শেষটা সুন্দর’ পর্ব-২৪

0
1524

#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_২৪
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

আচ্ছা রেহান আজ কি শুরু করেছে ? ও কি আমায় পাগল করার প্ল্যান সাজিয়ে এসেছে ? আর কতোগুলো চমক বাকি রেখেছে ও ? আমার এই পোড়া কপালে এতো সুখ সইবে তো ? আবার আমার জীবনে কোনো ভয়ানক ঝড় এসে সবটা তছনছ করে দেবে না তো ? আমার জীবন থেকে আগের বারের মতোই আমার রেহান হারিয়ে যাবে না তো ? কেন এসব দুশ্চিন্তা মাথায় আসছে ? এবার এমনটা হলে আমার পক্ষে আর মেনে নেয়া সম্ভব হবে না । এসবই ভাবছিলাম ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম রেহান সাইকেলটা থামিয়েছে । নাহ এসব ভেবে আমাদের জীবনের আজকের রাতের এই সুন্দর , মধুময় , মোহনীয় , ভালোবাসাময় মুহূর্তটা কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না । ও আমার জন্য কতটা কষ্ট করে সব আয়োজন করেছে । সাইকেল থেকে নেমে দেখলাম আমরা একটা সুন্দর কটেজের সামনে । কি সুন্দর ! ওহ আচ্ছা এতোক্ষন আমরা এই কটেজে আশেপাশেই ঘুরেছি । জায়গাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে । ও আমায় নিয়ে কটেজের দরজায় দাঁড়িয়ে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজাটা খুলল । আমরা দুজনে ভেতরে ঢুকলাম । বাইরে থেকে দেখতে কটেজটা সাদামাটা হলেও ভেতরেটায় চোখ ধাধানো সৌন্দর্য । ইশ কি সুন্দর করে রুমের ভেতরটা সাজানো । আধুনিকতার ছোঁয়া সাথে মানসম্মত , রুচিশীল ফার্নিচারের কম্বিনেশন যা রুমের সৌন্দর্যকে কয়েক গুণে বর্ধন করেছে । এই কটেজে দুটো রুম , একটা বারান্দা , কিচেন আর ওয়াশরুম রয়েছে । আমি ঘুরে ঘুরে দেয়ালের কারুকাজগুলো দেখছিলাম । এককথায় অসাধারণ লেগেছে আমার এই কটেজটা । আমার কাছে এই আজকের রাতের সব ঘটনাগুলোকে স্বপ্নের মাঝের কল্পনার জগৎ বলে মনে হচ্ছে । আমি সবটাই মুগ্ধ নয়নে দেখছি । হঠাৎ রেহান বলে উঠলো ,

তুমি একটু অপেক্ষা করো , আমি আসছি ।

এই দেখেছো দেয়ালের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে রেহানের কথা মনেই ছিল না । আমিও না বড্ড বেখেয়ালি । এতো রোমান্টিক , ড্যাশিং , গুড লুকিং আর হ্যান্ডসাম একটা ছেলেকে বেমালুম ভুলে গেলাম ? কি করে এটা পারলাম আমি ? মাত্র ২মিনিটের মাঝেই হাতে দুকাপ ধোয়াউড়া কফি নিয়ে আমার জনাবের আগমন ঘটলো । একদম কেয়ারিং হাজব্যান্ডের মতো । আমার স্বপ্নের পুরুষ , আমার প্রেমিক পুরুষ , আমার রেহান । ও বলল ,

কি গো মায়াবীনি ? এতো কি ভেবে হাসা হচ্ছে শুনি ।
কিছু না রেহান ।
ওকে । এই নাও গরম গরম কফি । খেয়ে দেখ । কেমন হয়েছে বল ?

মুচকি হেসে কফির কাপ হাতে নিলাম । তারপর দুজনে মিলে জানালার ধারে এলাম । জানালার ধারে খানিকটা ঝুকে কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে একটা আরামদায়ক অবস্থানে দাঁড়ালাম । রেহানও তাই করলো । কফির কাপে হালকা ফু দিয়ে একটা চুমুক দিলাম । অসাধারণ এর স্বাদ একদম অন্যরকম । কাপটা হাত থেকে নামিয়ে রাখলাম । হঠাৎ রেহান পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার এলোমেলো চুলে নাক ডোবালো । কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দাঁড়ালো । এতোক্ষনে ওর ড্রেস চোখে পড়ল । জনাব আজ অফ হোয়াইট কালারের একটা সিম্পল শার্ট পরেছেন । আমি ওকে বললাম ,

অনেক ভালো কফি বানাতে জানো দেখি, খুব টেস্টি লেগেছে । আর অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমায় রেহান । ও সামান্য হেসে বললো ,

মুগ্ধ তোমাকেও । এই এলোমেলো চুল তোমার মায়া যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে । চাঁদের আবছা আলোতে তোমায় বড্ড বেশি মোহনীয় লাগছে । আমি হাসলাম ও বললাম ,

আজকের এই রাতটুকু আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা রাত । আমাকে এতো সুন্দর সময় উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ । সত্যিই এই রাতটা কেটেছে একটা স্বপ্নের মতো ।
ইটস মাই প্লেজার । আরও ২৫ মিনিট হাতে আছে , বলো কি চাও ?
একটা গান শোনাবে ?
হুম…মম শোনাতে পারি একটা শর্তে ।
বলো কি শর্ত ?
সেটা আমি কালকে বলব । তবে তুমি কথা দাও রাখবে । পরে না করতে পারবে না কিন্তু ।
তোমায় চোখ বুজে বিশ্বাস করি রেহান । চিন্তা করো না তোমায় নিরাশ করব না ।

মুচকি হেসে রেহান বলল ,

মুগ্ধ , তুমি গিয়ে বারান্দায় বসো । আমি আসছি ।

ওর কথানুযায়ী বারান্দায় গিয়ে দোলনায় বসলাম । কিছুক্ষণ পর ও একটা গিটার সহকারে এলো এবং আমার পাশে বসলো । রেহান গাইতে শুরু করল ,

ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চাঁন্দের আলো চুইয়া চুইয়া পড়ে
পুষে রাখবো রাখবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আঁচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না
দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আঁচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না
আমি প্রথম দেখে পাগল হইলাম
মন তো আর মানে না
কাছে আইসো আইসো রে বন্ধু প্রেমের কারণে
ভালোবাইসো বাইসোরে বন্ধু আমায় যতনে
নিশি ভোরে জোনাক নাচে মনেরও গহীন বনে
স্বপ্ন দেখাও বন্ধু তুমি নিগূঢ় আলিঙ্গনে
নিশি ভোরে জোনাক নাচে মনেরও গহীন বনে
স্বপ্ন দেখাও বন্ধু তুমি নিগূঢ় আলিঙ্গনে
তোমায় মায়া দিলাম সোহাগ দিলাম
নিলাম আপন করে
পাশে থাকব থাকব রে বন্ধু তোমার কারণে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে

আমি যেন সুরের মুর্ছনায় অন্য এক জগতে হারালাম । ওর গাওয়া প্রতিটি লাইনের উদ্দেশ্য যে আমি তা আর বুঝতে বাকি রইলো না । গান শেষে ও বলল ,

মুগ্ধ অনেক রাত হয়েছে । এবার ফিরতে হবে । চলো তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসি ।
কয়টা বাজে ?
২.৪৮ ।
এখনো তো ১ঘণ্টা শেষ হয়নি ।
না অনেক হয়েছে আর না । গতকাল থেকে তোমার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে আবার আজও যাবে ।
আচ্ছা চলো আর থ্যাংকস ফর দা বিউটিফুল নাইট ।
মোস্ট ওয়েলকাম । শুনো মুগ্ধ বাড়ি ফিরে ফজরের নামাজ পরে ঘুমিয়ো । নয়তো ঘুমুলে আর উঠতে পারবে না , নামাজ মিস হয়ে যাবে । আর আমি জানি তুমি রেগুলার নামাজ পরো তাও বললাম । কেননা আজকে থেকে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হবে ।
হুম ।

তারপর ও আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় । বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরেই ঘুমিয়েছিলাম ।

 

#চলবে

#NUSRAT_TABASSUM_METHILA

[রি চেইক হয়নি। আজকের লিখাটি বড্ডো অগোছালো । তার জন্য দুঃখিত । ভুলত্রুটি মাফ করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here