#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৭
— “ভাইয়ের বউকে প্রচুন্ড পরিমাণে জ্বালাবো। খেতে দিবো না, শান্তিতে ঘুমাতে দিবো না। সারাদিন শারীরিক, মানসিক টর্চার করবো। ভেবেছিলাম তুমি ভাইয়ার বিয়ে করা গ্ৰামের বউ। পড়াশোনা জানো না, সাজতে জানো না। ইভেন্ট ডাইনিং টেবিলে বসে খেতেও পারো না। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে তুমি সব পারো। কি জানো বলেছিলে?
ও হে মনে পড়েছে, তুমি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ছো। ধ্যাত ভালো লাগে না”। ( গালে হাত দিয়ে নিশি)
–” নিশি আপু কি আর করবে বলো ? আমি তোমার ভাইয়ের বউ না, তাই এইসব টর্চার তোমার ভাবীকেই করো। এখন মুখ ভার না করে তাড়াতাড়ি চলো, স্যার হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে”! ( মাথা আঁচড়াতে আঁচড়াতে মেহের)
পূর্নরায় আবার কিছুক্ষণ নিরবতায় ছেড়ে গেল।নিশি গালে হাত দিয়ে মেহের কে দেখছে। আর মেহের শান্ত মনে সেজে চলেছে। চুলগুলো বেনুনী করে সামনে এনে রেখেছে। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো কপালের কাছে স্বযত্নে লেপ্টে রেখেছে।নিশির কথা রাখতে চোখের কিনারায় মোটা করে কাজল, ঠোঁট হালকা লিপস্টিক। ওরনাটাকে ভাঁজ করে কাধের কাছে সেফটিপিন দিয়ে আটকে রেখেছেন। নিবিড় সকালে যাওয়ার আগে বারবার বলে গেছে, যাতে মেহের কে নিয়ে নিশি শপিং মলে যায়। নিবিড় নিজের কাজ শেষ করে সেখানে যাবে।
আজ কতো গুলো দিন পর নিজেকে আয়নাতে দেখছে তার হিসেব নেই। শেষবার বিয়ের সাঝে দেখেছিল কিন্তু আশ্চর্য ভাবে বিয়েটা হয়নি। ভাগ্যিস সেদিন বিয়েটা হয়নি, নাহলে আজ এতো ভালো মানুষ দেখার সুযোগ হয়ে উঠতো না। আচ্ছা কোনো দিন কি এরাও চাচীর মতো মেহের কে ছুড়ে ফেলে দিবে। ভাবলেই শরীরটা অদ্ভুত অনুভূতির সম্মুখীন হচ্ছে। বুকের ভেতরে অজানা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
এদিকে অনেকক্ষন ধরে মেহেরের কোনো রিসপন্স না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকালো নিশি। এগিয়ে গিয়ে হাত রাখলো মেহেরের কাঁধে। কারো স্পর্শ পেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো সে।দ্রুত তালে চোখের অশ্রু মুছে ফিরে তাকালো সে। মেহেরের অশ্রুভেজা চোখ দুটো এড়ালো না নিশির থেকে। গালে হাত রেখে আশ্বাসের কন্ঠ বললো…
— “কষ্ট পেয়না। আমি বুঝতে পারছি তোমার বাড়ির কথা মনে পড়ছে। এতো গুলো বছর যেখানে অতিবাহিত করেছো, সেই জায়গাটাকে কি মাত্র ৫ দিনেই ভুলে যাওয়া যায়।
মনে কর এটাই তোমার পরিবার”।
অশ্রুসিক্ত নয়নে নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোট প্রশস্ত করে হাসলো মেহের। যেই হাসিতে লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা বেদনা। শুধু অন্যকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য হাসা।
________________
চারপাশে সূর্যের তির্যক রশ্মিতে গরমের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে বারোর ঘরে পৌঁছে গেছে। পূর্নরায় আবার সমান তালে এগিয়ে চলেছে। চারদিকে মানুষের চলাচল বেড়েই চলেছে।
শপিং মলের একপাশে এসে গাড়ি থেমেছে। ছাউনি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহের নিশি। নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করছে দুজনে। একটু আগে নিবিড় ফোন করে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে।
মিনিট পাঁচেক পেরুবার আগেই একটা সিএনজির ভেতরে থেকে নেমে দাঁড়ালো নিবিড়। পকেট থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিলো।বামহাতটা একটু উচু করে, হাতের ঘড়িটার দিয়ে তাকিয়ে সময় যাচাই করে নিল সে। পূর্নরায় ড্রাইভার কেস বাক্স থেকে নোট ভাংতি করে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিলো। নিবিড় হাতে টাকা নিয়ে না গুনেই পকেটে রেখে দিয়ে এগিয়ে এলো।
পড়নের ছাই রাঙা টি শার্ট। অন্যদের ঘামে পড়নের জামা কাপড় ভিজে গেছে। কিন্তু নিবিড়ের টি শার্টের মাঝে একটা ভাজও পড়েনি। আসার আগে ইউনিফ্রোম চেঞ্জ করে এসেছে।
কিছুক্ষণ ক্লান্ত চোখে মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে। প্রথমবার যখন মেয়েটাকে দেখেছিল তখন সাজগোজ লেপ্টানো ছিল। পড়নে বিয়ের শাড়ি। এরপর আর কখনো মৃদু সাজেও তাকে দেখা যায়নি। আজ দেখছে, মনে হচ্ছে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে। গাঢ় সবুজ রঙের একটা থ্রী পিস। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে মোটা কাজল, চুল দিয়ে বিনুনী করা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মোহনীয় লাগছে। ঠোঁটে কোনো হাঁসি নেই। প্রথমবার কোনো মেয়েকে এতোটা ভালো লাগছে। বিরবির করে উচ্চারণ করলো “মাশাআল্লাহ”। নিবিড়ের কন্ঠস্বর নিবিড় ছাড়া কারো কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।
মেহেরের হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে শপিং মলে প্রবেশ করলো তিনজনে। লিফ্টের বাটন প্রেস করে নিশি নিবিড় ভেতরে ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ হওয়ার আগে পা দিয়ে দরজা খুলে দিল নিবিড়। মেহের করুন চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।দুকদম এগিয়ে মেহেরের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো নিবিড়..
— “এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ভেতরে এসো”।
— “আমি কখনো লিফটে উঠি নি। যদি আর বেরুতে না পারি”। (মাথা নিচু করে মেহের)
ইউ বলে থেমে গেল নিবিড় । চারপাশে মানুষের ভিড়। সে চাইছে না সিনক্রেট করতে। নিশির দিকে তাকিয়ে বললো,, “” ৩য় ফ্লোরে অপেক্ষা কর, আমরা আসছি “” অপেক্ষা করলো না নিবিড়।মেহেরের হাত ধরে সিঁড়ি লিফ্টের কাছে পৌঁছে গেল। পা রাখতেই হাত ছেড়ে দুকদম পিছিয়ে গেল মেহের। লিফ্টের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। লিফ্ট ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি সে পড়ে গেল। পড়ে গেলে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। লিফ্ট থেকে নেমে এলো নিবিড়। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,””আবার কি”??
— “আমার ভয় করছে, আমি যাবো না। যদি পড়ে টড়ে যাই ,,তখন সবাই কি বলবে। তারচেয়ে বরং সিঁড়ি দিয়ে যাই”।।
চারপাশে তাকিয়ে পরখ করে নিলো নিবিড়। ইতিমধ্যে পেছনে অনেক ভীড় জমেছে। ব্যস্ত শপিং মলের সবাই নিজেদের প্রয়োজনে ছুটে চলেছে।সবার ললাটে রুদ্র ভাজ। দিদা না করে একটু ঝুঁকে মেহের কে কোলে তুলে নিল সে। তারপর সামনের এগিয়ে গেল নিবিড়।
মাথা নিচু করে নিবিড়ের পিছু পিছু হেঁটে চলেছে মেহের। এখনো মুখ তুলে তাকানোর মতো সাহস খুঁজে পাচ্ছেনা সে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ।তখন সবাই চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো দুজনকে।কেউ কেউ মাঝে মাঝে সিটিও বাজাচ্ছিলো।
মাথা নিচু করে হাঁটার সময় চোখ আটকে গেল লাল রঙের একটা শাড়ির দিয়ে। একবার চোখের পলক যেতেই মন কেড়ে নিল তার। এতোটাই সুন্দর যে কারো মন অনায়াসেই কেড়ে নিতে সক্ষম হবে।আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো শাড়িটার উপর । টাকা থাকলে এই শাড়িটা সে কিনে নিত।””মেহের কোথায় তুমি”” ডাকে ধ্যান ভাঙল মেহেরের। নিবিড় তাকে খুঁজছে। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে গেল সে।
_______________
আনুমানিক দুইটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। লাঞ্চের সময় এখন। নিশি একে একে ড্রেসগুলো গাড়িতে রেখে দিল।এখন তাদের ফেরার পালা। নিবিড় দুজনকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে, অফিসে ফিরে যাবে।। কিন্তু মেহেরের দেখা মিলছে না। নিশি কে গাড়িতে উঠতে বলে এগিয়ে গেল সে। নিশিও ক্লান্ত শরীর নিয়ে গাড়িতে গা হেলিয়ে দিলো।
রাস্তায় মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলেছে মেহের। চোখের দৃষ্টি সামনের দিকে স্থীর ।মনটা শাড়িটার কাছে পড়ে আছে। প্রথমবার কোনো জিনিসের এতোটা আকর্ষণ হচ্ছে। পেছনে থেকে চলন্ত ট্রাক বারবার সিগন্যাল দিচ্ছে কিন্তু সেই শব্দ কানে পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না মেহেরের। সে বিনা বাধায় হেঁটে চলেছে।
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)