#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[২১]
যে বিষ সাথেসাথে কাজ করে সেই বিষের প্রভাব, দেরীতে কাজ করা বিষের চাইতে এটুকু কম শক্তিশালী। কিন্তু তারমানে এই নয় যে সেই বিষ কাজ করেনা।
শফিক সাহেব কেবিনের বেডে হেলান দিয়ে ডক্টর মুখার্জির কথা শোনেন। বলেন,
‘ আমি জানি মিঃ মুখার্জি। এখন ওদের কি অবস্থা? আমার শরীর এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।
‘ পুলিশ অফিসার মোটামুটি রিকোভার করতে পেরেছেন। ওনার শরীরে বিষের প্রভাব কম। দুধ গ্লাসের উপরের অংশটুকু খাওয়ায়। আর মেয়েটা গ্লাসের শেষের অংশটুকু খাওয়ায় একটু বেশিই বিষের প্রভাবে ধরেছে।
ওনার ফ্যামিলি কোথায়?
শফিক সাহেব কেশে উঠেন। নড়েচড়ে বসে বলেন,
‘ আপাতত এখানে নেই। আমরাই ওর অভিভাবক।
ডক্টর মুখার্জি চলে যায়। শফিক সাহেব শুয়ে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে জিনিয়া আসল। জাহেদা ও। দুজনের চেহারার বেহাল অবস্থা। জিনিয়া ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ এসব কি করে হলো আম্মা? দুধে বিষ কোথা থেকে এল? সেই দুধ তো আব্বা তুমি ও খেয়েছ? তারমানে ভাইয়ার গ্লাসে বিষ এক্সট্রা দেওয়া হয়েছিল।
জাহেদা কিছু ভাবতে পারছেন না।
কিছুক্ষণের মধ্যে হসপিটাল ভরাট হয়ে যায় পুলিশে। সবার ধারণা কিডনি পাচারের আসামীর মৃত্যুর অভিযোগে জায়িদকে অভিযুক্ত করায় অপমানে জায়িদ সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
কিন্তু জ্ঞান ফিরতেই জায়িদ কারো সাথে কোনোরূপ কথা বলল না।
চুপচাপ হয়ে থাকল। বড় পুলিশ অফিসার এলেও কোনোরূপ কথা বলল না জায়িদ। শেষমেশ যাও মুখ খুলল, তখন বলল,
‘ আমি সুইসাইড করতে যাইনি। বিষ কোথা থেকে এসেছে সেটা ও জানিনা।
প্রায় গতরাত থেকে চিকিৎসা চলা আনহার জ্ঞান ফিরল সন্ধ্যার দিকে। নিজের ফোন পেলনা সে। কিছু পেলনা। হন্য হয়ে বেড থেকে নামতেই কেবিনে ডুকে দরজা বন্ধ করল সাহিল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আনহার উপর। আনহা ভয় পেয়ে গেল।
ধরা পড়ে গেল সাহিলের কাছে।
‘ জায়িদকে খুন করতে কে পাঠিয়েছে তোমায় আনহা? সত্যিটা বলবে। আমি জানি বিষটা তুমিই দিয়েছ।
থতমত খেল আনহা। ঝরঝর করে কেঁদে দিল। দৌড়ে গিয়ে সাহিলকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ভাইডি আমার মা। আমার মা ফরিদপুরে হসপিটালে। ভাইডি মাকে কি করেছে জানিনা সিফাত। আমার মাকে বাঁচান ভাইডি।
সাহিল সরিয়ে দিল আনহাকে।
‘ মায়ের জন্য করেছ মানে? যারা তোমাকে ভালোবেসে তোমাকে আশ্রয় দিয়েছে তাদের ক্ষতি করতে চেয়েছ তুমি? কি হয়েছে তোমার মায়ের?
‘ মায়ের অপারেশনের টাকা যোগাড় করার জন্য টাকা লাগবে আমার। নইলে মা কিছুদিন পরপর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। আর আমাকে চিনবেনা। বাবার খোঁজ দিতে পারবেনা। সিফাত, ও আমাকে পাঠিয়েছে অফিসারকে মারার জন্য। বলেছে অফিসারকে মারতে পারলে আমাকে মায়ের অপারেশনের টাকাটা দিয়ে দিবে। আমি এখন কি করব ভাইডি? আমাকে যদি পুলিশে ধরে নিয়ে যায় মায়ের কি হবে? কি হবে ভাইডি? আমার খুব ভয় লাগছে। কি করব আমি এখন?
সাহিল ঠিকানা নিয়ে পাড়ি দেয় সেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আনহার মায়ের নাম না জানায় আর কিছু বলতে পারেনা। পুরো হসপিটাল তন্নতন্ন করে খোঁজে।
এদিকে আনহাকে সম্মুখীন হতে হয় নানান প্রশ্নের। জায়িদকে দেখামাত্রই ভড়কে যায় আনহা। জায়িদ স্বাভাবিক আচরণ করে। জিনিয়া, জাহেদা, শফিক সাহেবের আচরণ দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা আনহা। কেউ তাকে কিছু বলছেনা কেন? পুলিশ এসেই তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেনা কেন?
আনহাকে কেবিনে বন্দী করে রাখল জায়িদ। সাহিলের কথা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আবার অবিশ্বাস্য ও নয়। আনহা তাকে মারতে এসেছে? খুন করতে?
তাহলে এতদিনের সব কিছু অভিনয় ছিল?
এত নিখুঁত অভিনয়? এত নিখুঁত অভিনয় ও করতে পারে মানুষ? আর জায়িদ? একজন অপরাধীর প্রতি নিজের দুর্বলতা অনুভব করছিল। এমন মেয়ের প্রতি ও কি দুর্বলতা আসে? এত হীন, নিচ প্রকৃতির মেয়ে কি আসলেই কারো বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে?
সাহিল হসপিটালের এক নার্সকে ডেকে নিল। বলল,
‘ এই হসপিটালে আনহা নামের একটা মেয়ের মাকে এডমিট করানো হয়েছিল। তিনি কত নাম্বার রুমে আছে একটু বলতে পারবেন?
নার্স বলল,
‘ সরি স্যার। পেশেন্টর নাম না বললে বলতে পারব না।
নার্স চলে গেল। হসপিটালের বাইরে একজনকে ভদ্রলোককে খাকি রঙের একটি বাক্স টেনে নিয়ে যেতে দেখা গেল। সাহিল দাঁড়িয়ে লোকটাকে ডাকল,
‘ এক্সকিউজ মি! বাক্সটা এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? একা তো পারছেন না। অন্য কারো সাহায্য নিন। কি আছে এতে?
ভদ্রলোক মাক্সের আড়ালে বললেন,
‘ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। কেন?
সাহিল বলল,
‘ ইলেকট্রনিক ডিভাইস এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
ভদ্রলোক বিরক্ত হলেন। সাহিল ব্যাপারটা বাদ দিয়ে আবার খোঁজে লেগে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন পেলনা মাথা খারাপ হলো সাহিলের। কোথায় খুঁজবে এখন সে আনহার মাকে? আনহার নাম্বারটা নেওয়া উচিত ছিল। জায়িদকে ও ফোন দিয়ে কিছু বলা যাবেনা।
হসপিটালের বাইরে এসে দাঁড়াতেই সাহিলের চোখ গেল রাস্তার পাশে ট্রাকে। ভদ্রলোক বাক্সটা তুলছেন ট্রাকে। এতবড় ট্রাকে এত ছোট্ট একটা বাক্স কেন?
সাহিল এগিয়ে গেল ট্রাকটির দিকে। লোকগুলো তাড়া লাগাল যেন। সাহিল দৌড়ে যাওয়ার আগে ছেড়ে দিল ট্রাক। ট্রাকের পেছনেটা আঁকড়ে ধরে ফেলল সাহিল। ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে উঠে পড়ল ট্রাকের উপর। কিছুদূর গিয়ে থেমে গেল ট্রাক। কতগুলো লোক বেরিয়ে এল।
আশপাশের লোকজনকে চেঁচিয়ে ডাকল সাহিল। দৌড়ে এল সবাই।
সাহিল টান দিতে দিতে খুলল বাক্সটি। লোকজন দলে দলে ছুটে এল। স্পষ্ট এক মহিলার গোঙানির আওয়াজ বের হচ্ছে সেই বাক্স থেকে।
সাহিল গাড়ির ড্রাইভার আর ভদ্রলোককে ধরে ফেলল। রশি দিয়ে বেঁধে রাখল চেয়ারে বসিয়ে। কয়েকটা পথচারী মহিলাকে ডেকে নিল সাহিল। বলল,
‘ এখানে যে মহিলা আছেন ওনাকে বের করতে একটু সাহায্য করুন। প্লিজ।
মহিলা তিনজন এগিয়ে এল। বাক্স খুলেই একজন এগিয়ে গেল সাহিলের দিকে।
‘ মহিলার অবস্থা খুব খারাপ স্যার। ওনাকে যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে এডমিট করাতে হবে।
সাহিল বলল,
‘ ওনাকে নিয়ে আপনাদের একটু কষ্ট করে আমার সাথে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।একজন মহিলা চলে গেল। দুইজন ওই মহিলাকে নিয়ে গেল। মহিলা অচেতন অবস্থায়। সাহিল শুধু দেখল মহিলার গায়ে নোংরা শাড়ি। মুখটা দেখা যাচ্ছেনা মাথার এলেমেলো চুলের উপর ঘোমটা থাকায়। অবস্থা বেগতিক মহিলার।
হসপিটালে নিয়ে এসেই এডমিট করালো সাহিল। ড্রাইভার আর লোকগুলোকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো। জিনিয়ার কাছে আসতেই সাহিল জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় আনহা?
জায়িদ বলল,
‘ কেবিনে আটকে রেখেছি।
সাহিল আর কিছু বলতে দিলনা জায়িদকে। বলল,
‘ ওকে একটু ওই মহিলার কাছে নিয়ে যেতে হবে । ওটা ওর মা কিনা দেখতে হবে।
জায়িদ সায় দিল।
আনহাকে নিয়ে গেল সাহিল। সবার চোখের দিকে তাকাতে পারলনা আনহা৷ সাহিলের পিছুপিছু হন্য হয়ে দৌড়াল৷ বলল,
‘ ৩০২ নাম্বার রুমে ওই মহিলাকে এডমিট করানো হয়েছে। তোমার মাকে তো ক্লিনিকে রাখা হয়েছিল, আর এই মহিলার গায়ে নোংরা শাড়ি৷ মনে হচ্ছেনা ওনি তোমার মা হবেন।
আনহা তারপরে ও দৌড়ে গেল। কেবিনে ডুকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা মহিলাটিকে দেখে জোরে কেঁদে উঠল। ঝাপটে মায়ের বুকের উপর শুয়ে কেঁদে দিল। তার কান্নায় ভারী হয়ে উঠল পরিবেশ। সিফাত এতদিন মাকে কি খেতে দেয়নি? নইলে মায়ের এই অবস্থা কি করে?
সাহিল আর ভেতরে গেলনা৷ মহিলার জন্য খাবার,আর কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শাড়ি আর খাবার এনে হাতে দিল আনহার। বলল,
‘ তোমার মাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলো। যে অন্যায় তুমি করেছ তার জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে কিন্তু তোমার মা নির্দোষ, তার উপর যাতে এসব আঘাত না হানে।
আনহা আবারও জোরে কেঁদে দিল। সাহিলের দুই হাত ধরে বলল,
‘ ভাইডি তোমার ঋণ কি করে শোধ করব আমি? এত ঋণ কি করে শোধ করব আমি?
সাহিল বলল,
‘ ঋণ শোধ করত হবেনা। শুধু দোয়া করো আমি যেন আমার মাকে খুঁজে পায়। মা কি সন্তানের জন্য সেটা যার নেই সে বুঝতে পারে।
আনহা আবার মায়ের কাছে দৌড়ে গেল। নিজের শরীর দুর্বল লাগছে। কি থেকে কি হয়ে গেল? মায়ের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শুয়ে থাকল আনহা। কেবিনের জানালা দিয়ে তখনি এসে দাঁড়াল জায়িদ। আনহা আর তার মাকে দেখল একনজর৷ তাকে দেখার সাথে সাথে আনহা উঠে পড়ল। জায়িদ সরে গেল। আনহা পিছু ডাকল। জায়িদ ফিরল না৷ আবারও কেঁদে দিল আনহা৷ মাকে নিয়ে এবার কোথায় যাবে সে? বাড়ি ভাড়া বাকি আছে। বাড়িওয়ালা বাড়িতে ডুকতে দেবেনা। পাওনাদারেরা ছিঁড়ে খাবে। আর পুলিশ? জায়িদ? জায়িদ কি তাকে ছাড়বে? দিশেহারা হয়ে পড়ল আনহা।
সালেহার জ্ঞান ফিরল রাতে। আনহাকে কাছে পেয়ে পুরো মুখ ভরিয়ে দিল মমতার স্পর্শে ৷ ছোটথেকেই লড়াই করে বড় হয়েছে মেয়েটা। কিছুই দিতে পারেনি সে মেয়েটাকে কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি মেয়েটা। তা ও কোনো অভিযোগ নেই মেয়েটার৷ তার অতীত কোথায়? এত ধোঁয়াশা কেন অতীতটা? মনে পড়ে আবার পড়েনা। কাকে যেন সে গুড্ডু বলে ডাকত? কে যেন দৌড়ে এসে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত? কে সে? মনে পড়েনা কেন?
সাহিলের এনে দেওয়া ফলমূল কেটে খাওয়ালো আনহা মাকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে চেহারার রঙ পাল্টে স্বাভাবিক হয়ে এল সালেহার৷ আনহা বলল,’ ওমা তোমাকে কি ওরা খেতে দেইনি? তোমার এই অবস্থা কি করে?
সালেহা বলল,
‘ খাবার চাইব কি করে? খাবার চাইলেই বলে তুই নাকি টাকা পাঠাসনি।
আনহা বলল,
‘ আমি কেন টাকা পাঠাব। মিথ্যেবাদী সিফাত৷ ওকে পেলে খুন করব আমি।
রাতটা পার হলো। সকালে সাহিল আর জিনিয়া এল।
জিনিয়া কথা বলল না আনহার সাথে। তার ভাইকে মারতে চেয়েছিল এই মেয়ে। কতটা নীচ! ছিহঃ!
আনহা আড়ালে লুকিয়ে কাঁদল। এত মানুষের চোখে ঘৃণা আর সহ্য হচ্ছেনা। বাবা থাকলে আজকে তাকে দাঁড়াতে হতোনা এই পরিস্থিতে। কেন তার বাবা নেই?
সালেহাকে দেখল জিনিয়া। কার চেহারার সাথে মিল আছে যেন!
জিনিয়ার মেলাতে পারল না। কার সাথে মিল পাচ্ছে সে?
জিনিয়া সালেহাকে দেখে চলে গেল।
আনহা মায়ের কেবিনের বেডে মাথা রাখার সাথে সাথে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। পা টিপে টিপে হসপিটালের করিডোরে এসে দাঁড়াল সালেহা। মেয়েটা একটু ঘুমাক। কত ঝড় যায় মেয়েটার উপর!
সাহিলের পিছুপিছু সাগর সাহেব, শফিক সাহেব। হাতের ঔষধগুলো দেখতে দেখতে সাহিল এগোলো। সাগর সাহেবকে বলল,
‘ বাবা জিনি কোথায়?
শফিক সাহেব তার উত্তর দিল।
‘ আসছে ওরা। আনহাকে আজ থানায় যেতে হবে। ওর মাকে জিনিয়ার কাছে রাখব।
সাগর সাহেব আর শফিক সাহেবের গলার আওয়াজ শুনে সালেহা বেগম শাড়ির আচঁল টানে মুখে। সাহিল তার সামনাসামনি। ডেকে বলে,
‘ আন্টি আনহা কোথায়?
সালেহা বেগম শাড়ির আঁচল আর ও জোরে টানে৷ সাগর সাহেব আর শফিক সরে দাঁড়ায়৷ ওনি বোধহয় অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন।
সালেহা কেবিনে ডুকে পড়ে৷ ঘুমন্ত আনহার মুখ ধরে ডাকে,
‘ মা, আনু? দেখ কারা যেন তোকে ডাকে। আনু?
আনহা নড়েচড়ে বলে,
‘ ডাকুক৷ এখন উঠব না মা। ঘুম পাই।
সাহিল হাসল আনহার বাচ্চামো দেখে। মায়ের সাথেই তো এমন বাচ্চামো মানায়।
কন্ঠস্বরটা মায়ের কথা মনে করিয়ে দিল সাহিলকে৷ সালেহা ঘাড় ঘুরিয়ে সাহিলকে দেখে আবার ডাকতে শুরু করে আনহাকে। আরেকবার ফিরলে আর দেখতে পায়না সাহিলকে। ছেলেটা গেল কই?
হসপিটালের বারান্দায় বসে হাতের মুঠো বন্ধ আর শক্ত করে করতে থাকে সাহিল। তরতর করে ঘামতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ে। সাদা শার্ট ভিজে উঠে। জিনিয়া এসেই সাহিলকে দেখে এগিয়ে যায়। এদিকওদিক তাকিয়ে রুমাল বের করে। সাহিলের কপাল মুছে দিতে দিতে বলে,
‘ এভাবে ঘামছেন কেন? শরীর কি খারাপ লাগছে? শুনছেন? পানি খাবেন?
সাহিলের ঠোঁট কাঁপল তরতর করে। জিনিয়ার হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। জিনিয়া ভয় পেয়ে ডাক দেয়
‘ আব্বা এদিকে একটু আসো না।
সাগর সাহেব আর শফিক সাহেব দৌড়ে আসে। সাগর সাহেব সাহিলকে ওরকম করতে দেখে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে সাহিল? কি হয়েছে?
সাহিল আঙুল দিয়ে কেবিন দেখিয়ে দিল। কাঁপতে থাকা ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করল,
‘ মা, মাআআ।
সাগর সাহেব থমকে গেলেন। শফিক সাহেব জিজ্ঞেস করল
‘ কার মা? কি বলছ সাহিল? শান্ত হও তুমি।
জিনিয়া দৌড়ে গিয়ে পানি আনে। পানি খাইয়ে দেয় সাহিলকে। হাতে পানি নিয়ে মুখ মুছে দেয়। বলে,
‘ কি বলতে চাইছেন স্পষ্ট করে বলুন না?
সালেহা এসে দাঁড়ায় কিছুটাদূরে। শাড়ির আঁচল মুখ বরাবর রেখে সাহিলকে দেখে। কি হয়েছে ছেলেটার? এখনই তো ভালো ছিল।
উঠে দাঁড়ায় সাহিল। জিনিয়ার হাত ছাড়ে৷ দৌড়ে গিয়ে সালেহার কাছে পৌঁছে। ঝাপটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে। ছোট্ট বাচ্চাদের মতো চোখ গলে জল বেরোয়। মায়ের কপালে চুম্বন লাগিয়ে এলোমেলো সুরে কেঁদে দিয়ে ডাকে,
‘ মা, আমার মা।
সালেহা দ্বিগুণ অবাক।
‘ ছেলেটা কি পাগল? এরকম করছে কেন? কিভাবে জড়িয়ে ধরল? কাঁদছে ও। কাঁদছে কেন?
ঘুমঘুম চোখে উঠে আসল আনহা। মা মা ডেকে আসতে আসতে থেমে গেল সে৷ নিজের মাকে সাহিলকে জড়িয়ে ধরে রাখতে দেখে অবাক হয়। সবার চোখ থমকে গিয়েছে। সাগর সাহেব অবাক চোখে দেখে সালেহাকে। এই মানুষটা এতগুলো বছর পর কোথা থেকে এল? বিশ বিশটা বছর!
সাগর সাহেব টালমাটাল হেঁটে কোনোমতে বসল বেঞ্চে। সাহিল মাকে ছাড়ল অনেক্ক্ষণ পর। জিনিয়া অবাক। এই লোকটা বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। মায়ের জন্য। ইনিই তার মা? আর আনহা? আনহা তার বোন?
সাহিল দু’হাতে মায়ের মুখ ধরল। বলল,
‘ মা আমি তোমার গুড্ডু। আমাকে চিনতে পারছ না? গুড্ডু বলে ডাকো মা। ডাকো। আমি তোমার গুড্ডু। সত্যি। মিথ্যে বলছিনা। তুমি এতগুলো বছর কোথায় ছিলে মা? কত খুঁজেছি তোমায়৷
কত খুঁজেছি তুমি জানো। পাগলের মতো খুঁজেছি তোমায়। আমি পাইনি মা। মা, এভাবে কি দেখছ। আমাকে কি তুমি চিনতে পারছ না?
সালেহা ভ্যাবদা মেরে তাকিয়ে আছে। প্রশ্ন করল,
‘ কাঁদছ কেন তুমি? কোথায় তোমার মা? আমি আনুর মা।
সাহিলের হাত আলগা হয়ে এল।
‘ আনু? কে আনু? তুমি আমার মা। আর কারো না। বাবা? বাবা কোথায়?
সাহিল সাগর সাহেবকে টেনে নিয়ে যায়। সালেহার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
‘ বাবা। বাবাকে চিনতে পেরেছ মা? বাবা তুমি বলোনা, কিছু বলো। বলো ইনিই আমার মা। আমি খেতাম তার হাতে। তার কোলে ঘুমাতাম। আমাকে গুড্ডু ডাকত মা। মা আমাকে গুড্ডু ডাকো।
সাগর সাহেব মাথা নামিয়ে রাখে। সাগর সাহেবকে দেখে নিজেকে আর ও গুটিয়ে নেয় সালেহা। আনহার পেছনে গিয়ে বলে,
‘ আনু এরা কারা?
আনহা মায়ের দিকে নয় সাগর সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকে সাহিলের দিকে। অনেকক্ষণ পর বলে,
‘ আমার বাবা মাকে খুব মারত। ইনিই কে সে?
এই ছোট্ট সামান্য কথায় বুকে তীব্র ব্যাথার জন্ম দেয় সাগর সাহেবের। বুকে হাত দিয়ে বেঞ্চে বসে পড়ে সাগর সাহেব। জিনিয়া গিয়ে ধরে।
‘ বাবা শরীর খারাপ লাগছে?
সাহিল আবার মায়ের কাছে ছুটে যায়।
‘ মা বাবা ভালো হয়ে গেছে। বাবা তোমাকে অনেক খুঁজেছে মা। অনেক। আমি খুঁজেছি। মা! ও মা!
সালেহা ছুটে যায় আনহার পেছনে। সাহিল ধরতে গেলে আনহা বাঁধা দেয়। ওনি আমার মা। শুধুই আমার।
সাহিল এবার সরাসরি তাকায় আনহার দিকে।
‘ তোমার মা? তোমার মা তো আমার মা। আমার মা তোমার মা। তুমি আমার বোন? মা লুকিয়ে আছ কেন? কিছুতো বলো। ও মা।
সালেহা লুকোয়। আনহাকে ধরে রাখে শক্ত করে। বলে,
‘ আনু এই ছেলেটাকে মা ডাকছে। ও নাকি গুড্ডু। গুড্ডু তো ছোট। এই ছেলে তো অনেক বড়। ওর বউ আছে। আমার গুড্ডু কি করে হয় ও?
সাহিল রেগে চলে যায়। মা তাকে চেনেনা, চিনতে পারেনা। গুড্ডুকে চিনতে পারেনা।
সাহিল চলে গেল বাড়িতে । তরিনা খাতুনকে চিল্লিয়ে ডাকল। বলল,
‘ আমার আর মায়ের সব ছবি দাও গ্রান্ডমা। আমাকে চেনেনা এখন।
তরিনা খাতুন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। সাহিল তার আর মায়ের সব ছবি নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। সালেহাকে একে একে সব দেখায়। ছবিগুলোকে বুকে আগলে ধরে সালেহা।
‘ এটা আমি, এটা গুড্ডু। কিন্তু তুমি তো গুড্ডু নও।
সাহিল চেয়ে থাকে অসহায় হয়ে।
‘ আমিই সেই গুড্ডু। আমি বড় হয়ে গিয়েছি শুধু। কিন্তু আমি তোমার গুড্ডু মা। আমাকে রেখে কি করে চলে যেতে পারলে মা? মেয়েকে আগলে রেখেছ কিন্তু আমাকে ভুলে থেকেছ। কি করে পারলে মা? বিশটা বছর আমি মায়ের স্নেহ, আদর, ভালোবাসা পাইনি। আমি কতদিন তোমায় দেখিনা মা। কতবছর তোমার হাতে খাইনা। কতটা রাত তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমায় না। কতদিন তোমার মুখে গুড্ডু ডাক শুনিনা। আমি তোমাকে রোজ চোখে হারায় মা। রোজ মিস করি। রোজ তোমাকে মনে করি মা। আমি তোমাকে ভালোবাসি মা। তুমি কেন আমায় ভালোবাসো না? কেন মা?
সাগর সাহেব আর দাঁড়ালেন না। আর সইতে পারছেন না তিনি। চলে গেলেন তিনি। সালেহা কথা বলতে ভুলে গেল সাহিলকে এভাবে পাগলামি করতে দেখে। ছবিতে হাত বুলালো। আনহাকে ডেকে বলল,
‘ আনু এটা গুড্ডু। তোর ভাই।
আনহা কাঁদল। সাহিলকে দেখে আর ও জোরে কাঁদল। সাহিল ধরতে এলে নিজেকে গুটিয়ে রাখল
‘ আমি পাপী ভাইডি। আমার জায়্গায় থাকলে কি করতে তুমি? মাকে মরতে দেখতে?
সাহিল ঘনঘন মাথা নাড়ায়।
‘ না, না। আমার মা মরবে না। আমি মরতে দেবনা।
আনহা বসে পড়ল বেঞ্চে।
‘ সব পেয়ে ও এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আজ বাবাকে ফিরে পেল, ভাইকে পেল৷ আর কি লাগে? মায়ের অপারেশন এবার হবেই। আর চিন্তা নেই।
কিন্তু অফিসার? অফিসার কি ক্ষমা করবে তাকে? আন্টি?
সালেহাকে তরিনা খাতুন সহ এসে নিয়ে গেল বাড়িতে। সাহিল মায়ের পাশে বসে বের করল ছোট্টবেলার খেলনাপুতুল। এটা দেখালো। ওটা দেখালো। মায়ের হাতের সেলাই মাথার টুপি দেখালো। কতশত জমানো গল্পের ঝুলি নিয়ে যেন বসল। জিনিয়া না হেসে পারল না। আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে হাসল সে। লোকটা কি বাচ্চা হয়ে গেল নাকি?
দূরে দাঁড়িয়ে আনহা দেখল ভাইয়ের পাগলামি। আর বাবা?
সাগর সাহেব তাকালো না আনহার দিকে। আনহা গিয়ে দাঁড়াল বাবার সামনে। কত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি।
‘ আপনি কি খুশি হয়েছেন নাকি বেজার? নারী বিদ্বেষী লোক আপনি। মেয়েমানুষ সহ্য করতে না পারাটাই স্বাভাবিক।
ছলছলে চোখে তাকালো সাগর সাহেব।
ব্যঙ্গ করে হাসল আনহা।
‘ চলে যাব?
সাগর সাহেব মাথা নাড়ালেন ঘনঘন। আনহা হাসল।
‘ থাকব কেন? আপনার সহ্য হবে?
সাগর সাহেব মাথা নামিয়ে ফেলল।
‘ হবে। যেওনা।
_____________
সারাক্ষণ মায়ের সাথে লেগে থাকল সাহিল। ঘর থেকে বের হওয়ার নাম নেই। সালেহা ও ছেলের পাগলামি দেখে হাসে মিটিমিটি। আনহা বসে থাকে ঘরের এককোনায়। জিনিয়া ডেকে ডেকে খাওয়ায় কিন্তু মুখ খুলে কথা বলেনা। অনুতাপ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আনহাকে। ক্ষমা চাওয়ার জন্য ও জাহেদাকে পাইনি সে। মন ভেঙে দিল সে, আর কি জোড়া লাগাতে পারবে?
হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ল জিনিয়া। বাড়ির খাওয়াদাওয়া কাজকর্ম কিছুই আর চোখ মেলে দেখতে পারল না। তরিনা খাতুনের উপর চাপ পড়ল সব কাজের। তখনি আনহা এসে সাহায্য করল তরিনা খাতুনকে। তরিনা খাতুন তার কপালে চুমু কেটে বলে,
‘ বাবার উপর আর রেগে থাকিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর উপর কোনো অভিযোগ দেইনি জায়িদ। সুযোগ পেলে তার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস তার মায়ের কাছে। বেচারি তোকে অনেক ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল।
আনহা তরিনা খাতুনকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকে। জিনিয়ার দেখাশোনা করে।
দুই তিনদিন পর সন্ধ্যায় হাজির হয় শফিক সাহেব আর জাহেদা। মিষ্টি নিয়ে। সাগর সাহেবের দিকে জিনিয়ার রিপোর্ট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ এবার দাদা হবি শালা। মুখটা আর বাংলা পাঁচের মতো করে রাখিস না। দেখলি তোর বউ মেয়ে কত ভাগ্যবতী। মেয়ে মানেই ঘরে আল্লাহর রহমত। আমি তো মিষ্টি নিয়েই হাজির হলাম, এবার তোর পক্ষ থেকে মিষ্টি খাওয়া।
সাগর সাহেব হাসেন অনেকদিন পর। খুশিতে চোখে জল চলে আসে। সে দাদা হবে?
সবার এত এত মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি দেখে অবাক হলো সাহিল। তার মা আর বউ অসুস্থ, আর সবাই আছে রংঢং নিয়ে। বিরক্তিকর!
সালেহা সাহিলকে ডাকল। বলল,
‘ তোমার ফুটফুটে একটি বাচ্চা হবে দেখো। তোমার মতোই হবে। নইলে আনুর মতো।
সাহিল মায়ের কথা কিছুই বুঝল না।
জিনিয়ার কাছে ছুটল। রেগেমেগে ডাকল,
‘ জিনি? সবাই কি আমাকে নিয়ে মজা করছে?
জিনিয়া বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে হাসল। কাপড় ভাঁজ করে ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বলল,
‘ আপনি কি সার্কাসের জোকার নাকি? যে সবাই আপনাকে দেখে হাসবে।
সাহিল বলল,
‘ তো? এত হাসাহাসি মাতামাতি কিসের? মা কিসব যেন বলল। গ্র্যান্ডমা কিসব যেন বলছে। রাগ লেগেছে। শুনিনি।
জিনিয়া বলল,
‘ আপনার এত রাগগুলোর বাড়ি কই? হুটহুটা এত রাগ কোথাথেকে আসে? তাদের বাড়ির ঠিকানা বলেন তো, পিটিয়ে ধুরধুর করে তাড়িয়ে দিই।
সাহিল তেড়ে এল। জিনিয়ার হাত থেকে কাপড়গুলি কেড়ে নিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে মারল। তার কাছে এনে বলল,
‘ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বললে মাইর খাবে জিনি। সোজাসাপ্টা বলো কি সমস্যা?
জিনিয়া হাসল।
‘ সমস্যা একটাই। আমি আর বাচ্চাদের মতো আবদার করতে পারব না।
সাহিলের ভুরু কুঞ্চন হলো। জিনিয়াকে ছেড়ে দিল। যেতে যেতে বলল,
‘ বাচ্চাকাচ্চা আসলে একটা কথা। এখন লাগবে না।
সাহিল বেরিয়েই যাচ্ছিল। জিনিয়া বলল,
‘ আসছে তো। মিষ্টি কি ওরা এমনি এমনি খাচ্ছে? আপনি তো কোনোকিছুর খোঁজ রাখেন না।
সাহিল ফিরল জিনিয়ার দিকে।
‘ মিথ্যে মিথ্যে বলছ কেন জিনি?
‘ মিথ্যে মিথ্যে বলব কেন শুনি?
সাহিল আগাগোড়া দেখল জিনিয়াকে।
‘ যাহ। তুমি মিথ্যে বলো।
জিনিয়া আর কোনোকিছু বলল না।
সাহিল এগিয়ে এল। পেছনে থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরল জিনিয়াকে। ঘাড়ের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ জিনি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
জিনিয়া হাসল। ধীরে ধীরে সামনে ফিরল। বলল,
‘ আপনি খুশি হননি?
সাহিল নাকে নাক ঘষল তার। নরম গালে নরম স্পর্শ দিল। দীর্ঘসময় পর ছেড়ে বলল,
‘ এত তাড়া কিসের জিনি? এত তাড়াতাড়ি এটা কি করলে তুমি?
জিনিয়া মাথায় হাত দিল। তরিনা খাতুন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। খাবার প্লেট টেবিলের উপর রেখে তরিনা খাতুন বলল,
‘ গুড্ডু এসব কেমন কথা? বোকার মত কথা বলিস।
সাহিল রেগে বলল,
‘ তুমি এখন কেন আসছ? আসছ ভালো কথা, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন?
জিনিয়া হেসে ফেলল। তরিনা খাতুন ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ কতদিন প্রেম দেখিনা।
জিনিয়া আবার ও হাসল। সাহিল ও হাসল। বোকাবোকা হাসি। জিনিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ আপনি হাসছেন কেন গুড্ডু সাহেব?
সাহিল হুট করে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। ছাড়ল না। জিনিয়া তার পিঠে আঙুল চালাতে চালাতে বলল,
‘ কি হয়েছে?
সাহিল কন্ঠস্বর খাদে নামানো। জিনিয়ার কানের কাছে ব্যক্তিগত স্পর্শ আঁকল। বলল,
‘ আমি তোমাকে একটু ও ভালোবাসিনা মেয়ে।
জিনিয়া হেসে উঠল আওয়াজ করে। বলল,
‘ জানি তো। তার প্রমাণ এখনো দিচ্ছেন।
________________
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জায়িদ আসল। ছোট্ট ছোট্ট কাপড়ের বক্স আর আচারের বক্স আনল। জিনিয়াকে দিয়ে বলল,
‘ আচার তোর জন্য। আর কাপড়গুলো আমার,,,,,,
জিনিয়া হেসে ফেলল।
ভাইকে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ তুমি খুব দুষ্টু ভাইয়া।
জায়িদ বোনের মাথায় চুমু দিল।
‘ ভালো থাকিস জুননু।
জিনিয়া শক্ত করে ভাইকে ধরল।
‘ তুমি ও ভালো থেকো ভাইয়া।
জায়িদ বলল,
‘ আচ্ছা।
ড্রয়িংরুমে সবাই থাকলেও দেখা গেলনা আনহাকে। শফিক সাহেব তাকে ডেকে বলল,
‘ আনহা কোথায়? তার তো আর ও বেশি খুশি হওয়ার কথা। ফিপি হচ্ছে সে।
চায়ের ট্রে নিয়ে দৌড়ে এল আনহা। ঠেলে পাঠিয়েছে তরিনা খাতুন। জাহেদা তাকাল না তার দিকে। সবাইকে চা দিল আনহা। সাগর সাহেব নিল। শফিক সাহেব ও নিল। জায়িদকে দিতে গিয়ে থমকে গেল আনহা। জায়িদের চোখে চোখ পড়ায় চোখ নামিয়ে নিল। চোখ নামিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে আসতেই জায়িদ নিয়ে নিল কাপ। ছোট্ট করে বলল,
‘ বিষ দাওনি তো?
আনহা চোখ লুকোলো তাড়াতাড়ি। জাহেদা এসে জায়িদের হাত থেকে কাপ কেড়ে নিল। আনহার হাতে গিয়ে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তুই খাহ চা। তোর হাতের চা না খেলে মরে যাবেনা আমার ছেলে।
ডুকরে কেঁদে উঠে চলে গেল আনহা। সালেহা দূর থেকে দেখল। তার আনুকে ওভাবে বলল কেন?
জায়িদ জাহেদাকে ডেকে নিয়ে গেল।
সবার সামনে ওসব কি আম্মা? এসব কি করছ তুমি?
জাহেদা রেগে উঠে।
‘ চড় খাবি জায়িদ। আমাকে শেখাতে আসবি কখন কি করতে হবে? নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে আবার সামনে আসে কোন সাহসে। আমরা ছাড় দিয়েছি, আর কে দেবে ছাড়? ওই মেয়ের আশেপাশে ও যাবিনা তুই। এই বাড়িতে আজকে এসেছিস ঠিক আছে। আর দরকার নেই। জুননুকে দেখতে ইচ্ছে হলে আমাদের ঘরে নিয়ে যাব।
জায়িদ মাকে জড়িয়ে ধরল।
‘ আমাকে নিয়ে অত চিন্তা করোনা তো আম্মা।
‘ না চিন্তা করব না। তোর আশেপাশেই তোর শত্রু ঘুরঘুর করে। ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকে। কত বিশ্বাস করেছিলাম আমি সেই মেয়েকে। ছেলের বউ বানাব ভেবে রেখেছিলাম।
জায়িদ তাকাতেই থমকে যায় জাহেদা। কথা ঘুরিয়ে নেয়। বলে,
‘ আমার সাথে সাথে থাকবি। ওই মেয়ে যাতে তোর আশেপাশে না ঘেঁষে। খবরদার জায়িদ।
জায়িদ বলল,
‘ ঠিক আছে আম্মা। বুঝতে পেরেছি।
চলবে,