#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part – 8
নীলিমা যেই সাবজেক্ট এ পড়াশুনা করবে সেটার জন্য এক বছর ভারসিটিতে একস্ট্রা কোর্স করতে হবে।
আর তারপর ফাস্ট ইয়ার এ এডমিশন।
নীলিমা ভারসিটিতে এডমিশন নিয়ে নিলো।
এডমিশন টেস্ট এ ও ফাস্ট হলো নীলিমা।
আজ ভারসিটির প্রথম দিন , নীলিমা মনোযোগ দিয়ে রেডি হচ্ছে।
গোলাপি রঙের কটন থ্রি পিস পড়েছে, এক সাইট করে বেনী করে , হাতে ওয়াচ আর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতে কিছু বই নিয়ে রুম থেকে বের হলো নীলিমা।
নীলিমা অত্যন্ত শান্ত, শিষ্ট , নম্র ভদ্র আর তেমনি সুন্দরী।
ফর্সা গায়ের রঙ, কোমর অব্দি স্লিক চুল , থুতনির একটু উপরে কুচকুচে কালো তিল।
মায়াবি চোখ , ঘন চোখের পাপরি ঠোঁটে মিষ্টি হাসি।
নীলিমা সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই মিসেস চৌধুরী ডাইনিং থেকে মেয়ের কাছে আসলেন।
মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন
– মাশআল্লাহ।
নীলিমা মৃদু হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
মিসেস চৌধুরী হালকা হেসে বললেন
– নাস্তা টা করে যেতেই তো পারতি নীলু ।
– না আম্মু , ক্যান্টিন থেকে সবাই এক একসাথে খেয়ে নিবো।
– আচ্ছা যাহহ সাবধানে।
ড্রাইভার কে বলছি তোকে পৌছে দিতে।
– আচ্ছা আম্মু টাটা ,,, সময় করে খেয়ে নিও।
আর বাপী কে ও খেয়ে নিতে বলো।
নীলিমা, মা কে বিদায় জানিয়ে গাড়ি তে উঠে বসলো।
গাড়ি চলছে, মৃদু হাওয়া এসে নীলিমার বেনী করা চুল গুলো কে হালকা এলো মেলো করে দিয়ে যাচ্ছে ।
নীলিমা চোখ বুঝে বাতাস কে অনুভব করছে।
কতো সুন্দর এ পৃথিবী, ইসস হাজার বছর বাঁচা যেতো যদি।
নীলিমার ভাবনার সুতো ছিড়লো ড্রাইভার এর ডাকে।
নীলিমা গাড়ি থেকে নেমে,, ব্যাগ থেকে হাজার টাকা বের করে বলল
– কিছু খেয়ে নিও , আর আমি চারটের সময় যাবো, বাসার আগের স্টপ থেকে আমায় পিক করবা।
বাপী কে বলো না আবার, আমি যে লোকাল গাড়ি করে ফিরবো।
ড্রাইভার মৃদু হেসে বলল
– ম্যাডাম স্যার জানলে আমার চাকরি থাকবে না তো।
– জানলে ম্যানেজ করে নিবো,,।
আর তুমি যদি বাপী কে না জানাও তো সামনের মাসে তোমায় এক উইক ছুটি এনে দিবো,,, গ্রামে গিয়ে বউ বাচ্চার সাথে সময় কাটাতে পারবে।
ডিল ডান তো ?
ড্রাইভার হাসতে হাসতে নীলিমার হাত থেকে টাকা নিয়ে বলল
– ডান।
নীলিমা মুচকি হেসে ভারসিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে চলে গেল।
ড্রাইভার টাকা টা পকেট এ পুরে আপন মনে আওরাতে লাগলো
– মেয়েটা কতো ভালো, এতো বড়লোক হয়ে ও তার কোনো রেস নেই।
ইসস তার যদি ছোট বোন থাকতো তাহলে বুঝি নীলিমার মতোই এমন ভালো হতো।
ড্রাইভার মুচকি হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
নীলিমা ভারসিটি তে ঢুকতেই মিহি এসে জড়িয়ে ধরলো।
নীলিমা মুচকি হেসে বলল
– হয়েছে এবার তো ছাড়।
মিহি নীলিমা কে ছেড়ে বলল
– ইসসস ঢং করিস কেন ?
– কোথায় ঢং করলাম?
মিহি নীলিমা কে একপলক দেখে বলল
– হ্যা রে নীলু তোকে এতো কিউট লাগছে কেন রে ?
তোকে দেখে তো আমার হার্টবিট ই বেরে গেছে ।
নীলিমা ভ্রু কুঁচকে বলল
– তোর তেল মাখানো কথা বন্ধ করবি।
মিহি মুখ গোমড়া করে বলল
– সত্যি বলছি রে ,,,, অনেক সুন্দর লাগছে।
– আচ্ছা বাবা ,,, রাগ করিস না,, আমি বিশ্ব সুন্দরী।
– ইসসসস আমার বড় ভাই থাকলে তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করিয়ে দিতাম।
নীলিমা হাসতে হাসতে বলল
– এর জন্য ই তো তোর বড় ভাই নেই।
মিহি চোখ রাঙিয়ে বলল
– ফাজিল মেয়ে ,,, আচ্ছা শোন নাস্তা একসাথে করবি তো ?
– হুমমম বাকি রা কোথায় ?
– ক্যান্টিনে বসে মাছি তাড়াচ্ছে।
নীলিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– কিহহহ
– আরে ইয়ার এখন তো মাত্র আট টা বাজে,,, সাড়ে আট টার আগে ক্যান্টিনে কেউ নাকি আসে না।
– ওহহহহহ আচ্ছা চল , আড্ডা দিবো দ্যান নয়টার আগে নাস্তা করবো।
সবাই কে ক্যান্টিন থেকে ক্যাম্পাসে আসতে বল।
– হুমমমম ফোন দিচ্ছি।
_________________________
সকালে ক্যান্টিনে নাস্তা করে ,,, ক্লাস এ ঢুকলো নীলিমা।
সবাই যে যার মতো গল্প করতে ব্যস্ত।
নীলিমা কনা কে হালকা ধাক্কা মেরে বলল
– এইইই রুমির আবার কি হয়েছে ,, মন খারাপ কেন ?
– আর বলিস না ,,, দিন রাত বি এফ এর সাথে ঝগড়া করে।
কারন ছাড়াই বেচারা রে বকা দিতে থাকে।
এই মেয়েটা বেচারার অবস্থা নাজেহাল করে দিছে।
আবার ঝগড়া করে নিজেই মুখ গোমড়া করে থাকে।
নীলিমা হাসতে হাসতে বলল
– ওহহ তাই বল।
এই এই চুপ কর ,,, স্যার এসেছেন ।
সবাই স্যার কে উঠে সম্মান জানালো।
প্রথম দিন হওয়াতে কোন পড়াশুনা হলো না সবার সাথে শুধু পরিচয় হলো।
ক্লাস শেষে সবাই বের হলো লান্স করতে।
একটা বেজে গেছে তাই ক্যান্টিনে প্রচুর ভির ,,,,,,।
সবাই যে যার মতো খাবার নিচ্ছে,,, নীলিমা খাবার টেবিলে রেখে বলল
– এই এই কেউ ভ্যানিলা সেক খাবি ?
সবাই বলল
– নাহহহ
নীলিমা মুখ গোমড়া করে বলল
– তোরা যে কেন ভ্যানিলা সেক পছন্দ করিস না কে জানে।
আচ্ছা আমি আমার জন্য নিয়ে আসছি।
নীলিমা ড্রিঙ্কস কোড থেকে ভ্যানিলা সেক নিয়ে নিলো ।
পেছন ঘুরতেই একজনের সাথে ধাক্কা খেল নীলিমা।
নীলিমা থম মেরে তাকাতেই দেখলো লম্বা করে একটা ছেলে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
ভ্যানিলা সেক এর অর্ধেক টা গিয়ে পড়ছে তারউপর।
নীলিমা মাথা নিচু করে ব্যস্ত কন্ঠে বলল
– আম সরি ,,, আমি আসলে দেখতে পাই নি।
রিয়েলি ভুল করে পড়ে গেছে ,,,,,
ছেলেটা শার্ট থেকে ভ্যানিলা সেক ঝারতে ঝারতে বলল
– ইটস ওকে ,,,, আপনি ব্যস্ত হবেন না।
আম ওকে ,,,,,
ভুল হতেই পারে,, ডোন্ট ওরি।
নীলিমা ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে ছেলেটার হাতে দিয়ে বলল
– সরি ,,,, মুছে নিন প্লিজ ।
নীলিমা দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো।
টেবিলে গিয়ে বসতেই রুমি বলল
– কিরে তোর সেক গেলো কোথায় ?
– এক্সচেলি একটু মিস্টেক হয়ে গেছে ,,,, কোড থেকে সেক নিয়ে পিছনে ঘোরার সময় একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে যার ফলে সেক টা তার শার্ট এর উপর পড়ে।
– ওহহহ,,,, কিছু বলেছে তকে ?
– নাহহহ ।
– আচ্ছা তাহলে আর কি , এটা তো তুই আর ইচ্ছে করে করিস নি তাই না।
– হুমমম
সারাদিন বেশ ভালো ই কাটলো নীলিমার, নতুন ক্যাম্পাস, সব কিছুই বেশ মনে ধরলো।
নীলিমা বান্ধবীদের সাথে লোকাল বাসে করে শেষ স্টপ অব্দি আসলো।
তারপর ড্রাইভার কে কল করতেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসে নীলিমা কে নিয়ে গেল।
বাসায় গিয়ে বেশ ট্রায়ার্ড হলো নীলিমা।
রুমে গিয়ে লম্বা সাওয়ার নিয়ে মাথায় ট্রাওয়াল পেচিয়ে বের হয়ে হলো।
তারপর বেডে শুইয়ে ফোন স্ক্রল করে গান প্লে করে দিলো।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বেডে গা দিতেই নীলিমার চোখ জুড়ে ঘুম এসে জড়িয়ে নিলো।
হঠাৎ করেই নীলিমার ঘুম ভেঙে গেল,,, নীলিমা জেগে হাঁপাতে লাগলো।
সকালের ঘটনা টা স্বপ্নে ভেসে উঠেছিল,,,, আর ছেলেটার সাথে স্বপ্নে নীলিমা বেশ ঝগড়া হচ্ছিলো।
নীলিমার গা বেয়ে টপ টপ করে ঘাম পড়তে লাগলো।
নীলিমা দ্রুত গতিতে এসি অন করে দিলো।
নীলিমা মাথা চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।
আর ভাবতে লাগলো কেন এমন বিপরীত স্বপ্ন দেখলো নীলিমা।
ছেলেটা তো নীলিমার উপর রাগ দেখায় নি , উল্টো নীলিমা কে সান্ত্বনা দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার এলাম বেজে গেল।
নীলিমা এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে ডিনার করতে চলে গেল,,,,।
নীলিমা আগে আগে ডিনার কমপ্লিট করে ফেলে । কারন খালি পেটে পড়াশুনা হয় না তার ,,,
ডিনার শেষ করে বাবার সাথে গল্প করতে লাগলো।
আজাদ চৌধুরী চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে বললেন
– কেমন লাগলো নতুন ক্যাম্পাস?
– খুব ভালো লেগেছে আব্বু।
অনেক সুন্দর ক্যাম্পাস, পুরো ভারসিটি টাই সুন্দর।
আজাদ চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন
– হুমম হতেই হবে ,,, আমার মেয়ে পড়ে বলে কথা।
তুই তো ফরেন কান্ট্রি তে পড়াশুনা করতে চাইলি নাহহ ,,, সেখানে আরো ও ভালো ভারসিটি।
– থাক না আব্বু , এখানেই সবার সাথে ভালোই আছি।
– আচ্ছা আমার মামুনির যা ইচ্ছে ,,, তো কিছু দরকার হলে চেয়ে নিতে ভুলিস না।
– হুমমম আব্বু ,,,,, আচ্ছা আমি পড়তে যাই ,,, আট টার বেশি বেজে গেছে।
নীলিমা সোফা থেকে ঊঠে যেতেই মিসেস চৌধুরী কিচেন থেকে দ্রুত গতিতে এসে বললেন
– নীলু মাহহহ কফি টা তো নিয়ে যাহহহ ।
– ওহহহ ভুলেই গিয়েছিলাম ,,, করা করে বানিয়েছো তো ?
– হুমমম
নীলিমা কফি নিয়ে রুমে চলে গেল।
মিসেস চৌধুরী হালকা হেসে সোফা তে বসলেন।
আজাদ চৌধুরী কফির কাপ টা সেন্টি টেবিলে রেখে বললেন
– বুঝলে নীলুর জন্য অনেক সমন্ধ আসছে,,,, আমার বিজনেস পার্টনার রা তো পারে না শুধু পায়ে ধরতে।
– আচ্ছা সে খারাপ কি ,,,মেয়ে থাকলে তো সমন্ধ আসবেই ইই।
তো কি বললে
– হুমমম আমি এখন নীলিমা কে বিয়ে দিতে রাজি নই।
সবে আঠারো শেষ করেছে মেয়ে টা ,,,,,
– হুমমম ভালো করেছো ,,, আচ্ছা ডিনারে সুপ খাবে তো ?
– হুমমম ।
__________________________
রাত একটা অব্দি পড়াশোনা করাতে সকালে ঘুম থেকে উঠতে নীলিমার দেরি হয়ে গেল।
নীলিমা দ্রুত নাস্তা খেয়ে বের হলো ভারসিটির উদ্দেশ্যে।
ভারসিটি তে পৌছাতে পৌছাতে দেরি হয়ে গেল।
নীলিমা ক্যাম্পাসে সবাই কে দেখে খানিকটা অবাক হলো।
মিহির সামনে গিয়ে বলল
– কিরে সবাই এখানে কেন ?
এখন তো ক্লাসে থাকার কথা ,,,
মিহি খুশি চেহারা নিয়ে বলল
– আরে আজ ক্লাস হবে না।
স্পোর্স নিয়ে সবাই বিজি দেখছিস না।
– এই অসময়ে তো স্পোর্স হয় না।
তাহলে?
– আরে ফুটবল ম্যাচ ,,, ভারসিটি , ভারসিটি
– ওহহহহ
আচ্ছা তাহলে বসি চল,,,
তিন দিন পর স্পোর্স ,,,, তাই প্র্যাকটিস এ ব্যস্ত সবাই।
নীলিমা বান্ধবীদের সাথে ঘাসের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছে।
সবাই থেকে থেকে দল করে বসে আসে।
ছেলেরা প্র্যাকটিস করছে,,,, নীলিমা খেলা দেখাতে মনোযোগ দিলো।
হঠাৎ ই চোখ গেল মাঠের কনারে,,,, সেই ছেলেটা স্যার দের সাথে কথা বলছে।
স্পোর্স স্যার ছেলেটার পিঠ চাপরে কিছু একটা বলছে। যার দরুন বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা ও খেলবে।
নীলিমা চোখ সরিয়ে আবার আড্ডা তে মনোযোগ দিলো।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে প্র্যাকটিস করলো,,,,, লান্স এর সময় হওয়াতে সবাই ক্যান্টিনে ছুটলো।
নীলিমা ঘেমে একাকার,,,,, তাই ট্যাপ থেকে মুখে পানির ছিটে দিতে গেল।
নীলিমা মুখে পানি দিতে লাগলো।
ছেলে কন্ঠের ডাকে নীলিমা পেছন ঘুরে তাকালো, সেই ছেলেটা।
– এক্সকিউজ মি ।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– জিহহহ
– আসলে কাল আপনি রুমাল দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
তাই ফেরত দিতে আসলাম,,,,
– ফেরত দেওয়া লাগবে না ,,,,
ছেলেটা মৃদু হেসে বলল
– ফেরত দিতাম না ,,,, তবে দেওয়া প্রয়োজন।
ছেলেটার কথা নীলিমা কিছুই বুঝলো না।
নীলিমা ড্যাপ ড্যাপ করে তাকাতেই ছেলে টা বলল
– ডোন্ট ওরি আমি আপনার উপর রাগ করি নি।
আসলে শুনেছিলাম কারো রুমাল নিলে নাকি তার সাথে ঝগড়া হয়।
ছেলেটার কথায় নীলিমা হো হো করে হেসে উঠলো।
তারপর বলল
– আচ্ছা তাহলে ব্যাক নিয়ে নিচ্ছি। আর তার জন্য ই বোধহয় কাল রাতে স্বপ্নে আপনার সাথে ঝগড়া করেছি।
– হাহা বোধহয়,,,,,
– হুমমমম হবে হয়তো
– হুমমম ঠ্যাংস।
– কেন ?
– রুমাল দিয়ে সাহায্য করার জন্য।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– ওহহহহ ,,, আমি নীলিমা চৌধুরী আপনি ?
– আরিফুল আরিয়ান।
– ওহহহ ,,নাইচ টু মিট ইউ
– আই অলসো ,,, আচ্ছা আমি যাই।
বাইই
এইটুকু বলেই আরিয়ান দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল।
নীলিমা মৃদু হেসে রুমাল টা ব্যাগে এ পুরে নিলো।
______________________
( গল্পটা 30 পার্ট র বেশি হবে না। সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি । )
ঘেমে চুপচুপ হয়ে গেছে আরিয়ান।
সারাদিন ফুটবল প্র্যাকটিস করেছে আজ।
টিমের সবাই কে ভালো মতো বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসলো আরিয়ান।
ক্ষিদেতে পেট জ্বালা করছে ,,,,, আরিয়ান দ্রুত ভাত বসিয়ে দিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলো।
ফ্রেস হয়ে এসে মাছ ভেজে নিয়ে গরম গরম ভাত খেয়ে পড়তে বসলো।
সামনেই মাস্টার্স এর ফাইনাল পরীক্ষা।
তার উপর স্পোর্স নিয়ে পড়েছে ভেজাল এ , স্যার দের জোড়াজোড়ি তে রাজি হতে হয়েছে।
আরিয়ান এক ঘন্টা পড়ে ফাইল হাতে বসে পড়লো ,,,,,,, কাল অফিসে যেতেই হবে।
এই স্পোর্স এর জন্য একদিন অফিসে যাওয়া হয় নি।
সমস্ত কাজ বাসায় কমপ্লিট করতে হবে।
আরিয়ান রাত এগারোটা অব্দি কাজ করে রেস্ট নিতে বসলো।
আকাশে বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে,,,, বোধহয় পূর্ণিমা।
আরিয়ান কিচেন এ গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো।
তারপর ব্যালকনি তে গিয়ে চেয়ারে বসে কফি কাপে চুমুক দিলো।
অর্ধেক টা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো ।
ব্যালকনি বরাবর রোড এর অপজিটের বিল্ডিংয়ের নিচে একটা বিশ একুশ বছর বয়সী ছেলে দাড়িয়ে আছে।
বার বার কান ধরে সরি বলছে ,,,, দোতলা থেকে ছেলেটার বাবা মা এতো রাত করার জন্য বকা দিচ্ছেন।
ছেলেটা ভেতরে যেতেই আরিয়ান চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
কফি কাপের শেষ কফি টুকু এক চুমুকে শেষ করে নিলো।
তারপর চাঁদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো।
কি অদ্ভুত তার দুনিয়া ,,,,,,, বাবা মা নামক ছায়া তার মাথার উপর নেই।
কখনো দেখেছে কি না ,,,,, তার মনে নেই।
আদৌ কি তাঁরা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন তা ও জানে না সে।
শুধু স্মৃতি হিসেবে আসে একটা সোনার চেইন আর লকেট।
আকাশের দিকে তাকিয়ে ওর বলতে ইচ্ছে হয় ,,,,, কোথায় তোমরা , কোথায়?
তোমাদের ছাড়া আমি অচল।
নিজের দুরন্তপনা কে বেধে রেখেছি মনের কোনে।
চঞ্চল এ মন সব সময় চুপ করে থাকে ,,,, শুধু মাত্র মা বাবা নামক ছায়া নেই বলে।
আরিয়ান এর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।
তিন বছর বয়স থেকে অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে আরিয়ান।
অনাথ আশ্রমের এক কর্মী নদীর ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছিলো আরিয়ান কে।
শরীরের অবস্থা বেশ করুন ছিলো ,,,,, কয়েক দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলো আরিয়ান ।
আরিয়ানের বাবা মা কে তা আরিয়ান জানে নাহহহহ।
তিন বছরের বাচ্চা কতো টুকুই বা বুঝদার হতে পারে।
সাথে আঘাত লেগে যাওয়ার কারনে আরিয়ান চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো।
অবশেষে অনাথ আশ্রম এই ঠাই হয় আরিয়ানের।
নাম দেওয়া হয় ,,,, আরিফুল আরিয়ান।
অনাথ আশ্রম থেকেই বড় হতে থাকে আরিয়ান।
অনাথ আশ্রমে দশম শ্রেনি অব্দি পড়াশুনা করানো হয় ।
আরিয়ান দশম শ্রেনি অব্দি পড়াশুনা করা শেষ হলে কলেজ এ ভর্তি হতে চায়।
আরিয়ান বেশ ভলো বলছো স্টুডেন্ট হওয়াতে আরিয়ান কে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন ম্যানেজার।
কিন্তু আরিয়ানের পড়াশোনার খরচ তো ওকেই চালাতে হবে,,,, তাই আরিয়ান টিউশনি করাতে শুরু করে।
দুটো টিউশনির টাকা দিয়ে বেশ ভালো মতোই কলেজের খরচ চলে যেতো আরিয়ানের। ভালো স্টুডেন্ট হওয়াতে কলেজের বেতন দেওয়া লাগতো না।
যার ফলে কিছু টাকা বেঁচে যেত,,, অবশেষে আরিয়ানের ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা হয়ে যায়।
সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে এক মাস পর।
কিন্তু আরিয়ানের আঠারো বছর পূর্ন হয়ে যাওয়ার কারনে অনাথ আশ্রমে আরিয়ান থাকতে পারবে না আর।
আরিয়ান তার জমানো বিশ হাজার টাকা নিয়ে আশ্রম থেকে বের হয়ে আসে।
প্রথম দিকে মাথা কাজ করছিলো না ওর ,,,,, দুটো টিউশনি করে সারে চার হাজার টাকা পায় ওহহহ ।
এই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে কোনো মতেই সম্ভব নয় নিজের ভরন পোষন চালানো।
আরিয়ান চার হাজার টাকা দিয়ে একটা মেস এ থাকা শুরু করে।
মেস টা একদম নিম্ন মানের ,,,,,,, একটা ছোট্ট রুমে চার জনের থাকার ব্যবস্থা।
আর খাবার একদম লো কোয়ালিটির ,,,,, একদিন ডাল তো আরেক দিন আলুর ভর্তা ।
মাসে দুবার মাছ দেওয়া হতো ছোট্ট এক টুকরা আর মাংস দেওয়া তো হতো ই নাহ।
আরিয়ানের মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় নি ,,,, তবে পড়াশোনার খুব কষ্ট হতো।
দু মাস পর আরিয়ান আর ও দুটো টিউশনি পায় সেখান থেকে চার হাজার টাকা দেওয়া হবে।
অবশেষে আরিয়ান একটু শান্তি পায় ,,, কারন মেস এর টাকা টা জোগাড় হয়ে গেছে।
এ ভাবেই আরিয়ান টিউশনির টাকা দিয়ে কলেজ সহ নিজের খরচ চালাতে থাকে।
এইস এস সি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর আরিয়ান টিউশনির সাথে সাথে একটা হোটেল এ সার্ভিসিং এর কাজ ধরে কারন ভারসিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য বেশ অনেক গুলো টাকার প্রয়োজন ।
বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা অব্দি হোটেল এ কাজ শুরু করে আরিয়ান সেখান থেকে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয় আরিয়ান কে।
চার মাস পর আরিয়ান কাজ টা ছেড়ে দেয়।
কারন ভারসিটিতে এডমিশন নিতে হবে আর রাতে পড়াশোনা ও করতে হবে এখন আর কাজ টা করা সম্ভব নয়।
আরিয়ান ভারসিটি তে এডমিশন নেয় কিন্তু এখন তো সাড়ে আট হাজার টাকা দিয়ে চলবে না।
কারন সেই ভারসিটির নিয়ম ছিলো যত ভালো স্টুডেন্ট ই হোক না কেন বেতন দিয়েই পড়তে হবে।
আরিয়ান স্কলারশিপ পাওয়াতে প্রতি মাসে দু হাজার টাকা করে সরকার থেকে দেওয়া হতো ,,, আর ভারসিটির বেতন পাঁচ হাজার টাকা।
সাড়ে দশ হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা চলে গেলে থাকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
আর মেস ফি চার হাজার টাকা ,,,, তো দেড় হাজার টাকা নিয়ে ভারসিটিতে আসা কঠিন।
তাই অন্যান্য খরচ চালাতে আরিয়ান কে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো।
সাথে পড়াশোনা ও হচ্ছিলো না ঠিক ঠাক।
আরিয়ান সুযোগ পেলেই ছুটকা কাজ শুরু করে।
যার ফলে কিছু টা হলে ও স্বস্তি পায় সে।
কিন্তু দিন পর পর পড়াশোনার খরচ বেরেই চলেছে।
আরিয়ান চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চারদিন সরকারি হসপিটালে ভর্তি ও থাকে।
এভাবে কোনো মতে ফাস্ট আর সেকেন্ড ইয়ার চলে যায় আরিয়ানের।
অনার্স থ্রাট ইয়ারে উঠেই পড়াশোনার খরচ আর ও বেড়ে যায়।
আরিয়ান চাকরির জন্য এপলাই করা শুরু করে।
প্রথমত অনার্স কমপ্লিট করলে ভালো চাকরি পাওয়া যায় আর দ্বিতীয়ত ফুল টাইম জব।
প্রায় মাস খানেক পর আরিয়ান পার্ট টাইম জব পায়।
রোজ কাজ করতে হবে না তাকে,,,, একদিন পর পর আট ঘন্টা করে ডিউটি।
অবশ্য সে চাইলে এক্সট্রা কাজ ও করতে পারে সেটার জন্য একস্ট্রা বেতন।
অবশেষে বিশ হাজার টাকার পার্ট টাইম জব পেল আরিয়ান।
আর টিউশনি গুলো ছেড়ে দিলো।
মূলত এই চাকরি সম্ভব হয়েছে আরিয়ানের এতো ভালো রেজাল্ট এর জন্য।
মেস এ থেকে আরিয়ান এর পড়াশুনার বেশ ক্ষতি হতো তাই সে সিঙ্গেল ফ্ল্যাট খুঁজতে লাগলো।
বহু কষ্টে সিঙ্গেল ফ্ল্যাট খুঁজে পেল সে।
ছয় হাজার টাকা ভারা ,,, ফ্ল্যাটে একটাই বেড রুম , কিচেন এর সাথে একটু একস্ট্রা জায়গা সেখানে ছোট খাটো ডাইনিং টেবিল রাখা যাবে, একটা ব্যালকনি আর বাথরুম।
ব্যাস আর কি চাই ,,,,, ফ্ল্যাট টা পেয়ে আরিয়ান বেশ খুশি হলো।
ধীরে ধীরে আরিয়ান এই সিঙ্গেল ফ্ল্যাট টা সাজাতে লাগলো।
প্রায় দু বছর পর পুরো ফ্ল্যাট পরিপূর্ণ হলো।
দেখতে দেখতে আরিয়ানের অনার্স কমপ্লিট হয়ে গেল।
আর আরিয়ান মাস্টার্স এ এডমিশন নিলো।
সাথে আরিয়ানের ভালো কাজ আর পড়াশুনার জন্য পদোন্নতি হলো আরিয়ানের।
বেতন বেরে হলো সাতাশ হাজার টাকা।
বেশ ভালোই দিন কাটতে লাগলো আরিয়ানের।
কিন্তু বাবা মায়ের বড্ড অভাব।
এই সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতেই আরিয়ানের চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তার জীবন যতটা কঠিন হওয়া উচিত ছিলো সেই অনুযায়ী কঠিন হয় নি।
সাধারনত সে তার বুদ্ধি আর কর্ম দিয়ে নিজের জীবন কে যথাসম্ভব সহজ করে নিয়েছে।
কিন্তু নিজের চাঞ্চল্যতা আড়াল হয়ে গেছে।
কতোটা চঞ্চলতা আছে তার মাঝে তা সে নিজে ও জানে না।
পিতা মাতার অভাব আরিয়ান কে শান্ত করে দিয়েছে।
চাঁদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো আরিয়ান।
কতো শত পূর্ণিমার রাত এলো গেলো কিন্তু মা বাবা কে পাওয়া হলো না।
আরিয়ান মৃদু হেসে রুমে চলে আসলো।
এমন হাজারো রাত কেটে গেছে, কিন্তু আপন কাউকে পাওয়া হয় নি তার।
চোখের কোন থেকে পানি মুছে পড়াশোনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আরিয়ান।
পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
চলবে