মেঘের আড়ালে চাঁদ
(১৫)
ঝুম বৃষ্টি নেমেছে সারা দেশে ,পাহাড়ের বৃষ্টি যে এত সুন্দর তা বলে আমি লিখে বোঝাতে পারব না….. চায়ের পর চা খেয়ে যাচ্ছি, হুম! চায়ের নেশা লেগেছে এখানে এসে, মিজানের থেকে পাওয়া কিনা জানিনা, লিখতে বসব শুনলে নিজেই বানিয়ে আনে, আজো ব্যতিক্রম হলনা, পাহাড়ের বৃষ্টির বর্ণনা লিখছি, কানে যথারীতি হেডফোন, চা হাতে মিজান এলো একটু পর,
•শোভন কোথায়? আমি প্রশ্ন করি। প্রতিবার তার অজুহাত তৈরি থাকে!
•রাধুনি খুজতে গেছে
•কেন? রাধুনি ছিল না?
•হ্যা আছে এক স্থানীয় মহিলা। কিন্তু সে বিয়ের রান্না করতে পারবে না। এদিকে শিমুল ভাই আবার স্থানীয় প্রেফার করছেন। তার নিজের লোক আনবেন না।
•আচ্ছা
•এত নির্বিকার কেন আপনি?
•মানে?
•এটা দ্বিতীয় বিয়ে মানছি, কিন্তু তাও একেবারেই উত্তেজনা নেই?
•উত্তেজিত না, কে বলল? পাহাড়ের দিকে দেখ, কি শান্ত, স্নিগ্ধ, কিন্তু যখন ঢল নামে, সব ভেঙেচুরে দিয়ে যায়!
•হুম! কিছুটা ভয় লাগে আমার আপনাকে!
•ভয়? কিসের ভয়?
•ভাঙনের!
আমাকে অবাক করে উঠে চলে গেল মিজান। রাতে খেতে এলো না, রুমে একা খেল, ঝুম বৃষ্টির তিন দিন নিজেকে বন্দী করে রাখল, আমিও ঘাটালাম না।
“বিয়ে অনেক বড় দায়িত্ব, তুমি চাইলে আরেকটু ভেবে দেখতে পার।” লিখে টেক্সট করলাম, কোন জবাব এলো না!
সারাদেশে বৃষ্টির প্রকোপ শেষ হলেও এখানে ঝিরিঝিরি চলছে, আজ দুপুরে রাধুনির রিহার্সাল, শোভন খুব টেনশনে আছে, মিজান নাকি তার উপর সব ভার দিয়েছে, আমি মনে মনে হাসলাম, একজন মানুষকে দুদিন ভালো মত কথা বলে, ভালো ব্যবহার দেখিয়ে কত সহজে আপন করে নেওয়া যায়, মানুষের ধর্মই বোধহয় কারো আপন হতে চাওয়া, মানুষ একা থাকতে চায়না, সে যেখানে যায় সাথী খোঁজে, এই পড়ন্ত বেলায় আমিও তাই করলাম, ফলাফল কি হবে জানিনা!
বিকেলে খুব হুড়াহুড়ির শব্দ, বাকি চার কটেজে কাজ চলছে, সব রেডিই আছে, ফাইনাল চেকিং, শোভনের নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামের কিছু মানুষ জুটেছে, কেন ঢাকা থেকে লোক পাঠালেন না শিমুল ভাই, আমি জানিনা, তিনি সবকিছু পার্ফেক্ট চান, এরা কিছুই পার্ফেক্ট করতে পারবে না! দরজায় টোকা দিচ্ছে কে যেন, উঠে খুলে দিতে দেখি একজন মধ্যবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে,
•আমি মিজানের মা
•আসসালামু আলাইকুম আসুন, প্লিজ ভিতরে আসুন,
উনি খুব কুন্ঠিত ভঙ্গিতে ভিতরে এলেন। আমি হাত ধরে বসালাম। খুব সাধারণ চেহারা, চেহারাই বলে দিচ্ছে অনেক ঝড় জল বয়ে গেছে তার উপর।
•ঘর খুব এলোমেলো, আসলে ভেবেছিলাম কাল সকালে আসবেন আপনারা….
•না ঠিক আছে মা, সবকিছু এক হাতে হয়না, তুমি লিখছ, কতজন পড়ছে….. আমরা তো ঘরদোর গুছাই, এসব তো পারিনা
•মেয়েদের মেয়ে মানুষের মত থাকা উচিত, ভালো লিখে বলে, ঘর গুছিয়ে রাখা যাবেনা, এ কেমন ধারা কথা? অচেনা কন্ঠ, দরজার বাইরে থেকে শুনতে পেলাম,
•আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে গেলাম, আপনি?
•মোহনা!
•ওহ মিজানের ছোট বোন! শ্যামলা, বেশ সুন্দরী।
আমি কথা গায়ে না মেখে ও কে বসতে বলি।
•আর তুই যে বড়দের সাথে বেয়াদবী করিস, সেটা কি খুব উচিত? মিজানের মা বিরক্তির সাথে বলেন
•মা প্লিজ ,আমি এখানে আসতেই চাইনি। কেন জোর করে আনলে?
•আমি শান্ত গলায় বলি, আশপাশটা ঘুরে দেখ, ভালো লাগবে
•আপনাকে বলে দিতে হবে না, কিসে আমার ভালো লাগবে, ভাইয়ের ভালো লাগা দেখেন, বলে চলে গেল, রুমের দরজা থেকেই।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার পর, মিজানের মা পাতলা দুটো সোনার চুড়ি আমার হাতে পরিয়ে আশীর্বাদ করেন। তারপর উনিও চলে যান। আমার আবার কান্না পাচ্ছে, ভীষণ কান্না…..
পরদিন সকালে,
ঘুম ভাঙল হইচই শুনে, সবাই চলে এসেছে, আমি দ্রুত উঠে রেডি হয়ে বের হব, চোখ পড়ল, টিলার একদম নিচে মাচাং এর উপর বসে আছে শোভন আর মোহনা! মোহনা ওর দুলাভাইকে বিয়ে করতে চায়না। ঠিক আছে, তার জন্য শোভনের সাথে এভাবে আলাপ করা….. এটা শোভনের কাজের জায়গা…..
আমি বের হতেই একটা কটেজে হইচই শুনে সেখানে এগিয়ে যাই,
মা এসেছে, বাবা, শিমুল ভাইয়ের পরিবার এসেছে, আসফির মা, বোনেরা বসে আছে এক পাশে,
ভাবী এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে, শপিং বের করে দেখাচ্ছিলেন সবাইকে, মা কে এই কদিনেই এত বৃদ্ধ দেখাচ্ছে….. মাও জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানালো , বাবা গেছেন নাস্তার আয়োজন দেখতে, এসে উনিও আমাকে আশীর্বাদ করলেন। মিজান কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ওরা অন্য কটেজে ভাবী জানালেন। শিমুল ভাই কাজের মানুষ কিন্তু আজ বসে বসে স্ত্রীর ছেলেমানুষী উপভোগ করছেন, আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো, শিশির কে কেমন দেখাত? জুলফিতে সামান্য পাক ধরা…. চোখে কি চশমা পরত?
•আরে এখানে এসে বস, দাঁড়িয়ে কেন?
ভাবী হাত ধরে টেনে বসালেন, বাচ্চারা চাচী বলে জড়িয়ে ধরল না। তারা বিব্রত, কি বলে ডাকবে! আমি নিজেই ওদের কোলের কাছে টেনে নিলাম। নাস্তা এসে গেল, সবার প্লেটে তুলে দিচ্ছি, শোভন, মোহনা কি এসেছে? কারো চোখে পড়ে গেল না তো?
•কি? মিতু এত ভাবনায় গুম হলে চলবে? মিজান কাছেই আছে আবার ভাবীর টিপ্পনী!
•বিয়ে তো ওর না, যেন তোমার হচ্ছে! শিমুল ভাইয়ের টিপ্পনী! আমি খুব অবাক। একেকটা মানুষের কত রূপ!
•কি? দেবে নাকি আবার বিয়ে? তোমার ভাইয়ের ও মনে হয় সাধ জেগেছে !
•আমি হেসে বললাম, খারাপ কি? কিছু মিষ্টি স্মৃতি রোমন্থন হবে, বাচ্চারাও মজা পাবে…..
•শিমুল ভাই বললেন, মিষ্টি নাকি? মনে হয় না!
•সবার সামনেই কিল হাকালেন ভাবী
এদের কোনদিন এত সহজ হতে দেখিনি আমি। বিয়ের পর খুব কম সময় আমরা দেশে ছিলাম, থাকলেও হাসপাতালে, হাসপাতালে। শিশির কত খুশি হত এমন পারিবারিক পরিবেশে…..
মা আমাকে রুমে টেনে নিয়ে গেল,
•কিরে মা? তুই খুশি তো?
•হ্যা
•তুই আগের বার ও এমন কান্নাকাটি করেছিলি।
•মা, শিশির কি কষ্ট পাচ্ছে?
•কেন কষ্ট পাবে? আমরা একাই আসি, আমাদের একাই বাঁচতে হয়৷ আবার একাই চলে যেতে হয়। মাঝে কিছু মায়ার খেলা….
•বাহ! মা! তোমার মেয়ে কেন লেখিকা বোঝা যাচ্ছে!
•তোর এরপরের লেখা আরো ভালো হবে দেখিস!
•তুমি তো বলেছিলে আমার ভেতরের কষ্ট থেকেই ভালো লেখার জন্ম
•এখন তোর ভেতরের পূর্ণতা থেকে ভালো লেখার জন্ম হবে।
সন্ধ্যায় খুব অনাড়ম্বর ভাবে আমাদের বিয়ে পড়ানো হল, ছয়টা কুটির মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে, সামনে একটা রঙিন পানির ফোয়ারা, ওটা খেয়ালই করিনি, বন্ধ ছিল এতদিন, রঙিন মাছ ও ছাড়া হয়েছে, বেশ লাগছে, আমি অবশ্য এসব দেখার তেমন সুযোগ পাইনি! আমার কটেজ ফুলে ফুলে সাজানো, সেই ফুলের মাঝে আমাকে বসিয়ে গেছে ভাবী। মোহনা একবারও আসেনি, মিজানকে ওরা আটকে রেখে বিভিন্ন গেম খেলছে, আমার শুনেই ভালো লাগছে, বিয়ের আনন্দ নাকি মিজানের জন্য উৎকন্ঠা কোনটা প্রকট বুঝতে পারছি না!
আমাকে বসানোর আগে নিলয় অনেক ক্ষন বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলল। কনক হাসানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।
•তোমার কি মনে হয়? এতে মিজান জড়িত?
•যদি জড়িত হয়, তাহলে আমি বলব ওয়ার্ল্ড বেস্ট নার্ভ কন্ট্রোলড মানুষ সে! কাউকে মারতে দিয়ে হাসি মুখে প্রেয়সীকে বিয়ে করা চাট্টিখানি কথা না!
•পুলিশ খুজছে কনক হাসান কে?
•পুলিশ তার মত করে কাজ করছে আর কি! আমি একটু ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার ইনফর্মার অনেকটা সময় আমাকে ফোনে পায়নি। আসলে খুব ধকল গেছিল ফারহান শিকদারের বিষয়টা।
•ফারহানের বাবা নিশ্চয়ই চুপ করে বসে নেই?
•উহু! এটাই অবাক লাগছে, সে দুবাই চলে গেছে, দাফন করেই!
•একমাত্র ছেলে! আর বাবা এটা কেন করবে? দুবাই থেকে কিলার আনবে মিজানের জন্য?
•আরে আপু! আপনি লেখিকা মানুষ, ভালো কথা, কিন্তু এত মাথা খাটাবেন না। আজ তো অন্য কিছু খাটাবেন! লেম জোক্স! হাহা!
•নিলয়, আমি কতটা চিন্তিত….. তুমি বুঝতে পারছ না!
•বুঝি আপু, সে যদি কোন সংঘবদ্ধ সংগঠনের সাহায্য নিয়ে এসব করে তাহলে তাকে যাতে টেনে আনা না হয়, আমি দেখব।
•তুমি অন্যায় সাপোর্ট কর?
•করতাম না, আজ মেয়েগুলো আপনার বিয়েতে এসেছিল, খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, নিজের বোনের বিয়েতে মেয়েরা যেভাবে কাঁদে ওরা সেভাবেই কাঁদছিল! ভাবতে পারেন? ওরা ওদের বোনকে কনে সাজতে দেখবে না, হাতে মেহেদী পরাবে না, গায়ে হলুদ দেবেনা। আর বাবা চলে যাওয়ায় যে দুরবস্থায় পড়েছে….. তা সচক্ষে দেখেছেন। কাজের কোন বন্দোবস্ত করা যায় কিনা আমি দেখছি…….
•আমার জন্য তুমিও জড়িয়ে গেলে,
•আরো আগে যদি জড়াতাম, মেয়েটা আজ আমাদের মাঝে থাকত….. এই মধুর রাতে এসব আলাপ থাক। যান আপু। শুভ কামনা করছি। মিজান ছেলেটা, স্যরি দুলাভাই! মানুষ খুব ভালো!
মিজান এলো রাত একটায়, আমি জবরজং শাড়ি পরে এত ঘন্টা অপেক্ষা করলাম, নিজেরই অবাক লাগছে, সে বিছানার এক পাশে বসে পাগড়ি খুলে রাখল৷ অনেকক্ষন পর বলল,
•বৃষ্টি থেমেছে!
•কেন? পড়লে ভালো হত!
•সবাই চাঁদনী রাতে বাসর চায়, কিন্তু আমি চাই বর্ষনমুখর রাত…..
•হুম….. বেশ রোমান্টিক!
•কিছুটা, বাকিটা আপনার বই পড়ে শিখেছি
•হাহা!
•হাসছেন কেন? আমি বারোটা বই পড়েছি।
•বাহ! আমার পাঠক…..
•এতদিন আপনার বই পড়েছি, আজ আপনাকে পড়তে চাই…..
পাঁচ বছর পর,
আমার তেরো তম বেস্ট সেলার “ মেঘের আড়ালে চাঁদ ” এর আজ মোড়ক উন্মোচন। আমি কখনো এই অনুষ্ঠানে যাইনি। আমার হয়ে প্রকাশক কাজটা করে দিত। আজ খুব সেজেগুজে এসেছি, মোড়ক উন্মোচন হল, সবাই ছবি তুলছে, একটা টিভি ক্যামেরা ঝটিকা সফর দেয়ার পরপরই, কিছু ক্যামেরা এসে স্থায়ী হল, ভীড়ে দাঁড়িয়ে মিজান কোলে দুই বছরের আসফি, আমি বারবার তাকে স্টেজে ডাকছি সে আসছে না। মেয়ে কোলে দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে, একটু পর জয়া আপু এলেন উনি বইয়ের সিনেমা স্বত্ব কিনে নিয়েছেন অনেক আগেই। আমরা রেপ ভিক্টিমদের জন্য কাজ করছি। অবশেষে মুক্তি পেলাম, ভীড়ের মাঝে মিশে গেলাম, মেয়ে বাবার কোলে চড়ে বাচ্চাদের সেকশনে বই পছন্দ করছে, তার বায়নার অন্ত নেই!
পিঠে হাত পড়তেই চমকে গেলাম,
•উফ লেট হয়ে গেল!
•আরে মোহনা!
•আমি সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড! কিভাবে থাক এই জঞ্জালে ভরা শহরে? কত করে বলি আমাদের ওখানে চল…..
শোভন আর মোহনার বিয়ে হয়েছে, ওরা এখন শ্রীমঙ্গলে আমাদের রিসোর্ট দেখাশোনা করছে। এখন টুরিস্ট দের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, নাম শিশির কুঞ্জ। শুধু আমার আর মিজানের বাসর ঘরে গেস্ট থাকেনা।
•জার্নি করে ক্লান্ত বোধহয়?
•একেবারেই না, আস মামনি ফুম্মির কোলে আস
•হয়েছে, আজ মেয়ের আহ্লাদের আর সীমা রইল না!
একেবারে বইমেলা বন্ধের আগে ফিরলাম। ডিনার করলাম মিজানের বন্ধুর রেস্তোরাঁয়।
গাড়িতে ঘুমিয়ে গেছে আসফি। ফোন বাজল মিজানের, সে একটু হু হ্যা করে রেখে দিল, কিন্তু চোখ চকচক করছে তার!
বাড়ি ফিরে গেস্ট রুম গুছিয়ে, ওদের রেস্ট করতে দিয়ে ঘরে এলাম, মেয়ে ঘুমাচ্ছে, মিজান গুনগুন করছে আর আমার লেখার টেবিল গুছিয়ে রাখছে…..
•তোমার ক্লান্ত লাগেনা? সারাদিন অফিস করে, আমাদের নিয়ে বের হয়ে এখন আমার টেবিলের পেছনে লাগলে?
•উহু! বল তো কয়েক রাউন্ড হয়ে যাক!
•হুম! ভারী অসভ্য হয়ে গেছ!
আমার হাত ধরে টেনে কাছে নেয়, কিন্তু ঠোঁট বাড়াতেই আমি আঙুল দিয়ে বাঁধা দেই। একটা প্রশ্ন ছিল?
•একটা? আমি ভেবেছিলাম হাজারটা থাকবে!
•কিভাবে শুরু করি….
•শুরু করতে হবে না, আমিই বলছি, তার আগে আজ কফি বানাও, তোমার তিক্ত কফির সাথে আমি তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি…..
মিজানের ভাষায়,
আশুলিয়ার বাড়িতে আমার তাদের সাথে পরিচয়। তারা অনেকভাবে বুঝায়, কিন্তু আমার বিশ্বাস বিচার হবেই, পুরো দেশ উত্তাল! আমাকে নিরাশ করে কোর্ট, উল্টো আমার আর তোমার নামে কিসব বাজে কথা উঠলো, আমারও জেদ চেপে গেল, ভরা কোর্টে তোমাকে নিয়ে বাজে কথা আমার একেবারেই সহ্য হল না….কিন্তু আমি সম্মতি দিতে পারিনি তখনও, যেদিন রাতে আলতাফ কাকার হত্যার খবর পেলাম আমি নিজে কল দিলাম ওদের, নম্বরটা রাখা ছিল, খুব দোটানায় ছিলাম, তাই হয়তো কিছুদিন তোমার চোখে চোখ রাখতে পারিনি। ওরা জানালো দক্ষ জনবল ওদের আছে, লাগবে শুধু টাকা, আমি অসহায় হয়ে পড়লাম। কার কাছ থেকে টাকা চাইব, তোমায় বললে তুমি কিছুতেই সমর্থন করতে না, উল্টো ভুল বুঝতে…… আমি জানি তুমিও কিছুদিন খুব অশান্তির মধ্যে ছিলে, কিন্তু আমার উপায় ছিল না। টাকার জন্য
সিহাব, অনুপম, রিফাত কে কল দিলাম। অনুপম এক কথায় রাজি হয়ে গেল, বাকিরা কারণ না জেনে টাকা দেবেনা, অতএব কেন চাইছি বলতে হল, তারা কিছুদিন সময় চাইল, আমি দুলাভাইকে বললাম বাবার একটা জমি আমার নামে ছিল, সেটার কাগজটা বাড়ি থেকে নিয়ে জমি বিক্রি করে দিতে বললাম, কপাল ভালো, খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হল আমি টাকা জমা দিলাম, প্রথম কিস্তি! মানুষটার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। উনি যদি বাবা মাকে শোভন মোহনার বিয়েতে রাজি না করাতেন, আজীবন ওরা কষ্ট পেত….. আজো নিজের পরিবারের মত আগলে রেখেছে আমাদের, বিয়েটাও করল না!
যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরি,
অনুপম , সিহাব, রিফাত মিলে পরের কিস্তি দিতে সাহায্য করল । ফারহান শিকদার এর কেসটা জটিল ছিল। ন্যাচারাল ডেথ দেখানো, তার বাবাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা সহজ কাজ ছিল না, পরে জানলাম এতে আরো কিছু বড় ইন্ডাস্ট্রির মহাপরিচালকের ইশারা ছিল! টাকাও ছিল!
প্রথম কাজটা সফল হল। তার এক সপ্তাহ পরেই আহসান হাবীব বিদেশ চলে গেল, তাই কনক হাসানের কাজটা তাড়াতাড়ি করতে হল, এত সমস্যা ফেস করতে হয়নি, কারণ তার বাবা বিরাট কিছু না, কোন প্রভাব প্রতিপত্তি নেই! শুধু অফিসটা তার ছিল। সেসব তার স্ত্রী, পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
আহসান হাবীব বিদেশে ছিল, আমাদের আওতার বাইরে। নিস্ফল ক্রোধ আমাদের পুরো টিমকে কষ্ট দিচ্ছিল, রেপ ভিক্টিমদের নিয়ে তুমি কাজ করতে চাইলে, আমরাও যোগ দিলাম। বাকিটা তো জানোই…..
আহসান হাবীব বেঁচে গেল?
না! যে টাকা নিয়ে গিয়েছিল, সেটা শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারেনি, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে খেটেছে এই পাঁচ বছর, আজ এক শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী দলের হাতে খুব ভয়াবহ জখম হয়ে স্পট ডেড!
অনেকটা সময় দুজন চুপ করে বসে রইল। মাঝে আসফি ঘুমাচ্ছে। দেশে রেপ কমেনি, বিচার ও হয়না। জীবন চলে যাচ্ছে, জীবনের মত……
(সমাপ্ত)