#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[৩৭]
বাড়ির সব কাজ একা হাতে সামলায় সালেহা বেগম। সোরা ও হাত লাগিয়ে কাজ করে দেয়। বাচ্চার মা তাই সালেহা তাকে অত ঠান্ডা পানি ঘাটতে দেয়না। তাননা মুননার জন্য কাস্টার্ড বসিয়েছিল সোরা। বাটিতে দুই তিন চামচ তুলে নিতেই কান্না ভেসে আসে রাহার। সালেহা বেগম ডাক দেয় নাহিলকে।
‘ নাহিল আছিস?
নাহিলের আওয়াজ পাওয়া যায়না৷ সোরা বলল
‘ আমি যাচ্ছি বড়মা।
সালেহা মাথা নাড়াল। দ্রুতপায়ে হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেল সোরা৷ রাহার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছেনা। রাহা রুমে ও নেই। দেখা গেল নাহিলের কোলে। পিটপিট করে তাকিয়ে কি কি যেন বলে বলে হাসছে। সাথে নাহিল ও। সোরা সামনাসামনি পড়ে গেল৷ নাহিল তাকে দেখে সাথেসাথে বলল
‘ সোরা ও কাঁদছিল তাই আমি৷
সোরা চুপ করে থাকল। রাহাকে কোলে নিতে গেল। রাহা সোরার কোলে উঠল ঠিক। কিন্তু ডাকল প্যাপ পে, প্যাপ পে বলে।
সোরা তাকে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ খিদে লেগেছে মায়ের?
রাহা আওয়াজ করল
‘ প্যাপ পে, প্যাপ পে।
নাহিল দাঁড়িয়ে থাকল। সোরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল। সোরা তার না হোক কিন্তু তার সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার অধিকারটুকু দিক। আর কিছু চায়না নাহিল।কিছু চাওয়ার নেই।
বিছানায় শুয়ে থাকা মুননার সামনে বসা জিনিয়া। মুননা হাত দেখিয়ে বলে
‘ জুননু ইখানে বিথা।
জিনিয়া হাতে আদর দেয়। মুননা পায়ের আঙুল দেখিয়ে বলে
‘ ইখানে বিথা।
জিনিয়া পায়ের আঙুলে আদর দেয়। তারপর মুননার পেটের উপর আলতোভাবে মাথা রেখে বলে
‘ আমার বাচ্চা।
মুননা জিনিয়া চুলের ভেতর হাত ডুকিয়ে চুল টানতে টানতে বলে
‘ জুননু পুঁচা। কাতুকুতু দেয়।
জিনিয়া মাথা তুলল। ছেলের গালে ঠোঁট চেপে ধরে ছাড়ল অনেক্ক্ষণ পর। কপালে নাকের, ডগায় আদর,মমতার স্পর্শ দিয়ে বলল
‘ আমার আব্বা। আমার ছোট্ট আব্বা।
মুননা মুক্তঝরা হাসে। জিনিয়া ছেলেকে বুকের উপর টেনে শুয়ে থাকে। মাথায় চুমু দেয়। তাননা খাটের উপর উঠে বসে। চোখ কচলে কচলে বলে
‘ আম্মা আমাকে আদোল কলেনা। মুননুকে আদোল কলে। জিনিয়া হেসে উঠল। তাননাকে ও বুকে টেনে নিল। দুজনকে সমান তালে আদর দিয়ে বলল
‘ আমার আম্মা, আমার আব্বা।
তাননা মুননা একত্রে হাসে। মুননা তাননাকে জড়িয়ে ধরে বলে
‘ তুননু আমাল বুন। তুমাল জুন্য আমি খিলনা আনচি।
তাননা খুশি হয়।
‘ দাও দাও। খিলনা খিলবো কিমুন?
মুননা উঠে দাঁড়ায়। জিনিয়াকে বলল
‘ আমাল কালু প্যান্ট কুথায়? ওখানে খিলনা ছিল।
জিনিয়া বলল
‘ ওটাতো ধোঁয়ার জন্য ওয়াশিং পাউডারের পানিতে রেখেছি।
মুননা কাঁদোকাঁদো হয়। জিনিয়া খাট থেকে নেমে ঝুঁকে ছেলের গালে মেয়ের গালে চুমু খায়। যেতে যেতে বলে
‘ আচ্ছা দেখছি। বসেন আপনারা।
বালতি থেকে প্যান্ট তুলতেই পকেটে অনেকগুলো চাবির থোকা পেয়ে যায় জিনিয়া। অবাক হয়। দৌড়ে এসে মুননাকে বলে
‘ এগুলো কোথা থেকে আব্বা?
মুননা বলল
‘ ইগুলো আমি ওখানে পাছি। ইগুলো বাবুদেল খিলনা। তুননু বাবু খিলবে।
জিনিয়া হেসে ফেলল।
‘ তুননু বাবু, আর আপনি কি বুড়া? আপনি ও তো বাবু। আমার বাবু। জুননু আর গুড্ডুর বাবু।
মুননা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
‘ আমি বাবু নই। আমি মুননু।
জিনিয়া বলল
‘ ঠিক ঠিক আপনি মুননু। আমার বাচ্চা।
চাবির তোড়া জিনিয়া দেয়না। বলে
‘ এটা আম্মা রাখি?
মুননা তাননার দিকে তাকিয়ে বলে
‘ তুমি লাগ কববে?
তাননা বলল
‘ আম্মা নিলে লাগ কববো না।
জিনিয়া চাবিটা রেখে দিল। তার কাজে আসবে। জিনিয়া খাটের উপর উঠে বসে। দুইছেলেমেয়েকে কোলে বসিয়ে বলে
‘ আমরা গল্প করব এখন। কেমন? মুননু কোথায় ছিল দুইদিন?
মুননা বলল
‘ ওখানে চিলাম। ওখানে পুঁচা আন্তি আচে। পুঁচা আন্কেল আচে। তাপোর কালো কালো ভাল্লুক আচে।
জিনিয়া বলল
‘ কালো বোরকা পড়া মানুষ?
মুননা বলল
‘ না, ওলা ভাল্লুল। ওবাপ আমাল ভয় লাগচে বিশি। আমাকে পুঁচা আন্তি মাচচে। আমি বিথা পাছি।
জিনিয়া রাগ উঠে ওই অচেনা মহিলার উপর।
‘ কোথায় মেরেছে আব্বা?
মুননা গাল দেখিয়ে বলে
‘ ঠাসস কলে মেলে ফালায় দিচে আমাকে। আমি চিয়ার থিকে পলে গেছি। বিথা পাছি। কান্না কচচি। তাপোর ওলা আমাকে বুকা দিচে। আমি কান্না কচচি।
জিনিয়া ছেলেকে বুকে চেপে ধরে। বলে
‘ আমি ওদের খুব খুব শাস্তি দেব আব্বা। এত বড় সাহস ওদের আমার বাচ্চার গায়ে হাত তুলেছে?
মুননা দাঁড়িয়ে পড়ে। জিনিয়ার গালে গাল লাগিয়ে বলে
‘ আমাল জুননু ভালু। খুব ভালু। আমাল আম্মা চুন্দল, আদোল।
তাননা বলল
‘ পুঁচা আন্তিকে আল্লাহ মাববে। আমাল ভাইকে মাচচে পুঁচা আন্তি। আল্লাহ তুমি পুঁচা আন্তিল সাথি লাগ কলো। খুব মালো।
জিনিয়া হাসল।
‘ পাকা বুড়ি আমার।
মুননা হেসে বলল
‘ তুননি বুলি। আমি বুলো। আমলা ভেইবুন।
জিনিয়া হাসল। ভাইবোনের হাত একে অপরের রেখে বলে
‘ আপনারা রাখিবন্ধন। এ বাঁধন কখনো না ছিঁড়ুক। আমার বাচ্চারা হাজার বছর বাঁচুক। হাসিখুশি থাকুক। ভালো থাকুক। বেঁচে থাকুক।
তাননা মুননা একসাথে বলে উঠে
‘ আম্মা আব্বা বাঁচি থাকু।
জিনিয়া হাসল শুধু। চোখে তার কান্না।
রাতে ফিরল সাহিল। জিনিয়া তার অপেক্ষায় ছিল। তাননা মুননা ও আজ ঘুমোচ্ছে না তাড়াতাড়ি। পকপক করতেই আছে। সাহিল রুমে এসে জিনিয়াকে দেখে হাসল। জিনিয়া মৃদু হাসি ফিরিয়ে দিল। সাহিল পানি খেতে খেতে বলল
‘ জায়িদের সাথে কথা হয়েছে? আব্বার জামিন হবে?
জিনিয়া মুখ কালো হয়ে যায়। কন্ঠে কান্না ভাসে। সে বলে
‘ জামিন দিবেনা বলছে। যতদিন আসল অপরাধীকে ধরা না যায়। আব্বা সত্যিটা বলছেনা।
সাহিল পানি খেয়ে জিনিয়ার দিকে এগিয়ে আসলো। জিনিয়াকে টেনে এনে বুকের সাথে মিশিয়ে বলল
‘ চিন্তা করবেনা একদম। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। পা ফোলা কমেছে?
জিনিয়া স্বামীর মিষ্টি সোহাগে গলে গিয়ে ছোট্ট করে আওয়াজ করল
‘ হুহ।
সাহিল দুহাতের বেষ্টনী আর ও জোরালো করল। জিনিয়া মিনমিন করে আওয়াজ করল
‘ মেরে ফেলবেন নাকি?
সাহিল আর ও শক্ত করে ধরে বলল
‘ এখন ছাড়ছিনা।
জিনিয়া হাত নাড়িয়ে সাহিলের বুকে মারতে চায় কিন্তু পারেনা। সাহিলের বুকে নাক ঘষে বলে
‘ বাচ্চারা আছে না? ছাড়ুন তো। ওরা এখন সব বুঝে।
সাহিল বলল
‘ ওদের এতকিছু দেখার সময় কই? দেখো খেলায় কত ব্যস্ত তারা।
জিনিয়া বলল
‘ ধুর ছাড়ুন না। কেউ চলে আসবে।
সাহিল আর ও শক্ত করে ধরে। অর্ধাঙ্গিনীর কপালের পাশে দীর্ঘ চুম্বন বসিয়ে বলে
‘ সবসময় ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন? আমি কি সারাদিন ধরে বসে থাকি?
জিনিয়া আর কিছু বলল না। বাবারে বাবা কিছু বলা ও যায়না। এত রাগ সাহেবের। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে বেশ পোহাতে হলো জিনিয়ার। লোকটা মাঝেমাঝে এত পাগলামি করে!
জিনিয়া চলে যেতেই সাহিল তাকে আবারও টেনে ধরল। তাননা মুননা ফিরল। সাহিল বলল
‘ এদিকে কি? খেলা করো।
তাননা মুননা ফিরে গেল।
মুননা খেলতে খেলতে বলল
‘ গুড্ডু জুননুকে আদোল কলে। এখুন আমাদেল ও কববে।
তাননা বলল
‘ আব্বা বলো, আম্মা বলো। নাওলে আল্লাহ মাববে।
জিনিয়া সাহিলের বুকে মাথা ঠুকতে ঠুকতে বলে
‘ উফ দেখুন কি বলছে। আপনার এখন ও শরমে ধরছেনা।
সাহিল জিনিয়া মুখে ঠেসে চুমু বসাতে বসাতে বলে
‘ না।
জিনিয়া সাহিলকে সরাতে চায়। সাহিল সরেনা। জিনিয়া বলল
‘ আপনাকে কি ভূতে ধরেছে? কি করছেন? ধুরর বাবা।
সাহিল হেসে দেয়।
জিনিয়ার সারা মুখে অগণিত ছোঁয়ায় রাঙিয়ে দিতে গিয়ে আবারও বাঁধা পায়।
‘ অনেক অনেক অনেক হয়েছে গুড্ডুসাহেব। আর না।
সাহিল আর ও কয়েকবার পাগলামি করে নিজের দিকে টেনে আনে জিনিয়াকে। জিনিয়ার দু হাত তার বুকে দিয়ে চোখ তুলে তাকায়।
‘ কি চাই আবার?
সাহিল মিষ্টি করে হাসলো। জিনিয়া অপলক তাকিয়ে বলল
‘ এত সুন্দর করে হাসেন কেন? আমি পাগল হচ্ছিনা মোটেও।
সাহিল তার কপাল মিলায় জিনিয়ার কপালে। বলে
‘ এতক্ষণ যে দিলাম, এবার ফিরিয়ে দাও। তাড়াতাড়ি দাও।
জিনিয়া হেসে ফেলল। তার ওষ্ঠাধর সাহিলের কপালে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিয়ে ছাড়ল সময় নিয়ে। বলল
‘ আমার একটাই যথেষ্ট।
সাহিল সেটা ফিরিয়ে দিল। বলল
‘ ফিরিয়ে দিলাম। আমার চাইতে বেশি তুমি পারবেনা।
জিনিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সাহিল তার দিকে ঝুঁকে পড়ে নাকে নাক ঘষে। জিনিয়া সরে গিয়ে টেবিলের কাছে ফাইল গুছাতে গুছাতে বলে
‘ উফফ।
আবার অনুভব করল সাহিল তার হাত জোড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করল উদরের উপর। জিনিয়া নড়াচড়া বন্ধ করল। সাহিলের হাত দুটোর উপর হাত রেখে বলল
‘ শাড়ি পড়িনা এইজন্য।
সাহিল নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। বুকে এসে ঠেকে জিনিয়ার পিঠ। জিনিয়ার গলার কাছে উড়ো চুলের মাঝে ঠোঁট রাখল সাহিল। দীর্ঘসময় পার হয়ে যাওয়ার পর বলল
‘ পড়েছ কেন? তুমি জানোনা শাড়িতে তোমাকে ভীষণ,,,
জিনিয়া সরে পড়ে তাড়াতাড়ি।
‘ উফ যান না। যান। তাননা মুননার কাছে যান।
সাহিলের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। নরম পায়ে হেঁটে সে চলে যায়। জিনিয়া বলল
‘ এখন আবার মুখ কালো করছেন কেন? এই? আল্লাহ এ কার পাল্লায় পড়লাম আমি?
সাহিল তাননা মুননার কাছে গিয়ে বসে। খেলনা নিয়ে ফেলে তাদের বুকের উপর টেনে নেয়। তাননা ফোকলা হাসি হেসে বলল
‘ আমাল আব্বা।
সাহিল ও হাসে৷ মেয়ের গালে আদর দেয়। মুননা সাহিলের গালে গাল লাগিয়ে বলল
‘ গুড্ডু ঘলে থাকুনা কিনো?
সাহিল মুননার গালে আদর দিয়ে বলল
‘ কোথায়? এই যে এখনো ঘরে আছি৷
তাননা ও গাল লাগিয়ে রাখে সাহিলের সাথে। সাহিল দুজনকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলে
‘ খেয়েছেন দুজন?
মুননা বলল।
‘ হ্যা খাছি। জুননু খাবায় দিচে। তুমি খাছো?
সাহিল বলল
‘ জ্বি, খেয়ে এসেছি।
জিনিয়া টেবিল গুছাতে গুছাতে বলে
‘ সাবাশি কাজ করে ফেলেছে বাইরের খাবার খেয়ে খেয়ে।
সাহিল দুজনকে শুইয়ে দেয়। গায়ের উপর কাঁথা টেনে মাথায় হাত বুলায়। দুজনই বকবক পকপক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। সাহিল দুজনের কপালে চুমু খেয়ে তাকিয়ে থাকে অনেক্ক্ষণ। তার বাচ্চা দুটো। চোখের উপর হাত দিয়ে সে শুইয়ে থাকে ৷ জিনিয়া ডাকল
‘ ঘুমিয়ে পড়েছেন? জিনিয়ার ডাকে সাড়া দিলনা সে। জিনিয়া বুঝতে পারল রেগে আছে। সব গোছগাছ করে সাহিলের পাশে শুইয়ে পড়ল সে৷ সাহিলের কানের কাছে আঙুল দিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে বলল
‘ শুনছেন? এই? ধুরবাবা কথা বলেন না কেন?
সাহিল ফিরল না তারপর ও। জিনিয়া তার একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল সাহিলকে। তারপর ও সাহিল ফিরল না। জিনিয়া তার মুখ রাখল সাহিলের হাতের বাহুতে। তারপরে ও ফিরল না সাহিল। জিনিয়া আর ডাকল না৷ পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। সাহিল হতবাক। রাগ করবে সে। আর করে ফেলল এই মেয়ে। সাহিল বলল,
‘ কে ডেকেছে আমাকে?
জিনিয়া শাড়ির আঁচল তুলে মুখ ঢেকে বলল
‘ কেউ ডাকেনি। কে ডাকবে? এখানে কে শোনে কার কথা?
শব্দহীন হেসে ফেলল সাহিল। বাপরে বাপ কি রাগ এই মেয়ের! তার থেকে দেখে দেখে রাগ করা ও শিখে গেছে!
জিনিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল
‘ সবাই আমার উপর রাগ করতে পারবে। রাগ ঝাড়তে পারবে। শুধুই আমিই পারিনা। আমি তো আছি শুধু রাগ ভাঙতে, আর ঝাড়ি সহ্য করতে। কে দাম দেয় আমার রাগের?
সাহিল ঠোঁট টিপে আবার ও হাসল। জিনিয়া বকবক করেই গেল। শক্তপোক্ত একহাত তার গায়ের উপর উঠে এসেছে বুঝতেই সে চুপ হয়ে গেল। সাহিল তাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে নিল। জিনিয়া আবার ও বকবক শুরু করে। হাত ছুঁড়ে। সাহিল থামিয়ে দেয় কৌশলে। বক্ষতলে চাপা দিয়ে বলে
‘ এই যে দূরে দূরে যান বলো। নিজে থাকতে পারো? সেই ঘুরেফিরে আমার কাছে আসতে হয় তোমাকে।
জিনিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল। যে স্বামীর বুকে লেপ্টে ঘুমোনো তার অভ্যাস। যে স্বামীর শ্বাস প্রশ্বাসই তার অবলম্বন। যে স্বামীর আদুরে সোহাগ তার তার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার ঔষধ। যে স্বামীর মিষ্টি আদুরে বুলিতে তার অভিমান ভাঙে রোজ। যে স্বামীর গায়ের সৌরভ মিশে থাকে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যে স্বামীর চোখের দিকে তাকালেই সে হারায় বারংবার, সেই স্বামীর কাছে না গিয়ে আর উপায় আছে?
জিনিয়া ঠোঁট ছোঁয়ালো স্বামীর সেই বক্ষমাঝে, যেখানে তার বসবাস, তার শান্তি। তার জিত, তার হার।
______
রাত বাড়ে। জায়িদের ফেরার নামগন্ধ নেই। জাহেদা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে । আনহা সেই জোর করে দুটো খাইয়ে দিয়েছিল। নিজের স্বামীর এই অবস্থা তিনি মানতে পারছেন না। এতগুলো বছর একসাথে সংসার করে এসেছে কখনো মনে হয়নি মানুষটা লোভী। কখনো মনে হয়নি। কি করল মানুষটা? কেন করল?
আনহা সারাবাড়ি পায়চারি করে। ঘুমে ঢুলুঢুলু হয় সে। খিদে ও পেয়েছে। ইদানীং ভাতের গন্ধ সহ্য হয়না। কিন্তু খিদের কারণে নাক চেপে গিলতে হয়। কম খেলে জাহেদা চিল্লাচিল্লি করে।
জায়িদের ফোন এল। দরজা খুলে দিতে বলল।
আনহা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেই। আনহাকে দেখে বলে
‘ আম্মা খেয়েছে? ঘুমিয়েছে?
আনহা মাথা নাড়ায়।
‘ তুমি খাওনি?
আনহা মাথা নাড়ায়।
জায়িদ বলল
‘ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আনহা টেবিল সাজায়। খালি পেট তারপর ও মনে হচ্ছে গলার কাছে কি যেন আটকে আছে। জায়িদকে খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় কোনোমতে শ্বাস আটকে রাখল সে। ভাত,মাংসের গন্ধ বিষাক্ত ঠেকছে। জায়িদ আনহার জন্য প্লেট নিয়ে বেড়ে দিল৷ চেয়ার টেনে বলল
‘ বসো।
আনহা সামান্য দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
‘ আপনি খেয়ে নিন। আমি একটু আসি।
জায়িদ ভ্রু কুুঁচকালো।
‘ কেন? কি হয়েছে?
আনহা দাঁড়ালো না। দৌড়ে দৌড়ে উপরে উঠে গেল। গড়গড় করে বমি করল বেসিনে। চোখ লাল হয়ে উঠল। পেটে কিছু নেই তাই হালকা সবুজ রঙের তেঁতো পানি বেরোলো। প্রচন্ড দুর্বলতায় গা কাঁপল তার৷ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হলো৷ দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ল সে। ঘামল প্রচন্ড৷ তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেল। অনেক্ক্ষণ বসে থাকল সে। জায়িদের গলার আওয়াজ ভেসে এল নিচ থেকে। আনহা কাঁপা-কাঁপা শরীরে উঠে বসল। পা বাড়ানোর শক্তিটুকু বহুকষ্টে যোগাড় করল। মুখ চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। আয়নায় নিজেকে দেখে তারপর ঠোঁটে মেকি হাসি ঝুলিয়ে থেমে নামলো সিঁড়ি বেয়ে। পা এমনভাবে কাঁপছে মনে হচ্ছে সে পড়ে যাবে। জায়িদ তার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ তুমি ঠিক আছ?
আনহা মাথা নাড়ালো। জায়িদ বলল
‘ এসো। খেয়ে নাও।
আনহা বলল
‘ না। আমি খেয়েছি।
জায়িদ বলল
‘ মিথ্যে বলবেনা। তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খেয়েছ কি খাওনি?
আনহা বলল
‘ আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা৷ সত্যি। খিদে লাগলে খেয়ে নেব। জায়িদ প্লেটটা অন্য প্লেট দিয়ে ঢেকে নেয়৷ বলে
‘ উপরে নিয়ে যাব। খিদে লাগলে খেয়ে নেবে। ঠিক আছে?
আনহা মাথা নাড়ালো।
জায়িদ সব গুছিয়ে নিতে লাগলো। আনহা বলল
‘ আপনি যান। আমি গুছিয়ে নিচ্ছি।
জায়িদ বলল
‘ আমি ও করে দেই। তাড়াতাড়ি হবে৷
সব গুছিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে রেখে আসলো জায়িদ। পানি ঢেলে না খাওয়া ছেলেটা কাজ করছে দেখলে জাহেদার কি করবে সেটা ভেবেই হাসি পেল আনহার৷ বেচারা পুলিশ অফিসার!
জায়িদ প্লেট নিয়ে উপরে উঠে গেল৷ আনহা নরম পায়ে হেঁটে চলে গেল ঘরে। জায়িদ প্লেট রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসল। আনহাকে বলল
‘ আব্বাকে হোটেল থেকে ভাত কিনে খাইয়েছি। অনেক জোর করে খাইয়েছি।
আনহা বলল
‘ এভাবে আর কতদিন চলবে?
জায়িদ বলল
‘ আব্বা চাইলে সত্যিটা বলে দিতে পারে। কিন্তু বলছেনা। আমার অনেক কাজ আনহা। মুননাকে কারা কিডন্যাপ করেছে সেটা জানতে পারলে সব সলভ হয়ে যাবে। মুননাকে হসপিটালের আশেপাশে কোনো রিসোর্টে রাখা হয়েছে৷ কিন্তু এত রিসোর্টের ভেতর কোথায় খুঁজব অপরাধীকে?
আনহা চুপ করে থাকল। জায়িদ বলল
‘ শুয়ে থাকো৷ খিদে লাগলে উঠে খেয়ে নিও।
আনহা মাথা নাড়ালো। জায়িদ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আনহা বলল
‘ কখন ঘুমাবেন? সারারাত কাজ করলে কালকে থানায় যেতে পারবেন?
জায়িদ বলল
‘ বেশিক্ষণ না। হয়ে যাবে।
আনহা শুয়ে পড়ল কাত হয়ে। চোখ ছলছল করল। জায়িদ ফিরে তাকালো আনহার দিকে। গুটিসুটি মেরে শুয়েছে আনহা। পেটের উপর একহাত রাখা ৷ জায়িদ চোখ সরিয়ে নিল। কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আনহা উঠে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। খিদেয় পেট ছিঁড়ে যাচ্ছে। জায়িদ বলল
‘ বলেছিলাম খেয়ে নিতে।
আনহা খিদের চোটে খেল৷ ঢকঢক করে পানি খেয়ে এসে বসল জায়িদের পাশে। ল্যাপটপের কাজ দেখতে দেখতে বলল
‘ লাইট জ্বললে আমার ঘুম আসেনা অফিসার।
জায়িদ উঠে লাইট নিভিয়ে দিল। বলল
‘ আগে বলবেনা? আমার লাইট লাগছেনা তো।
ল্যাপটপের স্ক্রিনের আলোয় ঘর আলো হলো মৃদু। আনহা সেই আলোয় জায়িদের দিকে তাকালো। এই তার এত এত যত্ন খেয়াল রাখছে জায়িদ, তারপর ও আনহা খুশি হতে পারছেনা৷ মনে হচ্ছে জায়িদ তাকে অনাদর,অবহেলায় ফেলে রেখেছে। অভিমানের বরফ জমতে থাকে তার৷ চোখ ফেটে জল বের হয়। আবার উঠে বসে সে। গা গুলাচ্ছে। বমি পাচ্ছে। কি করবে সে? আল্লাহ!
জায়িদ বলল
‘ কি হয়েছে?
ঢোক গিলে বসে থাকল আনহা। জায়িদ কাজ শেষ করার তাড়া লাগালো। আলো পড়ায় ঘুম আসছেনা বোধহয়। জায়িদের পাশ ঘেঁষে এসে বসল আনহা। ল্যাপটপটা ধপ করে বন্ধ করে দিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। জায়িদ বলল
‘ কি হচ্ছেটা কি?
হু হু করে কেঁদে উঠে আনহা। জায়িদের গলায় নাকমুখ মুছতে মুছতে কাঁদল৷ জায়িদ তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরল। অন্যহাতে ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে দিয়ে বলল
‘ আরেহ কাঁদছ কেন তুমি? কি হয়েছে?
আনহা কাঁদতে কাঁদতে বলল
‘ আমার খারাপ লাগছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আপনি আমায় ভালোবাসেন না।
হেসে ফেলল জায়িদ৷
‘ এই ব্যাপার? আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । আনহা জোরে কেঁদে উঠে। জায়িদ তাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে নাক ঘষে বলে
‘ তুমি আগের চাইতে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে গেছ না? আমি আগের আনহাকে মিস করছি। যে সারাক্ষণ ঝগড়া করত আমার সাথে।
আনহা আর ও জোরে কাঁদল। জায়িদ বলল
‘ আরেহ কি হয়েছে ম্যাডাম? আমি তোমাকে ভালোবাসব না তো কাকে বাসবো? আমার কি বউ দুটো আছে? একটাই বউ।
বলেই হাসল জায়িদ। আনহা তার পিঠে আঁচড় কাটতে কাটতে বলে
‘ আপনি খারাপ। ভীষণ খারাপ।
বলতে না বলতেই গড়গড় করে বমি করে দিল আনহা। জায়িদ তাকে ছাড়লনা৷ ধরে রাখল। বলল
‘ আনহা ঠিক আছ?
আনহা কেঁদে দেয় এলোমেলো সুরে৷ জায়িদ তাকে নামিয়ে নিয়ে আসে কোলে করে। মুখ ধুয়ে দেয়। গায়ের ওড়নাটা পাল্টে দেয়। বিছানা পরিষ্কার করে৷ নিজের শার্ট পাল্টে নেয়। নতুন বেডশিট বিছানায় বিছিয়ে দেয়। আনহাকে শুইয়ে দিয়ে বলে
‘ কালকের রিপোর্টটা কোথায়? আমার তো দেখার ও সময় হয়নি। হঠাৎ কি হলো তোমার?
আনহা দুর্বল শরীর এলিয়ে দেয় বিছানায়। জায়িদ ড্রয়ার খুলে রিপোর্ট বের করে৷ হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসে আনহার দিকে। চোখ বুলাতেই থমকে যায় সে। বুক কেঁপে উঠল তার। পা জোড়া ও কেঁপে উঠল। খুশিতে, আনন্দে হতবিহ্বল সে। চোখজোড়া চকচক করল তার। এত আনন্দের বার্তা আনহা লুকোলো তার কাছ থেকে? কেন লুকোলো? আর সে ও বুঝলনা! হায় আল্লাহ। কেন বুঝল না?। আনহাকে শোয়া থেকে তুলে বসায় সে৷ মিটমিট করে তাকায় আনহা। জায়িদ তার দুগাল আগলে ধরে উন্মাদের মতো পুরো মুখ ভিজিয়ে রাঙিয়ে দেয়। তারপর বুকের সাথে শক্ত করে ধরে পিষ্ট করে বলে
‘ থ্যাংকিউ আনহা। থ্যাংকিউ সো সো মাচ। আমার সন্তান গর্ভে ধারণ করার জন্য। আমাকে বাবা হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস অফিসারের ঘরের রাণী হওয়ার জন্য। আমি আম্মাকে বলে আসি৷ কিন্তু কিভাবে বলব?
আনহা পড়ে থাকে তার কাঁধে। জায়িদ তাকে আবার শুইয়ে দেয়৷ দৌড়ে যায় জাহেদার কাছে। জাহেদা বেঘোর ঘুম৷ জায়িদ মায়ের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে চলে আসে। আর ডাকেনা৷ থাক কাল সকালে শুনবে। ঘুম ভেঙে লাভ নেই।
আবার আনহার কাছে ফিরে আসে সে। আগত সন্তানকে নিয়ে আকাশ পাতাল গল্প করতে করতে সারারাত ঘুমায় না নিজে৷ ঘুমাতে দেয়না আনহাকে। আনহা ভাবে মানুষ এতটাও পাগল হয়? সারারাত জ্বালিয়ে মারল তাকে।
খুশির খবর সকাল হতেই পৌঁছে যায় আহম্মেদ বাড়িতে। জাহেদা শুনে আনহাকে বকা শুরু করল।
‘ বেয়াদব মেয়ে কতবার করে জিজ্ঞেস করেছি শরীর খারাপ লাগছে কিনা? না নবাবের বেটি আমাকে কিছু বলেনা। আমি কি ফেরেশতা? যে সব জানব?
আনহা জাহেদার বকা শুনে হাসে। জাহেদা বলে
‘ হাসবিনা না বেয়াদব৷ চড় মেরে গাল লাল করে দেব। তুই না বলার কে? হ্যা? সে এ বাড়ির বংশধর। তোর আগে আমার অধিকার বেশি তার উপর। তুই কোথাকার ছাই। আমি যা বলব তাই করবি। উল্টাপাল্টা চললে পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখব।
জায়িদ হা করে মায়ের কথা শুনে।
‘ এগুলো কি ধরণের কথা আম্মা? তুমিই তো ওর সাথেসাথে থাকো৷ তুমি ওর খেয়াল না রাখলে কে রাখবে?
আনহা জিভে কামড় দেয়। আল্লাহ লোকটা কি ভেবে বসে থাকল?
জাহেদা ধমক দেয়।
‘ এই যাহ। মারেমা সে এক বাচ্চার মা হবে, বাচ্চা তো আর কারো হয়নি। শুধু তোর বউয়ের হচ্ছে। আর তুই তোর কাজে যাহ। বউ দরদী।
জায়িদ মাথা চুলকালো।
‘ ওভাবে বলো কেন আম্মা?
জাহেদা পা বাড়ায় রান্নাঘরের দিকে। একবার হাসে তো আরেকবার কাঁদে। মানুষটা থাকলে কত খুশি হতো। জায়িদ বলে
‘ আব্বাকে বলতে হবে আম্মা। আমি যাই।
জাহেদা থমকে গেল।
‘ আসি বলবি বেয়াদব।
জায়িদ মিনমিন করে বলল
‘ আসি।
আনহা মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ একদম ভালো হয়েছে।
জায়িদ অসহায় চোখে তাকালো। আনহা হেসে দিল ঠোঁট টিপে।
জায়িদ বেরোতেই ছাদ থেকে নাহিল ডাক দিল। সাগর সাহেব, সোরা ও আছে ছাদে। নাহিল ডেকে বলল
‘ জায়িদ ভাই তাড়াতাড়ি মিষ্টি পাঠাও। অপেক্ষায় আছি।
জায়িদ শ্বশুর থাকায় লজ্জায় পড়ল। বলল
‘ তোর বিয়ের মিষ্টি খাওয়ার অপেক্ষায় আছি নাহিল।
চুপসে গেল নাহিল। রাহাকে দোলাতে দোলাতে সোরা নিচে নেমে গেল।
মিষ্টি খাওয়া দাওয়া হলো দুই বাড়িতে। তাননা মুননা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বসল। কাউকে না ধরতে দিল না খেতে দিল। জিনিয়া অবাক
‘ ছেলেটা বাপের মতো মিষ্টিপাগল হয়েছে।
মুননা খেতে খেতে বলল
‘ আমাল মিচতি। মুননুল।
তাননা আর খেতে না পেরে জায়িদকে বলল
‘ মামা আল খিতে পালিনা। বুমি পাচচে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠল। সালেহা বলল
‘ তোমার আবার কি হয়েছে?
হাসল সবাই।
নাহিল মিষ্টির একটুখানি রাহার মুখে লাগিয়ে দিতেই রাহা জিভ দিয়ে তা টেনে নেয়। আরেকটু খাওয়ার জন্য হা করে। সোরা অবাক। সে কিছু খাওয়াতে চাইলে হা করেনা এই মেয়ে। নাহিল হেসে কোলে নিয়ে নেয় রাহাকে। গালে আদর করে বলে
‘ মিষ্টি খাবে টুনটুনি?
রাহা লাল জিহবা দেখিয়ে হাসে। নাহিল আবার ও আদর বসায় তার গালে। সোরা তাকিয়ে দেখে। শেষমেশ মেয়েটা ও শুরু করেছে তারসাথে?
সাহিলের জন্য মিষ্টি রেখে দিল সালেহা। তার ছেলেটা কি যে খুশি হবে শুনলে। তার বোন মা হতে যাচ্ছে। জিনিয়ার ও তর সইল না। কিন্তু সাহিলকে সে ফোনে পেলনা। কিসের এত কাজ ওনার কে জানে? রাতে ও এলোনা। বাড়িসুদ্ধ সবাই চিন্তিত।
সকাল সকাল কোর্টের উদ্দেশ্যে বের হতেই জিনিয়ার ইয়ামিনের সাথে দেখা রাস্তায়। লাল টকটকে রক্তমাখা ছুরি দেখিয়ে চলে যায় সে। জিনিয়া বিস্মিত, এসব কি দেখল সে? ইয়ামিনের হাতে রক্তমাখা ছুরি? কেন? জিনিয়াকে দেখালো কেন?
সাহিল ফিরল না। জিনিয়া ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল। সালেহা বেগম কান্নাকাটি শুরু করলেন। সাহিল তিনদিন পার হয়ে গেলেও ফিরল না।
এভাবে যেতে যেতে পার হলো সপ্তাহ। ফিরল না সাহিল। জিনিয়ার মনে হয় লোকটা এক্ষুণি এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরবে তাকে। পাগলামি শুরু করবে। বাঁধা দিলে রাগ করে বসে থাকবে৷ আবার জিনিয়াকে রাগ ভাঙাতে হবে। বাচ্চাদের খেলতে ছুটে আসবে। তাননা মুননা আব্বা কুথায় গুড্ডু কুথায় আর বলবেনা।
না ফিরল না সাহিল। এত এত খুশির মাঝে ও শান্তি নেই কারোর। জায়িদ ভেঙ্গে পড়ল। আর পারছেনা সে। আর পারবেও না কিছু। বোনটার দিকে তাকানো যাচ্ছেনা।
সপ্তাহ পার হয়ে পার হলো আর ও এক সপ্তাহ। এই পনের দিনে তেরবার তালা চাবির দোকানে গিয়েছিল জিনিয়া। কেউ চাবিটার ব্যাপারে কিছু বলতে পারল না।
সেদিন বাড়ি ফিরে চারপাশ বিষাক্ত মনে হলো জিনিয়ার। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। তার চোখের জল মুছে দেওয়ার জন্য ও এলনা সাহিল।
প্রায় ষোল দিনের মাথায় জিনিয়ার ইমুতে ছবি পাঠাল অপরিচিত লোকটি। সাহিলের ছবি। চেয়ারে বসা সাহিলের মাথায় হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা, মুখ বাঁধা, হাত পা রশি দিয়ে বাঁধা। মুখ ঝুঁকে পড়া মাটির দিকে। ছবির নিচে লিখা আছে, কেস না ছাড়ার শাস্তি এবার আপনার স্বামী ভোগ করুক মিসেস আহম্মেদ। তিলে তিলে মরতে দেখুন তাকে। আপনার স্বামী সীমান্তর খুনী। শাস্তি তার প্রাপ্য।
জিনিয়ার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল।
চলবে
সবার মন্তব্য আশা করছি।