এক প্রহরের খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১১||
প্রায় আধাঘন্টা হবে এই খালি রুমটায় বসে আছি আমি। দারুণ অস্বস্তি আর চাপা উত্তেজনা ছেঁকে ধরেছে আমাকে। কিন্তু না পারছি উঠে ভেতরে যেতে আর না পারছি কাউকে ডাকতে। প্রথমতঃ আমি এ বাড়ীতে জামাই হিসেবে আজই প্রথম। কারো সাথে সেভাবে আলাপ পরিচয় নেই। তার উপর শ্বশুর মহাশয় যিনি আমাকে ভালভাবে চেনেন তিনিই কিনা আচমকা অচেতন হয়ে পড়লেন আর তাকে ধরাধরি করে বাড়ীর ভেতর নিতে হল। পুরো ব্যপারটাই কেমন যেন গোলমেলে। হঠাৎ এমন কী হলো যে তিনি আমাকে দেখামাত্রই হাউমাউ করে কাঁদবেন আর তারপর অচেতন হয়ে যাবেন। এর কারণ কী হতে পারে।
বসে থাকতে অসহ্য বোধ হচ্ছে আমার। পৃথিবীর যাবতীয় কু-চিন্তা এসে ভর করছে আমার মাথায়। যা নয় তাই ভাবতে লেগেছি আমি। পরক্ষণেই সেসবকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে শুভ চিন্তা মনে আনার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই সারপ্রাইজের খ্যাতা পুড়ি বলে রুমকিকে ফোন করেছি কয়েক দফা। কিন্তু ওর ফোনও বন্ধ পাচ্ছি।হয়েছেটা কী এদের ? কিছু বুঝতে না পারায় বিরক্তির পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ চারগুণ হচ্ছে আমার। চাপা আশঙ্কা কুরে খাচ্ছে আমাকে। আমার রুমকির কিছু হয়নি তো ! নইলে শ্বশুর সাহেব আমাকে দেখে অমন হাউমাউ করে কেঁদেই বা উঠলেন কেন আর হুট করে সেন্সলেসই বা কেন হলেন। যতদুর মনে পড়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন না। অসুস্থ ছিলেন আমার শ্বাশুড়ী। তার কী কিছু হলো নাকি। কিন্তু উত্তরগুলো আমাকে কে বলে দেবে ! বিরক্তি নিয়ে ফের মোবাইলে রুমকির নম্বর চাপলাম।
ভেতরের গুঞ্জন এখন অনেকটা স্তিমিত। একজন ডাক্তার আনা হয়েছিল। তিনি একটু আগেই বেরিয়ে গেছেন। তাকে দেখে আমি নিজেই পথ আটকে প্রশ্ন করেছিলাম, ইমাম সাহেবের এখন কী অবস্থা ! তখন ডাক্তার জানিয়েছেন ওটা নাকি একটা মাইনর এ্যাটাক ছিল। তবে ইমাম সাহেব এখন আগের তুলনায় ভাল আছেন। তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কারণ মানসিক চাপ নেবার মত শক্তিতে তিনি নেই। আপাতত সকালের আগ পর্যন্ত তাকে ডাকা চলবে না। এসব বলে ডাক্তার বিদায় নেবার সময় আমি ভিজিট বাড়িয়ে ধরলে তিনি হাত তুলে বাধা দিলেন।
-” ধন্যবাদ। ওটা আগেই মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। আজাদ সাহেবই দিয়ে দিয়েছেন।”
-” আজাদ সাহেব । ” শব্দ দুটো উচ্চারণ করে পার্সটাকে পকেটে ফেরত পাঠালাম। ফের বসে পড়লাম সোফায়। মনের ভেতর অনেক কথার মেলা। হিংসুটে মনটা একা একাই বিড়বিড় করছে আর বলছে,
-” চান্দু, তুমিই তাহলে আজাদ ? আমার বউয়ের সেই এক্স বয়ফ্রেন্ড ? তা তুমি যেই হও না কেন, এখন তো সর্ববিচারে তুমি আমার শালাই হও । শালার পো শালা । ” শেষ শব্দ তিনটা অজান্তেই দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করলাম।
এরপর থেকেই ঠায় বসে আছি। একেক বার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছিল ভেতরে গিয়ে ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করে আসি। কিন্তু কী ভেবে বিরত রইলাম। তাছাড়া ভেতরে গিয়েও যে বিশেষ লাভ হবেনা তা জানি। কারণ ইমাম সাহেব এখন ঘুমিয়ে। আর তার স্ত্রী’র সাথে আমার এখনো দেখা হয়নি। সম্পর্কে যদিও উনি আমার শ্বাশুড়ী হন। তবু আমাদের হঠাৎ বিয়ের আয়োজনে তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের কোন সুযোগই হয়নি আমার। এমনকি ফোনেও না। আজও এখন পর্যন্ত ভদ্রমহিলা সামনে আসেননি আমার। তবে আমি যে এসেছি এই তথ্যটা তাকে কেউ দিয়েছে কি না তাই বা কে জানে। দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই শুনতে পেলাম আমাকে কেউ ডাকছে। ঘাড় ফেরাতেই দেখলাম সেই লম্বা ছেলেটা। যাকে আমি আধাঘন্টা আগে রিক্সা থেকে নামার পরপরই দেখেছি।
-” আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে আপনিই রুমকির হাজবেন্ড ! রাইট ? ” লোকটা বলল। সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। মনে মনে বললাম, ” আর আমি যদি ভুল না করে থাকি তবে তুমি মিয়া আমার কাবাবের হাড্ডি সেই বিখ্যাত আজাদ। যার কথা একটু আগে ডাক্তার সাহেব আমাকে বলে গেলেন। মুখে বললাম, ” বাবা কেমন আছেন ? ”
বলতে বলতেই লোকটাকে একনজরে আপাদমস্তক মেপে নিলাম। বেশ লম্বা আর সুদর্শন দেখতে। মনে পড়ল , আজাদ রুমকির ফুপাত ভাই এর নাম । তারমানে ইনিই রুমকির প্রাক্তন প্রেমিক যার কথা রুমকি আমাকে বলেছিল।
সর্বাঙ্গে এক অদৃশ্য জ্বলুনি অনুভব করলাম আমি। তার দিক থেকে চোখ সরানোর আগেই দেখলাম ভদ্রলোক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ” আমি আজাদ। পুরো নাম আজাদ মুনতাসির। আপনি…?”
হাতটাকে অগ্রাহ্য করতে গিয়েও সৌজন্য সাক্ষাতের নিমিত্তে হাত বাড়িয়ে দিলাম। সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে করমর্দন করে বললাম, ” একটু আগে আপনিই তো বললেন। জি, আমি রূপম রিজভী। রুমকির বর।”
কথাটা এভাবে কেন বললাম জানিনা তবে লোকটার হিরোচিত মুখশ্রী আমার গায়ে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভাষাও দেখা যাচ্ছে বিশুদ্ধ । বেশ প্রেজেন্টেবল লোকটা। মেয়েরা এর প্রেমে পড়বে নাইবা কেন। অসহ্য। চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। শুনলাম আজাদ নামের লোকটা বলছে, ” আজ কী আপনার আসার কথা ছিল ? ”
-” মানে ? ” প্রশ্নের ধরণ না বোঝায় সরাসরি জানতে চাইলাম। তাছাড়া উত্তরটা তো তাকে দেবার নয়। জবাব দেবনা বলেই পাল্টা প্রশ্ন করলাম। কেন যেন লোকটাকে আমার সহজ মনে হচ্ছে না। আচরণটা ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’ ধরণের বলে মনে হচ্ছে। মনে মনে বললাম, আমার আসার কথা আছে না নাই সেটা তোকে বলতে যাব কোন দুঃখে।
আজাদ সম্ভবত হোঁচট খেল। সে সংশোধনের সুরে বলল, ” না মানে, আপনাকে দেখেই আব্দুল্লাহ মামা হঠাৎ অমন অজ্ঞান হয়ে গেলেন। তাই মনে হল…!”
-” কারো আসার কথা না থাকলে তাকে দেখে লোকে অজ্ঞান হয়ে যাবে এটা কেমনতর কথা ? আপনি তো জানতেন না আমি আসব। আপনি তো অজ্ঞান হননি ।”
আজাদ ঠান্ডা চোখে কয়েক সেকেন্ড আমাকে দেখল। সম্ভবত আমার আলাভোলা চেহারার সাথে এই উত্তরটা যায়নি। সে আগের চেয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল, -” রুমকী কিডন্যাপড। তাকে রাত নয়টা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আজ রাত নয়টার পরপরই মামীকে নিয়ে ডাক্তারখানা থেকে ফেরার পথে ঘটনাটা ঘটেছে। সেকারণেই আপনাকে এভাবে জিজ্ঞেস করা। মামার অজ্ঞান হবার কারণ আপনিই। সেটা আপনার ইচ্ছায় হোক কী অনিচ্ছায়। ” কাটাকাটা ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে থামল আজাদ। হয়ত আমার প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছে।
আমি নিরব বিস্ময় তাকিয়ে আছি তার দিকে। কথাগুলো বিশ্বাস করব কি না বুঝতে পারছিনা। এক মন বলছে লোকটা সত্যি বলছে। আরেক মন বলছে সে আমাকে অযথা উদগ্রীব করার চেষ্টা করছে। হয়ত এমন কিছুই ঘটেনি। পরক্ষণেই মনে পড়ল বাসস্ট্যান্ডের ঘটনা, রিক্সাওয়ালার বক্তব্য আর ঘন্টাখানেক আগে বাইরে দেখা পুলিশ জীপের কথা। মাথাটা চন করে ঘুরে উঠল আমার। মনের অজান্তেই একপা পিছিয়ে গেলাম। হয়ত আমার আচরণের পরিবর্তনটা আজাদের চোখে পড়েছে। সে আমাকে সান্তনা দেবার ভঙ্গিতে বলল, ” ডোন্ট গেট নার্ভাস। এখানকার পুলিশে আমার জানাশোনা লোক আছে। যে’ই কিডন্যাপ করুক। মাটি ফুঁড়ে তাকে বের করে ফেলব আমি। আজাদের ফ্যামিলির লোকের দিকে তাকানোর জন্য তার চোখ আমি উপড়ে ফেলা হবে। ”
আমি কোন জবাব দিলাম না। অজান্তেই আমার ডান হাতটা মাথার পেছনে চলে গেল। চিরাচরিত অভ্যাসে চুলগুলো মুঠো করে ধরলাম। মাথার ভেতর এলোচিন্তা। দৃষ্টি আপনা হতেই ঝাপসা হয়ে আসছে। ঘোলাটে চোখে তাকালাম।
-” পুলিশ কী বলছে ? ”
-” কী আর বলবে। তারা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। মামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল আমি দেইনি। বলেছি, আপনারা যা পারেন করুন। মামীকে ডিস্টার্ব করা চলবে না। ”
-” তাহলে ভিকটিম উদ্ধার করবে কী করে ?” আপনা হতেই মুখ ফসকে বলে বসলাম। আর প্রায় সাথে সাথেই বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম শব্দ হতে লাগল। মনটা যারপরনাই খারাপ হয়ে গেল আমার। রুমকিকে আমি ভিকটিম বলছি কত অবলীলায়। আমার রুমকির সাথে কী হয়েছে আসলে! মনটা হু হু করে উঠল।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবটা কাটিয়ে উঠতে কয়েক মিনিট সময় নিল। এরই মধ্যে আজাদ নামের ছেলেটা আমার সামনেই কল দিল কাউকে। খুব দাপট নিয়ে নির্দেশনা দিতে লাগল। বুঝতে পারলাম, আমাকে নিজের ক্ষমতা দেখাচ্ছে। নিঃশব্দে তার হামবড়াই দেখলাম। মনে পড়ল রুমকির একটা কথা। যেন সে তার স্ফটিকস্বচ্ছ জোড়া দাঁতের হাসিতে আমাকে দেখছে আর ম্লান হেসে বলছে, ” একে দেখুন। কেমন ফটফট করছে। আর আপনি ? আসলেই একটা তেলতেলে ফুলবাবু। বউ হারিয়ে গেছে শুনে বোকার মত কাঁদছেন। এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন না আমাকে এসে নিয়ে যাবেন ? ”
কয়েক সেকেন্ড স্থির দাঁড়িয়ে থেকে মুখ তুললাম। আজাদ নামের হিরোটাকে আরেকবার ভাল করে দেখলাম। সে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে। গলা খাকাড়ী দিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করতেই সে ঘাড় ফেরাল। আমি তর্জনী তুলে ইশারা করলাম যে আমি ভেতরে যেতে চাই। সে মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত ফোনে কথা শেষ করে বলল, ” ভয় নেই। চারপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছি। সকাল নাগাদ খবর হয়ে যাবে। ”
-” আপনি নিশ্চিত ? ” বললাম আমি।
-” নিশ্চিত মানে ? আরে মিয়া, এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকে না। কার ঘাড়ে দুটো কল্লা আছে তা আমি দেখে নেবো না মনে করেছেন। আজাদ মুনতাসিরের ফ্যামিলি….!”
-” আমি একটু রুমকির আম্মার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। কোন রুমে থাকেন উনি ? ” আজাদের কথাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম। বিরক্ত লাগছে ছেলেটার আলগা বড়াই। প্রথম দর্শনেই তাকে অপছন্দ হয়েছে আমার। মুখে যতই ফটর ফটর করুক না কেন, ভেতরে যে বিশেষ সারবস্তু নেই তা তার প্রদর্শনবাতিকগ্রস্ত মনোভাবে স্পষ্ট। যার থাকে সে প্রকাশ করার প্রয়োজন মনে করেনা কিন্তু যার না থাকে সে প্রমান করতে চায় আমার অনেক আছে। এটা কমন থিউরী। আজাদ বলল,
-” আপনাদের বিয়ে হয়েছে বেশিদিন তো হয়নি। তাই না ? ”
-” এটার সাথে ভেতরে যাবার সম্পর্ক কী ? ”
-” সেটাই বলছিলাম। এজন্যই আপনি জানেন না যে, মামী খাস পর্দা করেন। তার সাথে আপনার দেখা হবে না। আমি যে ভাগনে, আমার সামনেই তো আসেন না তিনি।”
অনেক দুঃখেও হাসি পেল আমার। বললাম, ” রুমকির আপন ফুপাত ভাই যখন তার মানে আপনি জন্ম থেকে মুসলিম। আর এটা জানেন না যে, মেয়ের জামাই শ্বাশুড়ীর জন্য মাহরাম। মানে যার সামনে আসতে বাঁধা নেই। সেই বিচারে আপনার চেয়ে আমি তার আপন। সমস্যা নেই, আমি রুম খুঁজে নেব কিন্তু তার সাথে আমার দেখা করা দরকার।”
আজাদের চোখে বিস্ময় স্পষ্ট। শালা হয়ত আমাকে বেকুব ধরে নিয়েছিল। আমি ততক্ষণে ভেতর বাড়ীতে পা দিয়ে ফেলেছি। এর সঙ্গে বচসা করে সময় নষ্ট করতে চাইনা। কেন যেন মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। অবচেতন মন বলতে চাইছে, রুমকির অন্তর্ধানের সাথে আজাদের কোন সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। শ্বশুর সাহেবের সাথে কথা বলতে পারলে ভাল হত তবে তার আগে শ্বাশুড়ীর বক্তব্যটা জানা দরকার। রুমকি তো তার সাথেই ছিল। আলাদা হল কখন। কিভাবে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, রুমকি আসলেই কিডন্যাপ হয়েছে ? তিনি কী স্বচক্ষে দেখেছেন ? ”
সশব্দে সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই লম্বা ঘোমটায় দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। একটু আগেই কাজের ছেলেটা আমাকে তাঁর রুম দেখিয়ে দিয়েছে। ফোঁপানির শব্দ শুনে বুঝলাম তিনি কাঁদছেন। বললাম,
-” আম্মা, আমি রূপম মানে রুমকির স্বামী। ঢাকা থেকে এসেছি।”
-” জি, বাবা। আমি শুনসি আপনি আসিছেন। আমার এমন সৌভাগ্যের দিনে এতবড় দুর্ভাগ্যের কথা কী আর বলব বাবা। এদিকে আমার মেইয়েটার এতবড় অঘটন ঘইটে গেল..!” বলতে গিয়ে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা কান্নাকে আঁচলে চাপা দিয়ে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলেন তিনি।
আমি দ্রুত বললাম, ” কাঁদবেন না আম্মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আচ্ছা, কী কী ঘটেছে ওখানে আমাকে একটু খুলে বলুন তো আম্মা ? আমি জানতে চাই।”
-” কী আর বলব বাবা। ডাক্তারখানা থেকে তো ওরে সাথি নিয়েই বেরোইসি। মেইয়ে আমারে রিক্সায় বসায়ি রেইখে ঔষুধ কিনতে পাশের ফার্মেসীতে গিয়েছে। তারপরে আর তার কোন খবর পালাম না। আমি বসি থাকতি থাকতি পেরেশান হয়ে রিক্সাওয়ালারি খুঁজতে পাঠালাম দোকানে। সে ঘুরি আসি কয় ওখানে কেউ নাই।”
বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে সবটা শোনার পর মৃদুস্বরে বললাম, ” তাহলে কিডন্যাপ কথাটা বলছে কেন সবাই ? এটা তো মিসিং কেইস। মানে সে হারিয়ে গেছে। তাকে কেউ তুলে তো নিয়ে যায়নি। কেউ নিতে দেখেনি। তাহলে কিডন্যাপ কথাটা আসছে কেন ? ”
-” তা তো আমি কতি পারবো না বাবা। বাড়ি আসি শুনিচি মেইয়ে আমার কিডনাপ হইছে। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এ কোন পরীক্ষার মদ্যি আমারে ফেলাইল। ” মহিলাকে কাঁদতে দেখে আমি আর কথা বাড়ালাম না। বেরিয়ে আসতে যাব তখনি তাঁর ডাক পড়ল, ” বাবা একটা কথা…!”
-” জি, বলুন। ”
-” আপনি এখন কোথায় যাবেন বাবা ? আপনি কী চলি যাচ্ছেন ? ”
-” জি না আম্মা। আমি একটু বাড়ী যাব। আপানের সাথে দেখা করে তারপর আবার আসব এখানে। রুমকিকে খুঁজে বের করতে যা করা দরকার তা আমি করব কিন্তু আমাকে সবার আগে জানতে হবে ঘটনাটাকে কিডন্যাপিং বলে চালানোর চেষ্টা কে করছে। যদি টের পাই প্রশাসনের বাইরের কেউ এটাকে কিডনাপিং নাম দিচ্ছে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন জানাব আমি।
চলবে…