রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে’ পর্ব-৪৩

0
615

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[৪৪]

বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে থাকা জিনিয়ার শাড়িটা কোনোমতে গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে দিয়ে রাখল সাহিল। সোরা তেল গরম করে আনলো। সাহিল সোরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে বলল
‘ বাকিরা কোথায়?
সোরা বলল
‘ আছে। ছোটদাভাই, বড়বাবু আর ছোটবাবু থানায়। তাননা মুননা নাকি ভীষণ কাঁদছে।
সাহিলের বুক কাঁপল। সাহিল বলল
‘ আচ্ছা, তুই যাহ। আমি দেখি জিনির জ্ঞান ফিরে কিনা?
সোরা চলে গেল। সাহিল দরজা বন্ধ করে এসে বসল জিনিয়ার পায়ের কাছে। একপায়ে গরম তেল মালিশ করল। অন্যপায়ে একটুখানি হাত লাগাতেই জেগে উঠল জিনিয়া। নিজের পায়ে সাহিলের হাতের স্পর্শ টের পেয়ে অদ্ভুত স্বরে কেঁদে উঠল সে। গোঙাতে থাকলো। সাহিল গেল তার মাথার কাছে। মাথায় ঘনঘন হাত বুলিয়ে বলল
‘ জিনি তাননা মুননার কিচ্ছু হবেনা। ওদের আইন কোনো শাস্তি দেবেনা, শুধু কিছুদিন ওদের মেন্টালি স্ট্রেস ফ্রি রাখার জন্য আলাদা রাখা হবে৷ জিনি তুমি কেঁদোনা।
জিনিয়া অচল শরীর নড়াচড়া করতে করতে গা কাঁপিয়ে কাঁদে। বলে
‘ আপনি আমাকে ছুঁচ্ছেন তাই নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। আপনি দূরে যান। আল্লার ওয়াস্তে আপনি দূরে যান। আমাকে ওই নোংরা হাতে ছুঁবেন না।
সাহিল নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দূরে চলে এল। জিনিয়া বালিশ খামচে ধরে হিঁচকি তুলে বলল
‘ আমার বাচ্চাদের ও সাইকো বানিয়ে ফেললেন? কত ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করল তারা। আমার চোখের সামনে করল। আমার চোখের সামনে। এখন কি বুঝে তারা? ভালো করে কথা ও বলতে শিখেনি কিন্তু খুন করা শিখে ফেলল? আপনি আমার সবটা কেড়ে নিলেন। আমাকে নিঃস্ব করে দিলেন। আমার কাছ থেকে সব তো কেড়ে নিলেন। সবটা। আমার বাচ্চাদের ও কেড়ে নিলেন।
সাহিল বলল
‘ তোমাকে বাঁচিয়েছে ওরা।
‘ মরে যেতাম ভালো হতো। আপনার এই মুখ আর দেখতে হতোনা।
পুনরায় ভেঙে চুরমার হলো সাহিল। জিনিয়া উঠে বসার চেষ্টা করল। হাতের নরম মুঠো বহুকষ্টে শক্ত করে নিল সাহিল। জিনিয়াকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল
‘ এখন কাউকে কিছু বলতে যাবেনা তুমি।
জিনিয়া নখ বিঁধে দিল তার বুকে। সাহিল দূরে সরে পড়ল। জিনিয়া দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলল
‘ সবাইকে বলে দেব। সবাইকে।
সাহিল বলল
‘ তাহলে নিজের বাবা আর সন্তানকে আর ফিরে পাবেনা তুমি। ওরা জেলে পড়ে থাকবে।
‘ অমানুষ। এখনো ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?
‘ তুমি বাধ্য করছ।
জিনিয়া কেঁদে উঠে শুইয়ে পড়ল আবার। দরজা ধাক্কালো সালেহা। সাহিল দরজা খুলে দিল। সালেহা জিনিয়াকে এলোমেলো শাড়িতে দেখে বলল
‘ দাঁড়াও আমি সোরাকে পাঠাচ্ছি। ও শাড়িটা পড়িয়ে দিক।
জিনিয়ার গায়ের উপর আলগা শাড়িটা টান দিয়ে সরিয়ে নিচে ফেলে দিল। সাহিল এমন অদ্ভুত কাজে অবাক হলো। বেডসাইড টেবিল থেকে সাহিলের দিকে পানির গ্লাস ছুঁড়ে মারলো জিনিয়া। কপাল চেপে ধরল সাহিল। চিল্লালো জিনিয়া
‘ নোংরা মানুষ, আর ও দেখার ইচ্ছে আছে?
সাহিল বলল
‘ কি দেখছি। উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা জিনিয়া।
হেসে উঠল জিনিয়া। বিষাদময় হাসি।
‘ আপনার বউ মারা গিয়েছে না আজ। কাঁদছেন না আপনি?
‘ ও আমার বউ নয়। আমি ওকে তালাক দিয়েছি।
‘ বাহ মহৎ কাজ করে ফেলেছিলেন। কাছে টেনে তো নিয়েছিলেন কোনো না কোনো সময়।
সাহিল বলল
‘ যা দেখোনি তা নিয়ে কথা বলবেনা জিনিয়া।
আবার ও হেসে ফেলল জিনিয়া। এতটা মধুর সম্পর্ক ছিল আপনাদের যে কাপড় চোপড়া গুলো ও একসাথে। ছিঃ।
সাহিল তেড়ে এল। আবার কি মনে করে পিছু হাঁটল।
‘ বেশি বাড়াবাড়ি করছ জিনিয়া। অতিরিক্ত করছ।
সোরা দরজা ধাক্কালো। সাহিল দরজা খুলে দিল। সাহিল বের হয়ে গেল। জিনিয়াকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলোনা সোরার। তার বাচ্চাদের উপর কি ঝড়টাই না গেল?
জিনিয়া তাকিয়ে রইল সোরার দিকে। এই মেয়েটা যদি জানতে পারে তার স্বামীর সাথে অন্যায় হয়েছে তাহলে? তাহলে কি করবে সোরা?
জিনিয়া কেঁদে উঠল। সোরা গিয়ে জিনিয়াকে দাঁড় করালো। শাড়ি হাতে নিয়ে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবি। বড়দাভাই সব ঠিক করে দেবে।
সোরা শাড়ি পড়িয়ে দিল৷ জিনিয়ার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বলল
‘ ভাবি এভাবে মাথা ফাটল কি করে? কোথায় ছিলেন আপনারা?
জিনিয়া বলল
‘ আমি কিছুই জানিনা। কিচ্ছু না।
সোরা তাকে শান্ত হতে বলল। শুইয়ে দিয়ে বলল
‘ আমি কিছু আনি ৷ খেয়ে তারপর একটু ঘুম দিন।
জিনিয়া বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল
‘ আমার তাননা মুননা। কোথায় ওরা? কি করছে?
সোরা বলল
‘ ওদের দেখতে গিয়েছে সবাই। ওরা ফিরে আসবে ভাবি। আসবেই।

সাহিল বের হলো ওয়াশরুম থেকে। গোসল নিয়েছে। শরীরের প্রত্যেকটা কাটা অংশে জ্বলছে৷ পড়নের ঢিলেঢালা শার্টের কলার ভিজে জবজবে। চুল থেকে এখনো পানি ঝড়ছে। ড্রয়ার খুলে পকেটে পিস্তল নিল সে। অন্য পকেটে ও নিল। জিনিয়াকে বলল
‘ কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এতদিন কোথায় ছিলে, স্পষ্ট বলে দেবে ইয়ামিন আটক করে রেখেছিল।
বলেই বের হতে যাচ্ছিল সাহিল। সালেহা বেগম প্লেট ভর্তি ভাত নিয়ে আসলেন গরুর মাংস দিয়ে। সাহিলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
‘ এদিকে আয় গুড্ডু, কতদিন খাওয়াওনা। আয় দুজনকে খাইয়ে দিই। আয়।
সাহিল বলল
” সময় নেই মা।
সালেহা বেগম বলল
‘ কত কষ্ট করে রেঁধেছি গুড্ডু। খাবিনা?
সাহিল মায়ের আবদার ফেলতে পারলোনা। সালেহা বেগম জিনিয়ার পাশে এসে বসল। জিনিয়ার দিয়ে লোকমা বাড়িয়ে দিয়ে বলল
” দুটো করে খাও বৌমা। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে তোমার বাচ্চাদের কি হবে? আর যাইহোক তোমরা দুজন ভালো থেকো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাহিল তাকালো জিনিয়ার দিকে। চারচোখ এক হওয়ায় সরিয়ে নিল দুজন।
‘ আমরা দুজনেই তো ভালো নেই মা। আমি ভালো থাকতে দিইনি কাউকে। আমায় ক্ষমা করো।
সালেহা বেগম ডাকল
‘ এই গুড্ডু নে খাহ।
সাহিল ভাত গালে নিল৷ জিনিয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
‘ আমার তাননা মুননা। কি খেল?
সালেহা বেগম তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে
‘ গুড্ডু যাহ তো নিয়ে আয় আমার দাদুদেরকে। বাড়িটা হাসেনা কতদিন।
সাহিল বলল
‘ যাচ্ছি মা।
বলেই বের হয়ে গেল। জিনিয়াকে দেখতে এল জাহেদা। উচ্চস্বরে কেঁদে দিল জিনিয়া। জাহেদাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলল
‘ আমার সব শেষ। সব শেষ হয়ে গেল আম্মা। সব শেষ। স্বামী, সংসার,সন্তান সব সব শেষ।
‘ এসব কি বলছিসরে জুনু?
‘ তোর সন্তান ফিরে আসবে তোর কাছে। স্বামী তো আছেই, শেষ নিঃশ্বাসের আগে ও কি তোকে ছাড়বে বলে মনে হয়? তোর সংসার তোরই আছে মা।
জিনিয়া বলল
‘ না না কিচ্ছু নেই আমার। কিচ্ছু নেই আম্মা৷
জিনিয়া দেখল আনহাকে। গাল ভেজা মেয়েটার। অসুস্থ তা বুঝা যাচ্ছে। এমন সময় তার ও কেটেছে৷ কত সুন্দর, আনন্দের দিন ছিল সেগুলো। স্বামী নামক মানুষটি পিছু ছাড়তনা তার। সারাদিন তাকে রুম থেকে বের হতে দিতনা। না দিত সিঁড়ি বেয়ে উপরনিচ করতে। কাপড়চোপড় ধুতে দিতনা। প্লেট হাতে নিয়ে খেতে ও দিতনা। নিজ হাতে খাইয়ে দিত। মানুষটার যত্ন নামক প্যারাগুলো কোথায় আজ! একটা মানুষ কি করে অতটা বদলে যেতে পারে? এতটা নিখুঁত অভিনয় মানুষ কখনো করতে পারেনা। ভালোবাসা শব্দটার সাথে অভিনয় শব্দটা যায়না।
আনহা এসে পাশে বসল জিনিয়ার। জিনিয়া জিজ্ঞেস করল
‘ আমার ভাইয়া কেমন আছে আনহা?
আনহা বলল
‘ আছে, যেভাবে রেখেছ।
জিনিয়া চোখ চেপে ধরল। জাহেদাকে বলল
‘ আম্মা আমি আব্বার কাছে যাবো। তাননা মুননার কাছে যাবো। ভাইয়াকে বলো আমাকে নিয়ে যেতে।
জাহেদা বলল
‘ সাহিল নিয়ে যাবে বলেছে।
চিল্লালো জিনিয়া
‘ সাহিল সাহিল কেন? সাহিল ছাড়া আর কি কোনোকিছু চেনোনা তোমরা?
জাহেদা ভড়কে গেল। আনহা বলল
‘ ভাইয়ার সাথে কি তোমার ঝামেলা হয়েছে জিনি?
জিনিয়া চুপসে গেল।
‘ কি বলে ফেলল সে?

_______

থানায় পৌঁছাতেই জায়িদ জেরা করল সাহিলকে। কোথায় ছিলি সাহিল? সাহিল কোনো উত্তর দিলনা। তাননা মুননার কাছে গেল। কান্নার গলা ভেসে আসছে তাদের। নাহিলকে হাঁটুগেড়ে বসে কথা বলতে দেখা গেল তাননা মুননার সাথে। সাগর সাহেব আর সাজেদ সাহেব ও দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সাহিলকে দেখে তাননার কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেল।

‘ আব্বা ইখানে বাঁধি রাখছে কিনো? ভয় কলে বিশি। আম্মা কুথায়? আম্মা আচেনা কিনো?

সাহিল আইসক্রিম বক্স বের করে দিয়ে বলল
‘ কাঁদে কেন মা? আব্বা আইসক্রিম এনেছি না?

মুননা ঠোঁট টেনে টেনে বলল
‘ আম্মা না আচলে খাবু না। আম্মা কুথায়? আম্মা লাগ কচচে?

নাহিল বলল
‘ কেন রাগ করবে? জুননু একটুও রাগ করেনি। এক্ষুণি আসবে জুননু।

জায়িদ বের হলো থানা থেকে। জিনিয়াকে ধরে ধরে আনছে জাহেদা। জায়িদ দৌড়ে গেল। ডাকল
‘ জুননু?
জিনিয়া চোখ তুলে তাকালো। কতদিন পর? দৌড়ে যেতে চাইলো জিনিয়া। জায়িদ এল। এলোমেলো সুরে কেঁদে দিল জিনিয়া। জায়িদ শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ কোথায় ছিলি জুননু? কত খুঁজেছি তোকে? বোন আমার তোর এই অবস্থা কেন? কে করেছে তোর এই অবস্থা?
জিনিয়া কাঁদার জন্য কথা বলতে পারলনা। জিনিয়া বলল
‘ আমার তাননা মুননা। কোথায় ওরা?
জায়িদ বলল
‘ আয়। তোর কি হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে? কোলে নেব?
জিনিয়া বলল
‘ নাহ, যেতে পারবো।
জিনিয়া তাননার মুননার বকবকানি শুনে প্রাণ ফিরে পেল যেন। দুজন জিনিয়াকে দেখে তাকিয়ে থাকলো। ঠোঁট টানতে শুরু করল। নাহিল কতকিছু বলল ঠোঁট টানা কমলো না বরং বাড়লো। জিনিয়া কেঁদে দিতেই দুজনে আওয়াজ করে কেঁদে দিল।
সাহিল বুক খামচে ধরল। মুননা কাঁদতে কাঁদতে বলল
‘ আম্মা লাগ কচচে? বিশি লাগ কচচে? আম্মা কানে? জুননু কানে?
জিনিয়া জেলের গ্রিল ঝাঁকিয়ে জায়িদকে ডেকে বলে
‘ ভাইয়া আমার বাচ্চাদের একটু বের করে দাওনা। ভাইয়া?
জায়িদ তাননা মুননাকে বের করে। দুজন এসে ঝাপটে ধরে জিনিয়াকে। জোরেশোরে কাঁদতে থাকে। শফিক সাহেব ছটপট করতে থাকে। জায়িদ দেখে আসে শফিক সাহেবকে। বলে, আজ অন্ততঃ সত্যিটা বলে দাও আব্বা। শফিক সাহেব কিছু বলেনা ।
জিনিয়া তাননা মুননার গালে অগণিত আদর দেয়। মায়ের স্নেহ ভালোবাসায় ভিজে উঠে দুজন। জিনিয়া দুজনের কাপড় বদলে দেয়। বাড়ি থেকে আনা কাপড় পড়িয়ে দেয়। রক্তভেজা কাপড়গুলো দূরে ছুঁড়ে মারে। দুজনকে নিজ হাতে খাওয়ায় জিনিয়া। খাওয়ার পর জিনিয়ার কাঁধে মাথা রাখে দুজন। বলে
‘ আম্মা ঘুম ঘুম। জিনিয়া জায়িদকে বলল
‘ ভাইয়া আমাকে ওই জেলের ভেতর ডুকতে দাও। আমি ওদের সাথে থাকবো।
জায়িদ বলল
‘ এ হয়না জুননু।
চেঁচালো জিনিয়া।
‘ তাহলে আমার বাচ্চাদের জন্য নরম বেড এনে বিছিয়ে দাও এখানে। মাশারি আনো।
জায়িদ চুপ করে থাকলো। জিনিয়ার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়ল দুজন। বাচ্চাদের জেলে রাখা হলোনা। দুইজন মহিলা কনস্টেবল এসে ঘুমন্ত তাননা মুননাকে নিয়ে গেল। জিনিয়া ছুটল তাদের পিছুপিছু। সাহিল গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ফেলল তাকে। বলল
‘ ওখানে নরম বেড আছে জিনি। মশারি ও আছে। মহিলাগুলো তাননা মুননার সাথে সাথে থাকবে। ওদের কষ্ট দেবেনা কেউ।
জিনিয়া বলল
‘ আমার বুক না পেলে ঘুম হয়না ওদের। ছাড়ুন আমায়।
সাহিল ধরে রাখল তাকে। সর্বশক্তি দিয়ে সাহিলের হাতে কামড় বসালো জিনিয়া। দাগ বসে গেল হালকা রক্ত ও চলে আসলো। জাহেদা, জায়িদ, নাহিল অবাক জিনিয়ার কান্ডে। সহ্য করে নিল সাহিল।

_________

থানার বড় স্যার আফজাল চৌধুরী এসে তাননা মুননার কাছে গেল৷ তখন দুজন খাটের উপর খেলনাপুতুল নিয়ে খেলছে৷ শান্তশিষ্ট দুজন। মিঃ চৌধুরী তাননা মুননাকে জিজ্ঞেস করল
‘ ওই আঙ্কেল আন্টিকে কেন মেরেছ তোমরা?
‘ তুমাকে বলবুনা?
জায়িদ বসে বলে
‘ মামা বলতে হবে। কেন মেরেছ? কে গুলি দিয়েছে তোমাদের? বলো।
তাননা বলল
‘ কিচু মুনে নাই আমাল।
মুননা বলল
‘ পুলিচ ওফচাকে বলবুনা।
জায়িদ আদর করল তাদের। বলল
‘ বলতে হবে মামা৷ বাড়ি যাবেনা?
খুশি হলো মুননা৷
‘ বুললে বালি যিতে দিবে?
‘ হ্যা দেব। এবার বলো কিভাবে মারছ? কেন মারছ?
মুননা বালিশ টেনে নেয়৷ বালিশের উপর বসে খেলনাপাতি থেকে প্লাস্টিকের চামচ খুঁজে নিয়ে বালিশে মারতে মারতে বলে
‘ ইভাবে ইভাবে ইভাবে মাচচি। লততো পচচে। বিশিবিশি মাচচি। পুঁচা আনতি মরি গিছে।
‘ কেন মাচচো?
‘ আমাল জুননুকে মালে কিনো? জুননুকে কানায় কিনো? তাই মাচচি। জুননু কানলে আমি লাগ কলি বিশি।
তাননা বলল
‘ পুঁচা আঙ্কেল আম্মাল শালি তানছে। শালি তানি তানি খুলি ফিলছে।
মিঃ চৌধুরীর হাসি পেলে ও হাসলেন না তিনি। মুননার পিঠ চাপড়ে তিনি জায়িদকে বললেন
‘ আমাদের ভবিষ্যৎ জায়িদ।
জায়িদ আবার আদর করল দুজনকে। যেতে যেতে বলল
‘ আবার আসব মামা।
মুননা খেলতে খেলতে বলল
‘ জুননু আল গুড্ডুকে আচতে বুলিও। মুন্টুকেও। সুলা ফিপিল বাবু ভালু আচে?
জায়িদ বলল
‘ হ্যা।
‘ তুমাল বাবু কিমুন আচে?
জায়িদ মাথা চুলকালো।
‘ ভালো আছে।
‘ আননা ফিপিল বাবু কিমুন আচে?
জায়িদ কেশে উঠল।
‘ হ্যা ভালো আছে।
‘ আচচা ওফিচাল তুমি কাচ কলো। মুননু খিলা কলে এখুন। ডিসতাব কববে না।
জায়িদ বলল
‘ আচ্ছা। ডিস্টার্ব করবনা। খেলা করুন। তাননা মামুনি মামা আবার আসবো।
তাননা বলল,
‘ টা টা সি ইয়ু।

_____

জিনিয়াকে থানায় বসিয়ে রাখায় জায়িদের সাথে রাগারাগি করল সাহিল। যা জিজ্ঞেস করার ওকে করবে। জিনিকে কেন? জায়িদ বলল
‘ তোরা কিভাবে সেখানে গেলি? কেন তোদের ওখানে নিয়ে গেল সব জানতে হবেনা।
সাহিল বলে আসলো।
‘ প্রথমে আমাকে কিডন্যাপ করছে,তারপর জিনিকে তারপর তাননা মুননাকে।
জায়িদ বলল
‘ তাননা মুননা যখন খুন করছিল তখন তোরা পালালি কেন? তাননা মুননাকে ফেলে গেলি কেন?
সাহিল বলল
‘ জিনি জ্ঞান হারাচ্ছিল তাই। আমি তোদের গাড়ির আওয়াজ শুনে বুঝেছিলাম তোরা আসছিস।
জায়িদ বলল
‘ তুই ও কি আটক ছিলি?
সাহিল বলল
‘ হ্যা।
জায়িদ সব নোট করে নিয়ে বলল
‘ নয়দিন পর তাননা মুননাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি ওদের মেন্টালি কন্ডিশন ঠিক দেখায় রিপোর্টে। গোয়েন্দা বিভাগ বলছে ইয়ামিন আর ওই মহিলা কিডনি পাচার চক্রের সাথে যুক্ত ছিল। তাই তোদের কিডন্যাপ করেছিল যাতে বাবলুর কেস না চলে। এখনো বাবলুর খুনিকে ধরা যায়নি।
সাহিল বলল
‘ আচ্ছা। আমি বাড়ি যায়।
জায়িদ মাথা নাড়ল।

________

নয়দিন পর তাননা মুননার রিপোর্ট এল। তাদের ছাড়া দেওয়া হলো। কি খুশি দুজন! এই নয়দিন সাহিল কোথায় ছিল তা বলা বাহুল্য। শুধু রাতে ফিরতো। জিনিয়াকে একপলক দেখে ঘুমোতো নিচে। ফজরের আজান কানে আসার সাথে সাথে আবার চলে যেত। জিনিয়া তাননা মুননার ফেরার অপেক্ষায়। তারপর সে শেষ করে দেবে সব। সব শেষ করে দেবে। তাননা মুননা ফেরার দিন সাহিলকে দেখল জিনিয়া। সাহিল তাকালেও সে ভুলে ও তাকালো না সাহিলের। ঘৃণা হয় তার। ঘৃণা।
তাননা মুননা বাড়ি ফিরে এল। গোলাগুলির শব্দ, মারপিট এসব থেকে যাতে তারা দূরে থাকে। নাহলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে তাদের উপর। তাননা মুননাকে জাহেদা নিয়ে গেল। বলল
‘ ওরা আমার কাছে থাকুক ।
সাহিল সেদিন রাতে ফিরল। যে দুশোটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে দুশো কিডনি জোগাড় করেছে। চারলাখ টাকার অস্ত্র জাহাজ ডুবো হয়েছে। সেগুলো ইউরোপ থেকে আমদানি করে আবার অস্ট্রেলিয়া রপ্তানি করতে হবে। অনেক কাজ বাকি। দশটা হসপিটালের ডাক্তারদের কাছে এখনো টাকা পাঠানো হয়নি। টাকা না পেলে পাগলের মতো করবে কুত্তার বাচ্চাগুলো। রোগীর কাছ থেকে পাওয়া টাকায় পোষায়না তাদের।

খুব সন্তর্পণে সাহিল শফিক সাহেবের সাথে দেখা করতে গেল। খুব আড়ালে নির্জনে। হামাদউদ্দীনের সহায়তায়। শফিক সাহেব তাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন
‘ কি বলতে এসেছ?
সাহিল তার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দেয়। শফিক সাহেব সেটি হাতে নিয়ে দেখে চোখ কপালে তুলেন। বলেন
‘ এই কাগজটা তো আমার আর ডক্টর মুখার্জির কাছে থাকার কথা। তোমার কাছে কেন?
সাহিল বলল
‘ কিডনি কেন দরকার ছিল আপনার? কেন ওসবে জড়িত হয়েছিলেন আপনি? বলুন।
শফিক সাহেব বলল
‘ তোমাকে কেন বলব?
সাহিল ফোন লাগালো মিঃ মুখার্জির ফোনে। শফিক সাহেব ফোন কানে দিয়ে বললেন
‘ মিঃ মুখার্জি আপনি কি বলেছেন সাহিলকে?
মুখার্জি বলেন
‘ আপনার মেয়ের জামাইর হাতে সব মিঃ তালুকদার। কিডনি ওনার হাতে। ওনাকে সব খুলে বলুন। ওনিই আমাদের লিডার। যার কথা বলে আসছিলাম এতদিন।
শফিক সাহেবের হাত থেকে খসে ফোন পড়ে যায়। সাহিল ফোন তুলে নিয়ে বলেন
‘ এবার বলুন কেন কিডনি চেয়েছিলেন? কেন? বলুন।
শফিক সাহেব ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিয়ে বলল
‘ তুমি এসবের লিডার? তুমি?
সাহিল বলল
‘ জ্বি।
শফিক সাহেব বলল
‘ আমার জুননুকে তাহলে আর বাঁচিয়ে লাভ নেই। মরে গেছে জুননু।
সাহিল চাপাস্বরে বলে
‘ মাথা গরম করবেন না আমার। ওর নামে ফালতু কথা বলবেন না।
শফিক সাহেব বুকে হাত দেয়। বলে
‘ ওর দুটো কিডনিই বিকল । আর দুমাস সময় আছে। হয়ত কিডনি সংযোজন করতে হবে নয়ত ডায়ালোসিসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নয়ত নেই।
সাহিল হেসে ফেলল।
‘ মজা নিচ্ছেন?
‘ জিনির এমন রোগ হতেই পারেনা।
শফিক সাহেব বলেন
‘ হয়েছে। সিটিস্ক্যানে ধরা পড়েছে। আমি কাউকে কিছু বলিনি। তাই তো আমি এই দলের সাথে যুক্ত হয়েছি। যাতে দুটো একইরকম কিডনি পাওয়া যায়। কিডনি ও ম্যাচ হতে হবে।
বাচ্চাদের মতো কাঁদে শফিক সাহেব।
‘ আমি তো আর ও ভেবেছি মিঃ মুখার্জি আমাকে কিডনি এনে দেবেন। কিন্তু না তিনি তা দেননি। দেননি তিনি। বিশ্বাসঘাতক। বেঈমান। মিথ্যেবাদী।
সাহিল বলল
‘ না। মিথ্যে বলছেন আপনি।
শফিক সাহেব বলল
‘ আমি সত্যি বলছি। তুমি রিপোর্ট দেখতে পারো আবার চেকআপ করিয়ে।
সাহিল পিস্তল হাতে নিল। শফিক সাহেব ভড়কে গেলেন। কোথায় যাচ্ছ সাহিল?
সাহিল বলল
‘ লাশ ফেলব মুখার্জির।
সাহিল দেড়টার সময় বের হয়ে গেল জেল থেকে। জিনিয়া বসে রইল রুমের জানালা খুলে। কত রাত এভাবে বসে সে অপেক্ষা করত স্বামীর জন্য। রাতগুলো অপেক্ষার ছিল। মধুর ছিল। এখন এত বিষাদে ভরা কেন? তাননা মুননা না থাকায় খালি খালি লাগছে চারপাশ। নেই ভালো হয়েছে সারাক্ষণ প্রশ্ন করতে থাকে জুননু হাসেনা কেন? কথা বলেনা কেন?
সারাটা রাত জিনিয়া ওভাবেই কাটলো। ফজরের দিলে ঘুম ভাঙল। ওযু করে সে নামাজ পড়ে নিল। অন্য দিন হলে জায়নামাজে স্বামীর হায়াত চায় সে। আজ চাইল মৃত্যু। মৃত্যু। মৃত্যু।
মানুষটা আর পাপ না করুক। যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পাপ করে যাবে। পাপীকে পাপ কাজই বেশি টানে। জায়নামাজ ভিজল জিনিয়ার চোখের জলে। নিজের বলা কথাগুলো সে আবার ফিরিয়ে নিল।
‘ ওনাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও খোদা। আগের রূপে। আমার ভালোবাসার মানুষরূপে ফিরিয়ে দাও। আমি নিঃস্ব, অসহায়,অচল মানুষটাকে ছাড়া। আমার ভাবতে খুব কষ্ট হয় মানুষটা থাকবেনা আমার আশেপাশে। তার অনুপস্থিতি পোড়ায় আমাকে। কষ্ট দেয়। আমি কি করব? আমাকে পথ দেখাও খোদা। পথ দেখাও। শক্তি দাও। সহায় হও।

বাড়িতে সাহিল অনিয়মিত দেখে চিন্তিত হলো সবাই। জিনিয়া ভাবলো আজ সবাইকে সবটা বলে দেবে। জায়িদকে বলে দেবে। এইবার সব শেষ করার দিন এসেছে। তবে জিনিয়াকে কিছু করতে হলোনা। ডক্টর মুখার্জি চলে এলেন সন্ধ্যার দিকে। সাগর সাহেবের কথা বলার জন্য। সোফায় বসে গল্প করতে করতে তিনি মুখ ফসকে অনেক কথা বললেন। সাগর সাহেব কৌতূহল নিয়ে প্রশ্নের ঝুড়ি খুলল। বাড়ির সবাই ছিল নিচে। সাহিল আসলো। মিঃ মুখার্জি তাকে দেখে ভড়কে গেল। সাহিল কাল থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে। পিস্তল বের করে সবার সামনে মুখার্জির বুকে গুলি ছুড়ল সাহিল। সে যদি আগে জানতো সবটা! সবাই যেন এটা স্বপ্ন দেখল। সবাই তরতর করে কাঁপল। শুধু স্বাভাবিক রইল জিনিয়া। কয়েকটা লোক এসে লাশ নিয়ে গেল মুখার্জির। সাহিল বলল, একে কেটে কেটে টুকরো টুকরো কর। যাহ।

সাহিল গুলি পকেটে পুড়ে উপরে যাওয়ার আগেই চোখে পড়ল জিনিয়াকে। নাহিল, সোরা, সালেহা শক্ত। সাগর সাহেব সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়েছে। সাজেদ সাহেব সাগর সাহেবকে ডাকায় ব্যস্ত। নাহিল বলল
‘ না এটা সত্যি না। ভাই কখনো এমন না। না।
জিনিয়া রুমে চলে গেল। বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ দিয়ে অঝোর স্রোতে জল গড়ালো। মানুষটা এখনো খারাপ কাজ ছাড়ার কথা ভাবেনা কেন? জিনির সাথে থাকতে ইচ্ছে হয়না? সব ছেড়েছুড়ে জিনির কাছে কি চলে আসা যায়না?
সাহিল রুমে ডুকে বন্ধ করল দরজা। চেয়ে রইল শুইয়ে থাকা জিনিয়াকে। চোখ তার জিনিয়ার মেদহীন পেটের কাছে। কিডনি বিকল?
এজন্যই রক্তশূন্যতা? পা ফোলা?
সাহিল এগোলো। জিনিয়ার পায়ের কাছে বসে পড়ল। পা দুটো শক্ত করে ধরতেই ফুঁপিয়ে উঠল জিনিয়া। ফুঁপিয়ে উঠল সে নিজেই। তাদের পথ চলা কি এতটুকু? শুধু চারটা বছর? তাহলে এতসব পরিকল্পনা? কারজন্য সে সব ছেঁড়ে ছুড়ে দিল? জিনিয়া পা সরিয়ে নিল। বিছানার নিচ থেকে ছুরি বের করে গলার কাছে দিয়ে বলল
‘ আমাকে আরেকবার আরেকবার ওই নোংরা হাতে ছুঁলে খোদার কছম আমি নিজেকেই জবাই করে দেব।
সাহিল ডাকল
‘ জিনি?
‘ ওইনামে ডাকবেন না আমায়।
দরজা ধাক্কালো কেউ একজন। সাহিল দরজা খুলে দিল। ডুকে আসলো সালেহা। অবিরত চড় বসালো সাহিলের গালের এপাশ ওপাশে। থামলো না। সোরা গিয়ে আটকালো। নাহিল গিয়ে আটকালো। সাহিল দাঁড়িয়ে রইল। সালেহা চিৎকার করল
‘ একে পুলিশে দাও। পুলিশে দাও।
সাহিল দাঁড়িয়ে রইল। তাকে পুলিশে দেওয়ার সাধ্যি কার?
জায়িদ এল। তাননা মুননাকে নিয়ে। আনহা ও এল। বাড়ির সবার থমথমে পরিবেশ দেখে জানতে চাইল সে কি হয়েছে?
সালেহা বেগম দৌড়ে এসে বললেন
‘ বাবা খুনি। আমার ছেলে খুনি। আমার গুড্ডু। নেই। আমার আর নেই। ও মানুষ মারে। খুন করে। জায়িদ হতভম্ব।
আনহা বলল
‘ অফিসার,, মা ভুল বলছে। শুনবেন না।
জায়িদ বলল
‘ সাহিল এসব কি বলছে ওরা?
মুননা বলল
‘ আব্বাল কাছি গুলি আচে। আমাকে আল তুননুকে গুলি দিচে। নাহিল তাননা মুননাকে উপরে নিয়ে যায়। আবার এসে দেখে জায়িদ এগিয়ে গেল সাহিলের দিকে।
‘ সত্যিটা বল সাহিল।
সাহিল বলল
‘ তোকে কেন বলব?
জায়িদ বলল
‘ গুলি করতে বাধ্য হবো। বল।
সাহিল বলল
‘ কর গুলি। জায়িদ বলল
‘ রাগাস না।
সাহিল ধাক্কা মারে তাকে। চিৎকার করে উঠে আনহা। জায়িদকে ধরে তুলে। জায়িদ দাঁড়িয়ে উঠে গুলি তাক করে সাহিলের দিকে। সাহিল গুলির দিকে তাকিয়ে নিজে ও গুলি তুলে নেয়। জায়িদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ চালা। আমি ও চালায়। চালা?
আনহা চিৎকার করে কাঁদল। একবার সাহিলের কাছে গেল একবার জায়িদের কাছে গেল। জায়িদ বলল
‘ শুধু জুননুর জন্য, নইলে?
সাহিল বলল
‘ আমিও আমার বোনের জন্য। নইলে সেই অনেক আগে তোকে।
আনহা চেঁচিয়ে কেঁদে উঠে। ভাইয়া এমন করোনা? অফিসার গুলি নামান। কেউ নামায় না। জায়িদ বলল, নামা? গুলি নামা।
সাহিল নামালো না। সাহিল দেয়ালে গুলি ছুড়ল। জায়িদ বলল
‘ গুলি রাখ সাহিল। আত্নসমর্পণ কর।
সাহিল বলল
‘ তোকে ভয় পাইনা আমি। জায়িদ গুলি ছুড়ল। সাহিলের হাতের বাহুতে গিয়ে লাগলো। সাহিল ও ছুড়ল। জায়িদের হাতের বাহুতে গিয়ে পড়ল সে। আনহা চিৎকার করল। জিনিয়া চিৎকার করে উঠল ভাইয়া বলে।
আনহা পড়ে গেল। নাহিল গিয়ে ধরল তাকে। আনহা জ্ঞান হারালো। জায়িদ ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে বলল
‘ নাহিল আনহাকে ঘরে নিয়ে যাহ।
সাহিল দাঁড়িয়ে থাকলো। রক্তে ঝড়ছে অথচ তার কোনো ব্যাথা নেই। কোনো কষ্ট নেই। জায়িদ ঢলে পড়ল সোফায়। তাকে হসপিটালে নিয়ে গেল সাগর সাহেব আর সাজেদ সাহেব। সাহিল চলে গেল উপরে। জিনিয়া নরম পায়ে হেঁটে গেল তার পিছু। সাহিল তাকে আসতে দেখে এগিয়ে এল। জিনিয়া বলল
‘ আর কত?
সাহিল দৌড়ে এল। ঝাপটে জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ জিনি কষ্ট হচ্ছে। জিনিয়া বুঝতে পারল সাহিল জ্ঞান হারাচ্ছে। জিনিয়ার উপর নিজের ভার ছেড়ে দিল সাহিল। জিনিয়া শুইয়ে দিল তাকে। সাহিলের মুখ ছুঁয়ে ডাকলো তাকে। নাহিল ডেকে আনলো তাদের বাড়ির ডাক্তারকে। তিনি গুলি বের করলেন। ঔষধ দিলেন। ড্রেসিং করলেন। নাহিলের সাহায্যে খাটে শুইয়ে দিলেন। তাননা মুননাকে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হয় জাহেদার কাছে।
জায়িদ হসপিটাল থেকে হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে এনে আবার সাহিলের সাথে দেখা করতে এল। সাহিল সোজাসাপটা বলল তাকে।
‘ প্রমাণ জোগাড় কর। আমি পালাবো না।
জায়িদ মাথায় হাত চেপে বসে থাকলো। জিনিয়ার দিকে তাকাতে পারলোনা। জুননু এত কষ্ট কিভাবে সয়ে আছে। কিভাবে?
সাহিলের গায়ে সাদা শার্ট। জিনিয়া পাল্টে দিয়েছিল। বিছানায় গুটিসুটি মেরে ঘুম সে। সোরা আসলো। সালেহা আসলো। সাহিল বলল
‘ আমি আছি।
মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেঁদে চলে গেল সালেহা। সাহিল দরজা বন্ধ করে এসে শুয়ে পড়ল জিনিয়ার পাশে। জড়িয়ে ধরলে জিনি কি জেগে উঠবে? ইতস্তত বোধ করে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরল সাহিল। জিনিয়ার ঘুম ছুটলো অনেক্ক্ষণ পর। পেটের উপর দিয়ে আগলে রাখা হাতটা দেখে বুঝে গেল সে। সাহিলের দিকে ফিরে অনেক্ক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সে। ব্যান্ডেজে মোড়ানো কপালটাতে ছোট্ট ছোট্ট স্পর্শ আঁকল। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল নীরবে। সাহিলের বক্ষস্থলে নিজের ঠাঁই খুজে চোঝ বন্ধ করল সে। কতদিন হলো ঘুমায় না।

চলবে,
সবার মন্তব্য আশা করছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here