রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-২৫

0
541

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা

[২৫]

জেলার বাইরে গিয়েছিল জায়িদ। ফিরল আছরের আজানের পরপর। ভীষণ ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতেই বাচ্চাদের গলা আওয়াজ কানে এল জায়িদের। গেইট ঠেলে ডুকে পড়ছে দুইটা বাচ্চা। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সাগর সাহেব। তাদের ডুকিয়ে দিয়ে তিনি গেইট টেনে দিল। দুইজনই দৌড়ে এল জায়িদের দিকে। এসেই পা দুটো আঁকড়ে ধরল দুজনে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুননা বলল,
‘ পুলিচ ওফিচা চক্কেত দিও। তালাতালি দিও।
জায়িদ হেসে ফেলল। তাননা ও একিভাবে হাত বাড়িয়ে দিল,
‘ মামা চক্কেত। মুননু মামা ডাববে,নাওলে আল্লাহ মাববে।
মুননা ঠোঁট ফুলালো। তাননার চুল টেনে দিয়ে বলল,
‘ আল্লাহ মাববে কিনো? আদোল কববে।
জায়িদ হেসে ফেলল। দুজনকে দুহাতে কোলে নিয়ে ফেলল। যেতে যেতে বলল,
‘ পকেটে হাত ডুকাও। পেয়ে যাবে। যে আগে দেবে সে পাবে।
দুইজনই পকেটে হাত ডুকানোর তাড়া।
তাননা চকলেট নিয়ে ফেলে বলল,
‘ মুননু চক্কেত আমাল।
মুননা কাঁদোকাঁদো হয়।
‘ তুননু খুব ভালু চিচতার না?
তাননা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। জায়িদ হেসে বলল,
‘ ভাইকে ও দাও। দেখো তোমার হাত থেকে পড়ে যাবে এখন।
জাহেদা জায়িদকে দেখে ছুটে এল।
‘ ওদের কোথায় পেলি আব্বা? কখন ফিরেছিস?
‘ কিছু আগেই ফিরলাম আম্মা। এরা আমাকে দেখে চলে এসেছে। আন্কেল এনে দিয়েছে।
তাননা বলল,
‘ দাদুভাই আনিছে নানু।
মুননা বামহাত দিয়ে চোখ কচলে কচলে জাহেদাকে বলে,
‘ তুননু চক্কেত দেয়না মুননুকে। তুননু ভালু না।
জাহেদা হেসে ফেলে। রান্নাঘরে দৌড়ে যায়। চকলেটের বক্স নিয়ে এসে ঝাঁকায়। বলে,
‘ এগুলো কে খাবে ভাই?
মুননা জায়িদের কোল থেকে নেমে যায়।
জাহেদার কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। জাহেদা কোলে নেয় তাকে। পুরো বক্সটা হাতে নিয়ে মুননা তাননাকে দেখায়।
‘ আমাল ইত্তু ইত্তু চক্কেত আছে বুনু। তুমাল নাই। নাই।
তাননা জায়িদের দিকে তাকায়।
জায়িদ হেসে আদর দিল তাননার ফোলা গালে। তারপর কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ যাও ভাইকে নিয়ে খেলো। মামা ফ্রেশ হয়ে এক্ষুণি আসছি। একসাথে খেলব।
তাননা একগাল হাসল। আঙুল দেখিয়ে জায়িদকে বলল,
‘ আমলা চুড়ুই চুড়ুই খিলব, কিমন?
জায়িদ বলল,
‘ আচ্ছা। আচ্ছা। খেলব।

_____________

সন্ধ্যে তখন। মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিয়ে জায়িদ আর শফিক সাহেব সোফায় বসলেন মাত্র। জাহেদা নামাজ পড়ে চা বসিয়েছে। তাননা মুননা মেঝেতে কালো চাদরের উপর বসে চকলেট ভাগ করছে।
‘ তুননু ইগুলো তুমাল, ইগুলো আমাল।
তাননা বলল,
‘ মুননু তুননকে কমকম দিছে। আল্লাহ মাববে।
মুননা ঠোঁট ফুলালো।
‘ বিশি বিশি দিছি। আল্লাহ আদোল কববে।
শফিক সাহেব ডাক দিল তাননাকে।
‘ আপুমণি নামাজ পড়েছ?
তাননা হকচকিয়ে তাকায় বড় বড় চোখগুলো দিয়ে। হাত নাড়িয়ে বলে,
‘ না না না। আচান দিলে পববো।
শফিক সাহেব বলল,
‘ আজান তো দিছে। আমরা পড়ে ফেলছি।
ধপ করে মেঝেতে শুয়ে পড়ে তাননা। হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে কেঁদে বলে,
‘ নানু বুলেনাই। বুলেনাই।
জায়িদ এসেই কোলে তুলে নেয় তাকে । তারপর মুননার পাশে বসে পড়ে। বলে,
‘ কাযা পড়বে।
তাননার কান্না থেমে যায়। হেসে দেয় সে। মাথা নাড়িয়ে বলে বলে,
‘ আম্মার সাথি পববো। কাচা পববো।
জায়িদ বলল,
‘ হ্যা হ্যা কাযা পড়ে নিয়েন।
তাননা জায়িদের কোল থেকে নেমে মেঝেতে বসে। হাতের পাঁচ আঙুল মেলে বলল,
‘ হাত লাখো ইভাবে।
জায়িদ তার দুহাত রাখল। মুননা ও রাখল। তাননা তার আঙুল দিয়ে টিপে টিপে একটা একটা আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছড়া কাটল।
‘ চুড়ুই চুড়ুই বারোতা
ডিম পিড়েছে তেরোতা
একতা ডিম নষতো
চুড়ুই পাখিল কষতো
অনেক্ক্ষণ বলে যাওয়ার পর ক্লান্ত হলো তাননা। জায়িদ বলল,
‘ আমি বলি?
তাননা মাথা নাড়ল।
জায়িদ ছড়া কাটল।

‘ চড়ুই চড়ুই বারোটা
ডিম পেড়েছে তেরোটা
একটা ডিম নষ্ট
চড়ুই পাখির কষ্ট

তাননা মুননা হাত তালি দিল। জায়িদ দুজনের মাথা টেনে এনে তার মাথার সাথে লাগায়। তারপর দুজনের গাল টেনে চুমা দেয়।
শফিক সাহেব দেখলেন মামা ভাগিনা ভাগিনীর কান্ড। অনেক্ক্ষণ সময় পার হওয়ার পর বলে,
‘ বন্ধুর বাচ্চা নিয়ে খেলছিস জায়িদ। সাহিল তোর সমবয়সী না?
জায়িদ বলল,
‘ তো কি হয়েছে আব্বা?
‘ নিজের কথা ভাব। তোর বউবাচ্চা আন। আর কতদিন এভাবে থাকবি।
জাহেদার প্যানপ্যানানি শুরু হলো।
‘ আমার কপালপোড়া আর কি? এই বয়সে এসেও রান্না করে খাওয়াতে হচ্ছে। কোথায় পায়ের উপর পা তুলে খাব। তা না? তার পছন্দ হয়না কোনো মেয়ে। তার জন্য কোথা থেকে মেয়ে বানাবো আল্লায় জানে। ধুর ধুর ছাই। হবেনা এই ছেলেকে দিয়ে কোনোকিছু। মেয়ে দেখতে বললেই অজুহাত বের হয় তার।
জায়িদ উঠে দাঁড়াল। নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে গেল। শফিক সাহেব বলল,
‘ আমি একটা বললে, তুমি দশটা বাড়ায় বলো জাহেদা। এবার যাও চা উপরে গিয়ে দিয়ে আসো।
তাননা উঠে দাঁড়াল।
‘ আমি দি আছি চা।
জাহেদা হেসে বলল,
‘ হ, গরম চা টা পড়ে কিছু হলে তোমার বাপ আমাকে দেশ ছাড়া করার জন্য আর কি।
আওয়াজ করে হেসে উঠল শফিক সাহেব।
দেখাদেখি মুননা ও।
জাহেদা বলল,
‘ ভাই হাসে কেন?
তাননা ধমক দিল।
‘ বিশিবিশি হাচলে আল্লাহ মাববে মুননু।

______________

দরজায় করাঘাত পড়ল। শফিক সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তার আগে তাননা দৌড়ে গেল। বলল, আমি খুনবো।
শফিক সাহেব খিল খুলে দিলেন। তাননা দরজা টেনে খুলল। দেখল উজ্জ্বল চেহারার যুবক দাঁড়িয়ে আছে। সালাম দিল শফিক সাহেবকে। জড়িয়ে ধরল ডুকে। জাহেদা ও দৌড়ে এল। জাহেদাকে ও সালাম জানাল নাহিল। শফিক সাহেব হেসে বলল,
‘ কি ব্যাপার নাহিলসাহেব? হঠাৎ? না জানিয়ে এলে মনে হচ্ছে?
নাহিল হেসে বলল,
‘ জ্বি আন্কেল। না জানিয়েই এসেছি। সারপ্রাইজ দেব ভেবেছি। বাসায় শুধু বড়আম্মা, বড়আব্বা, গ্রান্ডমা আর জিনিয়া। বাবা ও নেই। বড়ভাই ও নেই। বাবুরা ও নেই।
মুননা কোমরে হাত দিল।
‘ আমলা বাবু নই। তুমি বাবু।
তাননা কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
‘ তুমি কি?
নাহিল হাঁটুগেড়ে বসল তাননার কাছে।
বলল,
‘ আমি কি নাকি? আমি কে?
শফিক সাহেব হেসে বলল,
‘ কে জিজ্ঞেস করেছে মনেহয়?
তাননা ভুরু কুঁচকে বলল,
‘ লাপপট মুন্টু?
হাসল নাহিল। তাননাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
আদর দিয়ে বলল,
‘ চিনেছ ল্যাপটপ মুন্টুকে?
তাননা হেসে বলল,
‘ চিনি চিনি।
নাহিল হেঁটে হেঁটে মুননার কাছে গেল। মুননাকে কোলে নিয়ে ফেলল৷
জাহেদা বলল,
‘ দুইজনকে কোলে নিয়েছ। পড়ে যাবে তো?
নাহিল বলল,
‘ পড়বেনা। আমি শক্ত করে ধরেছি। ওদের নিয়ে যাচ্ছি আন্টি।
মুননা নাহিলের গলা আঁকড়ে ধরল। বলল,
‘ মুন্টু তুমি পিলেনে চলে ইসেছ ?
নাহিল তার গালে টুপ করে চুমু বসিয়ে বলল,
‘ হ্যা প্লেনে চড়ে এসেছি। তুমি ও চড়বে বাবাই ?
মুননা মাথা নাড়ায়।
‘ হে চলবো।
তাননা বলল,
‘ আমি ও চলবো চাচ্চু।
নাহিল বলল,
‘ আচ্ছা চড়াবো। আন্টি জায়িদ ভাই কোথায়? আসতে বলো তো। আমি আসছি।
জাহেদা বলল,
‘ আচ্ছা।
দুজনকে নিয়ে চলে গেল নাহিল। জায়িদ নেমে এল। তাননা মুননাকে না দেখে বলল
‘ কোথায় ওরা?
জাহেদা বলল,
‘ ওদের চাচা আসছে। নিয়ে গেছে।
জায়িদ অবাকসুরে বলল,
‘ নাহিল? কখন এসেছে?
জাহেদা বলল,
‘ এক্ষুণি। তোকে যেতে বলেছে।
জায়িদ মাথা দুলালো।
‘ আচ্ছা। আমি যাই। দরজা বন্ধ করে দিও।
জাহেদা মাথা নাড়াল।

_________

নাহিল আসার খবর সাহিলকে জানাল না জিনিয়া। সারপ্রাইজ দেবে। জায়িদ এসে নাহিলকে দেখে চরম অবাক হলো।
‘ তুমি তো দিনদিন তুমি হিরো হচ্ছো ভাই?
নাহিল হেসে ফেলল। জায়িদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল,
‘ শুধু পুলিশরা হিরো হলে কি চলে? আমাদের ও তো শখ জাগে।
অনেক গল্পগুজব চলল তাদের। সালেহা বেগম নাহিলকে দেখে ঝরঝরে কেঁদে। পুরোনো ব্যাথা জেগে উঠছে। আনহার কথা মনে পড়তেই তিনি কেঁদে সারা হন। নাহিল বলল,
‘ তোমার মনে সে এখনো বেঁচে আছে বড়আম্মা। মরেনি সে। আমার আফসোস কি জানো? বোন হিসেবে আমি তারসাথে একটু সময় কাটানোর সুযোগ পাইনি।
সালেহা জায়িদের কাছে গিয়ে বলে,
‘ তুমি তো বলেছিলে বাবা, আমার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দেবে। দিলেনা তো?
জায়িদ পড়ে গেল অস্বস্তিতে। কি উত্তর দেবে সে?

সাহিল এল প্রায় রাত দশটার দিকে। নাহিল গিয়ে দরজা খুলল। নাহিলকে দেখে চোখ বড় বড় হলো সাহিলের। চোখের কোণা চকচক করে উঠলে চোয়াল ফুলে উঠল মুহূর্তে। জিনিয়া দৌড়ে গেল। হাসিমুখে বলল,
‘ আপনার ভাই ফিরেছে। কেমন সারপ্রাইজ পেলেন?
সাহিল মাথা নামিয়ে কোনো টু শব্দ করল না। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নাহিল ধরে ফেলল তাকে। আষ্টেপৃষ্টে ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। সাহিল ছাড়াছাড়ি করতে করতে বলল,
‘ ছাড়। ছাড় আমায়।
নাহিল ছাড়ল না। বলল,
‘ সরি ভাই। মাফ করো আমায়। এবার থেকে তুমি যা বলবে তাই করব আমি। আবার সরি বলছি ভাই।
সাহিলের রাগ কমল না। দূরে ঠেলল নাহিলকে। নাহিলের মুখ মলিন হলো।
তাননা দৌড়ে এল।
গালে আঙুল দিয়ে হেলিয়েদুলিয়ে বলল,
‘ কুথা না বুললে আল্লাহ মাববে আববা।
হেসে উঠল সবাই। নাহিল ও। সাহিলের হাসি আসলেও তা দেখাল না সেটা। তাননা গিয়ে সাহিলের আঙুল ধরল। নাহিলের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়ে দিল। মুননা দৌড়ে এল । দুই ভাইয়ের হাত মিলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তুমলা বুন্ধু হয়ে যাও। আমাল আল তুননুল মুতো। আমলা বুন্ধু।
তাননা জিভে কামড় দিল।
‘ আমলা ভেইবুন। বুন্ধু না। বুন্ধু বুললে আল্লাহ মাববে। না আম্মা?
জিনিয়া মাথা নেড়ে বলল,
‘ মাববে না।
তাননা দৌড়ে গেল জিনিয়ার কাছে। জিনিয়ার ওড়নায় টান দিয়ে বলল,
‘ তুমাকে মাববো। মিরে দিব।
জিনিয়া হাসল। তাননার গাল টেনে দিয়ে বলল,
‘ তুমাকে আমি মাববো।
তাননা কাঁদোকাঁদো হয়ে সাহিলের কাছে যায়।
‘ আববাল বুউ মিরেছে।
সাহিল বলে,
‘ মাইরের অভাব।
জিনিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করে মিনমিন করে বলে,
‘ মারিয়েন তো সাহস থাকলে।
সাহিল চলে যেতেই নাহিল আবার তার হাত টেনে ধরে।
‘ ভাই কথা বলবেনা?
সাহিল হাত ছাড়িয়ে নিল।
‘ ছাড়। তোর সাথে কিসের কথা? ছাড়।
সালেহা বলল,
‘ এমন করছিস কেন গুড্ডু? ছোট ভাই তো। মাফ কর। আর যাবেনা।
সাহিল তাকাল নাহিলের দিকে। নাহিল ঝাপটে পড়ল। সাহিল হাত রাখল নাহিলের মাথায়। বলল,
” মাফ করিনি কিন্তু।
নাহিল হাসল। ভাইকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ভালোবাসো। মাফ করতে হবেনা।
‘ আমি ভালোবাসিনা তোর মতো স্বার্থপরকে।
নাহিল হাসল শুধু।
নাতাশা বেগম কিভাবে যেন খবর পেয়ে গেলেন। গাড়ি থেকে নেমে কোনোমতে ডুকে পড়লেন আহমেদ বাড়িতে।
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন দরজার কাছে। তাননা মুননার সাথে খেলছিল নাহিল আর জায়িদ।
নাতাশা বেগমকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে নাহিল। নাতাশা হাউমাউ করে কেঁদে দেয় ছেলেকে দেখে। নাহিলের মনে পড়ে অতীত। মুখ ফিরিয়ে রাখে সে। সালেহা ধরে আনে নাতাশাকে। বসায়। পানি খাওয়ায়। নাজমুল সাহেব ও আসেন। নাহিল কারো সাথে কথা বলল না। বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে।

___________

মাত্রই সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়েছে প্রমিতা চ্যাটার্জি। চিন্তায় মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। মেয়েটার কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না।

শিঁস বাজাতে বাজাতে এল প্রণয়। মাকে আনমনা দেখে ডাক দিল,
‘ মাদার ?
হকচকিয়ে তাকাল প্রমিতা। ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ সারাক্ষণ এত চিল্লাচিল্লি কেন প্রণয়? ভালো লাগেনা। আওয়াজ করে হাসল প্রণয়।
‘ পূজারিনীর আবার কি হয়েছে? মাথায় জোরে চড় বসিয়ে এসেছি। ভীতুর ডিম একটা। বেয়াদব মেয়ে।
হুংকার ছাড়ল প্রমিতা।
‘ মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছিস তুই? অসুস্থ ও।
শিস বাজাতে বাজাতে হাঁটল প্রণয়। পকেটে হাত রেখে দুলে দুলে হেঁটে যেতে যেতে বলল,
‘ মেরে মেরে সুস্থ করব।
প্রমিতা মাথা নাড়িয়ে গেল পূজার কাছে। দরজা ঠেলে ডুকল মেয়ের রুমে। পূজার কোলে ছোট্ট খরগোশের বাচ্চা। বাচ্চাটির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে পূজা তাকাল মায়ের দিকে। মাথার দুপাশে বাঁধা বিণুনি। পড়নে ঢিলে টিশার্ট। পড়নে স্কার্ট। মিনমিন করে অভিযোগ শোনাল পূজা ।
‘ মা, মা দাভাই আমাকে মেরেছে। চুল টেনে দিয়েছে। তারপর, তারপর। তারপর কি করেছে?
প্রমিতা জিজ্ঞেস করল,
‘ তারপর কি করেছে? আবার ভুলে গিয়েছ?
পূজা ঘনঘন মাথা নাড়ায়। আলাভোলা হয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
‘ তারপর?
কোলে থাকা নিপ্পি লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। পূজা নিপ্পির পিছু পিছু দৌড়ে।
‘ নিপ্পি কই যাও। পূজার কাছে এসো। নিপ্পি?

প্রমিতা বাড়ির ডক্টরকে ফোন করে। ডক্টর ফোন রিসিভ করে। প্রমিতা বলল,
‘ ওর কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছিনা ডক্টর। কি হচ্ছে এসব? কিছুদিন আগে তো ভুলে যাওয়ার রোগটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার ভুলতে শুরু করেছে।
ডক্টর বলেন,
‘ পূজারিণীকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন। জায়গা বদল করুন। ও যাতে সবসময় হাসিখুশি থাকে সেই খেয়াল রাখবেন। ভুলে যাওয়ার রোগটা কমে এলে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রমিতা ভেবে পেলনা কোথায় যাওয়া যায় পূজাকে নিয়ে?

_____

ফোন বাজল পূজার ঘরে। দৌড়ে ঘরে এল পূজা। ফোন ধরে লাউডস্পিকার করল। ওপাশ থেকে প্রণয়ের গলার আওয়াজ ভেসে এল।
‘ পূজারিনী তুই কি খাবি। বলতো? তাড়াতাড়ি নাম বল। তাড়াতাড়ি।
পূজা মাথার একপাশের বেণী ধরে টানে। অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে বলে,
‘ আইসক্রিম খাব। আনবে?
প্রণয় বলল,
‘ কি খাবি? জোরে বল শুনতে পাইনি?

পূজা মাথা চুলকালো।
‘ কি খাব? কি খাব? মনে পড়ছেনা? কি খাব?
প্রণয় বলল,
‘ তুই কার সাথে কথা বলছিস?
‘ ফোনে কথা বলছি।
‘ কার সাথে কথা বলছিস গাধী?
‘ তোমার সাথে।
‘ আমি কে? আমার নাম কি বলতো?
পূজা প্রমিতার কাছে ছুটে যায়। ফোন দেখিয়ে মিনমিন করে বলে,
‘ এই ছেলেটার নাম কি মা? এই ছেলেটা? দাভাইয়ের নাম? কি? জানো?
প্রমিতা বলে,
‘ প্রণয়। প্রণয় চ্যাটার্জি। সব কি করে ভুলে যাচ্ছ মা?
পূজা মাথা চুলকাতে চুলকাতে হাঁটে। ফোনে বলে,
‘ তোমার নাম প্রণয়। প্রণয় চ্যাটার্জি। আমি পূজারিনী চ্যাটার্জি।
প্রণয় আওয়াজ করে হাসল। বলল,
‘ ভ্যাগিস চিনতে পেরেছিস। নইলে গিয়ে দিতাম দুটো। গাধীর ছা গাধী।
পূজা নিপ্পিকে কোলে তুলে নেয়। বলে,
‘ তুমি জানো। আমরা বেড়াতে যাব। ওই দূরে। তুমি যাবে?
প্রণয় বলল,
‘ শুনতে পাইনি। কি বললি?

পূজা হেঁটে হেঁটে মাথা চুলকায়।
‘ ভুলে গেছি। মনে পড়লে বলব। কেমন?
প্রণয় রেগে বলল,
‘ যাহ। তোর কথা শোনার জন্য আমি বসে নেই। গাধী। রাখ। ফোন রাখ।
পূজা বলল,
‘ আচ্ছা রাখছি।

চলবে,
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here