এক মুঠো ভালোবাসা 💝পর্ব:০৮

0
1254

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৮

মেহেরের বাহু চেপে চলন্ত ট্রাকের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে এলো নিবিড়। নিজের ব্যালেঞ্জ বজায় রাখতে মেহেরের কোমর আকড়ে ধরলো। মেহের চোখ বন্ধ করে নিবিড়ের শার্ট চেপে ধরে ঘনঘন ভারী নিঃশ্বাস নিচ্ছে। বেখেয়ালে কতোবড় অঘটন ঘটে যাচ্ছিলো। বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না তার।
নিবিড়ের চিবুক থেকে মাথা তুলে তাকালো মেহের। ঠোঁট চেপে সরি বলার আগেই গাল কাঁপিয়ে চড়ের আঘাত অনুভব করলো। ওষ্ঠ যুগল মৃদু ফাঁকাই রয়ে গেল।সরিটা আর উচ্চারণ করা হয়ে উঠলো না। শুধু নুইয়ে গেল মাথা। হাত দিয়ে ললাটে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট কেশ সমূহ কর্ণের পেছনে গুঁজে নিল। নিবিড়ের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করতে অজানা ভয় কাজ করছে।

নিবিড় উল্টো ঘুড়ে কিছুক্ষণ বন্ধ হয়ে আসা নিঃশ্বাস কয়েকবার টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চেঁচিয়ে বললো…

— “মন কি বাড়িতে রেখে এসেছো নাকি বিয়ে না হওয়া বরের কাছে। বলবে প্লীজ। ট্রাকটা কতোবার তোমাকে সিগন্যাল দিচ্ছিল জানো। যদি তোমার কিছু হয়ে যেত সব রেসপন্স তাকে নিতে হতো।এদিকে আমার কি..
রাস্তা পাড় হতে পারো না ভালো কথা, আমাদের সাথে পাড় হতে। নাহলে অপেক্ষা করতে ।আমরা তোমাকে ফেলে একা বাড়ি ফিরে যেতাম না। আশ্চর্য..

জনগণ বিরক্তিকর চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিজেদের পথে ধাবিত হচ্ছে। মেহের আড়চোখে আশেপাশে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে নত সুরে বললো,.

— “সরি! আসলে আমি..

নিবিড় তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে থেমে গেল মেহের। মনে মনে ক্ষুব্ধ হচ্ছে সে। ট্রাকের নীচে পড়লেই ভালো হতো ।এই নিবিড়ের হাতে চড়+কথা শুনতে হতো না। ইতিমধ্যে নিশি এসে দাঁড়িয়েছে নিবিড়ের পেছনে। অনেকক্ষন সময় হওয়ার পরেও যখন দুজনের দেখা মিলছে না। তখন একপ্রকার বাধ্য হয়ে নেমে এসেছে সে। রাস্তায় গমগম আওয়াজে নিবিড়ের কন্ঠস্বর তার শ্রবণে পৌঁছাচ্ছে না। তবে ভঙ্গিমা দেখে বেশ বুঝতে পারছে খুব অণুরক্তহীন হয়ে আছে। দুকদম এগিয়ে গিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাত তুলে 🤷। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে।তার ফলস্রুতিতে তাকে শুনতে হলো একগাদা বচন।

— “তুই কেমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন একটু বলবি। মেয়েটা কখনো শহরে আসে না। গ্ৰামের শান্ত পরিবেশে বড় হয়েছে। রাস্তাঘাট পাড়াপাড় হতে পারে না। একটু হলে গাড়ির নীচে পিষে যেত। তুই একটু হেল্প করবি,, না, কি করলি দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে শুয়ে পড়লি। জাস্ট রেডিকুলাস “।

— “তুই নিজেই তো আমাকে গাড়িতে উঠতে বললি। এখন বল, বসতে বলিস নি দাঁড়াতে বলিস নি শুতে বলিস নি। এক্সজেকলি বলবি, কি করতে বলেছিল”। (করুন চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে)

নিবিড়ের কথা অবহুল হওয়ার বদলে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নিশি কোনো দিকে না তাকিয়ে মেহেরের হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিল। গাড়িতে উঠার মাত্র ড্রাইভার ড্রাইভ করতে লাগলো। নিশি কাঁচ বেধ করে নিবিড়ের দিকে তাকালো। ছেলেটা এখনো বিরবির করছে। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ঠাস করে একটা চপল মারলো নিবিড়ের কাধে।দাঁত কেলিয়ে বললো..

— “ভাই তুই এখন একা একা বকবক কর। একা ভালো না লাগলে তোর পাশে যে পাগলটা আছে তাকে নিয়ে বকবকানি কর” ।

কিছুক্ষণের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল গাড়িটা । কিছুক্ষণ শূন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে পাশে তাকালো। নিবিড়ের পাশে একটা পাগল দাড়িয়ে আছে। বিরবির করে কিছু একটা বলছে।তাহলে নিশি যাওয়ার আগে এই পাগলটার কথাই তাকে বলে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করে বুঝতে পারলো ,, পাগলটা ক্রমাগত একটা কথাই বলছে ,,– “আগুন দে বিড়ি খাম”।
নিবিড় পকেট খুঁজেও একটা লাইটার পেল না। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করলো। পাগলটার কোঁকড়ানো চুলে হাত রেখে বললো ..

— “আমার কাছে আগুন 🔥 নেই। টাকা দিচ্ছি একটা লাইটার কিনে নিস”।

পাগলা টাকা নিল না। বরংচ নিবিড়ের টি শার্ট ধরে টানতে টানতে বললো..– “আগুন দে বিড়ি খাম ।আগুন না দিলে তোর জামা-কাপড় খুইলা দে ।বেইচ্ছা বিড়ি খাম”।

এমন ভাবে নিবিড়ের টি শার্ট ধরে টানতে। যেন এখনি মাঝখান থেকে ভাগ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে টি শার্টের অবস্থা যাচ্ছে তাই।কম করে হলেও আটজন ঢুকতে পারবে। কোনো রকম পাগলটাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আবার শপিং মলের ভেতরে দৌড়ে গেল নিবিড়। পাগলটাও পিছু নিল নিবিড়ের। নিবিড় পিছনে ফিরে জোরে জোরে একটা কথা বলছে …– “বাপ আমায় ছেড়ে” !

টাওয়াল রুমে ঢুকে দরজায় হেলান দিয়ে শ্বাস টানছে নিবিড়। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত হতেই চোখ চড়কগাছ। তার সামনে চল্লিশার্ধ একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
সবে তিনি টাওয়াল রুমে ঢুকেছেন, তার মধ্যেই নিবিড় ঢুকে দরজা লক করে দিয়েছে। করুন চোখে মহিলার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো.

— “নিবিড় আজ তোর কপালে শনি-রবি ,সোম-বৃহস্পতি সব আছে।যদি বাঁচতে চাস দৌড়ে পালা।।আজ তোকে রেন্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।।ফাস্ট নিবিড় গো ফাস্ট”।।

লক খুলে বের হওয়ার আগেই মহিলা নিবিড়ের টি শার্ট টেনে আটকে দিল ।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। মহিলার চেঁচামেচিতে শপিং মলের লোকজন সবাই হাজির হয়েছে। নাকে কান্না করছে আর বলছে..

— “ভাইসাব আপনারা বিচার করেন। এই অভদ্র ছেলে টাওয়াল রুমে ঢুকে আমার সব …

— “আন্টি আপনি ভুল করছেন”।

— “চুপ শয়তান 😈 ছেলে। আমি তোর আন্টি লাগি ।যখন আমার সর্বনাশ করতে চাইছিলি।তখন মনে পড়েনি ,আমি তোর আন্টি লাগি”।

নিবিড় সবার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে পকেট থেকে কার্ডটা এগিয়ে দিলো। আজ আরো একবার এই কার্ডটা তাকে বাঁচিয়ে দিল। সবাই কেমন জানো সন্দিহান চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড় নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, টি শার্টের জন্য আজ তার এই অবস্থা। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো..

— “আসলে এখানে একটা গ্যাং ধরতে সিভিলে এসেছিলাম। ধস্তাধস্তিতে টি শার্টের এমন অবস্থা।
সরি ম্যাম “।।

দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো নিবিড়। এখন যদি আবার পাল্টা প্রশ্ন করে, গ্যাং ধরতে এসে নিবিড় নিজেই পলাচ্ছে। তাও আবার টাওয়াল রুমে।ছিঃ ছিঃ ভাববে সবাই।

_____________________
সন্ধ্যা আটটার বিশ। অনেকক্ষন আগে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে পুরো শহর। কেউ কেউ ফিরেছে তার গন্তব্যে স্থল থেকে কেউ এখনো ফিরেনি। ঘন্টাখানেক আগে নিবিড় ফিরেছে। শাওয়ার নিয়ে সবে বেডে গা হেলিয়ে দিয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তির পর একটু বিশ্রাম নিলে শরীরটা ভালো লাগবে।দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি। একটু বিশ্রাম নিয়ে ডিনার করবে।
দরজা নক না করেই ভেতরে প্রবেশ করলো নিশি।চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে অসুবিধা হলো না কে এসেছে। তবুও বাক্য উচ্চারণ করলো না। নিশি রুমে ঢুকে চেঁচিয়ে বললো…

— “তোরা দুজনে কি শুরু করেছিস একটু বলবি‌। মেহের মল থেকে ফেরার পর কিছু খায়নি । খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলছে ক্ষুধা নেই।কোথায় যাবো আমি বলতে পারিস।।মারার কী দরকার ছিলো।ভালো লাগে না”।যত্তসব..

— “তুই থাক আমি দেখছি”।

ধক করে উঠে বসলো নিবিড়। বুঝতে অসুবিধা হলো না, সকালের বিহেবিয়ারের জন্য কষ্ট পেয়েছে। কাঁধে ঝুলন্ত টাওয়াল টা বেলকেনিতে মেলে দিল। কাবার্ড থেকে নীল রঙের একটা টি শার্ট বের করে পড়ে নিল। নিশির দিকে এক পলক তাকিয়ে নীচে নেমে গেল। সুন্দর করে প্লেটে খাবার সাজিয়ে গেস্ট রুমের দিকে ছুটল। গত দু’দিন ধরে মেহের গেস্ট রুমে থাকে।

(চলবে… ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here