#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_১৯
লিখা: Sidratul Muntaz
তোহা ডাইনিং রুমে যায়। আমীর সেখানে নেই। বাথরুমেও নেই। তার মানে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় বেডরুম মানে তোহার ভাষায় লঙ্গরখানায় আছে। তোহা দরজা নক করল। একটু পরেই আমীর দরজা খুলে কিছুটা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
” তুমি উঠে গেছো? গুড মর্ণিং। আজকে ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে না। আমি কিনে এনেছি। সব ফ্রীজে আছে। তুমি ওভেনে গরম করে নিও আর কিছু দরকার লাগলে বলো।”
আমীর একটা ক্লান্তিময় হাসি দিয়ে দরজা আটকে দিতে নিচ্ছিল। তোহা বলল,
” এক মিনিট।”
আমীর নেমে আসা চশমাটা এক আঙুলে সোজা করে বলল,” হুম?”
তোহা পায়ের দিকে ইশারা করে বলল,” এটা কি?”
” পায়েল। বিয়ের প্রথমরাতে আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। মনে নেই?”
“মনে আছে। কিন্তু এটা কালকে আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছিল। তাহলে আবার কিভাবে আসলো?”
” আমি এনেছি।”
” আপনি কিভাবে এনেছেন? এটা কোথায় পড়েছিল জানেন? বাথরুমের কূপে। সেখান থেকে তুলে আনা তো ইম্পসিবল। ”
” আসলে এইটা ওইটা না। ওইটার মতো দেখতেই আরেকটা। ডুপ্লিকেট।”
” আপনি এটাও ডুপ্লিকেট কিনেছেন?”
” হুম।”
” কেন? আরেকটা বুঝি রিম্মির জন্য? ”
আমীরের মুখ গুমট অন্ধকারের মতো হয়ে গেল। ভারী গলায় বলল,” তোহা!”
তোহা হাত ভাজ করে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,” সত্যি কথায় লাগে বেশি।”
ধপাস শব্দে দরজাটা আটকে দেওয়ার শব্দ হলো। তোহা অপমানে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইল। আমীর ওর মুখের উপর দরজা আটকে দিতে পারল? তোহা দ্বিগুণ তেজে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,
” দরজা কেন আটকালেন? এখনি খুলুন। আমার কথা শেষ হয়নি।”
আমীর দরজা খুলে রাগী কণ্ঠে বলল,” কি?”
তোহার কণ্ঠস্বর কিছুটা নরম হলো,
” আমার একটা জিনিস লাগবে।”
” কি জিনিস?”
” একটা সেলফোন।”
আমীর সাথে সাথেই পকেট থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে তোহার হাতে দিল। তোহা বলল,
” আরে এটা না। আমার নিজের একটা সেলফোন লাগবে। একদম ব্যক্তিগত।”
” ঠিকাছে। ফ্ল্যাশ মেরে এটাই নিয়ে নাও।”
” তাহলে আপনি?”
” আমার আরেকটা আছে। ডিসপ্লেতে একটু প্রবলেম। ঠিক করে নিলেই হয়ে যাবে।”
তোহা আর কিছু বলার আগেই আমীর দরজা লাগিয়ে দেয়৷ তোহার মুখ দিয়ে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসল,” ছি, মানুষ এতো কঞ্জুষ হয়?”
তোহা আমীরের মোবাইল ফ্লাশ করেনি। কারণ এই ফোনে তাদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত ঘটনার ভিডিও আছে। এসব তোহার কাছে অনেক মূল্যবান। কষ্টের সময় শুধু এই ভিডিওগুলো দেখেই তোহা শান্তি পায়। নিচতলার দাড়োয়ান হাসানের থেকে নীলাভ্রর ফোন নাম্বার কালেক্ট করে নীলাভ্রকে ফোন দেয় তোহা,
” হ্যালো নীল ভাইয়া। ”
” আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”
” আমি তোহা।”
” ও তোহা? বল। এইটা কি তোর নাম্বার?”
” হ্যা, এখন থেকে আমারই। তোমাকে ফোন দিয়েছি একটা বিশেষ কারণে।”
” বল।”
” কালকে রিম্মিআপুর সাথে কথা বলেছিলে?”
” হুম।”
” কি বলেছে সে?”
নীলাভ্র সবকিছু বলল যেগুলো রিম্মি গতরাতে নীলাভ্রকে বলেছিল। কিন্তু তোহা আমীরের জবানবন্দির সাথে রিম্মির জবানবন্দির কোনো মিল পেল না। দুজন দুই রকমের কথা কেন বলল? এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ মিথ্যুক। পরমুহূর্তেই আবার তোহার মনে পড়ল, আমীর কালরাতে যেটা বলেছে সেটা নীলাভ্রকে জানানো উচিৎ না। রিম্মি হয়তো এজন্যই নীলাভ্রকে ওই ঘটনা না বলে অন্যঘটনা বলেছে। যেন এন্টিবডি দেওয়ার বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে। তোহা তাই এ বিষয়ে নীলাভ্রকে আর কিছু বলল না। সে বরং বলল,
” তুমি রিম্মি আপুর কথা মেনে নিয়েছো?”
” আমার কাছে ওর কোনো কথা মিথ্যে মনে হয়নি। ”
” তুমি জিজ্ঞেস করোনি কেন ওরা রাতের বেলাই দেখা করে? গোপনেই কেন ওদের এসব করতে হবে?”
” না, এইটা জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু আমার মনে হয় রিম্মি কাউকে বিষয়টা জানাতে চায়না। কারণ মানুষ যদি রিম্মির হিডেন ট্যালেন্টের কথা জানে, তাহলে হয়তো ওর বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে যাবে।”
” তাই বলে তোমাকেও জানাবে না?”
” আমি তো সবকিছু জানতাম না। ওর জীবনে অনেক ঘটনাই আছে, যেগুলো ও আমাকে বলতে চায়না। কিংবা হয়তো চায়, কিন্তু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে। এই ঘটনা আমাকে বলতে গেলে হয়তো অতীতের অনেক কাহিনি উঠে আসবে। এজন্যই বলেনি।”
” ও।”
” কিন্তু রিম্মি আরেকটা কথাও বলেছে।”
” কি?”
” তুই সব জানিস।”
” আমি জানি? কি জানি?”
” আমীর আর রিম্মির সম্পর্কের বিষয়ে তুই সব বিস্তারিত জানিস।”
” কি আজগুবি কথা। আমি কোথ থেকে জানবো? আমিও তো তোমার মতো কালকেই জানতে পেরেছি। এর আগে কিছু জানতাম না তো।”
” রিম্মি এটাও বলেছে যে তোর কিছু মনে নেই। মনে করার চেষ্টা কর তোহা। তাহলে খুব ভালো হবে।”
তোহা খানিক চিন্তা করে বলল,” এটা হতে পারে। আসলেই অনেক কিছু আমার মনে নেই। সেজন্য আমি ঔষধও খাচ্ছি। কিন্তু আমার মনে হয় ঔষধে বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ ইদানীং আমার কিছু তো মনে পড়েই না, উল্টা আরও মনে হয় সব ভুলে যাই। এমন কেন হচ্ছে বলোতো?”
” আমি কিভাবে জানবো? তোর ডাক্তার জামাইকেই জিজ্ঞেস কর।”
” ওর কথা আর বলো না। ও একটা রোবট। সারাদিন একটা মানুষ কিভাবে যে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে পারে, আমার মাথায় আসেনা।”
রিম্মি এতোক্ষণ নীলাভ্রর পাশে বসেই সবকিছু শুনছিল৷ এবার নীলাভ্রর মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়,
” তোহাকে বলো এখনি ঔষধ খাওয়া বন্ধ করতে। নাহলে ওর সর্বনাশ হবে।”
নীলাভ্র একথা শুনে ভ্রু কুচকে কতক্ষণ রিম্মির দিকে চেয়ে রইল। তারপর বলল,
” হ্যালো তোহা।”
” বলো শুনছি।”
” তুই কিসের ঔষধ খাচ্ছিস?”
” মেমোরি লসের ঔষধ। ডাক্তার দিয়েছিল। খেলে প্রচুর ঘুম আসে।”
রিম্মি বলল,” ওকে বলো এখনি ঔষধগুলো বের করে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলতে।”
নীলাভ্র রিম্মির কথা রিপিট করল। তোহা চোখ বড় করে বলল,
” কেন?”
” দরকার আছে। তুই আগে ফেল, তারপর বলছি।”
” কিভাবে ফেলবো? ঔষধ তো নেই। গতকাল শেষ হয়েছিল। আমীর আর আনেনি।”
রিম্মি বলল,” ওদের ল্যাম্পটেবিলের ড্রয়ারে দেখতে বলো। সব ঔষধ আছে। ওই একটা ঔষধও ওর জন্য নিরাপদ নয়।”
নীলাভ্র রিম্মির কথা আবারও পুনরাবৃত্তি করল। তোহা সঙ্গে সঙ্গে ল্যাম্পটেবিলের ড্রয়ার খুলল। দেখল নতুন ঔষধের প্যাকেট। আমীর হয়তো এগুলো আজকে সকালে এনেছে। কিন্তু নীলাভ্র কিভাবে জানলো? তোহা প্রশ্ন করল সাথে সাথেই,
” তুমি কিভাবে জানলে আমার ড্রয়ারে ঔষধ আছে?”
” তুই আগে ঔষধগুলো ফেল। তারপর বলবো।”
তোহা ফেলতে গিয়েও ফেলল না। এতো দামী ঔষধ সে আন্দাজী কেন ফেলবে? তাছাড়া আমীর যদি জিজ্ঞেস করে তখন ওকেই বা কি জবাব দিবে? নীলাভ্র বলল,
” ফেলেছিস?”
তোহা ক্ষীণ গলায় বলল,” হুম?”
রিম্মি তখন বলল,” ওকে বলো ঔষধের সাথে রূপার পায়েলটাও ফেলে দিতে।”
নীলাভ্র বলল,” তোহা, তোর কাছে কি কোনো রূপার পায়েল আছে?”
তোহা বিস্ময় প্রকাশ করল,” হ্যা আছে। কেন?”
” ঔষধের সাথে ওইটাও ফেলে দে। ”
” আজব! আচ্ছা তুমি এতোদূর থেকে এসব জানছো কিভাবে? তুমি কি কোনোভাবে আমাকে দেখতে পাচ্ছো ভাইয়া?”
তোহা আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগল। নীলাভ্র বলল,
” আরে না, এসব আমি রিম্মির ইশারায় বলছি। ও দশমিটার দূর পর্যন্ত কোথায় কি হচ্ছে সব দেখতে পারে। বুঝতেও পারে।”
” ও। তাহলে এই ব্যাপার? আমি এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছি। রিম্মি আসলে আমাকে জেলাস করে। আমীর ওকে না দিয়ে পায়েলটা আমাকে দিয়েছে তো, তাই ওর সহ্য হচ্ছে না। ও চাইছে এটা যেন আমি জানালা দিয়ে ফেলে দেই৷ তারপর আমীর আমার উপর রেগে যাক। আমাদের মধ্যে ঝগড়া বাধুক। তারপর ও ওইসব কুড়িয়ে নিয়ে যত্ন করে রেখে দিবে। এতো বোকা আমি? কিছু ফেলবো না। এই সবই আমার জন্য নিরাপদ। আমি যথেষ্ট সেইফ আছি। বরং তুমি সেইফ নেই। ওই মেয়ে তোমার মাথাখারাপ করে দিয়েছে নীল ভাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে আসো। নাহলে পস্তাবে। রাখছি।”
তোহা ফোন কেটে দিল। রিম্মি কপালে হাত ঠেকিয়ে হাসছে। নীলাভ্র অবাক হয়ে চেয়ে রইল। একটু পর বলল,
” তুমি তোহার কথায় কিছু মনে করোনা। মেয়েটা পাগল।”
রিম্মি বলল,” আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু যা ভেবেছিলাম তাই। ওর ব্রেইন একদম ওয়াশ হয়ে গেছে। এখন তুমি কেন? ওর মা-বাবা এসে বললেও হয়তো বিশ্বাস করবে না।”
” আচ্ছা রিম্মি একটা কথা বলো, তুমি তো দশমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সব অবজার্ভ করতে পারো। এমনকি সবার মনে কি চলছে সেটাও। তাহলে গতকাল রাতে তোহা যখন তোমাদের দূর থেকে দেখছিল তুমি সেটা বুঝোনি?”
রিম্মি মুখে মৃদু হাসি বজায় রেখে মাথা নাড়ল। মানে বুঝেছে। তারপর বলল,” আমি এটাও বুঝেছিলাম ও তোমাকে ডেকে আনতে যাচ্ছে।”
নীলাভ্র অবাক হয়ে বলল,
” তাহলে তখনি কেন শতর্ক হলে না?”
” ইচ্ছে করেই। আমি আমীরকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিলাম। সাথে এটাও পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম তোহা ওকে ভালোবাসে কিনা।”
” এজন্যই কি তুমি ওইসময় আমীরকে জড়িয়ে ধরেছিলে?”
” হ্যা।”
” তাহলে আমার কথা তোমার মাথায় আসেনি?”
” আমি জানতাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে।”
নীলাভ্র রিম্মির দুইহাত নিজের হাতে নিল। তারপর বলল,
” আমাকে বিয়ের জন্য শর্ত দিবে বলেছিলে না? এখন বলো তো। কি সেই শর্ত? তোমাকে সারাজীবন বিশ্বাস করতে হবে?”
রিম্মি হাত ছাড়িয়ে বলল,” না। তোমার নিজেরও বিবেক আছে। বুদ্ধি আছে। যদি বিশ্বাস করা উচিৎ মনে হয় তাহলেই করবে। নাহলে করার দরকার নেই। অন্ধবিশ্বাসের ঘোর বিরোধী আমিও।”
রিম্মি উঠে দাড়াল। নীলাভ্রও দাড়াল। দাড়িয়ে বলল,
” তাহলে শর্ত কি?”
রিম্মি চলে যেতে যেতে বলল,
” সময় হলে আমি তোমাকে চিঠি পাঠাবো।”
আমীর রুম থেকে বেরিয়ে তোহাকে ডাকল,” তোহা, এই তোহা!”
তোহা কোথাও নেই। পুরো বাড়ি থমথম করছে। আমীর সব জায়গায় ভালোমতো খুঁজল। কিন্তু তোহাকে পাওয়া গেল না। আমীরের অস্থির লাগতে শুরু করল। মেয়েটা না বলে গেল কই?
তোহা গেছে মায়ের বাসায়। সেখানে পূরবী মুনকে নিয়ে ডান্স প্র্যাকটিস করছে। রিম্মিআপুর গায়ে হলুদে মুন নাচতে চায়। কিন্তু পূরবীর এই গায়ে হলুদ নিয়ে মোটেও ইন্টারেস্ট নেই৷ সে ঠিক করেছে যতদিন বিয়ে চলবে সে একটা ঘরে দরজা আটকে সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে ইচ্ছামতো বই পড়বে। সাউন্ড বক্সে গান ছাড়ার কারণ যেন বিয়ে বাড়ির গান কানে না আসে। আর বই পড়ার কারণ যেন বিয়ের বাড়ির দিকে মনোযোগ না যায়৷ মুন একপায়ে ভর দিয়ে দাড়াতে পারে না। তাই ওকে মুদ্রা শেখানো খুব জটিল মনে হচ্ছে। যদিও মেয়েটার আগ্রহের শেষ নেই। অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। পূরবীর মনে হয় মুন পারবে৷ রিম্মিকে পছন্দ না হলেও মুনকে পূরবীর অনেক ভালো লাগে। কারণটা সে নিজেও জানেনা। হতে পারে মুনের মায়াবী চেহারা অথবা মিষ্টি হাসির জন্য। ওদের ডান্স প্র্যাকটিসের মাঝখানে তোহা ঢুকে পড়ে। পূরবী বলল,
” কে রে?”
” আমি। আসতে পারি।”
” ও তুই? আয়।”
” কি করছিস তোরা?”
” নাচি। তুই নাচবি?”
” ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছিস কেন? আমি তো সুন্দর করে জিজ্ঞেস করেছি। তুইও সুন্দর করে বল!”
মুন আর পূরবী একসাথে হাসল। পূরবী বলল,
” আমরা আসলেই নাচছি৷ ডান্স প্র্যাকটিস চলছে।”
তোহা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,” তাই নাকি? আমিও প্র্যাকটিস করবো।”
” না সুন্দরী, তোমাকে নেওয়া যাবে না। তুই এই চেহারা নিয়ে স্টেজে উঠে গেলে আমাদের দিকে তো কেউ তাকাবেই না।”
” ইশশ ঢপ!”
পূরবী বলল,” ঢপ কিসের? আচ্ছা মুন, তুমি বলোতো। আপুটা সুন্দরী না?”
মুন দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,” হুম, অনেক সুন্দর। ”
তোহা বলল,” ওলে বাবালে, তাই?”
মুন তোহার কাছে এসে বলল,” হ্যা। তোমার মতো আমার একটা ডল ছিল ছোটবেলায়। হারিয়ে গেছে।”
” ওরে বাবা! আমি ডলের মতো সুন্দর? ”
মুন ঠোঁট চেপে হাসল। তোহা বলল,” তুমিও তো অনেক সুন্দর। নাম কি তোমার?”
” মুন।”
” মুনমুন? নাকি শুধু মুন?”
” শুধু মুন।”
” ও, আচ্ছা বলোতো মুন অর্থ কি?”
মুন কাধ নাড়িয়ে বলল,” চাঁদ!”
ওর বলার ভঙ্গি দেখে মনে হলো তোহা খুব সহজ প্রশ্ন করে ফেলেছে। এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ওর জন্য কোনো ব্যাপারই না। তোহা বলল,
” তোমার বয়স কত মুন?”
” নয়ের থেকে দুই বাদ দিলে কত হয়?”
তোহা একবার পূরবীর দিকে তাকালো। তারপর হেসে বলল,
” সাত হয়। কেন?”
” তাহলে আমার বয়স সাত।”
তোহা হাসতে হাসতে বলল,” ও আচ্ছা।”
একথা বলতে বলতে মুনকে কোলে বসালো তোহা।
মুন বলল,
” তোমার হাসিটাও অনেক সুন্দর। আমার একটা ভাইয়া আছে। সেও খুব সুন্দর। তুমি কি ওকে বিয়ে করবে? তাহলে আমি তোমাকে ভাবী ডাকতে পারবো।”
মুনের কথায় তোহা হা করে ফেলল। পূরবী ফিক করে হেসে বলল,
” আজ-কালকের বাচ্চা যে কি পাকনা হয়! শোনো মুন বুড়ি, তুমি এখন যেটা বলেছো সেটা যদি এই আপুর হাসব্যান্ড জানতে পারে তাহলে খবর আছে।”
মুন দুইহাত মুখে দিয়ে বলল,” আপুর বিয়ে হয়ে গেছে? আমি বুঝতে পারিনি। সরি আপু। তোমার হাসব্যান্ডকেও সরি।”
তোহা হাসতে হাসতে বলল,” আচ্ছা ঠিকাছে।”
এরই মাঝে লতিফা ঘরে ঢুকলেন। তোহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” এই তোহা, এদিকে আয়। তোরে ডাকে।”
তোহা উঠে দাড়িয়ে বলল,” কে ডাকে?”
লতিফা হেসে বললেন,” দেইখ্যা যা কেডায় আইসে।”
তোহা বের হয়ে দেখল আমীর দাড়িয়ে আছে। হাত ভাজ করে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
” ও আপনি?”
আমীর হাসার চেষ্টা করে বলল,
” তুমি না বলে চলে আসলে যে? কি করছো?”
পূরবী আর মুনও বেরিয়ে আসল। পূরবী মজা করে বলল,
” কি দুলাভাই? আপনিও চলে এসেছেন? বউকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকা যায় না বুঝি!”
পূরবীর কথা শুনে লতিফা লজ্জায় রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন। তোহা আড়চোখে তাকালো পূরবীর দিকে। তখনি খেয়াল করল মুন পূরবীর পেছনে লুকিয়ে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ওর দৃষ্টি আমীরের দিকে নিবদ্ধ। তোহা বলল,
” মুন, কি হয়েছে তোমার?”
এবার পূরবীরও নজর গেল মুনের দিকে। মুন এভাবে কাঁপছে কেন? মনে হচ্ছে যেন সাংঘাতিক ভয় পাচ্ছে। ভয়ে কুকড়ে আছে। তোহা বুঝতে পারল না, আমীরকে দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? আমীর তো দেখতে একদমই ভয়ংকর না! বরং কত কিউট দেখতে! তাহলে মুন কেন ভয় পাচ্ছে?
চলবে