অব্যক্ত প্রিয়তমা: পর্ব-১৭

0
1094

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_17 ( কিছু সমস্যার কারনে আবারো পোস্ট করা হলো। আগের টা ডিলেট । )

অনিন্দিতা কে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। আপাততো তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। ডাক্তারের চোখে মুখে সামান্য তিক্ততা। নির্ভীক কে দেখে বললেন
” আপনি পেসেন্ট এর হাসবেন্ড ? ”

” আমি ওনার

নির্ভীক উত্তর খুঁজে পায় না। পর পর ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। বলে
” আমি ওনার রিলেটিভ ”

” ওহ আসুন আমার সাথে। ”

নির্ভীকের মনে ভয় বাসা বাঁধে। ডাক্তার এর সাথে কেবিনে চলে আসে। সিটে বসতে বসতে বলে
” ওনার কোনো বড় সমস্যা হয় নি তো ডক্টর ? ”

” এক্সচেলি মিস্টার ”

” নির্ভীক, নির্ভীক মাহতাব ”

” মিস্টার নির্ভীক ওনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আর পেটে ব্যথার কারন সময় মতো খাওয়া দাওয়া না করা। একটা কথা বলুন তো ওনার কি বিয়ে হয়েছে ? ”

” নো ডক্টর। ”

ডাক্তার একটু চিন্তিত হলেন। নির্ভীকের গলায় যেন কথা আটকে গেছে। কাঁপা স্বরে বলল
” ডক্টর সী ইজ ফাইন ? ”

” এক্সচেলি মিস্টার নির্ভীক আমি যা বুঝেছি তাঁতে ওনি কোনো বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তিত। ওনার মস্তিষ্ক শুধু সেই কথাতেই আবদ্ধ থাকে। কিন্তু সে আশানুরূপ কোনো ফল পায় না। যাঁর কারনে ব্রেনে চাপ পরেছে আর ওনার মস্তিষ্ক সঠিক ভাবে কাজ করছে না। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলেছি ? ”

নির্ভীকের চোখ দুটো কেমন হয়ে গেছে। ডাক্তার এর কন্ঠে হতচকিয়ে যায়। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
” ইয়েস ডক্টর। ”

” ওনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ভালো সাইকোলজিস্ট ডাক্তার দেখাতে হবে। তাহলে ওনি ঠিক হবেন। আর একটা কথা ওনার যদি প্রেমের সম্পর্ক থাকে তাহলে সেটা কিন্তু আরো বিপজ্জনক। ”

নির্ভীক কোনো কথা বললো না। ডাক্তার এর কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা অনিন্দিতার কেবিনে চলে আসলো। হাতে ক্যানেলা লাগানো , নিস্তেজ দেহে হসপিটালের পোষাক। বুকের ভেতর ভীষন যন্ত্রণা হতে লাগলো। অনিন্দিতার ডান হাত বুকে চেপে ধরলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। পর পর কয়েক টা চুমু খেয়ে বলল
” আম স্যরি অনিন্দিতা , আম স্যরি , প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আপনি ফিরে আসুন, অগের মতো হয়ে যান অনিন্দিতা। আমাকে ঘৃনা করুন তবু ও ভালোবাসবেন না প্লিজ। আপনি যে পাগল হয়ে যাচ্ছেন। শেষ হয়ে যাবেন আপনি। আপনার পতন আমি কি সহ্য করবো ? ”

.

অনিন্দিতা কে আজকেই রিলিজ করা হবে। সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলছে নির্ভীক। শাহানার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। পৃথিবী ও চলে এসেছে। হীর আসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কেঁদে অবস্থা খারাপ। আরশাদের মাথা ঠিক নেই। বড্ড ভালোবাসেন মেয়ে কে। আর প্রিয়জনের অসুস্থতা ওনার জীবনে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পুরুষ মানুষ বিধায় কাঁদতে পারছেন না তিনি। নাহলে হসপিটালেই হাউ মাউ করে কাঁদতেন । নির্ভীক বের হতেই শাহানা ছুটে যান। ব্যগ্র কন্ঠে বললেন
” ডক্টর কি বলেছেন নির্ভীক ? ”

” শান্ত হোন আন্টি। অনিন্দিতার মানসিক পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে ব্রেন কাজ করছে না। আর হচ্ছে অসহ্য মাথা ব্যথা। ”

” ডাক্তার কি বললেন? ”

” ভালো সাইকোলজিস্ট দেখাতে। আপনি চিন্তা করবেন না আমার একজন বন্ধু উঁচু পদের সাইকোলজিস্ট । যদি ও ওহ এখন কানাডা আছে বাট আমি ওকে বিডি তে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো। ”

” আচ্ছা তাই করো। ”

সকলে অনিন্দিতার কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়। আর নির্ভীক যায় উল্টো পথে। এলো মেলো তাঁর পথ। তাঁর অন্তকর্নে ব্যথা অনুভব হয়। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা টং এর দোকানে বসে। কিছুক্ষন মাটি তে পা দিয়ে আঁকিবুকি করে। ঘাড় ঘুরিয়ে বলে
” মামা একটা চা দিবেন তো। মিষ্টি ছাড়া শুধু লিকারের চা। ”

কিছুক্ষন পর চা দিয়ে যায়। চায়ের কাঁপে চুমুক দেয় নির্ভীক । অনুভব করে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পরেছে। বুকের ভেতর কেমন ভারী অনুভব হয়। চোখ দুটো কেমন করছে খানিকটা জ্বলছে ওহ। কান্না আসতে চাইছে কেন ?

মাটির খোঁড়া টা ফেলে দেয় নির্ভীক। ভেঙে গুরিয়ে যায় সেটা। অবাক হয় নির্ভীক। অনিন্দিতা কে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কারনেই বুঝি অনিন্দিতা ভেঙে ঘুরিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো চোখে ছলছল করে উঠে। একটা লোক দোকান দার কে সিগারেট দিতে বলেন। লোকটা সিগারেটে সুখ টান দিতেই তাঁর মুখে হাসি ফুটে। আগ্রহ জাগে ছেলেটার । কখনো সিগারেট খাওয়া হয় নি। লোকে বলে নিকোটিনের ধোঁয়া কষ্ট দূর করে। বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। পকেট থেকে টাকা বের করে বলে
” মামা একটা সিগারেট দিন তো । ”

সিগারেট দিতেই ক্ষুধার্ত বাঘের মতো নিয়ে নেয় সে। আগুন ধরিয়ে মুহূর্তেই সিগারেট টা শেষ করে দেয়। আরো লাগবে , আরো কালো ধোঁয়া তে হৃদয় কে আবৃত্ত করতে হবে। এভাবে বাঁচা যে সম্ভব নয়। এক প্যাকেট সিগারেট কিনে চলে আসে নির্ভীক। এলোমেলো চুল গুলোতে হাত বুলায়। আহত হৃদয় নিয়ে পার্কে চলে আসে। এই অসময়ে পার্কে কেউ আসে না। কারন মাত্র বাজে ভোর সাড়ে পাঁচ টা। একের পর এক সিগারেট শেষ করে নির্ভীক। কষ্ট গুলো নিকোটিন হয়ে ছড়িয়ে যায়। তবুও কষ্ট লাঘব হয় না। বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা হয় শরীরের প্রতি টা লোম কূপ কেঁপে উঠে। শেষ সিগারেট টা অর্ধেক খেয়ে ফেলে দেয়। পায়ের কাছে পরে আছে এক প্যাকেট সিগারেটের অর্ধেক অংশ। আকাশের দিকে তাকায় সে। মৃদু আলো এসে চোখে লাগে। চিৎকার করে উঠে নির্ভীক। ঘাসের উপর হাঁটু গেড়ে বসে চাঁপা কান্নায় ভেঙে পরে। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় একটাই নাম
” অনিন্দিতা, অনিন্দিতা, অনিন্দিতা ”

রক্ত লাল চক্ষু নিয়ে বসে আছে নির্ভীক। মানুষের সমাগম বাড়তেই উঠে বসে। এই মুহুর্তে হসপিটালে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফোন করে বলে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। বাসায় ফিরে এসে লম্বা সাওয়ার নেয়। গাঁয়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে ফোন দেয় রোজ কে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে আসে। নির্ভীক বলে
” ইশরাক কে কল করে বল বিডি তে আসতে বল। ”

” হোয়াট। আমি ওকে কি করে কল করবো ? তুই তো জানিস ই সবটা। ”

” চাইলেই সব টা ঠিক করা যায় রোজ। আর ইশরাক কে আমার লাগবে। অনিন্দিতার ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য। ”

” আমি তোকে নাম্বার দিচ্ছি তুই কল করে নে। আর আমি সিলেট থেকে আজ ই ঢাকাতে আসছি। ইশরাকের পুরনো নাম্বার কাজ না করলে ওর মেডিকেলে কল করিস পেয়ে যাবি। ”

” ওকে। আর দ্রুত ফিরে আয় আমি আর পারছি না। ”

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নির্ভীক ফোন টা বেডে ফেলে রাখে। চোখ থেকে বেরিয়ে আসে কয়েক ফোঁটা অশ্রু কনা। অশ্রু কনায় পরিপূর্ন হয় মেঝে। শুভ্র মেঝে তে অশ্রু কনা চিক চিক করছে ।

আজ তিন দিন ধরে অনিন্দিতা বিছানা ছেড়ে উঠে নি। শরীর প্রচন্ড রকমের অসুস্থ। থেকে থেকেই মাথায় যন্ত্রনা হয়। নির্ভীক কে এক পলক দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। শাহানা খাবার এনে দিতেই চিৎকার করে উঠে। প্রচন্ড অবাক হয় সে। অনিন্দিতার চোখে মুখে উৎকন্ঠা। ভেজা গলায় বলে
” আমার ভালো লাগছে না কিছু। চলে যাও তোমরা , আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ”

” অনি ”

” প্লিজ আম্মু রেহাই দাও আমাকে। প্লিজ ”

অনিন্দিতার কথা উপেক্ষা করে শাহানা এগিয়ে যান। অনিন্দিতার চোখ লাল হয়ে উঠে। শাহানার চোখ ফেটে সলিল গড়ায়। আঁচলে মুখ গুঁজে চলে যান ওনি । অনিন্দিতার পাগলামি বেড়ে যায়। হন্তদন্ত হয়ে বাইরে ছুটে আসে। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে সোজা ছাঁদে চলে আসে। আজ শুক্রবার, আশে পাশে দৃষ্টি দিয়ে নির্ভীক কে পায় না সে। ভেঙে পরে কান্নায়। পেছন থেকে শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করে। নির্ভীকের ছোঁয়া চিনতে অসুবিধা হয় নি তাঁর। সিক্ত নয়নের সাথে মুখে হাসি ফুটে। এই তাঁর প্রিয় পুরুষ। সাদা শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে সে। অনিন্দিতার দু গালে হাত রাখে নির্ভীক। একটু ঝুঁকে চোখের পানি মুছে দেয়। এলোমেলো চুল গুছিয়ে দেয়। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় অনিন্দিতা। নিভীর্কের ঠোঁটে হাসি ফুটে। অনিন্দিতা কে একটু কাছে টেনে নেয় তবে দুরুত্ব বজায় রাখে। মুখে ফু দিতেই চোখ খুলে অনিন্দিতা। নির্ভীক বলে
” আমাকে দেখার জন্য এতো টা মরিয়া হয়ে গেছেন ? আমি আসলেই লাকি, তাই না অনিন্দিতা । তাহলে আপনি কি চান আমার অসম্মান? ”

” একদম ই নয়। ”

” তাহলে নিজেকে শান্ত রাখুন। আমাকে একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে তখন আপনি কি করে থাকবেন বলুন তো ? ”

” নির্ভীক ভাই এমন টা বলবেন না। আপনি না থাকলে আমি ও যে থাকবো না। ”

” একদম নয়। আমি না থাকলে ও আপনাকে থাকতে হবে। আল্লাহর দেওয়া জীবন কে অস্বীকার করা মানে মহামাপ। ”

” আপনাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে? ”

” হুসস কোনো কথা নয়। এখন আপনি ঘরে ফিরে রেস্ট নিবেন। আর কালকে সকালে আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো। আপনার মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হয় তাই না ? ”

ভদ্র মেয়ের মতো মাথা ঝাঁকায় অনিন্দিতা। নির্ভীক হেসে বলে
” নিমিষেই যন্ত্রনা দূর হয়ে যাবে। ”

” আপনি আমার পাশে থাকবেন তো ? ”

” হ্যাঁ থাকবো। ”

” প্রমিস করুন ”

কথা টা হাত বাড়িয়ে দিয়েই বলে অনিন্দিতা। কিছুক্ষন ভাবে নির্ভীক। তারপর ই হাসি মুখে অনিন্দিতার হাতে হাত রেখে বলে
” প্রমিস আপনাকে নিয়ে কাল আমি ই হসপিটালে যাবো। আপনার যন্ত্রণা কমানোর জন্য যতদিন যেতে হবে ততোদিন ই যাবো। ”

জয়েন
https://facebook.com/groups/2944711092471263/

**গাইস সামনেই উচ্চতর গনিত পরীক্ষা। সবাই দোয়া করো প্লিজ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here