#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম:
পর্ব:২২
#যারিন_তাসনিম
তাশরিক অহনার রুমে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অহনা নিজেই রুমে গিয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই নিজের ব্যাগে কাপড় গুছিয়ে রাখছে। পিছে নিয়াজ, রাহা, সিদ্ধীও এসে দাঁড়ালো। অহনা কাপড় গোছাতে গোছাতে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হোয়াট হ্যাপেন?”
কেউ জবাবে কিছু বলল না। অহনা উঠে নিয়াজের সামনে এসে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
“তোমরা কি ভাবছিলে আমি সুইসাইড করতে চলে গিয়েছি?”
এতটুকু বলেই অহনা হাসলো। আবার বলল,
“আমি এই সামান্য ছেলেপেলের জন্য সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমাকে দিনে দশটা প্রপোজ করে। সো, এসবের জন্য সুইসাইড আমি করছি না।”
এসব শুনে নিয়াজ যেন আকাশ থেকে পড়লো। এ কোন অহনাকে দেখছে সে? এই অহনাই এতদিন তার পিছে পিছে ঘুরত। তাকে পাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে পিছু নিয়ে খুলনায় এসে জুটেছে। আর এখন কিনা এসব বলছে!
রাহা ও সিদ্ধী দুজনেই বুঝতে পারছে, অহনা নিয়াজের গার্লফ্রেন্ড ছিল না। বরং, মেয়েটাই ওর পিছে পড়েছিল। সিদ্ধী অহনার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,
“তুমি কষ্ট পেয়ো না। তোমার ভাগ্যে যে আছে, সে দিন শেষে তোমার কাছেই ফিরে আসবে।”
অহনা সিদ্ধীর হাত সরিয়ে বলল,
“সিম্প্যাথি দেখাতে হবে না। আমি মোটেও কষ্ট পাচ্ছি না। নিয়াজ দেখতে সুন্দর ছিল, তাই ওর পিছে এতদিন ঘুরেছি। ভেবেছিলাম, ও সিংগেল। তাই ঘুরলে তাড়াতাড়িই পটানো যাবে। কে জানতো, এটা একটা ছ্যাঁকাপ্রাপ্ত গ্রামের বাসিন্দা।”
তাশরিক দ্রুতপায়ে অহনার কাছে এসে সজোরে চড় বসালো। কঠিন গলায় বলল,
“ব্যাগ গোছাচ্ছিলি না? গোছা। কালই আমরা সবাই ঢাকা ফিরবো। আর দাদিমার কানে যদি একটা কথা যায়, তবে তোর অবস্থা আমি কি করি, দেখিস।”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল তাশরিক।
অহনার কপালের রগ রাগে দপদপ করতে লাগলো। রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে স্থির গলায় বলল,
“এখানে কোনো সার্কাস চলছে না যে, সবাইকে আমার রুমে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।”
নিয়াজও বেরিয়ে গেল। সিদ্ধী কিছু বলতে গিয়েও বলল না। রাহার হাত ধরে টেনে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
পরেরদিন, রানী বেগমকে তাশরিক কোনোভাবে বুঝিয়ে সবাই ঢাকার পথে রওনা হলো। রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলল না। এবার নিয়াজ গাড়ি চালিয়েছে। আর পাশে রাহা বসেছে। সম্পূর্ণ রাস্তা অহনা রাগে গজগজ করলো। গতকালের ঘটনার পর কারো কিছুই খাওয়া হয়নি। তাই মাঝের একটা হোটেলে নামলো সবাই অহনা বাদে। সিদ্ধী বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছিলো। অহনা ফিরেও তাকায়নি। আর কেউ অনুরোধও করে নি নামার জন্য। সিদ্ধী, রাহা টেবিলের একপাশে আর বিপরীত পাশে তাশরিক, নিয়াজ বসেছে। খাবার আসতেই রাহা পরোটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুখে পুরছে। চামচ দিয়ে ডালভাজিটাও তাড়াহুড়োর সাথে খাচ্ছে। আর সেই দৃশ্য নিয়াজ দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। শেষে বলল,
“তাড়াহুড়োর কিছু নেই।”
রাহা খাওয়ার গতি কমিয়ে বলল,
“আসলে খুব খিদে পেয়েছে তো, তাই।”
নিয়াজ হেসে জবাব দিল,
“ডক্টর আপা, এভাবে খেলে আপনার বদহজম হয়ে যাবে।”
ভেংচি কেটে রাহা বলল,
“আমি তোমার আপা নই।”
সিদ্ধীও কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলল,
“সেটাই তো, ভাইয়া। রাহা বাবু আপনার আপা হয় না। ওকে ডক্টর বউ বলে ডাকবেন। আর তুমি দেখি রোবটের মতো খেয়েই যাচ্ছো, কোনো কথা বলছো না। ”
কথাটা তাশরিকের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধী বলল। কাল সারারাত ঘুমায় নি সে। বোনের চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাবে। তার মায়ের আহ্লাদী মেয়ে হওয়ায় এই অবস্থা। তাশরিকের এই অবস্থা কেউ না বুঝলেও নিয়াজ বুঝতে পেরেছে। তাশরিকের জবাব দেওয়ার আগেই নিয়াজ বলল,
“দোস্ত!চা-ও অর্ডার করেছি। খেলে ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।”
জানালার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে পেরে অহনা তাকালো। সিদ্ধী চা হাতে নিয়ে ঠোঁট উলটে দাঁড়িয়ে আছে। শান্ত গলায় অহনা বলল,
“কি হয়েছে ভাবি?”
নরম গলায় সিদ্ধী বলল,
“কিছু তো খেলে না। একটু চা খাও।”
অহনা সামনে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে সিম্প্যাথি দেখাতে এসো না।”
সিদ্ধী চোখ নামিয়ে বলল,
“সিম্প্যাথি নয়, আমার ননদটার যত্ন নিচ্ছি। প্লিজ খেয়ে নাও।”
অহনা আবার পাশ ফিরে সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“যত্ন নেওয়ারও প্রয়োজন নেই।”
সিদ্ধী চা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আছে। খেয়ে নাও না প্লিজ।”
এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগছে এসব কথা। আর শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও সিদ্ধী কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই অহনা চা টা নিল। সিদ্ধী জানালার কাচের উপর আরেক হাত উঠিয়ে বলল,
“এই বনরুটিটাও খেয়ে নাও।”
অহনা রাগী চোখে তাকাতেই সিদ্ধী দাঁত বের করে বলল,
“চা টা যেহেতু খাচ্ছোই, এটা খেলে কি এমন হবে? নাও।”
বলেই বনরুটির পলিথিনটা অহনার হাতে গুঁজে দৌঁড়ে চলে গেল।
রাগটা যেন গলে যাচ্ছে। মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে অহনার মুখে।
তাশরিক দূর থেকেই সব লক্ষ্য করছিলো। সিদ্ধী কাছে আসতেই তাশরিক বলল,
“এভাবেই মায়ের যত্ন করবে। দেখবে, সবাই তোমাকে আপন করে নিবে।”
সিদ্ধী অবাক হয়ে বলল,
“কীভাবে?”
তাশরিক হাঁটুর উপর হাত রেখে নিচু হয়ে সিদ্ধীর বরাবর এসে বলল,
“আমি এখন বেশ বুঝতে পারছি, সেটা আমার শিখিয়ে দিতে হবে না। শুধু তুমি যেমন, তেমনই থেকো।”
সিদ্ধী প্রত্যুত্তরে দু’পাশে মাথা নাড়ালো।
নিয়াজ বাহিরে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে মেসেঞ্জারে ঢুকলো। অনেকগুলো মেসেজ রিকুয়েষ্ট এসেছে। তার মধ্যে একটা মেসেজ রিকুয়েষ্টের আইডির নামে নিয়াজের চোখ আটকে গেল।
আইডি নাম, “রাব্বি বিন আমিন।”
চলবে,