স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ১৪

0
2542

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
part – 14
____________________________

পুরো ছয় ঘন্টা বাদে আমার জ্ঞান ফিরলো।
জ্ঞান ফিরতেই পাশে আব্বু, আম্মু , বড় মা , বড় আব্বু কে দেখতে পেলাম।
তাদের দিকে তাকাতেই চোখ গুলো সচ্ছ হয়ে উঠলো।
শরীর এখনো প্রচন্ড দূর্বল জোড় পূর্বক একটু
হাসলাম ।
বড় মা আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন ।
আম্মু আমার হাত ধরে চুমু খেয়ে বললেন
– ঠিক আছিস তুই ?
আমি অনেক কষ্ট করে আম্মুর হাতে হাত রেখে উওর দিলাম
– আম্মু আমি ঠিক আছি।
আম্মু এবার হু হু করে কেঁদে দিলেন
আব্বু আম্মু কে কাঁদতে দেখে কিছুটা বিরক্ত মুখে বললেন
– আহহহ। মেয়েটা আমার অসুস্থ আর তুমি এভাবে কাঁদছো ।
কি মেয়ে টার জন্য একটু পুষ্টিকর খাবার রান্না করবে তা না করে মেয়েটার সামনেই এভাবে কাঁদছো।
আব্বুর কথা শুনে বড় আব্বু বললেন
– থামম মায়ের মন এমন ই।
আর তাছাড়া আমাদের ফারাবির জ্বর যে স্বাভাবিক না তা তো আমরা জানি ।
যে কোনো কিছু হতে পারে তার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারব না ।
মনে নেই ফারাবির যখন তিন বছর তখন এই সমস্যা ধরা পরে ।

( আমার যখন তিন বছর তখন আমি এই জ্বর রোগে আক্রান্ত হই । আমার তিন বছরে কখনো জ্বর হয় নি ।
কিন্তু হঠাৎ করে একদিন শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে ।
মৃত্যু সয্যা ছিলাম , বাঁচার চান্স ছিলো খুবই স্বল্প ।
অনেক কষ্টে এই জ্বর সারানো হয় ।
দীর্ঘ দুই মাস হসপিটালে এডমিট ছিলাম ।
তারপর ই ডাক্তার বলে দিয়েছেন আমার এটা স্বাভাবিক জ্বর নয় ।
এটা অস্বাভাবিক ভাবে শরীরে জেকে বসেছে ।
এই জ্বর সেরে তো যাবে কিন্তু প্রায় সময় ই যেকোনো কারনে এই জ্বর দেখা দিতে পারে ।
সাধারণত সিজনাল জ্বর আসতে পারে কিন্তু সেটা তে সমস্যা নেই ।
কিন্তু অস্বাভাবিক জ্বর হলে আমার জীবন সংশয় হতে পারে।
তারপর থেকে আমার হালকা কয়েকবার জ্বর হয়েছে কিন্তু তেমন গুরুতর নয় । )
__________________________

বেশ কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা হলো ।
সবাই কে ফেলে চোখ জোড়া গেলো দরজার কাছে।
দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছেন ফারহান ভাইয়া ।
চেহারা একদম শুকিয়ে গেছে ।
ওনার এই চেহারা দেখেই বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো ।
কারন টা সম্পূর্ণ অজানা ।
ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই মানুষটি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সাথে ক্ষুধার্ত ।
কিন্তু এই সবের থেকে ও বেশি চোখে পরছে ক্লান্ত শরীরের স্নিগ্ধ চাউনি ।
মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে পাথর চাপা পড়ে ছিলো যেই পাথরের চাপায় ব্যথিত হয়েছেন বেশ কিছুক্ষণ যা এখন ক্ষানিকটা নির্মুল হয়েছে ।
তার ক্লান শরীরের এমন স্বস্তির চাউনিতে আমার চোখ জোড়া ধমকে গেল।
কি অমায়িক লাগছে ওনাকে ।
ওনার চেহারায় অসম্ভব মায়া ফুটে উঠেছে যা আগে কখনো দেখি নি।
আজকে ওনাকে স্নিগ্ধ লাগছে সবসময়ের মতো রাগি দেখাচ্ছে না ।
কতোক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম জানি না ।

________________________

এখন প্রায় তিনটা বাজতে চলল ।
আম্মু আর বড় মা বাসায় গেছেন আমার জন্য পুষ্টিকর খাবার রান্না করতে । আর তাদের ছাড়তে গেছে আব্বু ।
বড় আব্বু খাবার আনার জন্য বাইরে যেতে চাইলেন
তখনি ফারহান ভাইয়া বলল
– চাচ্চু আমি ওর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার আনিয়ে
নিয়েছি ।
তুমি যাও বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও ।
আমি ওকে খাইয়ে দিবো নে ।
বড় আব্বু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন ।
সকাল বেলা খবর টা শুনে সেই বিশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চলে এসেছেন ।
ক্লান্ত শরীর , অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে তাই সারাক্ষণ কাজের মাঝে থাকতে হয় ।
কিন্তু আমার জন্য এতোটা কষ্ট করতে হলো ওনাকে ।
এই অবস্থা তে নিজেকে বেশ অপরাধী লাগছে।
বড় আব্বু আমার মাথায় হাত বুলালেন তারপর বললেন
– তোর সমস্যা হবে মা ?
আমি হালকা হেসে বললাম
– কোনো সমস্যা হবে না বড় আব্বু ।
তুমি চিন্তা করো না আর বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও কালকের আগে অফিস যাবে না বুঝেছো, না হলো আমি রাগ করবো।

বড় আব্বু মৃদু হেসে বললেন
– তাই হবে ।
কিন্তু তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আয় ।

আমি হালকা হাসলাম ।
তারপর বড় আব্বু আমাকে আর ফারহান ভাইয়া কে বিদায় জানিয়ে চলে আসলেন।
ফারহান ভাইয়া এতোক্ষন একটি বারের জন্য ও আমার কাছে আসেন নি,এখনো আসছেন না ।
কিছুক্ষণ ঐ ভাবেই কেটে গেলো ।
তারপর ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বেডের পাশে রাখা ঢুল টাতে বসলেন
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন স্নিগ্ধ সেই দৃষ্টি তে ।
আমি আড় চোখে ওনাকে দেখে যাচ্ছি সরাসরি তাকাতে পারছি না ।

কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমার ডান হাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করলেন ।
হঠাৎ তার স্পর্শে কেঁপে ওঠে আমার শরীর ।

ফারহান ভাইয়া আমার হাত তার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ রেখেই বললেন
– জ্বর হলো কিভাবে ?

তার হঠাৎ এমন কথার আক্রমনের আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম

আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি কিভাবে বলব আমি।
এটা শুনলে যে কেউ বকা দিবে এই শীতের রাতে তা ও ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছি আমি ।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ফারহান ভাইয়া আবার বললেন
– উওর দে ?

আমি তাও নিশ্চুপ

এইবার ফারহান ভাইয়া খানিকটা উঁচু গলায় বললেন
– কথা কানে যাচ্ছে না ।
তোর সাহস কি করে হয় এই হিম লাগানো শীতের মধ্যে এতো রাতে তা ও ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ?

আমি এবার অবাকের চরম পর্যায়ে
ফারহান ভাইয়া জানলেন কি করে আমি এই শীতের রাতে গোসল করেছি ।

ফারহান ভাইয়ার চোখ গুলো সচ্ছ থেকে লাল বর্ন ধারন করেছে,
ভয় হচ্ছে আমার ।

আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।
আমাকে ভয় পেতে দেখে ফারহান ভাইয়া শান্ত হয়ে বললেন
– আর যদি কখনো এই হিম লাগানো শীতের রাতে গোসল করেছিস তো আমার একদিন না হয় তোর একদিন ।
কথাটা বলেই ফারহান ভাইয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ।
কয়েক মিনিট পর একটা নার্স কে নিয়ে রুমে
আসলেন ।
নার্সের হাতে খাবার ছিলো , খাবার টেবিলে রেখে ফারহান ভাইয়া কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন ।

ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে আমাকে শোয়া থেকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে উঠালেন ।
এমন অবস্থাতে ও আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
উনি বললেন চুল টা এখনো ভেজা ।
রাতে গোসল করে চুল না মুছেই বেঁধে রেখেছিল তাই মাথায় আর ও বেশি ঠান্ডা লেগেছে।

আচ্ছা এবার বুজলাম তাহলে এই ভেজা চুলের জন্য ওনি বুঝেছেন।

ফারহান ভাইয়া আমার চুল গুলো খুলে দিলেন ।
____________________________

আমাকে আধশোয়া রেখে ট্রে থেকে ফ্লয়েম পেপারে মুরানো বাটি টা বের করলেন।
হুমম সুপ ই এনেছেন কিন্তু এটা রোগী দের জন্য করা সুপ নয় ।
দেখে তো মনে হচ্ছে স্পেশাল কোনো সেফ দিয়ে রান্না করানো হয়েছে ।
ফারহান ভাইয়া সুপের বাটি থেকে খানিকটা সুপ অন্য একটা বাটিতে নিলেন।

আমি এই রকম ঘন সুপ খেতে পারি না ।
আমি সবসময় থিন চুপ খাই , কিন্তু ফারহান ভাইয়া এটা কি এনেছেন ।

চুপ হয়ে আছি কারন খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই ।

ফারহান ভাইয়া চোখ রাঙালেন।
আর আমার হাতে কেনলা থাকার কারনে আমি নিজ হাতে খেতে ও পারব না ।
তাই অনিচ্ছাকৃত হয়ে ও ফারহান ভাইয়ার হাত থেকেই খেতে হবে ।
আর ফারহান ভাইয়ার মুখের উপর কিছু বলা বা করা আমার কর্ম নয় ।
ফারহান ভাইয়া আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন
– একটু খেয়ে দেখ ভালো না লাগলে আর খেতে হবে
না ,জাস্ট একটু ।

তার এমন করুন আবেদনে কি করে বারন করি ।

ফারহান ভাইয়ার হাত থেকেই এক চামচ সুপ খেলাম ।
ওমাআআ এটা সুপ নাকি অন্য কিছু ।
অসম্ভব মজা আমি তো পুরো টাই শেষ করে দিবো।
কিন্তু আমি তো থিন সুপ ছাড়া খেতেই পারি না ।
এই সুপ টা এতো মজা কেন?

ফারহান ভাইয়া আমার মুখের ভঙ্গিতেই বুঝে গেছেন আমার এই সুপ টি ভালো লেগেছে কি না ।

তাই এই করুন মুহূর্তে ও আমাকে না জ্বালিয়ে ছাড়লেন না ।
টপাটপ এক দুষ্ট বুদ্ধি চাপলেন ।

আমার আড়ালে বাকা হেসে বললেন
– ফারাবি এই সুপ টা একদম ভালো না তাই না ।
আর খাওয়া লাগবে না ।
আমি বরং এটা অন্য কাউকে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি ।

_______________________

আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল।
এই সুপ টা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে ।
অসাধারণ খেতে যে , কিন্তু ওনি এই সুপ টা অন্য কাউকে দিয়ে দিবেন ।

উনি সুপের বাটি টা হাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন তখনি আমি ফারহান স্যার বলে ডাক দিলাম আমার ডাকে ওনি দাড়িয়ে গেলেন।
তারপর ফারহান ভাইয়া কে মলিন মুখে বললাম
– সুপ টা অনেক ভালো লেগেছে, আমি ই সুপ টা খেতে চাই ।

এই বলেই মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে
রইলাম ।
আর মাঝে মাঝে ফারহান ভাইয়া কে আড় চোখে দেখছিলাম।
আড় চোখে দেখলে ও ফারহান ভাইয়ার চোখ ফাঁকি দিতে পারলাম না ।
ওনার সাথে চোখাচোখি হয়েই গেল ।
ধ্যাত
আবার লজ্জা পেলাম ।
ফারহান ভাইয়া আমাকে লজ্জা পেতে দেখে মৃদু হেসে বললেন
– ফারাবি তুই নিজেকে অনেক চালাক ভাবতে শুরু করেছিস ।
কিন্তু ফারহানের কাছে তুই হাতের তালুর মতো।
বুঝেছিস
এই বলেই মাথায় হালকা করে গাট্টা দিলেন ।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমি মোটে ও নিজেকে চালাক মনে করি না ।
ফারহান ভাইয়া এবার একটু জোড়ে ই হাসলেন

আহা লোকটি কে একটু হাসাতে ই কতো টা অমায়িক লাগছে ।
আর এই বেটা বজ্জাত হনুমান সারাক্ষণ গুমরা মুখ নিয়ে থাকে ।
একটু হাসলে কি হয় ?
ইসসস যদি এই কথা গুলো এই মানুষটি কে বলতে পারতাম ।
দুর সোজা ঠাপ্পর মেরে দিতো এতো ভেবে তোর কাজ নেই ফারাবি চুপ করে থাকা ই শ্রেয় এই বলে নিজের মন কে শান্তনা দিলাম ।
এবার ফারহান ভাইয়া আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন এখনো জ্বর আছে।
ডাক্টর বলেছেন এক সপ্তাহ এডমিট থাকতে ।
এই কথা শুনা মাত্র আমার মাথায় বাঁচ পড়ল
আমি কোনো ভাবেই এতোদিন হসপিটালে এডমিট থাকতে পারবো না।
হসপিটালের উগ্র গন্ধ আমার সহ্য হয় না ।
ফারহান ভাইয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টি তে চেয়ে আছি আমার চোখ গুলো ছলছল করছে ।

ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন চোখের পানি টলমল করছে তারপর ওনি আমার চোখের কুর্নিশ থেকে পানি মুছে দিতে দিতে বললেন
– ফারাবি এভাবে কাঁদছিস কেন ।
আমি হসপিটাল অথরিটির সাথে কথা বলে রেখেছি তো , এভাবে কাঁদে না ।
তোর শরীর এখনো অসুস্থ অনেক ।
আর কাঁদবি না বুঝেছিস ।
আমি নিজেকে সামলিয়ে ফারহান ভাইয়া কে মৃদু স্বরে বললাম
– কি কথা বলেছেন ।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে তারপর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টানিয়ে বললেন
– সমস্যা নেই । কালকের দিনটা দেখব তোর শরীরের কি অবস্থা ।
অবনতির দিকে না গেলে পরশু নিয়ে যাবো ।
হসপিটালে কোনো সুস্থ মানুষ ই দুই দিন থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে ।
আর তুই তো অসুস্থ বাচ্চা তোকে নিয়ে রিস্ক নিবো না।

আমি ওনার কথায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম
আমি বাচ্চা কি বলে এই লোকটা ,ওনার মাথা ঠিক আছে তো ।

ফারহান ভাইয়া বললেন কি হয়েছে কি , বির বির করছিস কেন ?
আমি ব্রু কুঁচকিয়ে ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– আমি বাচ্চা ?
কোন দিক দিয়ে আপনার মনে হয় আমি বাঁচ্চা?
ফারহান ভাইয়া শরীর টাকে নাড়িয়ে একটা শ্বাস নিলেন তারপর বললেন
– তুই যদি বড় হতিই তাহলে এতো দিন ধরে আমাকে

এই বলেই চুপ হয়ে গেলেন।তারপর কথা পালটিয়ে বললেন
– তুই যদি বড় হতি ই তাহলে এখনো খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না আমায়।
এখন চুপচাপ হা কর খেয়ে রেস্ট নিবি ।

আমি বললাম
– ওওও
ফারহান ভাইয়া আমার মুখে চামচ এগিয়ে দিলেন
তারপর বললেন
– হা কর
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– আপনি খেয়েছেন ?
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– আমি খেয়ে নিবো নে,
তুই এখন হা কর তো ।

আমি বললাম
– এখানে অনেকটা সুপ আছে আমি এতো খাবো
না ।
আপনি ও একটু খেয়ে নিন।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– হঠাৎ আমার জন্য চিন্তা করছিস যে ?

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম
– আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে না খেয়ে আছেন ।
আর আমি কাউকে অনাহার রেখে খেতে পারি না ।
ফারহান বললেন
– আচ্ছা ঠিক আছে চল আমি ও খাবো ।
কিন্তু আগে তুই হা কর।
আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
– প্রমিস

ওনি আমার হাতে হাত রেখে বললেন
– প্রমিস

আমি হেসে বললাম
– ঠিক আছে ।

ফারহান ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো সাথে নিজে ও খেয়ে নিল ।

খাওয়া শেষ হলে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
– রেস্ট নে।
আমি আসছি।

আমি বললাম
– আচ্ছা ।
একটু তাড়াতাড়ি আসবেন।
আমার হসপিটালে একা থাকতে অস্বস্তি বোধ হয় ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– জাস্ট 20 মিনিট ।
– ওকে।

ফারহান ভাইয়া দরজার কাছে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলেন ।
তারপর আশে পাশে তাকিয়ে আবার ফিরে আসলেন ।
আমাকে বললেন
– আবার একটু উঠতে হবে ফারাবি ।
আমি বললাম
– কেন ?
ওনি বললেন
– চুল গুলো কেমন হয়ে গেছে দেখেছিস । আর এখন শুকিয়ে ও গেছে ।
এভাবে থাকলে তোর অস্বস্তি লাগবে।
চুল বাঁধতে হবে আর এতোক্ষনে নার্স ও এসে পরবে ।
একা না রেখে যাওয়াই বেটার।
এই বলে আমাকে আবার আধ শোয়া করালেন ।
তারপর সুন্দর করে মাথা আছড়িয়ে দুই টা বিনুনি করে দিলেন ।
আমি অবাক হয়ে আছি এই লোকটার বুঝি চুল বাধার গুন ও আছে ।
ফারহান ভাইয়া হেসে বললেন
– অতো ভাবিস না ।
আমি আরো অনেক কিছু ই পারি ।

আমি এখনো হা হয়ে আছি।
বিনুনি করা শেষ হতে না হতে নার্স এসে হাজির ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমি বেক না করা অব্দি মেম কে এক মুহূর্ত একা রেখে যাবেন না ।
নার্স মাথা দুলিয়ে বললেন
– ওকে স্যার ।

তারপর ফারহান ভাইয়া আমাকে বললেন
– কিছু দরকার হলে নার্স কে বলবি ।
আমি বললাম
– আচ্ছা ।

উনি আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।
____________________________

প্রায় দশ মিনিট পর দেখলাম
রিফাত ভাইয়া, মনিকা আপু , ছোট চাচ্চ এসেছেন।

আমি অবাক হলাম না । কারন আমার একটু কিছু হলে ও এরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসবেন ।
আর এখন তো অস্বাভাবিক জ্বর হয়েছে।
কিন্তু কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম ।
কারন আমার জন্য সবাই কে কষ্ট করতে হলো।
সব কাজ কর্ম ফেলে এতো দূর থেকে জার্নি করে আসতে হলো সবাইকে ।
মনের ভেতর কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে ।
_____________________________

চাচ্চু এসেই বলল
– আমার আম্মি জানের শরীর ঠিক আছে এখন ।

আমি হেসে বললাম
– আমি ঠিক আছি চাচ্চু ।
শুধু শুধু এতো কষ্ট করতে গেলে কেন ।

চাচ্চু কে উওর না দিতে দিয়ে রিফাত ভাইয়া বলল
– মারবো এক ঠাপ্পর ।
কষ্ট হয়েছে কে বলেছে তোকে ,অসুস্থ হয়ে নিজে পড়ে আছে ।
অথচ আমাদের সান্ত্বনার বানী শোনানো হচ্ছে।
সুস্থ হয়ে কথা বলবি ।

মনিকা আপু রিফাত ভাইয়া কে থামিয়ে বলল
– আহা । রিফাত মেয়ে টাকে বকো না তো ।
এমনিতেই অসুস্থ তার ওপর এভাবে বলছো কেন।

রিফাত ভাইয়া ক্ষানিকটা চুপসে গেলেন ।
তারপর ই আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন
– জ্বর কমেছে।
কিন্তু তাই বলে যে আজকেই বাসায় যাওয়ার বায়না ধরবি তা হবে না ।
ফারহান বলেছে কালকের দিন হসপিটালে থেকে সব ঠিক ঠাক থাকলে পরশু নিয়ে যেতে ।

আমি বললাম
– হুমম ।

ফারহান ভাইয়ার কথা শুনে মনটা আনচান করে উঠল।

চাচ্চু আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন আর বললেন
– চিন্তা করিস না । তোকে পরশু ই নিয়ে যাবো বাসায়।

চাচ্চু র কথা এই মুহূর্তে আমার কান অব্দি পৌছোলো নাকি তা নিয়ে আমি সন্দিহান ।
বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল ।

কিন্তু আমার চোখ জোড়া এখন কাউকে খুঁজছে ।
কিন্তু কোথায় সে ?
_______________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । কাল কে তোমরা অনেকেই বলছো পার্ট টা বড় করে দিতে ।
তোমাদের কথা রাখতে গল্প বড় করে দিয়েছি । আর ও বড় করে দিতাম । কিন্তু সকাল থেকে ক্যারাম খেলার ভুতে ধরেছিল আমাকে ।
তিন ঘন্টা খেলে একটু আগে আসলাম ।
তাই আরো বড় দিতে পারলাম না ।
তবে প্রতি দিন এতো বড় পার্ট দিতে পারবো না বোধ
হয় ।
চেষ্টা করবো , ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন ।
গল্প টি কেমন হলো জানাবেন ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন ।)

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here