#ভালোবাসার রংমশাল
#পর্ব-১৬
#সিফাতী সাদিকা সিতু
নিঝুম কপাল চেপে ধরে হেসে ফেললো। কারণ সাম্য অনবরত স্যরি বলে যাচ্ছে। নিঝুমের হাসিমাখা মুখটা দেখে ভয় কেটে গেল সাম্যর।
ভেতরে আসবে তো?
হ্যাঁ পরতে বসবো।আপনি কোথাও বের হবেন নাকি?
আজ নিঝুমের এমন সাবলীল কথায় খুব ভালো লাগলো সাম্যর।বললো,নাহ্,তোমায় খুঁজছি।
কেন,কিছু বলবেন? নিঝুম অবাক হয়ে বললো।
হ্যাঁ,একটু কথা ছিল।সমস্যা নেই তুমি পড়া শেষ করো, রাতে বলবো।
খুব বেশি প্রয়োজনীয় কথা হলে বলতে পারেন,একটু পরে পড়তে বসলেও চলবে।
সাম্য বিছানায় বসে বললো,আসলে মায়ের বিষয়ে কিছু কথা বলি তোমায়?
নিঝুম মাথা দোলালো।
আসলে,আমাদের বিয়েটা এমন ভাবে হয়েছে তাই মা হয়ত মেনে নিতে পারেনি এখনো।তোমায় কিছু বললে মন খারাপ করো না, প্লিজ।তোমায় বলে রাখলাম কারণ নতুন ভাবে কোনো ভুলের সৃষ্টি না হয় আমাদের মাঝে। ভেবে নিয়ো না আবার, মায়ের কথাই আমার কথা হতে পারে।
আচ্ছা, এসব নিয়ে এত ভাবিয়েন না তো।মা কখনো সন্তানের খারাপ চাইতে পারে না। আপনি,আমি দুজনেই তো ছোট মায়ের সন্তান।
সাম্য খুশি হলো নিঝুমের এমন জবাবে। সস্তির শ্বাস ফেলে বললো,আর একটা কথা বলার ছিল?
বলুন!
আগামীকাল আমার বন্ধুর বিয়ে। আমায় খুব করে বলেছে তোমায় নিয়ে যেতে,তুমি কি যাবে?
আমি কি করে যাব?আপনার বন্ধুরা তো আমায় খারাপ ভাবে?
তোমার কি মনে হয়,আমি সত্যিটা ওদের জানাইনি? ওরাও সত্যি খুব লজ্জিত।
কার বিয়ে?
রাফাতের!
ওহ্,আচ্ছা।
তুমি কি যেতে পারবে? না মানে,বন্ধু মহলে এখন আমি বিবাহিত তাই আর কি বউসহ দাওয়াত করেছে।
নিঝুমের হঠাৎ যেন লজ্জা লাগলো।সাম্যর কথায় অদ্ভুত অনুভূতি হলো!
নিঝুমকে চুপ করে থাকতে দেখে সাম্য বললো,যেতে না চাইলে জোর করবো না।এতো ভাবতে হবে না এই নিয়ে।
আমি যাবো!
সাম্য খুশিটা লুকিয়ে বললো, ধন্যবাদ।
শান্তার সকাল থেকেই মেজাজ বিগড়ে আছে। রাফাতের বিয়েতেও এসেও শান্তি নেই।মেজাজ বিগড়ে আছে খবু করে।সেদিনের সকালে দেখা হওয়া সেই ছেলেটার সাথে আবার ধাক্কা লেগে গেল!ছেলেটা কি তাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় বারবার?
আপনার কি সত্যি চোখ নষ্ট?
হোয়াট ডু ইউ মিন?
ভাব নিতে তো খুব ভালোই পারেন। আমার কথা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে আপনার?দেখে শুনে তো মনে হয় বেশ টাকা পয়সা আছে তাহলে চোখের অপারেশন করান না কেন?
ছেলেটার রাগে চোয়াল কুঁচকে গেল।আশেপাশে লোকজন দেখে হিসহিসিয়ে বললো,আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন?ঠিক ভাবে কথা বলুন।
আপনি আমায় কথা শেখাতে আসবেন না!নিজেই আগে ঠিকভাবে হাঁটতে শিখুন।
শান্তা রেগে চলে গেল অন্যদিকে।
রাফাতের বিয়েতে আসাই উচিত হয়নি তার!
দূর থেকে কেউ আশফি বলে ডাকলো।শান্তা সেটা শুনতে পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেটা নাড়ছে।বুঝতে পারলো ছেলেটার নাম”আশফি”।
আশফি একটু পা বাড়াতেই থমকে গেল।নিঝুমকে দেখতে পেল সে।শাড়ী, হিজাবে পরিপূর্ণ রমণী ধীর গতিতে হেটে আসছে সাম্যর সাথে।আশফির মুখে হাসি ফুটলো। নিঝুমকে রাফাতের বিয়েতে দেখে বেশ খুশি হলো।এরকম একটা জায়গায় নিঝুমের সাথে কথা বলতে সমস্যা হবে না।
নিঝুম পরেছে অফ হোয়াইট কালারের মাঝে নীল স্টোনের কারুকাজের শাড়ী,গারো নীল কালারের হিজাব।আরোহী হালকা মেকআপ করে দিয়েছে। সাম্য স্যুট,টাই পরেছে।দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে। সুপ্তি জোর করে কাপল পিক তুলেছে ওদের।সবকিছুতে নিঝুমের লজ্জা ভাব।সাম্য নিঝুমকে নিয়ে রাফাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।সাম্য নিঝুম কে দাঁড়াতে বলে ওয়াশরুমের দিকে গেল।নিঝুম আশপাশ তাকিয়ে দেখছে।দৃষ্টিটা সামনে পরতেই চমকে উঠলো। আশফি তাকিয়ে আছে তারই পানে।নিঝুম তাকাতেই হেসে এগিয়ে এলো।
আসলামু আলাইকুম স্যার!
আশফি জবাব দিয়ে হেসে বললো,তুমি এখানে আমার স্টুডেন্ট সেজে তো আসোনি?শাড়ী পরে দিব্যি সেজেগুজে এসেছ তাহলে এতো স্যার,স্যার করছো কেন?
না,মানে স্যার আপনি এখানে?
রাফাত আমার কাজিন।তুমি কেন এখানে?
আমার হ্যাসবেন্ডের বন্ধু রাফাত ভাইয়া।
নিঝুম মাথা নামিয়ে নিলো। সেদিন অফিসে কথাটা বলতে পারেনি যে সে বিবাহিত। তার আগেই পিয়ন এসে ডেকেছিল আশফিকে।
আশফি নির্বাক হয়ে গেছে। নিঝুমের কথা বোধগম্য হচ্ছে না তার।মুখে লেগে থাকা হাসিটা বিলিন হয়ে গেল।
আপনাকে আমি বলতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। আশফিকে চুপ করে থাকতে দেখে নিঝুম আবার বললো।
কে তোমার হ্যাসবেন্ড,সাম্য?
নিঝুম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
তোমার ভাই হয়না সে?
হ্যাঁ,পারিবারিক সম্পর্কে ভাই হয়।
আশফির ভয়টাই সত্যি হলো।সেদিন রাস্তায় নিঝুমকে দেখে এই ভয়টাই পেয়েছিল সে।আশফি আর কিছু বলার আগেই সাম্য এসে দাঁড়ালো।হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেকের জন্য।
আশফি বেশ গম্ভীর ভাবে বললো,আপনি তাহলে নিঝুমের হাসবেন্ড? সেদিন বললেন না কেন?
আপনি জানতে চেয়েছিলেন আমি ওর ভাই কিনা?সেটাই বলেছি আপনাকে।
ওকে ফাইন,আপনারা ইনজয় করুন আমি আসছি।
আশফি চলে গেলে সাম্যর ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠলো। নিঝুম তা খেয়াল করলেও কারণ বুঝতে পারলো না।
শান্তা দূর থেকে নিঝুম সাম্যকেই দেখছে।আজ নিঝুমের জায়গায় সে থাকলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো? নিঝুম কি তার মতো সাম্যকে ভালোবেসেছে?সাম্যর মাঝে অন্যরকম একটা দ্যুতি ছড়াচ্ছে। নিঝুমকে নিয়ে খুব সুখেই আছে, বোঝা যাচ্ছে। শান্তা চোখের পানি মুছে চলে যেতে নিলেই আবার আশফি সাথে ধাক্কা লাগলো তার।এবার আশফি তার দিকে না তাকিয়ে চলে গেল।আশফির যাওয়ার ধরনটা শান্তার কাছে কেন যেন ওর চলে যাওয়ার মতোই লাগলো!
***
কোহিনূর বেগমের সাথে একচোট ঝগড়া হয়ে গেল নাজনীন বেগমের। নিঝুম দাঁড়িয়ে কাঁদছে। নিঝুমকে অনেক গুলো কথা শুনিয়েছেন কোহিনূর বেগম। সেই কারণে নাজনীন বেগমও চুপ করে থাকতে পারেন নি।পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়ে গেছে তাদের। নাজনীন বেগম খুব ভয়ে আছেন কোহিনূর কে নিয়ে।সাম্যর সাথে কথা বলতেই হবে।সামিরের কানে এসব কথা গেলে অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি করে!
সুপ্তিকে ইশারা করে নিঝুমকে ঘরে নিয়ে যেতে বললেন।নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে পরলো।সুপ্তি কান্না থামাতে চেষ্টা করলো নিঝুমের। কোহিনূর বেগম বেশ কড়া কিছু কথা শুনিয়েছেন। নিঝুমের বাবা মাকে নিয়েও কথা বলতে ছাড়েননি।সাম্যঘরে ঢুকে নিঝুমকে এমন অবস্থায় দেখে হচকিয়ে গেল।সুপ্তির কাছে সব শুনে লজ্জিত হলো।মাকে কি করে বোঝাবে সে?
সুপ্তি চলে গেল সাম্যকে রেখে।সাম্য নিঝুমকে ডাকলো।
নিঝুম উঠলো না।সাম্য নিঝুমের পাশে বসলো।নিঝুম ফুঁপিয়ে উঠলো। কাঁপা স্বরে বললো,আপনি আমায় এখনো বউ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি, তাই না?
চলবে…
(আমার আপনজন মারা গিয়েছে তাই গল্প দিতে পারিনি এতোদিন,আজ ছোট করে দিলাম একটু)