ধূসর রঙে আকাশ পর্ব- ২১

0
1011

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_২১
লিখা: Sidratul Muntaz

তোহা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে পূরবীর সামনে। পূরবী একগালে হাত রেখে খানিক ঝুঁকে বলল,
” আচ্ছা আমি যেভাবে বলেছিলাম সেভাবেই সব করেছিলি তো?”
তোহা অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,” হ্যা। শুধু গ্রামের বধূদের মতো পেচিয়ে পেচিয়ে শাড়িটা পড়তে পারিনি।”
পূরবী গাল থেকে হাত নামিয়ে অবাক হয়ে বলল,
” তাহলে কিভাবে শাড়ি পড়েছিলি?”
” এখন যেভাবে পড়ে আছি সেভাবেই পড়েছিলাম।”
পূরবী কপাল চাপড়াতে লাগল,” হায় কপাল! সর্বনাশ করেছিস। এতে লাভটা কি হলো?”
” তোর ওই কচুর প্ল্যানে এমনিতেও কোনো লাভ হতো না। আমি উনাকে চিনি। উনি একটু অন্যরকম।”
” একটু? পুরোটাই অন্যরকম। নাহলে এমন একটা মোমেন্টে কেউ নরমাল থাকতে পারে? এটা কোনো নরমাল পুরুষের দ্বারা সম্ভব? আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে। আচ্ছা, উনি আসলেই পুরুষ তো?”
তোহা চোখ রাঙিয়ে ধমক দিল,” পূরবী!”
পূরবী মুখ চেপে হেসে ফেলল। তোহা অগ্নিশর্মা চেহারায় অন্যদিকে তাকালো। পূরবী বলল,
” আচ্ছা শোন, নেক্সট প্ল্যান বলি। এইটা সিউর কাজে লাগবে।”
” দ্যাখ আবার কোনো আলতু-ফালতু কিছু বলিস না প্লিজ। আমি আর এমন কাহিনি করতে পারবো না। এটা করতে গিয়েই লজ্জায় আমার অবস্থা খারাপ। ছি ছি ছি!”
তোহা দুইহাতে মুখ ঢাকল। পূরবী বলল,
” এতো লজ্জা নিয়ে বাঁচবি কিভাবে তুই? থাক তোর কিছু করতে হবে না৷ তুই বরং বাদ দে। এরপর যখন রিম্মি শাকচুন্নি এসে তোর নাকের ডগা দিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে চলে যাবে তখন বুঝবি।”
তোহা ফুসে উঠল,” না। প্লিজ এসব বলিস না। আমার ভয় লাগে।”
পূরবীর আবারও হাসি পেল। হাসতে হাসতে বলল,” তুই কি ভাইয়াকে খুব ভালোবাসিস?”
তোহা এই প্রশ্নে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আনমনে বলল,
” হুম। আমার সারাখন ইচ্ছে করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, ‘ইশশ, কি সুন্দর ও। সারাজীবনের জন্য যদি ওকে আমি পেতাম!’তারপর হুট করেই মনে হয়, আরে ও তো আমারই আছে। তখন কি যে আনন্দ হয়! অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো না। অহংকারবোধ হয় নিজের প্রতি। নিজেরই নিজেকে হিংসা হয়। তারপর যখন আবার মনে পড়ে ওকে হারানোর কথা। কিংবা ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তখন আমি কিভাবে থাকবো? কিভাবে বাঁচবো? আমি পারবো না পূরু৷ ওকে ছাড়া আমি জীবনেও থাকতে পারবো না।”
পূরবী দীর্ঘশ্বাস ফেলল,” বুঝতে পেরেছি। জটিল সমস্যা। ঠিকাছে তুই নেক্সট প্ল্যান শোন। এইটা যদি কাজে না লাগে তাহলে আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, এই আইডিয়াটা কাজে লাগবে।”
তোহা স্বাভাবিক হয়ে কিছুটা হাসল। এরপর বলল,
” তাই? শুনি কি আইডিয়া?”
পূরবী সবকিছু তোহাকে বুঝিয়ে বলল। তোহা বলল,
” ওয়াও, এই প্ল্যানটাই জোস। তুই আগে কেন বললি না? তাহলে আমাকে কষ্ট করে ওইসব করতে হতো না। ছি কি লজ্জা!”
পূরবী হেসে বলল,” এইটা করতে আবার লজ্জা পাবি না তো?”
তোহা আত্মবিশ্বাসী হাসি দিয়ে বলল, “একদম না।”

বিছানার একপাশে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তোহা। চোখ বন্ধ থাকলেও কান খোলা, মস্তিষ্ক সজাগ। মনোযোগ সম্পূর্ণ ডাইনিংরুমের দিকে। আমীর এখন ওখানেই আছে। যেকোনো সময় এইরুমে চলে আসতে পারে। তখনি শুরু হবে তোহার আসল কাজ। আমীরের পায়ের শব্দ শুনে বিছানার চাদর খামচে ধরে তোহা। চোখ-মুখ খিচে আর্তনাদ শুরু করল,
” উফফ, কি ব্যথা! ও বাবা!”
আমীর বিছানায় বসতে বসতে বলল,” ব্যথা মানে? কোথায় ব্যথা?”
” মাথাব্যথা। প্রচুর মাথাব্যথা করছে। ল্যাম্পটেবিল থেকে বামটা নিয়ে একটু আমার মাথায় লাগিয়ে দিবেন প্লিজ? ব্যথাটা সহ্য হচ্ছে না।”
আমীর ব্যস্ত হয়ে বলল,” আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি। দাঁড়াও।”
আমীর বাম নিয়ে লাগাতে লাগাতে বলল,” মাথায় কি খুব বেশি ব্যথা?”
” এখন একটু কম লাগছে।”
” বাম লাগানোয় জ্বলছে?”
” একটু একটু।”
” চোখ বন্ধ করে রাখো৷ নাহলে চোখও জ্বলবে।”
তোহা চোখ বন্ধ করল। এরই মাঝে মোবাইল বেজে উঠে। মোবাইলটা আগে ছিল আমীরের। এখন তোহার। আমীর যখন ফোনটা ধরতে যাচ্ছিল তোহা বলল,
” ধরবেন না প্লিজ। আমাকে দিন।”
আমীর মোবাইলটা তোহার হাতে দিল। এরপর জিজ্ঞেস করল,
” কে ফোন করেছে?”
” ফোন না ম্যাসেজ।”
” কার ম্যাসেজ?”
তোহা রহস্যের ভঙ্গিতে বলল,” বলা যাবে না। সামওয়ান স্পেশাল।”
আমীর তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,” হোয়াট?”
” আপনি মাথায় মালিশ করুন তো। আমি ম্যাসেজের রিপ্লাই দেই।”
তোহা খেয়াল করল আমীর ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তোহা একহাতে ডিসপ্লে ঢেকে বলল,
” কারো পারসোনাল জিনিস এভাবে দেখতে হয়না। আপনি ম্যানার্স শিখেন নি?”
আমীর চোয়াল শক্ত করে বলল,” পারসোনাল মানে? কিসের পারসোনাল? দেখি তো, দাও ফোনটা।”
” দেওয়া যাবে না। এটা এখন আমার ফোন। আর আমার ফোনে আমার অনেক প্রাইভেট জিনিস থাকে। এসব আমি আপনাকে কেন দিবো?”
” আমার কাছে আবার কিসের প্রাইভেট? তোহা ফোনটা দিতে বলেছি এখুনি দাও।”
” তাহলে আগে আমাকে নতুন ফোন কিনে দিন। তারপর আপনার ফোন আপনি পেয়ে যাবেন।”
” আমি ফোনের জন্য বলছি না। শুধু ম্যাসেজের মানুষটাকে দেখবো।”
” কাকে?”
” কি যেন বললে? সামওয়ান স্পেশাল। ”
” ও। ওকে দেখতে চাইছেন? দেখার কিছু নেই। ও অনেক কিউট।”
আমীর ভ্রু কুচকে বলল,” মানে? কে ও?”
” আমার..”
” বলো? কে?”
” আমার খুব কিউট একটা ফ্রেন্ড। ওর নাম নিয়াজ আহমেদ। জানেন, প্রায় আড়াইবছর ধরে আমার পেছনে ঘুরছে। কত যে চড়-থাপ্পড় খেয়েছে হিসাব নেই। তবুও আমার পেছন ছাড়ে না। এইযে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, তাও নাকি ও আমাকেই ভালোবাসে। সারাজীবন বাসবে। এসবের কোনো মানে হয় বলেন?”
তোহা মুখে হাত রেখে হাসল। আমীরের ফরসা নাকের ডগায় রাগ জমে লাল হয়ে গেছে৷ তোহা সেটা স্পষ্ট টের পেল। ওকে আরও চটানোর জন্য বলল,
” জানেন, ছেলেটা এতো ইনোসেন্ট আর সুন্দর। না দেখলে বিশ্বাসই করবেন না। দাঁড়ান আপনাকে ছবি দেখাই।”
তোহা ফেসবুক থেকে নিয়াজের একটা ছবি বের করে আমীরের দিকে তাক করল,” দেখুন সুন্দর না?”
আমীর ছবিটা একনজর দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। অন্যদিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,” হুম সুন্দর। ”
তোহা বলল,” শুধু সুন্দর না। পাগলও বটে। এই ছেলে আমার চারমাসের ছোট। তবুও আমার জন্য কি কি পাগলামী করেছে শুনবেন? শুনলে আপনি টাশকি খাবেন। আমি ওর এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলাম। শুধুমাত্র আমার জন্য ও ইন্টারের পড়া শিখতো। যেন আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট করে দিতে কোনো সমস্যা না হয়। পরীক্ষার আগে আমার প্র্যাকটিক্যালের সব নোট ও করে দিতো। বৃষ্টির দিনে ছুটির সময় আমার জন্য ছাতা নিয়ে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতো। তারপর ও আর আমি এক ছাতার নিচে হেটে হেটে বাড়ি আসতাম।”
আমীর চোখ বড় করে বলল,” একই ছাতার নিচে? কেমন ছাতা? বড় ছাতা না ছোট ছাতা?”
” আপনার মাথার মতো ছাতা।”
আমীর বিরক্ত মুখে বলল,” আমার মাথার মতো মানে কি?”
তোহা হাসতে লাগল। একটু পর হাসি থামলে বলল,
” ছাতা আবার কেমন হয়? নরমাল সাইজের ছাতা। একদিন কি হয়েছে জানেন? নিরিবিলি রাস্তা ছিল। বৃষ্টিও পড়ছিল অনেক। ছাতার নিচে শুধু আমি আর নিয়াজ। হঠাৎ নিয়াজ আমার হাত ধরল।”
আমীর গর্জিত কণ্ঠে বলল,” হাত কেন ধরবে?”
তোহা লাজুকমুখে বলল,” ওর ইচ্ছে হয়েছে তাই। তারপর কি করেছে জানেন? অন্যহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরল।”
আমীর রাগে চোখ থেকে চশমা নামিয়ে বলল,” তুমি কিছু বলোনি? বাধা দাওনি?”
” কিভাবে বাধা দিবো? আমি তো ছাতা ধরেছিলাম।”
” তারপর কি করেছে? ”
তোহা একহাতে মুখ ঢেকে বলল,” ছি! ওইকথা আমি আপনাকে বলতে পারবো না। আমার লজ্জা লাগছে।”
আমীরের মেজাজ তখন তুঙ্গে। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
” বলতে পারবে না মানে? অবশ্যই বলতে হবে। বলো।”
” উফফ না৷ আপনি এসব জেনে কি করবেন? এগুলো আমার পারসোনাল ব্যাপার।”
” তাহলে এতোটুকু কেন বলেছো?”
” আমার বলতে ইচ্ছে করেছে তাই।”
” বাকিটা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে। বলো।”
” আমার তো বলতে ইচ্ছে করছে না। বলবো না।”
আমীর রেগে-মেগে এবার বলেই ফেলল,” ওই বাস্টার্ড কি তোমাকে কিস করেছে?”
তোহা লজ্জায় চুপসানো গলায় বলল,” আপনি কিভাবে জানলেন?”
” তার মানে সত্যি?”
” না, কিস করতে চেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বজ্রপাত হলো। আর আমরা দুজন-দুজনের থেকে সরে গেলাম।”
আমীর রুদ্ধশ্বাস ফেলল। তোহা দুষ্টুগলায় বলল,
” কিন্তু এর আগে..”
আমীর অধৈর্য্যের মতো বলল,” কথার মাঝখানে থামবে না তোহা। এর আগে কি?”
” এর আগে ওর ডানহাতটা আমার পেটের একটু নিচে ঠিক এই জায়গায় ছিল। আমি সেই স্পর্শ কোনোদিন ভুলবো না। ইশশ!”
” ছি, তুমি ওকে চড় মারলে না কেন? এতোবড় সাহস পায় কিভাবে?”
” চড় কেন মারবো? আমার তো মজাই লেগেছে।”
আমীর হঠাৎ উঠে তোহার পেটের ঠিক ওই অংশে জোরে চিমটি দেওয়া শুরু করল৷ তোহা চিৎকার দিয়ে বলল,
” আহ! কি করছেন?”
” এখন মজা লাগছে?”
” প্লিজ ছাড়ুন, মরে যাবো।”
” কেনো ছাড়বো? তোমার না মজা লাগে? এখন নাও মজা!”
” আহ! দোহাই লাগে ছাড়ুন।”
আমীর একটু পর ছেড়ে দিল। তারপর চশমা পড়তে পড়তে উঠে দাড়ালো। চুল ঠিক করতে করতে বলল,
” ফাকিং বাস্টার্ড।”
তোহা দেখল ওর চামড়ায় অনেক বিছরি একটা দাগ হয়ে গেছে। ব্যথায় চোখ দিয়ে পানিও বের হচ্ছে৷ তবুও খুশি লাগছে৷ মনে হচ্ছে এর চেয়ে আনন্দ আর কোথাও নেই।

চলবে

( আপনারা একটু বেশি বেশি কমেন্ট করবেন।😬 তাইলে আমার জন্যও ভালো আপনাদের জন্যও ভালো।😌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here