মেঘদিঘির পাড়ে পর্ব – ২১

0
365

মেঘদিঘির পাড়ে – ২১
মালিহা খান

রাতের অমা মলিন করে জোছনা উঠেছে। একলা একা রুপালি চাঁদটা হয়তো আত্নশ্লাঘায় বিভোর। এমন অপরুপ সে!
বাড়ির উঠোনে বিভাকে পাওয়া গেলোনা। ইউসুফের চওড়া কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
এই নিঝঝুম রাতেরবেলা মেয়েটা একা একা গিয়ে ছাদে বসে আছে নাকি? এত সাহস যে কই পায়!
অত:পর তার চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে বিভাকে ছাদেও পাওয়া গেলোনা।

গাছের পাতা কম্পনশূন্য। বাড়ির পিছের এদিকটা গাছগাছালিতে ভর্তি। কাঁঠালীচাপার ঘ্রাণে মাথা ধরে যায়। আঁধারে সামান্য মানব ছায়াও দৃষ্টিগোচর হয় বহুকষ্টে। একটু জোছনার আলোতে…

-“এখানে কি করছো তুমি?”

এত একাগ্র নিরবতা মূহুর্তেই উবে গেলো। শুকনো পাতা পড়ে ছয়লাব হয়ে ছিলো নিচ, মড়মড় শব্দে সেই পাতা ভেঙে কাছে এসে দাড়ালো ইউসুফ।
অথচ তার উপস্থিতিতে নির্বিকারচিত্তে বসে থাকা ছায়ামানবী বিন্দুপরিমানও নড়লোনা। যেনো সেই কন্ঠ তার কর্ণকুহর অবধি পৌঁছাতেই পারেনি এমন একটা ভাব নিয়ে সে খুব নির্লিপ্তভঙ্গিতে একাধারে হাতের ছোট্ট লাকড়ির টুকরোটা দিয়ে উঠোনের মাটিতে খুঁটতে লাগলো। যা সে বিগত অনেকক্ষণ যাবত মনোযোগ সহকারে করেই যাচ্ছিলো। তার মনোযোগের পরিবর্তন ঘটলোনা। তবে মুখের উপর ছেঁয়ে থাকা খোলা এলোকেশের নিচে খুব যন্ত্রনায় একজোড়া আবেগী চোখ বারঁবার পলক ঝাপটাতে লাগলো।

তার মুখ তুলে চাওয়ার অপেক্ষায় ইউসুফ ঠাঁট হয়ে দাড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ। গাছের ফাকফোঁকড় গলিয়ে অল্পআধটু জোছনা আসে। ছায়ামানবীর নির্লিপ্ততার পরিমাণ আঁচ করতে করতেই পাথর কঠোর চোখের চাহনী নরম হয়ে এলো ধীরে ধীরে। সামান্য নিবিড় হয়ে পাশে বসতেই গলার স্বর নেমে গেলো অনেকটা,

-“মন খারাপ কেনো?”

খুব রুক্ষ কন্ঠেও সহস্রাধিক অনুভূতি লুকোনো গেলোনা। প্রতিটা বায়ুকণা অবধি টের পেলো তার হৃদআকুতি। ছায়ামানবী মুখ না তুলেই থমথমে কন্ঠে উওর দেয়,

-“মন খারাপ না।”

-“খারাপ। কেনো?”

উওর এলোনা। প্রশ্নও হলোনা আর। সময় গেলো। হাতের লাকড়িটা পড়ে যাবার মৃদু শব্দ হলো। বিভা মুখ তুলে গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা আকাশের বিশাল চাঁদটায় চোখ আটকালো। বিষন্ন, উদাসীন। বারকয়েক পলক পড়লো। কোঁণ ঘেঁষে তপ্ত জল গড়ালো কি? অন্ধকারে বোঝা গেলোনা। হাত বাড়িয়ে চোখের কোঁণ ছুঁয়ে দেখতে পারলোনা ইউসুফ। কি যেনো আটকে দিলো। অবগত পরিণতি?
বিষন্নার মলিনতায় জোছনাও ম্লান হলো যেনো। অদ্ভুত ম্লানিমা গ্রাস করলো চারপাশ।

-“ওঠো। রাত হয়েছে। ঠান্ডা পড়ছে। ঘরে চলো।”

ইউসুফ তাঁড়া দিলো। এবারে উওর এলোনা। তবে শিরা- উপশিরায় রক্তজমিয়ে দিয়ে তার শক্ত বাহুতে কাত করে মাথা ঠেকালো বিভা। নিজের দু’হাত দিয়ে তার একহাত পেঁচিয়ে ধরে বিরবির করে বললো,

-“চুপ করে বসে থাকেন, আমি আর কিচ্ছু বলবোনা।”

ওখানে আর টু শব্দটাও হলোনা। শীত ও কি ভীত হয়ে পড়লো মনের উষ্ণতায়? কাঁঠালীচাপাও কেনো হঠাৎ ওমন ঘ্রান ছড়ালো? খুব তীব্র।

~চলবে~

[অনেকদিন পর লিখার কারনে বেশ খাপছাড়া হয়ে গেছে আমার মাথা। শব্দ ভুলে গেছি কতো। ফলাফল লিখতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। পর্বটা ডিলিট করে দিয়েছি একবার, আবার লিখেছি। এখন ছোট হয়ে গেছে। বর্ধিতাংশ কাল বিকেলেই পাবেন।
আর আপনারা একটু মন্তব্য করার চেষ্টা করবেন। আপনাদের মন্তব্য পড়ে আগের ধারাবাহিকতা টা ফিরে পাবো হয়তোবা।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here