শেষটা সুন্দর’ পর্ব-১৬

0
327

#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_১৬
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
২ সপ্তাহ পর ,
দিনগুলো খুব একটা ভালো যাচ্ছে না । আজ প্রায় ১৭ দিন হতে চললো , ওই বিভীষিকাময় ঘটনার পর , রেহানের কোনো খবর নেই । আমি জানি না ও কেমন আছে ? কি অবস্থায় আছে ? এখন রাত ১১ টা বাজে । বারান্দায় চাঁদের আলো এসে পড়ছে । রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম । দখিনা বাতাস বইছে । আমি ফোনটা হাতে নিলাম । রোজকার রুটিনের একটি কাজ করা বাকি রয়ে গেছে । উদ্দেশ্য রেহানকে কল করবো । কিন্তু ফলাফল বরাবরের মতো শূন্য । ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসছে মেয়েলি একটি কণ্ঠস্বর – আপনার কাঙ্খিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না । প্রচন্ড হতাশ হয়ে ফোনটা রেখেদিলাম । ভাবছি অনেক তো হলো , এবার রোহান ভাইয়ের সাথে এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলতেই হবে । আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না ।কালকেই ভাইয়ার সাথে সরাসরি কথা বলবো । একমাত্র ভাইয়াই জানে রেহানের খবর ।
মুগ্ধতা আপি , খেতে আয় ।
আমি খাবো না , রুগ্ধ তুই খেয়েনে ।
তুই প্রতিদিন খাবার খেতে চাস না কেন ?
বললাম তো খাবো না । আমার ভালো লাগছে না । তুই চলে যা ।
আচ্ছা , থাক তুই । আমি বাপি আর মাম্মাকে বলে দেই ।
এই না , আমি আসছি ।
এইতো পথে এসেছো চান্দু ।
রুগ্ধর বাচ্চা ।
কোথায় আমার বাচ্চা ? হা হা হা ।
পরদিন সকালে ক্যাম্পাসে ,
দেখো মুগ্ধতা , আমি সত্যি বলছি আমি রেহানের ব্যাপারে কিছুই জানি না । আর তোমার জন্মদিনের দিনতো , আমার বাসা থেকে ফোন এসেছিল ।
তাই আমি তোমাদের বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম । তারপর এখানে এসে শুনলাম এই ঘটনা । আমি ওর নাম্বারে অনেক ট্রাই করেছি কিন্তু ওর ফোন বন্ধ ।
ভাইয়া ওর বাসা তো এখানেই । আমাকে ওর বাসায় নিয়ে চলো ।
মুগ্ধতা , ও এখানে ওর খালামনির বাসায় থাকতো । আমি গিয়েছিলাম আন্টির বাসায় কিন্তু তিনিও জানেন না যে রেহান কোথায় গেছে ।
আচ্ছা রেহানের বাসা কোথায় ?
ঢাকাতেই কিন্তু ওরা ভাড়া বাসায় থাকতো । সেখানেও আমি খবর নিয়েছি । ওরা গত সপ্তাহে বাসা চেঞ্জ করেছে ।
ও. আচ্ছা ভাইয়া ওর আর কোনো নাম্বার নেই?
রেহানের এই একটা সিমের কথাই আমি জানি । ওর আর অন্য কোনো সিম ছিলো না ।
তাহলে এখন বোধহয় রেহান নতুন সিম নিয়েছে । আচ্ছা ভাইয়া থাকো । আমি আসছি ।
হুম। কোনো আপডেট জানলে তোমায় অবশ্যই ইনফর্ম করবো ।
ঠিক আছে । ভাইয়া ।
অপরদিকে ,
আজ ১০দিন যাবৎ মেডিকেল ক্লাস করছে রেহান । শুরুতে সবটা বিরক্তিকর লাগলেও সময়ের সাথে সাথে সবটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে গিয়েছে রেহান । ওর ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্নটা না হয় মুগ্ধতাকে না পাওয়ার মতোই অপূর্ণ থাকুক । সকালের সব সপ্নতো আর পূরণ হয় না । এটাই হয়তো রেহানের নিয়তি । বাস্তবতা যতই কঠিন হোক না কেন তার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে হয় । যাকে বলে অভিযোজন । নয়তো পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে হবে ঠিক যেমনটা ডাইনোসরের সাথে ঘটেছিল । রেহান এখন পড়ালেখার মাঝে ডুবে রয়েছে । প্রচন্ড চাপ রয়েছে পড়ার । এভাবেই রেহানের মুগ্ধতাবিহীন সময় চলে যাচ্ছে ।
চার বছর পর ,
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন । বছরে হিসেব করলে তা প্রায় চার বছর । অদ্ভুত না ! সময় গুলো যতই কষ্টকর হোক না কেন তা কেটে নতুন সময় আসবেই । ঠিক যেমনটা রেহানের সাথে ঘটেছে । এই চার চারটা বছর কেটে গেছে আশায় হতাশায় । আজ রেহানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন । আজকে থেকে রেহানের ইন্টার্নশীপ শেষ হবে । প্রতিটা মেডিকেল স্টুডেন্টের মতোই রেহান এই দিনটির অপেক্ষায় রয়েছে । আজ থেকে রেহানের ডাক্তারি জীবনের শুরু । যদিও তা আরো এক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে বলা চলে । এম বি এ’র ফাইনাল বর্ষের ছাত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক বছর ) কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যা ইন্টার্নশীপ নামেই পরিচিত । আর রেহান একজন ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে । আজকে রেহান প্রচন্ড খুশি । ও মনে মনে ভাবছে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি । আম্মুও আজকে অনেক খুশি । আমার আজকের এই অবস্থান একটা মানুষের জন্যই সম্ভব হয়েছে । আর সেই মানুষটি হচ্ছে মুগ্ধতা । জানি না তুমি কেমন আছো ? তোমার প্রতি আমার আর কোনো আক্ষেপ ও অভিযোগ নেই । সবসময় এটাই চাইবো মিনহাজকে নিয়ে তুমি খুব খুশি থাকো আর সুখে থাকো । আর পারছি না । অনেক তো হলো আজকে রোহানকে কল দিবো । ওকে এই চার বছরে অনেক মিস করেছি । আমি মেডিকেল থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম আর ফোনটা হাতে নিয়ে যোহানের নাম্বারে ডায়াল করলাম । ওর নাম্বারে এই চার বছরে কল না করলেও ঠিকই সেভ করে রেখেছি । কিছুক্ষন রিং হবার পর , কল রিসিভ হলো , রোহানের সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম । খুব কষ্ট হচ্ছিলো ।
হ্যালো , কে বলছেন ?
………………
কি হলো কথা বলছেন না কেন ?
রোহান কেমন আছিস ?
রেহান , এটা কি তুই ?
হুম ।
দোস্ত তুই কই হারিয়ে গিয়েছিলিস ?
অনেক কথা বলার আছে রোহান ।
তুই এখন কোথায় ?
অফিসে ।
তোর অফিস কই ?
ঢাকাতেই ।
দেখা করতে পারবি ?
তুইও কি ঢাকাতেই ?
হ্যাঁ , আমি তো মতিঝিলেই থাকি ।
বেশ , আচ্ছা তুই বিকেল চারটায় হাতিরঝিল আসিস ।
ওকে রাখি ।
ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টা বেজে গিয়েছে । রোহান অপেক্ষায় রয়েছে । চার বছর পর তার বেস্টফ্রেন্ডকে দেখার অপেক্ষা আর প্রতীক্ষায় । হঠাৎ শুনতে পেল সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর ।

#চলবে

#NUSRAT_TABASSUM_METHILA

[রি চেইক হয়নি।ভুলত্রুটি মাফ করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here