#ভালোবাসার রংমশাল
#পর্ব-১৭
#সিফাতী সাদিকা সিতু
নিঝুমের প্রশ্নে সাম্য দ্রুত বলে ফেললো,আমি তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে আগেই কথা বলেছি নিঝুম!তুমি আমায় ভুল বুঝছো?
নিঝুম পুনরায় কাঁদতে লাগলো।সাম্য নিঝুমের পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো।হঠাৎ নিঝুমের কান্না থেমে গিয়ে লজ্জা এসে ভড় করলো।লজ্জা চোখে সাম্যর দিকে একবার তাকিয়ে উঠে বসলো।
সাম্য নিঝুমের লজ্জাটা বুঝতে পারলো।তার নিজেরও অসস্তি হতে লাগলো।তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল জামাকাপড় ছাড়াই। নিঝুম সাম্যর এমন কান্ডে মুচকি হাসলো।কাবার্ড থেকে একটা টাউজার আর টিশার্ট বের করে বিছানার ওপর রাখলো।ওয়াশরুমের দরজায় ঠকঠক শব্দ করে বললো,”বিছানার ওপর কাপড় রেখেছি।দরজা চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।”
সাম্য এবার খুব লজ্জা পেল।দ্রুত গোসল করা শুরু করলো।
আশফি আজ দুদিন যাবত ভার্সিটি যাচ্ছে না।নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। মায়ের সাথে টুকটাক কথা বললেও কারণ খুলে বলছে না।সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাকরি করবে না।বাবার সাথে এ নিয়ে একচোট রাগারাগি,চেঁচামেচি হয়ে গেছে।মিনারা ছেলের এমন উদ্ভট আচরণে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন। তার শুরু একটাই কথা মাথায় আসছে আশফিকে এতদিন বিয়ের জন্য জোর না করে ভুল করেছেন।ছেলের প্রতিটা জেদ মেনে নিয়ে আসলেই ভুল করেছেন।সময় থাকতেই ছেলেকে দায়িত্বের মাঝে বেঁধে ফেললে আজ এইদিন আসতো না।এবার যখন কথাটা মাথায় এসেছে তাহলে আর দেরি করবেন না।যতদ্রুত সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। ছেলের এমন উদ্ভট আচরণের রাশ টেনে ধরতে হবেই!আশফির বাবার সাথে যতদ্রুত সম্ভব কথা বলতে হবে।
আশফি মায়ের ঘরে এসে দাঁড়িয়ে আছে তা খেয়ালই করেনি মিনারা।আশফি মা বলে ডেকে উঠলে চমকে উঠলেন।
মা,আমি চাকরি করবো, বাবাকে বলে দিও।আশফি আর দাঁড়ালো না।নিজের ঘরের দিকে এগোলো।
মিনারা বেগম ছেলের মত পাল্টানো দেখে অবাক হলেন, সেই সাথে খুশিও হলেন। বিয়ের ব্যাপারটায় এগোনোর সাহস পেলেন। এবার মেয়ে দেখা শুরু করবেন।
***
ঘৃণা থেকে কখনো ভালোলাগা তৈরী হতে পারে তা জানা ছিল না নিঝুমের।সাম্যর আচরণ সম্পূর্ণ নতুন লাগে এখন।ঠিক যেন দায়িত্ববান স্বামী। নিঝুম এখন সাম্যকে এড়িয়ে চলতে পারেনা।এজন্যই মামনি বলেছিল,বিয়ের বন্ধনটা এমন একটা বিষয়, যা চাইলেও কেউ উপেক্ষা করতে পারে না।সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে যাওয়ার পর সাম্যর প্রতি একধরনের ভালো লাগা তৈরী হয়েছে নিঝুমের।নিঝুমকে কিছুতেই সোফায় শুতে দেয় না সাম্য।নিঝুম এখন বিছানায় শোয়, সাম্য সোফায়।নিঝুমের পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগা, মন্দ লাগা এসবের প্রতি সাম্যর যত্নশীল আচরণ স্পষ্ট। যা নিঝুমের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। অচেনা শিহরণে কাঁপন ধরায়।নিঝুম আজও শাড়ী পরলো।সে বুঝতে পেরেছে শাড়ীতে সবাই তাকে পছন্দ করে, এমনকি সাম্যও।দুদিন ধরে আরোহীর কাছে সুন্দর ভাবে শাড়ী পরাটা রপ্ত করেছে। লাল হলুদ মিশেলের শাড়ীটায় সত্যি সুন্দর লাগছে নিজেকে। নিঝুম আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে সেই কবে থেকে?নিজেকে দেখায় এত ব্যস্ত ছিল যে কখন সাম্য তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি।ঘাড়ে গরম নিশ্বাসের অনুভূতি হচ্ছে। সাম্য যখন তার শাড়ীর আঁচলটা হাতে নিলো তখন সে চমকে উঠলো। সাম্য হেসে নিচে পরে থাকা আঁচল তুলে নিঝুমের মাথায় দিলো।এক পলক বউকে দেখে নিজের কাজ নিয়ে বসলো সোফায়।নিঝুম লজ্জায় জমে গেল।
সাম্য তোর সাথে একটু কথা ছিল বাবা?নাজনীন বেগম ঘরে ঢুকে নিঝুম কে দেখে অবাক হলেন ।
কিরে, এত উন্নতি হয়েছে তোর?
মামনি, তুমি তো বলেছিলে মাঝে, মাঝে পরতে।
হয়েছে, এত লজ্জা পেতে হবে না।রান্না ঘরে যা,পায়েস বানিয়েছি, সাম্যর জন্য একটু নিয়ে আয়।
নিঝুম মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
সাম্য, সবকিছু শুনেছিস তো?তুই একটু কোহিনূরের সাথে কথা বলিস,বোঝাস তো।তোর বাবা,বড় বাবা এসব শুনতে পেলে যে ঝামেলা হবে তা অবশ্যই জানিস?
জানি বড়মা।কি করবো বলো?মাকে কিছু বলতে পারছি না।মায়ের প্রেশারটা বেড়ে গেছে।তুমি একটু মাকে সামলাও।আমি এ নিয়ে নিঝুমের সাথে আগেই কথা বলেছি।
তাই নাকি?এটা কিন্তু ভালোই করেছিস!বউকে ভয় পাওয়া ভালো!
বড়মা!কি বলছো?সাম্য অপ্রস্তুত হয়ে গেছে।
নাজনীন হেসে বললেন, পাগল ছেলে আমি তো মজা করছি।তা আমার মেয়েটাকে বলেছিস তাকে এতো ভালোবাসিস?
সাম্য ভিষণ চমকালো।নাজনীনের দিকে তাকালো অবাক চোখে।
কি ভেবেছিস আমি বুঝিনি?মায়ের চোখ অনেক কিছুই বুঝে নেয়।তাড়াতাড়ি বলে দিস,আমার নিঝুমটা বড্ড ভালোবাসার পাগল। ওর বাবা, মায়ের অভাবটা থেকেই যায় সবসময় সেটা আমি বুঝতে পারি।আচ্ছা, আমি গেলাম অনেক কাজ আছে। নিঝুম পায়ের নিয়ে আসলে খেয়ে নিস।
বড়মা,নিঝুম কি আমার ভালোবাসা কখনো মেনে নিবে?
নাজনীন বেগম থমকে দাঁড়ালেন।
কোহিনূর বেগম রাগের বসে উকিলের কাছে এসেছেন। ডিভোর্স পেপার আজ নিয়ে যাবেন এবং সাম্যকে দিয়ে সইও করিয়ে নিবেন।আর দেরি করলে চলবে না।অনেক সময় নিয়েছেন একয়দিনে।ভাইটা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে অথচ কিছুই করতে পারছেন না তিনি।
উকিলের চেম্বার থেকে বের হতেই সামির চৌধুরীর সামনে পরে গেলেন। ভাবতেও পারেন নি স্বামীর কাছে এভাবে ধরা পরে যাবেন শুরুতেই!
সামির রাশভারী স্বরে বললেন,এখানে কেন এসেছো তুমি?
কোহিনূর বেগম সহজে জবাব দিতে পারলেন না।নিজের মনে সাজাতে লাগলেন মিথ্যা যা দিয়ে সামিরের কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
আম-আমি ভাইয়ের একটা কাজে এসেছি। আপনাকে জানাতে পারিনি। কোহিনূর বেগম মাথা নিচু রেখে বললো।
আচ্ছা।সামির রহমান পকেটে থাকা ফোনটা বের করে কোহিনূর বেগমের ভাইকে ফোন করলেন।
তোমার বুবুকে কি কাজ করতে বলেছ?
কি কন দুলাভাই?বুবুরে তো কিছু করতে কইনাই।বুবু আবার আমার কি কাজ করবো?
ঠিক আছে,তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি।ফোন রেখে স্বাভাবিক ভাবে বললেন, গাড়িতে ওঠো।
চলবে..
(খুব বেশি সমস্যা না হলে এখন থেকে প্রতিদিন এই গল্পটা দেব)