স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ২২

0
1888

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 22
_________________________

সকাল বেলা ঘুম ভাঙল সূর্যের কোমল রশ্মির ছোঁয়া তে।
চোখ পিট পিট করে তাকালাম তারপর আরমোরা ভাঙার জন্য হাত টা নাড়াতেই টান অনুভব করলাম।
দেখার জন্য হাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম, ফারহান ভাইয়া হাত ধরে শুয়ে আছেন।
লোকটা সত্যি ই খুব ভালো।
এই দুটো দিন আমার অনেক খেয়াল রেখেছে।
কালকের কথা মনে পড়তেই খানিকটা লজ্জা পেলাম।
কালকে ওনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
নিজেকে শান্ত করে যখন বুঝতে পারলাম বিষয় টা তখন বেশ লজ্জা লাগছিল।
কিছু ক্ষন পর ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ সুপ টা খাইয়ে দিলেন।
তারপর ওনি আমার বিনুনি টা খুলে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে আছি কারন একটু আগেই নার্স বিনুনি বেঁধে দিয়ে গেলেন।
তাহলে এটা ওনি কি করলেন।
ওনি আমার ভাবনাকে বাড়তে না দিয়ে আবার বিনুনি করে দিলেন।
আমি বললাম
– এটা কি হলো।
ওনি উত্তরে শুধু হাসলেন তারপর বললেন
– সব কিছু যদি বুঝতে পারতি তো এতো কষ্ট করতে হতো না।
অবশ্য এতে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

আমি হা হয়ে ই রইলাম এই লোকটাকে বুঝা আমার কর্ম নয় ।

তারপর ফারহান ভাইয়া সুন্দর করে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম কে জানে।
আর সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই দেখলাম ওনি পাশেই আছেন।

6,30 বাজতে না বাজতে ওনার ফোনে এলাম বেজে উঠলো।
আরামের শব্দ টা হলো এমন
– ফারহান ওয়েক আপ।
ফাস্ট

এই রকম এলাম ও হয় না চাইতে ও ফিক করে হেসে দিলাম।

আর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে পিটপিট চোখ করে তাকিয়ে আছেন।

ওনি আরমোরা ভেঙে বললেন।
আম লেট এক্সচেলি কাল অনেক রাতে ঘুমিয়ে ছি তাই।
আমি এখনো হাসছি, আমার হাসি দেখে ফারহান ভাইয়া মুখে খানিকটা বিরক্তি টেনে বললেন
– হোয়াট হ্যাপেন?
আমি এবার একটু চুপ হয়ে বললাম
– আপনার এলাম।
ফারহান ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে ই বললেন
– সো হোয়াট ।
আমি এবার একটু মন খারাপ করেই বললাম
– আপনার এলাম টা এমন আজব তাই হাসছিলাম।

ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– স্টুপিট।
তারপর ই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ।

আমি হা হয়ে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।যাক বাবা এটা কি হলো।
আজব তো, স্টুপিট এর কি দেখলেন ওনি।
আর কালকে কতো সুন্দর করে কথা বললেন আর আজকে।
ধ্যাত এই লোকটি একটা হনুমান।
কখন কি করে কিছুই বুঝি না।
যত্তসব ফালতু মার্কা ফারহান ।
_______________________

আজ দুপুরেই আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।
আমি 70 % সুস্থ হয়ে গেছি।
সুস্থ না হয়ে কি উপায় আছে , ফারহান ভাইয়ার যে ফরমালিটিস বাববাহ।
এই ভাবে না ঐ ভাবে , এটা করা যাবে না ঐ টা করতে হবে।
কেউ না চাইলে ও সে সুস্থ হতে বাধ্য ।
যাই হোক হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়াতে বেশ খুশি লাগছে।

এখন প্রায় 1 টা বাজে।
আমার পাশে আব্বু, ছোট চাচ্চু, রাজিব চাচ্চু আর মনি আন্টি বসে আছে।
ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া সব কিছুর ব্যবস্থা করছে।
সবাই বেশ খুশি, বড্ড বেশি ভালো বাসে যে আমায় ।
আর আমি এদের সবাই কে কষ্ট দিচ্ছি।
সবার সাথে গল্প করছি এমন সময় ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া আসলেন।
রিফাত ভাইয়া এসেই বলল
– যা যা খাটিয়ে শেষ করে দিলি আমাদের ।
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম
– তুমি খাটবে না তো কে খাটবে।

রিফাত ভাইয়া চোখ নাচিয়ে বলল
– তোর বর কে বল না।
ফারহান ভাইয়া ফোন স্কল করতে ব্যস্ত ।
অথচ কাল অব্দি কতো কেয়ার করেছে আমার।
আর এখন আমার দিকে তাকাচ্ছে ও না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম
– ওনি ওনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
এখন ওনি আর কি করবেন।

রিফাত ভাইয়া আমার বরের কথা বলাতে ফারহান ভাইয়া আলতো হাসলেন।
যার অর্থ আমি বুঝতে পারলাম না।

আব্বু ফারহান ভাইয়াদের বলল
– সব কমপ্লিট ?

ফারহান ভাইয়া ফোনে স্কল করতে করতেই বললেন
– হুম অলমোস্ট।
জাস্ট ডক্টর এসে চেকআপ করে যাবেন।

কিছুক্ষণ পর ই ডক্টর চলে আসলেন।
ফারহান ভাইয়ার আর রিফাত ভাইয়ার সাথে হ্যান্ডশেক করে কিছু কথা বললেন।

কি কথা হলো তা আমি শুনতে পেলাম না।
কারন ওনারা দরজার কাছে ছিলো।

ডক্টর এসে আমাকে চেকআপ করে গেলেন।
তারপর বললেন 7 দিন হাফ রেস্ট নিতে।
কিছু ঔষধ লিখে দিলেন ।
তারপর বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন ।

রিফাত ভাইয়া আমার সাথে কিছু কথা বললো।
আর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে একটি বার তাকালেন ও না।
ওনি ওনার ফোন নিয়ে ই ব্যস্ত।
নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড , হয়তো আমার খেয়াল রাখার জন্য এই দুদিন কথা বলতে পারে নি।
আর তাই আজ চ্যাটিং করছেন ।

ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে রিসিপশন এ পাঠালেন।
তারপর আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
হঠাৎ একটা ম্যাসেজ এর শব্দ এলো।
সাউন্ড অন করা ছিল তাই খুব সুন্দর করে আমার কানে পৌছালো।
আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কিন্তু ওনি ওনার ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
তারপর পর পর আর পাঁচ টা ম্যাসেজ আসলো।
এবার ওনার মুখে বিরক্তি প্রকাশ পেল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি এতোক্ষন পর ওনার খেয়াল হলো ।
ওনি আমার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল।
একটু ইতস্তত বোধ করে চোখ নামিয়ে নিলাম।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন বুঝতে পেরে হালকা করে তাকালাম।

ফারহান ভাইয়া সোফায় বসে বসেই বলল
– ওয়াননা সি দ্যা ম্যাসেজ?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– নাহহহ।

ওনি আমার কাছে এসে বলল
– হোয়াই ?

আমি বললাম
– নাহহ না আপনার ম্যাসেজ আমি কেন দেখতে যাবো।

ফারহান ভাইয়া এইবার খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ই বললেন
– আমি বললাম তাই ।

আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই ওনি ওনার ফোন টা আমার হাতে দিয়ে বললেন
– দেখতে ই হবে।

আমি মাথা নাড়ালাম।

ওনার ম্যাসেজ টা এসেছে কোনো এক মেয়ের আইডি থেকে।
নিশ্চয়ই গার্লেফ্রন্ড, হবেই তো ওনাকে দেখে মেয়েরা ক্রাশ খেতে খেতে পেট ভরিয়ে ফেলে।
আর এমন একজনের গার্লফেন্ড তো থাকবেই।
গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল।
মেয়েটা এর আগে ও অনেক অনেক ম্যাসেজ দিয়েছে ।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া সিন করে একটার ও উত্তর দেন নি।
আজকে দুটো পিক পাঠিয়েছে।
পিক টা যথেষ্ট বাজে যা দেখে আমার ই চোখ কপালে উঠে গেছে।
মেয়েটা লিখেছে

– ফারহান আই লাভ ইউ।
তোমাকে দেখেই আমার অবস্থা খারাপ।
তুমি এতো হট , ও মাই গড।
প্লিজ একসেপ্ট করো প্লিজ।

কি অসভ্য মেয়ে এগুলো কি ধরনের ম্যাসেজ রে বাবা।
আবার একটা ভিডিও ও দেখতে পেলাম।
ফারহান ভাইয়া দূরে বসে আছেন।
তারপর বললেন
– ভিডিওটি প্লে কর।

আমি তেমন কিছু না ভেবে ভিডিও অন করলাম।
যা দেখলাম এতে আমার লজ্জার পাশাপাশি রাগ ও হলো।
একটা মেয়ে হয়ে এতো নিচু মন মানসিকতা ছি।

ভিডিও টা তে মেয়েটা বাজে ড্রেস পড়ে আছে।
সাথে আবার কিছু বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে।

ও নাকি রুম ডেট করতে চায় ফারহান ভাইয়ার সাথে।
ছিইইই

ভিডিও টা অফ করে এখন লজ্জায় ফারহান ভাইয়া দিকে তাকাতে ও পারছি না।

ফারহান ভাইয়া বলল
– কি করা উচিত ?
রুম ডেট করা ?

ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।
আমাকে কি ধরনের প্রশ্ন করছেন ওনি। ওনার যা ইচ্ছে করুক না।

ফারহান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– ব্লক না করে এভাবে বসে আছিস কেন ?
আমি কি রুমডেটে যাবো এখন ?

ওনার কথায় আমি চমকে উঠলাম ।
তাড়াতাড়ি ব্লক করে দিলাম।

ওনার দিকে তাকাতে পারছি নি আমি।
লজ্জায় মাথা নিচু করেই ওনাকে ওনার ফোন দিলাম ।
কিছুক্ষণ পর ই রিফাত ভাইয়া এসে বলল
– কমপ্লিট ।
ফারাবি কে এখন বাসায় নিতে পারব।
___________________

গাড়িতে বসে আছি ।
গাড়ি চলছে তার আপন মনে।
বেশ ভালো লাগছে, হসপিটালের উগ্র গন্ধ থেকে মুক্তি পেয়ে মনে হচ্ছে যেন আমি কতো জনম পর বাইরের জগত টাকে দেখছি।
কতো সুন্দর এ পৃথিবী ।
এ সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেমে গেল।
হঠাৎ গাড়ি কেন থেমে গেল তা দেখার জন্য বাইরে তাকাতেই দেখলাম আমরা বাসায় পৌছে গেছি।
বাহহহ এতো তাড়াতাড়ি পৌছে ও গেলাম।

ফারহান ভাইয়া আগে নেমে একটু পেছনে দাড়িয়ে আছেন ।
রিফাত ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিলো।
হাঁটতে অসুবিধা নেই বলে একাই হেঁটে ভেতরে যাচ্ছি।
হঠাৎ কোনো কিছুর সাথে লেগে পড়ে যেতে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু তার আগেই ফারহান ভাইয়া আমাকে আকরে নিলেন।
ব্যস্ত হয়ে বললেন
– ব্যথা পেয়েছিস ?

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওনি আমার পা ধরে নাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি তাড়াতাড়ি একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম
– কি করছেন কি ?

ফারহান উঠে ব্রু কুঁচকে দাঁড়ালেন ।
তারপর আমার দিকে আগাতে লাগলেন।
আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু সুরে বললেন
– আচ্ছা ।
পা ধরেছি বলে সমস্যা হচ্ছে, তাহলে একটা কাছ করে যাক কি বলিস?

আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কি কাজ ?
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ডেবিল হাসি দিয়ে বললেন
– তোকে জড়িয়ে ধরা যাক।
আমি কিছু বলার আগেই রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে ডাক দিলেন।
ফারহান ভাইয়া গটগট করে চলে গেলেন আর আমি হয়ে গেলাম আহাম্মক ।

________________________

বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার সময় কালো গোলাপ গাছ দুটো দেখতে পেলাম।
দুটো গাছে পাঁচ টা ফুল ফুটেছে।
বেশ কিছু কলি ও দেখতে পেলাম।
বড় ই সুন্দর এ গাছ।
কালো গোলাপ কে আজ এতো ভালো লাগছে কেন বুঝি না।
আসলে প্রতি টা রঙ ই সুন্দর তা প্রয়োজন অনুসারে

ধরুন অন্ধকার যদি কখনো শেষ না হয় তাহলে আপনি কি বাঁচতে পারবেন?
যদি ও পারেন সেটা অত্যন্ত কষ্টকর।

ঠিক তেমনি ভাবে যদি দিনের পরে রাত না আসে তাহলে আপনার বেঁচে থাকা হুমকি স্বরূপ হয়ে যাবে।

তাই প্রতিটি জিনিস ই প্রয়োজনীয় সঠিক সময় আনুসারে।

আল্লাহ্ র সৃষ্টির সব কিছুই প্রয়োজনীয়।

এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির মেন ডোরে পৌছে গেলাম।
পৌঁছাতে না পৌঁছাতে উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি হলো।
অসাধারণ লাগলো বিষয় টা ।
দেখলাম সবাই দাড়িয়ে আছে , সাথে ছোট্ট একখানা কেক। যার মধ্যে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে হাতে আছে একটা বোর্ড ।
যার মধ্যে লেখা আছে
ওয়েলকাম বেক টু হোম।
সবার মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি দেখতে পেলাম।
কেক টা কেটে সবার সাথে হালকা কথা বলে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম।

যদি ও এখনো আমার হাঁটতে অসুবিধা হয়।
কিন্তু ধীরে ধীরে হাঁটতে পারি আমি।

রুমে ঢুকেই মন ভরে গেল।
নিজের রুম টাকে দেখতে পেয়ে যেন আত্মায় পানি ফিরে এলো।
কথা না বলে চলে গেলাম বাথরুমে।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে ফিরে এলাম।
ফিরে এসে দেখলাম ফারহান ভাইয়া আমার বই গুলো নাড়াচাড়া করছেন।
বইয়ের দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে কাঠ।

____________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । জানি তিনটে দিন গল্প না দেওয়াতে আমার রিডার্স গুলো কষ্ট পেয়েছে আর খানিকটা রেগে ও আছে।
আমি দুঃখিত কান ধরে ক্ষমা চাইছি।
আজকে থেকে দুটো পার্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশআল্লাহ ।
সন্ধ্যায় আরেকটা পার্ট পাবেন।
আশা করি নিশ্চয়ই পরবেন।
আচ্ছা গল্প টা 30+ নাকি 35 + পর্ব করবো ।
সবাই মতামত জানাবেন প্লিজ ।
আর গল্প টি কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক দিয়ে আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকো থাকুন।)

বি : দ্র: ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here