স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ বোনাস পর্ব-

0
938

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৪৫ (বোনাস পার্ট)

বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো নীলাংশ।
পায়রা কলেজে এখন। সুস্থ হয়েছে কয়েক দিন আগে।
নীলাংশও কয়েক দিন ভার্সিটি মিস দিয়েছে। আজ ভার্সিটিতে আসতেই বন্ধুরা ঝাপিয়ে পড়লো। কেনো,কী কারণে এতদিন আসেনি সে। নীলাংশ ফোন করে বলে দিয়েছিলো পায়রা অসুস্থ। কিন্তু, সবাই প্রচুর অবাক। অতিরিক্ত গুরুতর কোনো কিছু না হলে নীলাংশ ক্লাস কখনো মিস করে না। নীলাংশ বসে বসে ওদের অবাকে ভরা মুখটা দেখে হাসছে। অতঃপর, সবাইকে পায়রা আর তাঁর সম্পর্কের কথা পুরোপুরি খুলে বললো৷ সবাই আগেই সন্দেহ করেছিলো। কিন্তু নীলাংশের চুপ করে থাকা ওদের দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিলো। শুরু থেকে সবটা শুনতেই বন্ধুরা পাঁচ মিনিট নিরবতা পালন করলো। নিশান, প্রবীর নীলাংশকে মজা করে দুই চার ঘা লাগিয়ে দিলো। কিছু ক্ষণ পরই সবাই হু হা করে হেঁসে উঠলো। বন্ধুরা যে যেমনই হোক। কখনো নিজেদের মাঝে নেগেটিভ কিছু বলেনা। পায়রার কথা শুনে খুশিই হলো তারা। তিতিক্ষা, তেজসী আগে পায়রার নাম শুনে মুখ বাকালেও এখন আর তেমন করেনা। বরং, পায়রার উচ্চ মনের পরিচয়ে বেশ পছন্দ করে। সবার গল্পের মাঝে নীলাংশ ঘড়ি দেখে নেয়। পায়রার ছুটি হয়ে গেছে মনে হয়। চিন্তিত মুখে বলে –

‘তোরা থাক, আমি পায়রাকে বাসায় দিয়ে আসি। ‘

নিশান নীলাংশের কাঁধে হাত রেখে মশকরা করে বলে-

‘আরে মজনু, দুই দিনের প্রেমেই পাগল হয়ে গেলি। ‘

নীলাংশ বাঁকা হেঁসে বলে-

‘আমার লায়লা তো তোর লায়লার মতো তেজী বাঘিনী না! ‘

তেজসী খেপা হয়ে ফুঁসে উঠলো। চোখ বড়বড় করে বললো –

‘নীলাংশের বাচ্চা! ‘

নীলাংশ প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। ঘড়ি ঠিক করতে করতে বললো –

‘আমার বাচ্চা এখনও হয়নি। হলে, বাসায় দাওয়াত খেয়ে যাস। ‘

চোখ টিপ দিয়ে চলে যেতেই, সবাই হেঁসে বললো –

‘অসভ্য! ‘

.
.
.
পায়রাকে নিয়ে বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে নিলো। খাবার টেবিলে সবাই দুজনের অপেক্ষাতেই বসে ছিলো। পায়রা সাদা রঙা কামিজ পরে ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে রুম থেকে বের হলো। নীলাংশ সেদিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে কিছু একটা বিরবির করে বললো। পায়রা ভ্রু কুচকে পরমুহূর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। নীলাংশ তো ঠোঁট চেপে হাসলো। সবার চোখের আড়ালে চোখ দিয়ে ইশারা করলো ওর পাশের চেয়ারে বসতে। পায়রা লজ্জায় কী করবে বুঝতে পারছেনা। অপূর্বও চেয়ার টেনে বললো-

‘হোয়াইট ফেয়ারি, তুমি আমার পাশে বসো। ‘

পায়রা করুণ দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে অপূর্বের পাশেই বসলো৷ নীলাংশ গাল ফুলিয়ে তাকালো। রায়ানা আর রূপসা বেগম মিটিমিটি হাসছেন। অপূর্ব বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে নীলাংশকে ভেংচি কেটে দিলো। নীলাংশ বুঝতে পারলো, এটা সেদিন লুডুতে হারানোর বদলা।
অপূর্ব নিজেই ব্রেডে জেলি লাগিয়ে পায়রার প্লেটে দিলো। পায়রা হাসলো। নীলাংশ দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে ভেজিটেবল খাচ্ছে। সবাই অল্প আলাপ আলোচনা করতে করতে খাচ্ছিলো।
নীলাংশের ফোনটা বিকট চিৎকার করে বেজে উঠলো। ফোনটা দেখতেই চোখে মুখে হাসি ফুটলো। অনেক দিন হয়ে গেলো তানজিমা ভিনদেশে গেছেন।
নীলাংশ খুশিমনে রিসিভ করতেই ভেসে আসলো গগনবিহারী কান্নার দমকা আওয়াজ। তানজিমা কান্নার বেগে ভাঙা গলায় বললেন-

‘নীলরে! তোর মামা আর নেই। একটু আগেই ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্টার খুলে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছেন। ‘

নীলাংশ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো। কী বলবে ভেবে পেলো না। এতগুলো দিন সব ছেড়ে ভাইকে দেখাশোনার জন্য সেখানে পড়ে ছিলো। কীভাবে সব সামলাচ্ছে কে জানে! নীলাংশ উদ্বিগ্নতা নিয়ে বললো-

‘মম, তুমি চিন্তা করোনা। আমি আজই তোমার কাছে আসছি। ‘

সব বলে নীলাংশ ফোন রেখে মৃত্যুর খবরটা সবাইকে জানালো। নীলাংশের সঙ্গে আয়মান সাহেব যাবেন বলে ঠিক করলেন। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি করলো। পায়রা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে। শোক সংবাদে তারও খারাপ লাগছে। নীলাংশের পাশে দাঁড়িয়ে সে জামা কাপড় গোছাতে সাহায্য করলো। সবকিছু গোছানো হতেই নীলাংশের খেয়াল হলে পায়রা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। হাজার চিন্তা নিয়েও পায়রাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো-

‘মন খারাপ করোনা পিচ্চি। দ্রুতই ফিরে আসবো। ‘

পায়রা মলিন হাসি দেয়। কেমন যেন একটা গুমোট ভাব হচ্ছে। মন কু ডাকছে। কী যেনো একটা হারিয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে! তবুও নীলাংশের বুকে মাথা এলিয়ে বললো-

‘আমি অপেক্ষা করে থাকবো সুন্দর সাহেব! আপনি কিন্তু আমার হয়ে থাকবেন। ‘

নীলাংশ হেঁসে পায়রার হাতে অধর ছোঁয়ায়। পায়রা কথাটা কেনো বললো সে বুঝতে পারছেনা। সবাইকে বলে আয়মান সাহেব আর নীলাংশ বের হলো।

দুইদিনে নানা চিন্তায় পায়রার ঘুম নেই চোখে। নীলাংশ না আসা অবধি হবেওনা। পড়ার টেবিলে বসেও মনোযোগ দিতে পারছেনা। কলিং বেলের আওয়াজে হাসি ফুটলো মুখে। নীলাংশের আসার কথা। এক দৌড়ে গিয়ে হাসিমুখে দরজা খুলতেই মুখে ঘনকালো আমাবস্যা নেমে আসলো। চোখ অশ্রু কণার স্রোতে ভেসে গেলো। সুখের দিনগুলো বুঝি এখানেই শেষ!

চলবে-
গল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটা টার্নিং পয়েন্ট এই পর্বটা। কী দেখে পায়রার রিয়াকশন হলো, মন্তব্য করে যাবেন। দেখি কতটা মিলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here