#নিবেদিত_প্রেম_আরাধনা
||১৪তম পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
আঁধার রাত্রিতে সুখ বারান্দায় বসে আছে। তার তৃষ্ণার্ত মন, নয়নযুগল অপেক্ষারত আবরাহাম নামক পুরুষটির জন্য। গত দুইদিন ধরে একদমই সাক্ষাৎ পায় না সে আবরাহামের।
“তুমি আসো না প্রিয়, একটু আসো। ছুঁয়ে না দাও, দর্শন টুকু দিয়েই ধন্য করে আমায়। তৃষ্ণার্ত আমার লোম তোমার অপেক্ষাতে। গোটা বিশ্ব জানে এ কথা, তুমি কেন অজ্ঞাত তবে?”
নোনাজলে সিক্ত হয় কিশোরীর আঁখি। আনমনেই মুছে নেয় তা। গিটারে টুংটাং সুর তুলতে তুলতে গাইতে শুরু করে,
“আ আ আ আ আ আ আ…
একাকি মন আজ নীরবে
বিবাগি তোমার অনুভবে
ফেরারি প্রেম খুজে ঠিকানা
আকাশে মেঘ মানে বোঝ কিনা
একাকি মন আজ নিরবে
বিবাগি তোমার অনুভবে
ফেরারি প্রেম খুজে ঠিকানা
আকাশে মেঘ মানে বোঝ কিনা
বিরহ নীলে নীলে বাধে বাসা
অজানা ব্যাথায়
অধরা তারাগুলি কাদে বেদনায়
খেয়ালি তুমি কোথায়…
দিনের আলোর শেষে
যখন রাত নামে
তোমাকেই খুঁজে পাই
আঁধারের শিরোনামে।”
দপ করে নিভে যায় সুখের গানের প্রদীপ। চোখের সম্মুখের ঘরটিতে যে শুভ্র আলো দেখতে পাচ্ছে সে স্পষ্ট। অস্পষ্টভাবেই হোক দেখতে তো পাচ্ছে এই মানবটিকেই, এই তার কাছে যেন সাক্ষাৎ আল্লাহর রহমত।
একটু বাদেই অন্ধকারে ছেয়ে যায় বালিকার অতি প্রিয় দর্শনীয় স্থানটি। অন্ধকারে হারিয়ে যায় মানুষটিও। তপ্ত বায়ু নির্গত হয় সুখের দেহ থেকে। বারান্দাতেই মশার কামড়ে রাত্রি পাড় হয়ে ভোর হয়।
সূর্যের তীর্যক রশ্মি তার মুখশ্রীর উপর আপতিত হতেই ঘুম ভেঙে যায় সুখ। চোখ ডলতে ডলতে দোলনার উপর সোজা হয়ে বসে। কী একটা ভাবনা মাথায় আসতেই ছুটে যায় সে বারন্দা থেকে।
সরদার বাড়ির ষাটোর্ধ দারোয়ান রহিম মোল্লা সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য অনুরোধ। রহিম মোল্লা পড়েছেন বেশ বিপদে। এদিকে মেয়েটার কথার ধরনে মায়া লাগছে, অপরদিকে বড় ম্যাডামের কড়া নিষেধ এই মেয়ে যাতে বাড়িতে না ঢুকে। চাকরি রক্ষার্থে না ঢুকতে দেওয়াই শেয়।
তবে পরক্ষণেই মত বদলালেন। কারণ মনিশা সরদার এক মাসের জন্য পৈতৃকভূমিতে গিয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে কেউ যেহেতু আর ব্যাপার খানা দেখছেন না, তাই সুখকে ঢুকতে দেওয়াই যায়।
“দেখো মামনি, তোমায় যেতে দিচ্ছি আমি ছোটো সাহেবের সাথে দেখা করতে। তবে উপরে যেয়ে কোনো কাহিনী রটিয়ো না। এক কান দু’কান হয়ে যদি বড়ো মালকিনের কানে যায় তোমার আগমনের খবর আমায় কিন্তু চাকরিচ্যুত করবেন তিনি।”
সুখও আশ্বস্ত করে শুধায়,
“আপনি একদম চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি একটুও সমস্যা করবো না। কেউ টেরই পাবে না আমার এই বাড়িতে ঢুকার বিষয়ে।”
অনুমতি পেয়ে হাসি মুখে বড় বড় পা ফেলে সে যাওয়া ধরে বাড়ির দিকে। যুবকের বেডরুমে সে আগেও এসেছে নিজের করা কুকর্মের বদৌলতে, এজন্য তার যেতে সামান্যতম সমস্যাও হলো না।
বর্তমানে আবরাহামের বেডরুমের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার বুক ধুকুরপুকুর করছে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকবে না কি সেই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই তার ঘাম ঝরছে।
অনেক ভাবনা চিন্তার পর মৃদু ধাক্কা দিয়ে দরজা খোলে সুখ। চোখ উঠিয়ে সামনের দৃশ্য দেখতেই গোটা গায়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় তার। পা যেন জমে যায় কিশোরীর, গোল গোল চোখে তাকিয়েই থাকে সে পাথরের মূর্তির ন্যায়।
কেনোনা, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এমন দশা দেখবে তা তো কল্পনাতীত ছিল তার নিকট। আবরহাম শুধু মাত্র বক্সার পরে দাঁড়িয়ে আছে তার চক্ষুর সম্মুখে।
“হোয়াদ্দা হেল! সুখ, তুমি এখানে কী করছো?” চেঁচিয়েই তোয়ালে কোমড়ে প্যাঁচায় সে।
সুখের ঘোর ভাঙে। সাথে সাথে চোখ বুজে ঘুরে উল্টোদিকে চোখ রাখে সে। আবরাহাম এই সুযোগে তাড়াতাড়ি নিজের জিন্স প্যান্টটা পরে নেয়।
“এই মেয়ে! এদিকে আসো! এক্ষন এদিকে আসো!” ধমক দিয়ে উঠে যুবক।
সুখ গুটি গুটি পায়ে তার নিকট যেয়ে দাঁড়ায়। আবরাহাম রক্তিম চোখজোড়া নিক্ষেপ করে কিশোরীর দিকে।
“তুমি এই সকাল সকাল এখানে কেন?”
“আমি আপনার সাথে দেখা করার জন্য এসেছি।” খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দেয় সুখ।
“আমার সাথে? কিন্তু ক্যানো? আর এসেছো ভালো কথা, দরজায় তো নক করে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয়। এটাতে সামান্যতম ভদ্রতা, সভ্যতা, ম্যানার। এটুকুও তোমার মাঝে নেই? হ্যাঁ, জানি, তুমি এখনও পুরোপুরি ম্যাচুর্ড নও। বাট এটুকু ভাবনা তো থাকা উচিত, শিখা উচিত। তোমার মাঝে স্টিল নাউ সামান্য টুকু অনুতাপ নেই এত বড় একটা ঘটনা…”
আর কিছু বলার পূর্বেই সুখ যুবকের গলা জড়িয়ে ধরে নিজের অধরজোড়ার সহায়তায় তার অধর ছুঁয়ে দেয় আলতো ভাবে। আবরাহাম তো আকস্মিক এই ঘটনায় হতবিহ্বল। অতঃপর কিশোরী চোখ-মুখ খিঁচে জাহির করে নিজের ভালোবাসা।
“ভালোবাসি আপনাকে আমি। আমার চিন্তা-চেতনায় রাজত্ব আপনার৷ ভালোবাসি মি.আবরাহাম, অনেক বেশি ভালোবাসি।”
কথাটা উচ্চারণ করা শেষ করতেই ঠাটিয়ে এক চড় পর তার গালে। রক্তিম হয়ে উঠে তার কপোল। অবাক নয়নে দেখে সে আবরাহামকে।
___
আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে বসে নিবেদিতা। ঘড়ির কাটা তখন বারোটার ঘরে স্থির। আবরাহাম তাকে আজকে রেস্ট করতে বলে ছুটি দিয়েছে। তাই অফিসের বদলে বাসাতেই দিন কাটবে তার।
গতকাল বেশ রাত হয়ে গেলেও নিদ্রাবিহীন ছিল রমণী। বিভোর ছিল আরাধ্যের সাথে জড়িত সকল ভালো-মন্দ স্মৃতিতে। এর থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যেই ঘুমের ঔষধ সেবন করে সে। যার দরুণ এত বেলা করে ঘুম থেকে জাগা।
ফ্রেশ হয়ে নিজের বেডরুম থেকে বের হয়ে সোফায় এসে বসে নিবেদিতা৷ তা দেখেই যেন গা জ্বলে যায় নুরুন্নাহার খাতুনের। মুখ বাঁকিয়ে বলে বসেন এক কটুকথা।
“আমার বেলা করে উঠা মেয়ে করবে আবার সংসার! এজন্যই তো ঝামেলা হয় স্বামীর সাথে। এখন দেখ রোদ্দুর দোষটা কার, অনেক তো মেয়ের গুণ গাইলিই।”
নিবেদিতা নিরুত্তর, চোখজোড়া টেলিভিশনের দিকেই স্থির তার। নাদিয়া খানোম ব্যথিত হন শ্বাশুড়ির এহেন আচারণে। রোদ্দুর সোহরাবকে চা দিচ্ছিলেন তিনি।
সেখানেই স্বামীর হাত চিমটি কেটে বিড়বিড়ান,
“আমার মেয়ে এমনেই কষ্টে আছে। তোমার মায়ের আর খোঁচা দিয়ে দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করার দরকার নেই। কোথায় দাদী হয়ে পাশে দাঁড়াবে, উনি কষ্ট দিয়েই কূল পান না। আল্লাহ না করুক আমার মেয়ে কিছু করে বসলে…
তোমার মায়ের মতো এত সন্তান আমার নেই, আমার মানিক একখানই। তাড়াতাড়ি তোমার মাকে বিদায় করো। তা নাহলে বিয়ের এত বছর পেড়িয়ে যাওয়ার পর আমি বেয়াদবি করতে বাধ্য হবো। কথাটা মাথায় রেখো।”
রোদ্দুর সোহরাব ইশারায় আশ্বস্ত করেন স্ত্রীকে। তারপর চায়ে ঠোঁট ডুবিয়ে মায়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকান। বস্তুত, তিনি নিজেও মেনে নিতে পারছেন আদরের রাজকন্যার প্রতি মায়ের এমন আঘাত।
“মা, আমি আগামীকালের বাসের টিকেট কেটে নিচ্ছি অনলাইনে। আমার মনে হয় তোমার এখন বাড়ি ফিরা প্রয়োজন।”
স্তম্ভিত হয়ে তাকান নুরুন্নাহার খাতুন। যেন অতিরিক্ত ভুল কিছু বলে ফেলেছেন পুত্র। হচকচিয়ে বলেন,
“আমি কোথায় যাব? আমি আরও কিছুদিন এখানে থাকবো।”
“কেন মা? এখানে থাকতো তো আমার কত অসুবিধা। আমার মেয়ে খারাপ তাকে রোজ রোজ দেখতে হয়, খারাপ খারাপ কথা উচ্চারণ করতে হয় তোমার৷ আবার আমিও তো গরীব মানুষ, তোমার ছোটো ছেলের মতো সাহেব নই৷ তুমি বরং তোমার ভালো নাতিদের পিতার কাছেই যাও।
তাহলে না রোজ রোজ তোমায় আমার সোনামুখি মেয়েটার চেহারা দেখে কষ্ট পেতে হবে, না আমার মেয়ের তোমাকে সহ্য করে কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না প্রতিবার তো আসলে আমাদের কমদামী খাবার-দাবার দেখে তুমিই তাড়া দেখাও যাওয়ার জন্য। এবার যেতে চাচ্ছো না কেন?” হাসি হাসি মুখ করেই প্রশ্ন করেন নিবেদিতার বাবা।
নুরুন্নাহার খাতুন কিছু না বলেই দৃষ্টি লুকিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। রোদ্দুর সোহরাবের কেমন যেন সন্দেহ জাগে মনে। কারণ ছোটোভাইও সেদিন কল করে বেশ উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন মাকে নিয়ে। তবুও স্ত্রী ও কন্যার সম্মুখে মাকে একেবারে ছোটো করতে চান না। তাই বিষয়টা নিয়ে আর আলোচনা করলেন না।
___
গৌধূলি লগ্ন, আবরাহামের গাড়ি করে মালিহা ও কবির সহ নিজের আরও দু’জন বিলেত ফেরত বন্ধুদের নিয়ে নিবেদিতার বাড়ির কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে। সকালে সুখ নামক কিশোরী তার মেজাজের যেই বারোটা বাজিয়েছে, তাকে শুধরানোর জন্য হলেও নিবেদিতা নামক রমণীর দর্শন প্রয়োজন।
“মালিহা, মিস নিবেদিতার খোঁজ নিয়েছিলে? উনার এখন কী অবস্থা? শি ইজ অলরাইট?”
ইচ্ছাকৃত ভাবেই ড্রাইভিং করতে করতে এই প্রশ্নটি করে মালিহাকে আবরাহাম।
“ওহ হ্যাঁ, আজ তো কাজের চাপে আমার নিবিপাখিটাকে কলই দিতে পারিনি। আচ্ছা, আমরা তো নিবেদিতার বাসার কাছেই আছি স্যার। তাহলে ওকেও আসতে বলি। ভালো লাগবে ওর।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই।” আবরাহামের ঠোঁটে ভাসছে বিজয়ীর হাসি। কারণ তার পরিকল্পনা তো সফল।
মালিহার জোরাজুরিতে নিবেদিতা রাজি হয় আসতে। আবরাহাম মেইন রোডে গাড়ি থামালে নিবেদিতা আসে তাদের গাড়ির সম্মুখে। কিন্তু রমণী এসে দেখে এ কী অবস্থ? আবরাহামের পাশের আসনটি ছাড়া আর কোনো আসনই খালি নেই। অগত্যা অস্বস্তি নিয়েও সেখানেই বসতে হয়।
সবাই গল্প-গুজবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যার যার মতোন। চুপ করে আছে খালি সামনে দুই সিট জুড়ে বসে থাকা আবরাহাম ও নিবেদিতা।
আবরাহাম আড়চোখে খেয়াল করে নিবেদিতাকে। মেয়েটা কমলা পাড়ের শুভ্র রঙে সাধারণ একটা থ্রিপিস পরেছে। গলা খাঁকারি দিয়ে যুবতীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যুবক।
“এখন কেমন লাগছে তোমার মিস নিবেদিতা?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। তবে আপনি একটা কথা বলেন তো আপনি আমাকে তুমি করে সম্বোধন করেন, তাহলে আবার মিস বলেন কেন? কেমন একটা মিসম্যাচ হয়ে গেল না?”
“মিসম্যাচ বিষয়গুলোই অনেক ক্ষেত্রে ম্যাচ ভালো করে মনে রেখো।”
কথাটা কথাটা শেষ করতে না করতেই রেস্টুরেন্টের সামনে পৌঁছে যায় তারা। সকলে গাড়ি থেকে নামে। মালিহার দিকে তাকায় নিবেদিতা, শুভ্র গায়ের মেয়েটাকে মিষ্টি রঙের থ্রিপিসে একটু বেশিই মিষ্টি লাগছে আজ।
“তোকে তো অসাধারণ লাগছে মালিহা বুড়ি। এজন্যই তো দুলাভাই আমাকে একবার হাইও দিলো না। কারণ দিবে কীভাবে? চোখজোড়া তো তোর উপর স্থির।”
“ইশ! তোকে বলেছে! আমার চেয়ে বেশি তোকে মায়াবতী লাগছে, এই সাধারণ সাদা থ্রিপিস আর হিজাবেই। বিশ্বাস না হলে স্যারকে জিজ্ঞেস কর। আমি ঠিক বলছি না স্যার?”
আবরাহাম এবার পায়ের নখ থেকে মাথার হিজাব অবধি পর্যবেক্ষণ করে মনোযোগ সহকারে। মন্ত্রমুগ্ধ কণ্ঠে শুধায়,
“মায়াবী তো লাগছে বটে। একমুঠো শিউলি ফুলের ন্যায় মায়াবী, দৃষ্টিনন্দন ও মোহনীয়।”
যুবকের মুখ নির্গত বাক্য দু’খানা কর্ণগোচর হতেই গা শিউরে উঠে নিবেদিতার। যেন এক দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিল তাকে। অস্বস্তি ও চক্ষুলজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে সে। সেদিন আর কোনো কথা হয় না নিবেদিতা ও আবরাহামের মাঝে।
___
প্রায় পনেরো-ষোলো দিন কেটে গিয়েছে নিবেদিতার এ বাসাতে আসার। বিকেল বেলা অফিস সেড়ে বাড়ি ফিরলে দেখতে পায় সোফায় আরাধ্য ও মোকশেদা বেগম বসে।
মা-বাবার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় রমণী। নাদিয়া খানোম উঠে এসে মেয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলেন,
“তোকে নিতে এসেছে বলছে।”
নিবেদিতা বিনা কোনো শব্দে হনহনিয়ে নিজের বেডরুমে চলে যায়। আরাধ্য যেন অপমানবোধ করলো।
“আমরা একটু আসছি।”
রোদ্দুর সোহরাব এবং নাদিয়া খানোমও উঠে মেয়ের পিছনে যায়।
“উনাদের বলে দাও, আমি উনাদের সাথে কোথাও যাচ্ছি না।”
নাদিয়া খানোম পাশে বসে আলতো হাতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। রোদ্দুর সোহরাবও নিবেদিতার অপরপাশে বসে তার হাত নিজের হাতের মাঝে নেন।
“দেখ মা, আশেপাশের মানুষ নানা প্রশ্ন করে, নানা কথা বলে। বিবাহিত মেয়ে বাপের বাড়ি থাকছে চোখে লাগাই স্বাভাবিক। এভাবে দিনের পর দিন তো একটা বিষয়কে ঝুলিয়ে রাখা যায় না। একটা তো ফয়সালা করতেই হবে। তুই ওর সাথে থাকবি না কি থাকবি না একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নে। এভাবে বিয়ে করে আলাদা থাকা, এমনটা হয় না। বরং, তালাক নিলে বল।”
নিবেদিতার রাগ যেন দপ করে নিভে। আরাধ্যকে সে ভালোবাসে, এতোটা বাসে যে শব্দে প্রকাশ করা যায় না। তালাক মানে সর্বকালের জন্য তাকে হারিয়ে ফেলা। এত বড়ো কদম তার দ্বারা আদৌ কি সম্ভব? অপরদিকে আছে তার আত্মসম্মান, যা বারবার ফিরে যেয়ে একটু একটু করে ভাঙছে সে। কী করবে সে এবার?
চলবে…