রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-২৮

0
520

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা

[২৮]

ভরদুপুর তখন। মাথার উপর খাঁ খাঁ সোনালি রৌদ্দুর। রাস্তা দিয়ে হেঁটে ক্লান্ত পথিক গন্তব্যে ফিরছে। রিকশাচালক খালি রিকশা চালিয়ে ঘরে ফিরছে। তৃষ্ণার্ত কুকুর দোকানের সামনে জিহবা বের করে বসে রয়েছে।
কপালের পাশ বেয়ে ঘাম ছুটল জায়িদের। গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে বাড়ি এসে পৌঁছালো সে।
বাড়িতে ডুকতেই জাহেদাকে কিছু বলতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আম্মা মৃত মানুষ আবার জীবিত হয় কি করে? আচ্ছা আম্মা মানুষের চেহারার কি হুবহু মিল হয়?
জাহেদা জায়িদের কথার আগাগোড়া কিছু না বুঝে বলল,
‘ অফিসার বাপ আমার। তুই আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর খাবার মুখে দে। তারপর প্রশ্ন করিস।
জায়িদ জাহেদাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মা। মা প্লিজ। আমার উত্তর দাও।
জাহেদা তেঁতে উঠে বলল,
‘ মানুষের চেহারা মানুষের হয়। হবেনা কেন? সাতজনের হুবহু চেহারার মানুষ হয়। শুনেছিলাম। কতটুকু সত্য জানিনা। সর দেখি।
চেহারা মলিন হলো জায়িদের।
‘ কথাটা সত্য আম্মা। আমি আজকে দেখেছি একজনকে। একদম পুরোপুরি একই চেহারা। কিন্তু অন্য সবকিছু মিল নেই। যেমন ড্রেসআপ, কথা বলার ভঙ্গি, হাসি, তাকানো এগুলো কিছু মিল নেই। কিন্তু চেহারা মিল। তার উপর আবার সনাতন ধর্মের। এ কি করে হয় আম্মা? এতটা ও মিল?
জাহেদা চলে গেলেন।
‘ এই ছেলেটা পাগল হয়েছে? পুলিশ অফিসার পাগল হয়ে গেছে ভাবতেই জাহেদার হাসি পেল।
জায়িদ বলল
‘ না, আমিই ভুল। মানুষের চেহারা মিল থাকে। হুবহু মিল থাকে। একদম হুবহু।
জায়িদ ভাবল
‘ ইশশ মিঃ চ্যাটার্জি, আমাকে কি মনে করে ফেলল কে জানে? ওনার বাসা নিশ্চয়ই ওখানে আশপাশেই হবে। গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতে হবে ওনার মেয়ের কি অবস্থা?
ইনস্পেকটর ইশতিয়াক দায়িত্বহীনের মতো কাজ কি করে করল? মানায় আদৌ?

_____________

ঠান্ডা মোলায়েম বাতাস বইছে। ফুরফুরে ফুরফুরে লাগছে চারপাশ। পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে কমলা রঙের সূর্য। লোহার ঘোড়ার উপর বসে চড়ল তাননা মুননা। কি খুশি উপচে পড়ছে দুজনের চোখেমুখে। ভাইবোনের খিলখিল হাসিতে মুখরিত পরিবেশ। নাহিল চেয়ে রইল দুজনকে। ছোট্ট পুতুলের মতো বাচ্চা মেয়েটাকে ডেকে বলল,
‘ মা চড়া হয়েছে?
তাননা তাকাল। হাত নেড়ে বলল,
‘ আল ইট্টু চববো।
নাহিল মুননাকে ডাকল,
‘ বাবাই তুমি ও?
মুননা নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ তুমাকে মিরে দিবো মুন্টু। ইতু ডাকাডিকি কিনো?
নাহিল হেসে উঠল। বলল,
‘ আচ্ছা, ঠিক আছে চড়েন।
নাহিল দূরে গিয়ে বসল একটি বেঞ্চে। সাথে সাথে এল সাহিলের ফোন। নাহিল ফোন তুলল। সাহিল বলল,
‘ ভাই অনেক হয়েছে। তাননা মুননাকে নিয়ে আয় বাসায়। সময় হলে একটু হসপিটালে আসিস।
নাহিল বলল,
‘ হসপিটালে? কেন? কি হয়েছে তোমার?
সাহিল ব্যস্ত জবাব দিল।
‘ কিচ্ছু হয়নি আমার। জোরাজুরি নেই, সময় হলে আসিস।
সাহিল ফোন রাখল। নাহিল তাননা মুননাকে ডাকল,
‘ তুননুমুননু চলে আসো আপনারা। আপনাদের আব্বা ফোন দিয়েছে।
মুননা মাথা বাড়ি লাগাল লোহার রডে। বলল,
‘ উফফ গুড্ডু দিসতাব করে কিনো? উফফ আমি মুরে যাব।
নাহিল হাসল।
‘ মরবেন কেন? এগুলো কি বলতে আছে? আপনার আম্মা শুনলে মারবে।
মুননা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ আমি মাববো জুননুকে।
তাননা বলল,
‘ চাচ্চু আল ইট্টু তাকিনা?
নাহিল বলল,
‘ না না আর না। অন্য একদিন আসব আমরা। ঠিকআছে?
তাননা নেমে এল। নাহিলের আঙুল ধরল। কামড় বসিয়ে বলল,
‘ চাচ্চুকে আল্লাহ মাববে।
নাহিল হাসল। দুজনকে দুইগালে আদর দিয়ে বলল,
‘ বাসায় গিয়ে বক্সিং চলবে। কেমন?
মুননা ফোকলা হাসি দিয়ে বলল,
‘ কিমন?
তাননা মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ না আমি বিথা পাবো।
নাহিল বলল,
‘ আচ্ছা, দেখবেন। আমি আর মুননা ডিসুম ডিসুম খেলব।
মুননা নাহিলের নাক বরাবর হাতের মুঠি নিয়ে গিয়ে বলল,
‘ মুননু ইভাবে মাববে মুনটুকে।
নাহিল নাক ধরে বলল,
‘ উফ ব্যাথা পেয়েছি। কান্না পাচ্ছে এখন।

ছোট্ট পাঁচমাসের বাচ্চাটির নিউমোনিয়া এসেছে। শ্বাস নিতে ভারী কষ্ট হচ্ছে। শফিক সাহেব জানাল মায়ের অবহেলার কারণে হয়ত এমনটা হয়েছে। বাচ্চার মাকে ঠান্ডা জিনিস থেকে একটু দূরে দূরে থাকতে হয়। বাচ্চাটির বুক উঠানামা করছে ঘনঘন। মায়ের আহাজারি শোনা যাচ্ছে। সাহিল কোনোমতে স্থির থাকতে পারছেনা কিছুতেই। এই বাচ্চাটি তার মায়ের একমাত্র সম্বল। বাচ্চাটি না বাঁচলে মরে যাবে তার মা।
গুনগুন করে কান্নার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল পুরো হসপিটালের আনাচে কানাচে। সাহিল নিজেকে দমাতে পারল না। এত কষ্ট হচ্ছে কেন?
মেয়েটির সামনে গিয়ে বসে সাহিল। মেয়েটির দুগাল মুছে দিয়ে বলে,
‘ কাঁদছিস কেন তুই? কেন কাঁদছিস? দেখ এভাবে কাঁদলে তোর বাচ্চার সাথে তুই ও অসুস্থ হয়ে পড়বি। কাঁদবিনা একদম। আমাকে তো কখনোই আপন ভাবলিনা। এইবার অন্তত ভরসা রাখতে পারিস। তোর বাচ্চাকে আমি সুস্থ করে তোর হাতে দেব। দেখবি সে সুস্থ হয়ে উঠবে শীঘ্রই।
সাহিল মেয়েটিকে হাত বুলিয়ে দিল মাথায়। জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ সোরা খুব মারব এবার। একদম কাঁদবিনা। খাবার এনেছি। কিছু মুখে নে।
সোরার গলা ক্ষীণ। ভাঙাভাঙা গলায় সে বলে,
‘ বড়দাভাই আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চা তার বাবার মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবেনা তো? আমি এত এত নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার বাচ্চা যদি চলে যায় তাহলে আমি কি নিয়ে থাকব?
সাহিল এবার চাপাস্বরে ধমক দিল।
‘ সোরা উল্টাপাল্টা না ভাবতে বলেছি। কিচ্ছু হবেনা। সাহিলের কাঁধে মাথা রেখে পড়ে থাকে সোরা। চোখমুখ ফুলে বেহাল অবস্থা। গায়ের সাদা রঙের শাড়িটা ধূসর রঙ ধারণ করেছে। সাহিল সোরার মাথায় ঘনঘন হাত বুলিয়ে দিল। জিনিয়াকে ইশারা করল খাবারের প্যাকেটটি নিয়ে আসতে। চামচে করে দুই চামচ বিড়িয়ানি খাইয়ে দিতেই ডুকরে কেঁদে উঠল সোরা। গাল বেয়ে গড়াল নোনাজল। কেঁদে ভাসিয়ে দিল সে। খাবার নামল না গলা বেয়ে। জিনিয়ার দুচোখ টলমল করে উঠল। জিনিয়া সোরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ সোরা দুটো হলেও খেয়ে নাও। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তোমার বাচ্চাকে কে দেখবে বলোতো?
সোরা চোখ মুছে স্বাভাবিক হতে চাইল কিন্তু পারল না। আবার ও কেঁদে দিল এলোমেলো সুরে। হসপিটালের করিডোরে বসে থাকা সামাদ মিয়া কপাল থেকে হাত সরালেন এবার। বললেন,
‘ তুই এভাবে কাঁদলে খারাপ লাগে মা। চারপাশ অন্ধকার দেখায়। আর কাঁদিস না। ভালোলাগেনা আর। তোর কপালটা পোড়া। সুখ সয়না তোর কপালে।
সোরা আর ও জোরে কেঁদে উঠল। সাহিল তাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। বলল
‘ সোরা মাইর খাবি? তুই এরকম করলে আমি কিন্তু এক্ষুণি চলে যাব এখান থেকে।
সোরা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। জিনিয়া দু তিন চামচ খাইয়ে দিল তাকে। পানি খাইয়ে দিল। তার কাঁধে সোরার মাথা রাখল। সাহিলের ফোনে কল আসল। কল তুলল সাহিল।
‘ তাননা মুননা কোথায়?
নাহিল বলল,
‘ এইতো ওরা বাসায় জিনিয়াকে না দেখে কান্না করছে ভাই। কি করব?
সাহিল বলল,
‘ নিয়ে আয় হসপিটালে। সবাই একসাথে ফিরব।
নাহিল বলল,
‘ আচ্ছা ভাই।
সাহিল বলল,
‘ আসার সময় একটা শাড়ি আনিস গ্রান্ডমার কাছ থেকে। সাদা টাইপের।
নাহিল বলল,
‘ আচ্ছা।
‘ তোকে হসপিটালে আসতে হবেনা। গাড়ি থেকে নেমে আমাকে ফোন করিস আমি গিয়ে নিয়ে আসব। তুই আবার বাড়িতে চলে যেতে পারবি ঠিক আছে?
নাহিল বলল,
‘ আচ্ছা আচ্ছা।

জিনিয়ার কাঁধে পড়ে থাকা সোরার কানে এল ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের আওয়াজ। তাননা মুননা দৌড়ে এসে জিনিয়ার পা দুটো জড়িয়ে ধরল। ডাকল,
‘ আম্মা আমলা আসি গেছি।
জিনিয়া বলল,
‘ অনেক ঘুরেছেন?
দুজনই মাথা দুলালো
‘ হ্যা।
মুননা তার হাতের চকলেট সোরার দিকে বাড়িয়ে দিল।
‘ তুমি কাঁদু কিনো? কি মেলেছে তুমাকে?
সোরা তাকিয়ে থাকল অপলক। কি আদুরে বাচ্চা। তার বাচ্চাটা বাঁচবে তো? স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতিটুকু আগলে রাখতে পারবে তো সোরা?
তাননা বলল,
‘ তুমি চকলেত খাবে? নাও চকলেত খাও। আল কানেনা। কানেনা। কানলে আল্লাহ মাববে।
জিনিয়া মৃদু মৃদু হাসল। সোরাকে ধরা অবস্থায় মাথা নিচু করে আদর দিল দুজনকে। দুজন মায়ের গাল পেয়ে ভিজিয়ে দিল। জিনিয়া বলল,
‘ মিস ইউ।
দুজন একগাল হাসল। বলল,
‘ মিচ ইউ।
সোরা পড়ে রইল জিনিয়ার কাঁধে। চারপাশ এত ধূসর কেন? কেন এত রঙহীন, বর্ণহীন? কেন?
কত কত আশা, কত স্বপ্ন দেখিয়েছিল না তাকে মানুষটা? তাহলে? তাহলে এই চরম নিষ্ঠুর পৃথিবীতে সোরাকে একা রেখে কি করে চলে যেতে পারল মানুষটা? সোরার কথা একবার ও ভাবল না। ভাবল না।
যে মানুষটা প্রতিটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে সোরার কান ঝালাপালা করত। পুরো ঘর মাথায় তুলে রাখত, সেই মানুষটা কেন হারিয়ে গেল অনায়াসে? পাগলের মতো ভালোবাসা মানুষটাকে কেন পাগলের মতো আর ভালোবাসার সুযোগ হয়ে উঠল না । সোরা কি করে কাটাবে বাকি জীবন? একসাথে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত কাটানোর কথা ছিলনা লোকটার সাথে? একসাথে পথ চলার কথা ছিল। একসাথে রাতের ঝলমলে আকাশের জ্যোৎস্না দেখার ছিল। মাঝনদীতে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কোথায় সেই মানুষটা? কানে কানে এসে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসি বলে না কেন? কেন বলেনা? কেন আচমকা দৌড়ে এসে বুকের সাথে পিষ্ট করে বলেনা,
‘ সোরাণী আমি আছি তো। কোথাও যায়নি। আমি কি সোরাণীকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি?
সোরা নীরবে অন্তরালে ডাকল,
‘ এই মাস্টার? কোথায় আপনি? ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। আপনাকে খুব খুব মিস করছি আমি। আপনার সোরাণী ভীষণ কষ্টে আছে। ভীষণ। যদি আসেন আর ও একবার বলব ভালোবাসি। আসুন না। তাড়াতাড়ি আসুন। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।
শফিক সাহেব বের হয়ে আসলেন কেবিন থেকে। জিনিয়াকে ডেকে বললেন,
‘ জুনু বাচ্চাকে ফিডিং করাতে হবে।
জিনিয়া বলল,
‘ জ্বি আব্বা সোরাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি।
জিনিয়া কাঁধে পড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদা সোরার মাথা তুলল। বলল
‘ সোরা চলো, তোমার বাচ্চার খিদে পেয়েছে
চলো।
সোরা উঠার চেষ্টা করল। জিনিয়াকে ভর করে উঠে দাঁড়াল।

নাহিলের পিছু পিছু সাহিল ছুটে এল।
‘ তাননা মুননাকে আমি এনে দিই নাহিল। সেখানে তুই কোথায় যাচ্ছিস?
নাহিল বলল,
‘ তুমি আমার কাছ থেকে কি লুকোচ্ছো ভাই? আমি গিয়ে দেখব। তাননা? মুননা?
সাহিল দাঁড়িয়ে পড়ল। আর এগোলো না। কিছুদূর গিয়ে নাহিল ও আপনাআপনি থমকে গেল। স্থির পা দুটো হঠাৎ টলমল করে উঠল। কাঁপল ভীষণ। বুকের ভেতর অস্বস্তি বাড়ল। চোখের কোণা জ্বলল। হাত পায়ে ঘাম ছুটল। গলার কাছে এসে কি যেন আটকে যাওয়ার মতো মনে হলো। অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় বুকের বা পাশ খামচে ধরল নাহিল। তাড়াতাড়ি সরে পড়ল। নিজেকে আড়াল করে নিল। খালি কেবিনে ডুকে পড়ে দরজা বন্ধ করল। সাহিল আর এগোলো না। থাকুক
পরে বের হয়ে আসবে। নার্স দৌড়ে যেতেই সাহিল আটকালো। বলল,
‘ নিজে নিজে বের হয়ে আসবে। ওকে ডিস্টার্ব করার দরকার নেই।
নার্স চলে গেল।
নাহিল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। নিজের হাতে থাকা সাদা শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বুকের জ্বালাপোড়া আর ও ভীষণ রকম বাড়ল। গলার কাছে শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। সাদা শাড়িটা সে সোরার জন্য এনেছে? ভাই সোরার জন্য সাদা শাড়ি আনতে বলেছে? তার হাতে সোরার জন্য লাল শাড়ি মানাত। আজ সেই হাতে সাদা শাড়ি?
নাহিল মানতে পারল না এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়ম। মানতে পারল না। নাহিল তো বেশিকিছু চায়নি। সব মেনে নিয়েছিল। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু? কিন্তু যা্কে ভালোরাখার জন্য মেনে নিয়েছিল সে ভালো নেই কেন? যার সাথে সোরাকে দেখে নাহিল দূরে দাঁড়িয়েছে দেখে চলে এসেছিল সে কেন ছেড়ে চলে গিয়েছে আবার? সোরা কেন ভালো নেই? সোরার গায়ে সাদা শাড়ি মানায় না। মানায় না।

সাহিলের নরম ডাকে দরজা খুলে বের হয়ে এল নাহিল। চোখ উপরে তুলল না। মিনমিন করে বলল,
‘ ভাই আমি আসি।
সাহিল বলল,
‘ হ্যা। তাননা মুননাকে ও নিয়ে যা। দুপুরে ঘুমোয়নি তো তাই দুজনের চোখে ঘুম দেখা যাচ্ছে। ওই দেখ ওখানে বেঞ্চের উপর শুয়ে পড়েছে।
নাহিল বলল,
‘ হ্যা নিয়ে যাচ্ছি।
সাহিল বলল,
‘ ওদের নিয়ে চলে যাহ। আমার একটু কাজ আছে ওদিকে।
নাহিল তাননা মুননাকে নামাল। বলল,
‘ বাবাই চলো আমরা বাসায় যায়।
দুজনই চোখ কচলালো।
মুননা বলল,
‘ মুন্টু তুমাল চোখ নাল কিনো?
নাহিল বলল
‘ ওই না, ওসব কিছুনা।
দুজনকে নিয়ে পা বাড়াল নাহিল। পিছুটানে আবার ফিরে তাকাল পাশের কেবিনের আধখোলা কাচ দিয়ে সাদা শাড়ি পরিহিতা মেয়েটিকে। আর ও একদফা চমকালো, থমকালো বিস্মিত হলো নাহিল সাদা শাড়ি পরিহিত মেয়েটির কোলে থাকা বাচ্চা দেখে। বাচ্চার গালে কপালে মেয়েটিকে চুম্বন বসাতে দেখে। তাননা মুননার হাত খসে পড়ে গেল নাহিলের হাত থেকে। ঠোঁটজোড়া তার তরতর করে কাঁপল। তাননা মুননাকে ফেলে চলে গেল নাহিল। দাঁড়াল না একমুহূর্ত। সোরা কেন আবার তার সামনে এল? কেন এল? বারণ করেছিল সে। সোরা তার বারণ শোনেনি। কেন শোনেনি? কেন?

_____________

জায়িদ তার পরের দিন খোঁজ নিল মিঃ চ্যাটার্জি কোন বাসায় উঠেছে। একটা লোক বাড়িটা দেখিয়ে দিল। সেই বাড়ির গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারতেই জায়িদের ইগোতে লাগল।
‘ তাকে কি এসবে মানায়?
ফোনে কথা বলতে বলতে প্রণয় আর মিঃ চ্যাটার্জি গেইট খুলে বের হলেন। জায়িদকে দেখে হেসে বললেন,
‘ আরেহ অফিসার আপনি?
জায়িদ সৌজন্যেতা রক্ষার্থে হাসল। বলল,
‘ হ্যা। আপনার মেয়ের খোঁজ নিতে এসেছি। কেমন আছে এখন?
মিঃ চ্যাটার্জি বললেন,
‘ ভালো আছে। আসলে পুলিশ হোক কিংবা যেকোনো লোক। আমাদের ছাড়া আর কাউকে দেখলেই পূজা ওরকম ভায়োলেট হয়ে যায়। ডক্টর দেখলে ও। জায়িদ বলল। ওহ আচ্ছা।
মিঃ চ্যাটার্জি বললেন,
‘ আসুন। পরিচিত সুবাদে এক কাপ চা খাবেন। রিকুয়েষ্ট।
জায়িদ ঘড়ি দেখে বলল,
‘ অন্য একদিন।
মিঃ চ্যাটার্জি শুনলেন না। জায়িদকে যেতে হলো জোরাজুরিতে। জায়িদ বলল,
‘ কাল আমি ওভাবে চলে যাওয়াটাকে কিছু মনে করবেন না। ইমার্জেন্সি ছিল তো একটু।
মিঃ চ্যাটার্জি বাড়িতে ডুকে পড়ে বললেন,
‘ না না কিছু মনে করিনি।
জায়িদকে বসতে বলল সোফায়।
জায়িদ সোফায় বসে এদিকওদিক তাকাল।
খরগোশ কোলে নিয়ে এগিয়ে আসা মেয়েটিকে দেখে কাশি উঠে যায় জায়িদের। পূজা ভড়কে যায়। চোখ বড়বড় করে জায়িদকে দেখে। দৌড়ে চলে যায়। আবার দৌড়ে আসে। তখন কোলে নিপ্পি ছিলনা। নিপ্পির বদলে হাতে একটা ঝাড়ু। জায়িদকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইশারা করে বুঝালো,
‘ এটা দিয়ে মারব। আমাদের ঘরে এসেছ কেন? একদম মেরে লাল করে দেব।
জায়িদ চোখ বড় বড় করে তাকালো।
‘ এত বড় অপমান? এত বড়?
প্রণয় এসে দেখল পূজাকে। বলল,
‘ এই পূজারিণী তোর হাতে ঝাড়ু কেনরে?
পূজা বলল,
‘ এই পুলিশকে মারব এটা দিয়ে। জোরে জোরে মারব। এখানে এসেছে কেন? আমাদের বাড়িতে এসেছে কেন?
মাথায় হাত দিল প্রণয়।
‘ সরি অফিসার কিছু মনে করবেন না।
জায়িদ বলল
‘ না না।
একদম ডাহা মিথ্যা কথা। জায়িদ অনেক কিছু মনে করে ফেলেছে। মেয়েটা বেয়াদব।
প্রমিতা দৌড়ে এসে নিয়ে যায় আনহাকে। বলে,
‘ কি করছ পূজা? ওটা পুলিশ অফিসার।
পূজা চেঁচাল।
‘ অফিসার? অফিসার? তো আমি কি করব? আমার কি আসে যায়?
জায়িদের কানে এসে বাজল।
‘ অফিসার?
উঠে দাঁড়াল জায়িদ। বলল,
‘ অন্য একদিন আসব। আজকে ভীষণ তাড়া আছে।
মিঃ চ্যাটার্জি বললেন,
‘ তাহলে কাল আসবেন প্লিজ।
জায়িদ বলল,
‘ চেষ্টা করব।

চলবে,
কিছু না বলে গেলে মাইর। 😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here