শব্দহীন_অনুভূতি পর্ব_৩
#পলি_আনান
-হৃদিতা তুই নাকি আজ টিউশনিতে যাস নি তবে কোথায় ছিলি এতক্ষণ? আর তোর ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেন?
-কেন আবার যত নিরেট, পাগল,সব আমার ভাগ্যই জোটে। এইভাবে যদি আর এক সাপ্তাহ যায় তবে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো!
আপন মনে বকবক করতে করতে হৃদিতা তার রুমে ডুকে।নেহা অবাক হয়ে হৃদিতার কান্ড দেখছে হঠাৎ এই মেয়ে ক্ষেপে যাওয়ার কারনটা বুঝতে পারছে না সে।
-হৃদিতা তোর কি হয়েছে?কাকে বকছিস এইভাবে?
– নেহা আপু এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। তবে শুনে রাখো নতুন টিউশনি হয়েছে আমার ফিরতে ফিরতে হয়তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।গোসল করবো পুকুর পাড়ে গেলাম আমি।
সামনে দাঁড়ানো নেহার প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে হৃদিতা জামা কাপড় হাতে নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়। এদিকে নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাতের দুইটায় বাড়ি ফেরার পথে নোমানের সাথে আরাফের দেখা হয়।নোমানকে দেখেই বিরক্তে মুখ কুচকে নিজেকে আড়াল করার আগেই নোমান তার সামনে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
– কিরে তুই কি ভালো হবি না আর।চাচাজান বাড়িতে না থাকলেই এত রাত করে বাড়ি ফিরিস। বন্ধুদের সাথে এইসব না করে পড়ালেখায় মনযোগ দে। ওই মেয়েটা কেমন পড়াচ্ছে তোকে?
-হুম ভালোই পড়াচ্ছে।আমার আর পড়ালেখা!এইসব ক,খ,১,২,আমার ধারা হবে না আমায় বরং তোমরা মুক্তি দিয়ে দাও একটু চিল মুডে বাচঁতে চাই।
-আহ! এইসব কোন ধরনের কথা আরাফ?তোর হবু বউ কিন্তু যথেষ্ট ভালো পড়াশোনা যানে আর তুই হবি কি না এমন মুর্খ?অন্তত নিজের স্টেটাস বজায় রাখতে তোকে একটু ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে হবে।তোর ভার্সিটি শেষ হলে প্রভার সাথে কানাডায় সেটেল হয়ে যাবি। আর কোন চিন্তা নেই। এই কয়েক বছর অন্তত ভালো ভাবে পড়াশোনা কর।
নোমানের কথা গুলো শুনে ধুপ করে নিভে যায় আরাফ।নোমানের সাথে আরাফের সঙ্গচ্যুত কারন একমাত্র প্রভা।নোমানের খালাতো বোন প্রভা প্রায় তিন বছর আগে বিডিতে আসে।বিদেশি অপরিচিত মেয়েকে দেখে ফ্লার্টিং করা শুরু করে আরাফ। মজা ছলে প্রভাকে প্রেমের জালে ফাসাতে গিয়ে উলটো নিজে ফেসে যায়।আর সেই থেকেই প্রভার জালে আটকা পড়ে বেচারা নিজেই।নোমানের কাছে প্রভা নিজের পছন্দের কথা জানালে নোমান আরাফের সাথেই প্রভার বিয়ে ঠিক করে নেয়।কিন্তু এতে রাজি নয় আরাফ।গত তিন বছর নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রভার সাথে নিয়মিত ফোন কল টেক্সট চালিয়ে যায় এক মাত্র নোমানের ভয়ে।
-কিরে দম ধরে গেলি কেন?
নোমানের ধমকে বাস্তবে ফিরে আসে আরাফ।রাগে দাতে কিড়মিড় করে বলে,
-একটু তাড়াতাড়ি হাটো ভাই, কাল সকালে আমার ক্লাস আছে।
পরের দিন দুপুরে ভার্সিটির গেটের সামনে আরাফের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে হৃদিতা।বিরক্তে তার সব কিছু অসহ্য লাগছে। ক্লাস শেষ হয়েছে প্রায় আধা ঘন্টা হতে চললো এখনো আরাফের আসার নাম নেই, বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ।তাই বিরক্ত নিয়ে ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তার।
দূর থেকে হৃদিতাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে লিবান।চারপাশটায় চোখ ঘুরিয়ে আরাফকে খুজঁতে থাকে।
-এখানে একা কি করছো হৃদিতা?
পেছন থেকে পুরুষের কন্ঠে চমকে তাকায় সে।নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,
-আরাফ ভাইয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু তিনি কোথায়?
-ওহ আরাফ সে তো এখন প্রেম করতে ব্যস্ত।ক্লাসে বসে নতুন একটা মেয়ের সাথে প্রেম গহীনে হারিয়ে গেছে।তুমি বরং বাড়ি ফিরে যাও।
লিবানের কথা শুনে বেশ রাগ লাগলো হৃদিতার। ক্লাসে অবশ্য দেখেছিল একটা মেয়ের সাথে ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলছিল তবে কি তার সাথেই এখন সময় কাটাচ্ছে আরাফ?কিন্তু হৃদিতাকে এইভাবে অপেক্ষা করানোর মানে কি?হৃদিতা নিজের রাগটাকে আড়াল করে লিবানের দিকে তাকায় শান্ত দৃষ্টিতে।
-জানিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আমি আসি তাহলে।
হৃদিতা গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই কানে আসে সেই পরিচিত কন্ঠ।
-ওই পিচ্চি কই যাচ্ছিস?আমাকে না পড়ানোর পায়তারা হচ্ছে তাহলে?খবরদার নোমান ভাইকে ইনফর্ম করতে দুইমিনিট ও সময় নেবো না।
আরাফের কথা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে।
– এতক্ষণ আমাকে দাড় করিয়ে রাখার মানে কি?আপনার কি ধারনা আমার হাতে অফুরন্ত সময়?
-যানি রাগ করেছিস,আর এমন হবে না। এখন পড়াতে চল।
হৃদিতা কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে যায়।আরাফ আবারো পিছু ফিরে লিবানের দিকে তাকায়।
– ওই তোর সমস্যা কি? হৃদিতার কানে কি বিষ মন্ত্র ঢেলে দিয়েছিস?
-কই আ..আমি কি করেছি আমি তো তেমন কিছু বলি নি!
– শোন নাফিসা আর শাকীলের রাগ মিটিয়ে দিয়েছ আপদত তারা নিজেদের মাঝে কথায় ব্যস্ত তুই বরং বাড়ি চলে যা এখন আমিও পড়তে যাবো।
আরাফের কথায় বেশ রাগ লাগলো লিবানের।সবার মাঝে নিজেকে কেমন উটোকো ঝামেলা মনে হলো তাই উলটো দিকে পা বাড়ালো। আরাফও আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে কফিশপের উদ্দেশ্য যাওয়ার জন্য বাইক স্টাট দিলো।
– সূত্র চারটা মুখস্থ হয়েছে আপনার?
হৃদিতা একের পর এক বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকে। কিন্তু আরাফ তার দিকে তাকিয়ে আছে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কয়েক মিনিটেও আরাফের কথার আওয়াজ না পেয়ে মাথা তুলে তাকায় হৃদিতা।তার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকা আরাফের সাথে চোখাচোখি হতেই দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়।
-আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করেছি!
– তোকে আমি কাল কিছু আদেশ দিয়েছি।
আরাফের প্রত্যুত্তরে চকিতে তাকায় সে। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
– কি বলেছিলেন?
– বলেছিলাম তোকে দেখবো ;একদম সেদিনের মতো করে!তীব্র তাপদাহে যে ভাবে বৃষ্টির রুপে আমার হৃদ জমিনে আছড়ে পড়েছিলি, আমার অনুভূতি গুলোকে যেভাবে আনকোরা করে দিয়েছিলি ঠিক সেদিনের মতো করে তোকে দেখবো যদি আমায় “আপনি” বলে সম্মোধন করিস।
আরাফের এমন ভয়াবহ কথার ভাজে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায়ন্তর ছিল না হৃদিতার।নিজের ওষ্ঠ দিয়ে শুষ্ক অধরটা ছুয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে ঢোক গিললো। আমতা আমতা সুরে নিজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে বলে,
– আপনি আমার ছোট!আপনাকে আমি কি করে -“তুই” বলে সম্মোধন করি?
হৃদিতার কথা শেষ হতেই টেবিলের উপর বাম হাত দিয়ে জোরে থাবা মেরে বিকট শব্দে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে আরাফ। গমগমে সুরে বলে,
– ব্যস! এটাই যেন শেষ কথা।আমি যা বলেছি তাই হবে। আজ আমি তোর শিক্ষক। এবার পড়, “আরাফ তুই আর আমি, আজ থেকে বন্ধু বেশে শত্রু”
আরাফের এমন অযৌক্তিক কথা শুনে ভড়কে যায় হৃদিতা। চুপচাপ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা অদ্ভুত মানুষটির দিকে।এই ছেলেটা এমন কেন, মূহুর্তে আগুন আবার কিছু মূহুর্তে পানি।
-কি হলো বলছিস না কেন?নাকি কান মলানি খাবি?
-এয়্য্য্যহ!
– হ্যা এবার বল দ্রুত, না হলে যা বলেছিলাম তাই করবো।
আরাফের কথা শেষ হতেই হৃদিতা চোখ মুখ কুচকে নেয়।তাকে যেন কেউ বিরক্তকর তিতা করলা খেতে বলেছে।পাশ ফিরে দোকানের মেনেজার আর কর্মচারি লোকটির দিকে পরখ করে।আরাফের পাগলামিতে যে তারাও অবাক তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে সে। সামনে থাকা অগ্নিশর্মা মানবটির দিকে তাকিয়ে বলে,
– আ–রাফ তুই আর আমি, আজ থেকে বন্ধু বেশে শ—ত্রু”
-গুড!এবার পড়া। কালকের পড়া আমার মুখস্থ হয়ে গেছে আজ আবার নতুন করে পড়াতে থাক।আজকে পড়া শেষ করবি চারটায়।তারপর তোর বাকি দুই টিউশনি পরপর করলে সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
– বুঝলাম না এখানে শিক্ষক কে?আমি নাকি আপ—,না মানে তুই?
– পড়ানোর দায়িত্ব তোর আর ছুটি দেওয়ার দায়িত্ব আমার নে পড়া।
হৃদিতা ঢোক গিলে সামনে থাকা বইটি টেনে নেয়।সম্মুখে থাকা এমন উগ্র মানুষটার আর কত, শত শর্ত, বাহানা নিয়ম যে তাকে মানতে হবে তার কোন
বিচারবিবেচনা নেই।এই দায় থেকে কবে মুক্তি পাবে সে?অন্তত ফাইনাল এক্সামটা মিটে গেলেই নিশ্চিত হৃদিতা। বাকি বর্ষ গুলোতে না হয় আরাফ ভালো কোন টিউটর রেখে পড়বে।
দুপুরের রোদটা যখন পরে আসছিল মিটিং শেষ করে পার্টি অফিস থেকে গাড়িতে উঠছিল নোমান।পকেটে থাকা নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ফোনটায় ব্রাইভেট হতে দ্রুত হাতে তুলে নেয়।অচেনা নাম্বার দেখেই ধনুকের মতো বাঁকানো ভ্রু দুটো কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।এই নাম্বারে এখন কে ফোন করেছে?পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউতো এই নাম্বারের খোঁজ যানে না তবে কে?ভাবনার গুলোর অবসান ঘটিয়ে দ্রুত ফোন রিসিভ করে সে।মূহুর্তেই কানে ভেসে আসে সুরেলা উৎসুক কন্ঠ,
– জনাব কেমন আছেন?
– মাইশা!
-এইতো কে বলেছে আপনি আমায় ভালোবাসেন না। যদি ভালোই না বাসতেন তবে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করার পরেও আপনার আমাকে চেনার কথা না।
– তোমার এইসব বিরক্তকর বক বক রাখো আগে বলো কেন ফোন করেছো?
– আমার জনাব ভালো আছে নাকি খারাপ আছে সেই খোঁজতো আমি নিতেই পারি।এবার বলুন কেমন আছেন আপনি?
– আমাকে আমার মতো করে থাকতে দাও।আর মেয়ে হিসেবে এইসব বেহায়াপনা রাখো।ভেবোনা রাজনীতির খাতিরে শুধুমাত্র দুইচারটা ছেলেদের লাশ পড়ে আমার হাতে,আমার উপর চরকি ঘোরালে মেয়েদেরকেও ছাড় দেবোনা আমি।
কথা শেষ করেই ফোনটা কেটে দিলো নোমান। বিরক্তে মুখ কুচকে আছে।মাইশা নামের মেয়েটাকে এর পর থেকে সামনে পেলে কষিয়ে দুটো চড় দেবে। ইদানিং মেয়েটা বাড়াবাড়ি একটু বেশি করছে।
অপরদিকে ক্ষুণ্ণমনা হয়ে মোবাইল ছুড়ে মারে মাইশা।গত একবছর থেকে নোমানের পেছনে ঘুরছে সে কিন্তু নোমান তাকে কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না।বাবার সাথে লন্ডন থাকা কালীন একবার দেশি চ্যানালের সংবাদ মাধ্যেমে নোমানকে তার চোখে পড়ে তারপর থেকেই নোমানের পিছু ছাড়ছেনা সে।গত আট মাস বিডিতে থেকে নোমানের সামনে অনেকবার নিজের মনের কথা বলেছে ফোনে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করে গেছে কিন্তু এটিটিউড নোমান এক চুল পরিমানেও পালটায় নি।তার বাবার নির্দেশে গত মাসেই লন্ডন ফিরে গেছে আবার কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম গুলোতে নোমানকে বিরক্ত করা এক চিমটেও কমেনি।
– নোমাইন্না আমাকে আর কত ঘুরাবি।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোকে তুলে এনে বিয়ে করি।মেয়ে মানুষ বলে সেই দুঃসাহস করিনা। তবে এইভাবে আর বেশিদিন না প্রয়োজনে তোকে তুলে এনে বিয়ে করবো।এই মাইশা দেওয়ানকে ইগ্নোর বিষয়টা মানা যাচ্ছে না।
মাইশা মোবাইল হাতে নিয়ে আপন মনেই বিড়বিড় করছে। কিন্তু তার কথা গুলো পেছনে দাড়িয়ে শুনে নেয় তার বাবা গিয়াস দেওয়ান।
– এইসব কি মাইশা? ওই ছেলেকে তুমি এতটা দাম দিচ্ছো কেন?তোমার জন্য কি ছেলের অভাব পড়েছে।বরং ওইসব ছ্যাচড়ের চাইতেও ভালো ছেলে খুঁজে দেবো তোমায়।
– আহ বাবা! মেয়ের হবু জামাইকে নিয়ে এইভাবে কথা কেউ বলে। রেসপেক্ট করো বাবা হি ইজ মাই অনলি ওয়ান হাবি!
– এইসব ছেড়ে এবার ভালো পথে আসো। কি দেখে ওই বদমাইশটার প্রেমে পড়লে?আমার তো তাকে তিলার্ধেক পরিমানেও ভালো লাগে না।
গিয়াস দেওয়ানের এমন ফিচেল হাসির কথা শুনে তার বাবার সাথে হাটু মুড়ে বসে মাইশা।ঝপাং করে বাবার কোলে ঝাপিড়ে পড়ে ভাবনার দুয়ারে কড়া নেড়ে বলে,
– আমি তো তার এটিটিউড, রাগ, বেপরোয়া,গমগম সুরে কথা বলার প্রেমে পড়েছি।তুমি ভাবো যে ছেলে কাউকে পরোয়া করেনা, সবার সাথে আগুনের ফুলকি নিয়ে চলে সেই ছেলেটা আমার সামনে পানি।আমাকে হারানোর ভয়টা তার মাঝে থাকবে, আমার জন্য এক আকাশ সমান আকুলতা তাকে গ্রাস করবে।সবসময় আমাকে কিভাবে খুশি রাখা যায় সেই চিন্তায় থাকবে। এবার ভাবো যদি আমার কথা গুলো খাপে খাপ মিলে যায় তবে ওই এটিটিউড ছেলেটাকে চুজ করে আমি কি ঠিক করিনি?
– না ঠিক করোনি তুমি!আমি চাই না এইসব বেহায়াপনা তোমার মাঝে দেখতে।ওই ছেলেকে দেখলেই আমার গায়ে আগুন লেগে যায়।ইতর বাদর ছেলে কোথাকার, বাংলাদেশটাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
– বাবা! এইভাবে নোমানকে নিয়ে বাজে মন্তব্য কেন করছো তুমি। এবার আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
মেয়ের পাগলামিকে আর গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত হেটে চলে যান দরজার দিকে।যাওয়ার আগে মাইশার পুরো রুমটা একবার ভালোভাবে পরখ করে। সারা রুম জুড়ে নোমান এনায়েতের ছবি এই ছেলে নির্ঘাত তার মেয়ের মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে। এইভাবে বেশি দিন আর চলানো যাবে না এর একটা সুরাহা তাকে করতেই হবে।
ক্লাসের সবচেয়ে শান্তশিষ্ট মেধাবী ছাত্র কবির।পরের দিন তার কাছ থেকেই নিজের না পারা পড়া গুলো বুঝে নিচ্ছে হৃদিতা। পড়া বোঝানের এক পর্যায়ে হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠে দুজনেই।তাদের হাসি থামার যেন কোন নাম নিচ্ছে না। বিষয়টি দূর থেকে অনেকক্ষন ধরে পরখ করছে আরাফ।তাদের হাসি দেখে আরাফের সারা অঙ্গে কেউ যেন আগুন ছুড়ে দিয়েছে। রাগে তালে মাথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে।সামনে দাঁড়ানো নাফিসা আর শাকীল আরাফের রেগে যাওয়াটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে কিন্তু কেনো রেগে গেলো সেই বিষয়টি বোধগাম্য হয়নি তাদের।হৃদিতার দিকে এক দৃষ্টিতে লোভাতুর হয়ে তাকিয়ে আছে লিবান। আনমনে সবার সামনে মুখ ফুটে বলে,
– সো বিউটিফুল! পর্দার আড়াল থেকেও আমি অনুভব করছি হৃদিতার হাসিটা কতটা সুন্দর।যদিও আমি তার চেহারা দেখিনি। কিন্তু নেকাব বাঁধা অবস্থায় হাস্যজ্বল চোখ গুলো আমার মনে হয় যেন সমুদ্রের তীরের আছড়ে পড়া সূর্যের আলোর ঝলমল করছে তার দুচোখ।
লিবানের কথায় আরো রেগে যায় আরাফ। কিন্তু সেই রাগ বাইরে প্রকাশ করলোনা। ভেতটায় রাগের মাত্রা ক্ষনে ক্ষনে বেড়ে যাচ্ছে।শাকীল আর নাফিসার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বলে,
– আমি কফিশপে যাচ্ছি।
কবিরের সাথে কথায় যখন মশগুল হৃদিতা তখন তার ফোনে আবারো মেসেজের টোন বেজে উঠে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখে এটা সেই নাম্বার যেটা গন্ড-মূর্খ দিয়ে সেভ করা। মানে কি আরাফ আবার কি মেসেজ দিয়েছে তাকে?দ্রুত একটু আড়াল হয়ে মেসেজ গুলো পড়া শুরু করে হৃদিতা,
-তোর হাসিতে দাগ লেগে যাক। সর্বস্ব জায়গায়,সর্বস্ব স্থানে, সর্বস্ব মানুষের সামনে তোর হাসিটি বিষদিগ্ধ হয়ে যাক।শুধুমাত্র একটি নিদিষ্ট মানুষের কাছে তোর হাসিটা হয়ে থাকুক অমূল্য রত্ন!আর সেই মানুষটা ছাড়া সবার সামনে হাসাটা তোর জীবনে নিষিদ্ধ করা হোক!❣️
‘দ্রুত কফিশপে আয়,আমি অপেক্ষা করছি।
হৃদিতার মুখে যে হাসিটা ছিল হঠাৎ করেই সেই হাসিটা উবে যায়।খন্ড খন্ড বিষাদ ভাব নেমে আসে তার চোখ মুখে।আরাফের এমন কথার মানে কি?তার হাসিটা কি এতই বিশ্রী।হৃদিতা মোবাইলটা হাতে নিয়ে,লেডিস ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে সোজা হাটতে থাকে।কবির অবাক হয়ে হৃদিতার কান্ড দেখছে।দূর থেকে শাকীল, লিবান, নাফিসা কেউ বুঝলনা হৃদিতার গুম হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
#চলবে….