তাকে
এতসব ভেবে আগে মুখ ঢেকে নিলো সে
ইমরান বারবার দিবার চুলে হাত দিচ্ছে।আরেক হাত দিয়ে দিবার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে
দিবা কাঁচুমাচু করতে করতে আহনাফকে খুঁজছে পুরো বারটায়
এত মানুষের ভীড়ে কোথাও আহনাফকে সে দেখছে না
যতবার চোখ ঘুরিয়েছে ঠিক ততবার ঐ মাস্ক আর কালো চশমা পরা লোকটাকে দেখেছে সে
আহনাফ ছাড়া যে আর কাউকেই আপন মনে হচ্ছে না
-কি দরকার ছিল এত তদন্ত করার।এখন পড়লাম নিজে বিপদে
অবশ্য আমি কি জানতাম এই ছেলেটা এখানেও এসে হাজির হবে
.
-কাকে খু্ঁজো দিবা মণি??তোমার আহনাফ ভাইয়া এখানে নাই
থাকার কথাও না।তাহলে তোমায় আজ কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে?
.
নাফি ওয়াইনের গ্লাসটা শব্দ করে ইমরানের সামনে রেখে চলে গেলো
ইমরান এক নিমিষে পুরোটা খেয়ে বললো”ওয়ান মোর”
.
দিবার অসহ্য লাগছে এরকম পরিবেশে বসে থাকতে।আহনাফকে তো দেখলো ভেতরে ঢুকতে তাহলে ও গেলো কোথায়?
কোথায় বলার সাথে সাথে সম্পূর্ণ বারের ইলেক্ট্রিসিটি অফ হয়ে গেছে
অন্ধকারে ইমরান দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে ফোন বের করছে আলো জ্বালাবে বলে ঠিক সেই মূহুর্তে আহনাফ দিবাকে গায়েব করে ফেললো
বারের উপরের তলায় কন্ট্রোল রুম। ওখানে নিয়ে আসলো সে দিবাকে
দিবার মুখে চেপে ধরায় ও চিৎকার করতে পারলো না
ওকে চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে বরাবর বসলো আহনাফ
দিবা চিৎকার করতে গেলো কিন্তু আহনাফকে দেখে আর সাউন্ড করলো না
কারণ ততক্ষণে আহনাফ চশমা আর মাস্ক খুলে ফেলেছে
.
চুলগুলোকে হাত দিয়ে ঠিক করে আহনাফ বললো”কি দরকার ছিলো যেচে বিপদ ডেকে আনার??আমার চাকরির খবর জানা এত জরুরি যে তুমি ইমরানের মতন একটা ছেলের সাথে বারে এসেছো?”
.
-না আমি উনার সাথে আসিনি।উনি আমাকে জোর করে এনেছেন।আমি তো শুধু আপনাকে ওখানে দেখে চলেই যাচ্ছিলাম
.
-দেখা হয়েছে তোমার??শান্তি হয়েছে?নাকি আরও বাকি?
.
দিবা মুখটা নিচু করে ফেললো
আহনাফ চশমা আর মাস্কটা আবারও পরে বললো”বারে আজ অনেক কাজ।আমি যাচ্ছি কাজে।এখান থেকে এক চুল ও নড়বা না।আমি যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যাব
এখানে চেয়ার আছে,টিভি আছে।বসে বসে টিভি দেখো।
.
কথা শেষ করে আহনাফ চলে গেলো হনহনিয়ে
দিবার কান্না পাচ্ছে। এসেছিলো কি করতে আর করতে হলো কি।
.
-কি ব্যাপার!দিবা গেলো কই।হেই দিবা।মাই ডার্লিং।কই তুমি?
.
আহনাফ রিসিপশানে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
দিবা কন্ট্রোল রুমে থেকে আহনাফকে দেখতে পাচ্ছে
কত বিজি সে এখন
এক হাতে কাস্টমারের হাতে সিল মারছে আরেক হাতে কম্পিউটারে টাইপ করছে
-তাহলে ম্যানেজারের কাজ করেন উনি এখানে।কিন্তু খালামণি আর বাকিদের মিথ্যে বলছেন কেন?উনারা সত্যিটা জানলে কি হতো?আমাকেও তো জানতে দেননি
আমি তো নিজে থেকেই এতদূর আসলাম।আর এখানে উনাকে সবাই নাফি নাফি বলে ডাকছিলো শুনলাম।আহনাফ বাদ দিয়ে নাফি?ঐ মিশকা আপু ও তো উনাকে নাফি বলে ডাকছিলেন
সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।সময় পেলে উনার থেকে আমি সব কিছুর উত্তর জেনে নেবো
.
দিবা আবার চেয়ারে বসে আহনাফের কথা মতন কার্টুন দেখায় মন দিলো
বিকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।আহনাফ শ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছে না
এদিকে দিবা বসতে বসতে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে
এত কাজের ভেতর মা,বাবা সাথে আদনান মিলে ফোন করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।কারণ হলো আহনাফ কেন এখনও দিবাকে নিয়ে আসছে না
আহনাফ বার থেকে বেরিয়ে সবার কল রিসিভ করে বললো তার অফিসে জরুরি কাজ পড়ায় সে দিবাকে নিয়ে সোজা অফিসে এসেছে।কোনো মতে সবাইকে সবটা বুঝিয়ে সে গেলো দিবার কাছে
দিবা চেয়ারে পা তুলে সেটাকে ভাঁজ করে চোখ দুটো বুজে গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছে
আহনাফ ওকে ডাকতে এসে দেখলো মহারানী আরামসে ঘুমায়
আহনাফ জাগালো না ওকে
-জাগালেই বলবে খিধে পেয়েছে।কারণ সকালে নাস্তার পর দুজনের একজনেও কিছু খাইনি আমরা।আমার তো সয়ে যাবে কিন্তু ওর সইতে নাও পারে
.
গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসার পর মিঃ জহির একটা প্লেট নিয়ে আহনাফের হাতে ধরিয়ে বললেন”থ্যাংকস এ লট!আমার এই দিনটা এত সুন্দর করে তোলার জন্য।এটা তোমার।পেট পুরে খাও”
.
আহনাফ প্লেটটা নিয়ে দিবার কাছে গেলো।ততক্ষণে দিবা উঠে পায়চারি করছিলো খিধায়
আহনাফ এগিয়ে এসে ওর হাতে প্লেটটা দিয়ে বললো”নাও এটা খেয়ে নাও
এখানে দুইপিস কেক, ফ্রাইড রাইস,চিকেন মাসালা আছে।এগুলো খেলে তোমার পেট ভরে যাবে”
.
-আপনিও তো কিছু খাননি।আমি কেক খাচ্ছি আপনি বরং রাইস আর চিকেনটা খেয়ে নিন
.
-তোমাকে যেটা দিছি ওটা খাও।আমার কথা ভাবতে হবে না
আমি এখানে কাজ করি।চাইলেই বাবা মায়ের জন্যও নিয়ে যেতে পারবো
.
প্লেটটা টেবিলে রেখে আহনাফ চলে গেলো আর দেরি না করে
দিবা ছুটে এসে টেবিলের কাছে চেয়ার টেনে বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
পেট পুরে খেয়ে সে এবার শান্তিতে আবারও কার্টুন দেখছে
-উনার কাজ কখন শেষ হবে আর কখন আমরা মণিতা আপুদের বাসায় যাব
মেহেদির অনুষ্ঠান তো মনে হয় শুরু হয়ে গেছে এতক্ষণে
.
এক এক করে সব গেস্ট চলে যাচ্ছে।ইমরানকে টেনে হিঁচড়ে নাহিদ ওর চাচার গাড়ীতে তুলে দিয়েছে
আহনাফ সবার শেষে এখন খেতে বসেছে
নাহিদ ওর পাশে বসে বললো”ঐ মেয়েটা কে ছিল রে?”
.
-আমার খালাতো বোন
.
-শুরুতেই ওকে ছেলেটার থেকে ছুটাতে পারতি।শুধু শুধু কারেন্টের লাইন অফ করতে গেলি কেন?
.
-প্রথমত, আমার পরিচয় গোপন রেখে আমি এখানে জব করি
দ্বিতীয়ত, ইমরান আমার ক্লাসমেট।আমাকে বারে দেখলে সে এই খবর সারা দুনিয়া করতো।
তৃতীয়ত,দিবাকে ওর থেকে ছাড়াতে হলে মাইরধর করতে হতো এতে করে সিনক্রিয়েট হতো এরপর মিঃজহির পুরো বারটাকে মাথায় তুলতেন কারণ ইমরান তার ভাইয়ের ছেলে
.
-ওরে সাবানা!!এত দিক দেখার বুদ্ধি কই পাস তুই?
.
-মাথা থেকে।ওসব বাদ দিয়ে বল তোর আর মিশকার কি খবর?
মন গলেছে?
.
-ঠিক বুঝতে পারিনি।তবে শুধু হাসছিলো লংড্রাইভে যাওয়ার পর থেকে।আমিও হাসলাম
কিন্তু কিছুই বুঝলাম না আর
.
-বুঝবি বুঝবি।”লারকি হাসি তো পাসি”
.
-সেটাও হতে পারে।দোয়া করিও ভাই আমার
.
আহনাফ খাওয়া শেষ করে দিবাকে ডেকে পাঠালো।দিবা টিভি অফ কর একছুটে নিচে চলে এসেছে যেন এতক্ষণ এই ডাকের অপেক্ষাই করছিল সে
পুরো বার ফাঁকা।অল্প কজন আছে মাত্র
আহনাফ প্লেট রেখে হাত ধুতে গেছে
দিবা ওর অপেক্ষা করছে রিসিপশানে বসে
ও হাতটা ধুয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে বললো”চলো যাই।এমনিতেও লেট হয়ে গেছে।জলদি যেতে হবে”
.
দিবা ওর সাথে সাথে বাইকের দিকে গেলো
আহনাফ বাইকে বসে স্টার্ট দিতেই দিবা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো”একটা কথা জানতে পারি?”
.
-হুম
.
-এসবের কথা খালামণি কিংবা অন্য কেউ জানে না কেন?
.
-জানে না কারণ আমি চাই না তাদের জানাতে
.
-কিন্তু কেন?
.
-তারা জানলে আমাকে এই চাকরিটা করতে দেবে না
আমি অন্য চাকরি নিতে পারি তাও নিব না কারণ ওসবে এই চাকরির মতন বেতন পাওয়া যাবে না
এতবড় একটা সংসার সামলাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়।দশ -পনেরো হাজারে এসবের ধার চুকে না
তাছাড়া আমি খারাপ কাজ করছি না
রিসিপশানে বসা একটা ভালো পদ।কোনো কাজই ছোট হয় না
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here