বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-১৯

0
3267

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 19
___________________________
19,,,,
আজ প্রায় তিন মাস হয়ে গেল নীলের সাথে একটি বার ও কথা হয় নি পরির।
এতো বার ম্যাসেজ দেওয়ার পর ও নীল কোনো রিপলে দেয় নি।
প্রতি বার ই সিন করে রেখে দিয়েছে।
পরির খুব কষ্ট হয় ,,,,, কেন নীল এমন করে।
একটু কথা বললে কি হয় ,,, সে যদি জানতো তার সাথে কথা বলার জন্য পরির মন আনচান করছে ,,,,, প্রতি টা মুহূর্ত দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাহলে ও কি নীল কথা বলতো না ?
নাকি নীল তাকে সোজা সাপটা বলে দিতো।
পরি আমাকে আর ম্যাসেজ দিবে না।
পরির চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝরছে,,, বারান্দায় দাড়িয়ে জোছনা ম্লান করছে,, আসলে প্রকৃতির কাছে নিজের দুঃখ গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
মানুষ বলে কারো কাছে নাকি দুঃখ প্রকাশ করলে,, হালকা হওয়া যায় কিন্তু পরি তো রোজ প্রকৃতির কাছে নিজের দুঃখের কাহিনী বলে বেরায়।
তাহলে কেন ওর দুঃখ কমছে না ?
মন তো ভার ই রয়েছে।
পরি চোখের পানি টুকু আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু হাসি টা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
তার আগেই পরির চোখ দিয়ে অশ্রু বর্ষন নেমে গেল।

পরি কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে রুমে চলে আসলো।
এই গরমের মধ্যে ও পরি গায়ে চাদর জড়িয়ে নিলো।
রাতটা পরির প্রায় ই নির্ঘুম কেটে যায়।
অনুভূতি গুলো হয়তো মরেই যাচ্ছে।
পরি আবার উঠে দাঁড়ালো,,, ওয়াসরুম থেকে মুখে পানির ছাপটা দিয়ে ফিরে আসলো।
আয়না তে নিজেকে এক পলক দেখে নিলো।
চোখের নিচ টা বেশ ভালোই কালো বর্ন ধারন করেছে।
পরি মলিন হেসে ফোন নিয়ে বসলো ,,,,, রাত প্রায় 2 টা ,,, এতো রাতে ও কয়েকজন নিশাচর কে অনলাইন এ দেখা যাচ্ছে।
কেউ হয়তো প্রেমিকের সাথে কথা বলছে আর কেউ হয়তো প্রেমিকের ছবি জড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
কিন্তু দুজোনের মাঝেই একটা জিনিসের মিল আছে ।
দুজন ই নিশাচর,,, কেউ সুখে তো কেউ দুখে ।
পরি নীলের প্রোফাইল ঘাটতে লাগলো।
কখনো নীলের প্রোফাইল এর সেই প্রথম দিন থেকে ঘুরে আসা হয় নি।
পরি একের পর এক পোস্ট ছাড়িয়ে নিচে নামতে লাগলো।
হাজারো পোস্ট হাজারো শেয়ার সব কিছু পরি দেখতে লাগলো।
একটা লাইভ ও ছিলো ,,,,,, পাখি শুট করার লাইভ।
নীলের কন্ঠের স্বর শুনতে পেয়ে পরি আবার কন্ট্রোল হাড়ালো।
কাঁদতে কাঁদতে নীলের ছবিটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মুখ দিয়ে একই বুলি উচ্চারণ করতে লাগল।
কেন নীল ?
কেন এমন করছেন?
আমি কি কিছু দোষ করেছি?
প্লিজ নীল একটু আপনার কন্ঠ শুনতে চাই,,,,,

পরির কান্নাকে কেউ সারা দিলো না।
পরি নিশী রাতে চার দেয়ালের মাঝে অশরীরীর মতো আর্তনাদ করতে লাগলো ।
কান্নার বেগ বারার বদলে কমলো না।
ভোরের আজান কানে আসতেই পরি উঠে বসলো ,,,,, মুখে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু টুকু আঠার মতো হয়ে গেছে।
পরি ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো।
আজান শেষ হলে কিছুক্ষণ বসে থেকে বাথরুম থেকে অযু করে এলো।
নামায শেষ করতেই দেখলো ভোরের আলো ফুটছে ,,,, পরি ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে
ব্যালকনিতে চলে গেল।
সূর্যের কোমল রশ্মি টা নেহাত ই মন্দ নয়।
সূর্য পরিপূর্ণ ভাবে উঠে গেলে পরি রুমে এসে রেডি হতে লাগলো।
পরির মা এসে মেয়ে কে নিজেই উঠতে দেখে হালকা হেসে চলে গেলেন।
পরি রেডি হয়ে স্কুলের দিকে পা বাড়ালো।
_______________________

পরির চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পরি খুব রেগে আছে।
সকাল বেলা শান্ত হয়ে স্কুলে গেল কিন্তু এখন ফেরার সময় এতো টা রেগে আছে কেন ?
পরির মাথা টা ঝিম মেরে আছে ,,,, ইচ্ছে করছে সমস্ত কিছু ভেঙে ফেলতে।
আজ সকাল বেলা শান্ত মেজাজে স্কুলে গিয়েছিলো পরি।
কিন্তু ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পরির ক্লাস মেট শেফা বলল
– পরি আজকে ছুটির পর একটু দাড়িয়ে যাস।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
পরি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো ।
এই উত্তপ্ত গরমে সারাদিন ক্লাস করে ক্লান্ত পরি।
ক্লান্তি ঠেলে স্কুল গ্রাউনে বড় বট গাছের নিচে বসে আছে পরি।
কিছুক্ষণ পর ই হন্তদন্ত হয়ে শেফা পরির পাশে বসল।
পরি ভ্রু কুঁচকে বলল
– এভাবে হাফাচ্ছিস কেন?
শেফা ব্যাগ থেকে ওয়াটার বোতল বের করে ঢকঢক করে এক বোতল পানি নিমেষেই শেষ করে দিলো।
পরির ভ্রু যুগল আপনি আপনি ই কুঁচকে গেল।
পরি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে।
শেফা দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল
– বিষয়টা কনফার্ম হওয়ার জন্য গিয়েছিলাম।

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– কোন বিষয়।
শেফা দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলল
– আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র আপু আছে না নাম চিনি ?
পরি মাথা ঝাঁকালো।
শেফা ঢোক গিলে বলল
– আজকে সকালে ওয়াসরুমে গিয়েছিলাম।
তখন চিনির বান্ধবী অনিতা বলছিলো নীল ভাইয়ার সাথে নাকি চিনির রিলেশন ছিল।
আর ও অনেক কিছু ,,,, তারপর আমি সেটা
কনফার্ম হওয়ার জন্য অনিতার কাছে গিয়েছিলাম।

পরি স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে মৃদু স্বরে বলল
– তারপর ?

শেফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– ওও যা বলল।
এটা শোনার মতো মন মানসিকতা আমার ছিল না।
পরি এখনো এক ই দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
পরি ছোট করে বলল
– কি বলেছে ?

শেফা ভয়ার্ত চোখে বলল
– চিনিরা নাকি সন্ধ্যার পর প্রাইভেট পড়তে যায়। কিন্তু কিছু দিন আগে ,,,,
নীল ভাইয়ার সাথে নাকি নীল ভাইয়ার চাচার নতুন করা খালি বাসাতে দুই তিন ঘন্টা সময় কাঁটিয়েছে।
এক সপ্তাহ নাকি এমন করেছে।
শেফা আর কিছু বলতে পারলো না ।
শেফার গলা ধরে আসছে ,,,, পরি সরাসরি না বললে ও শেফা জানে পরি নীলের প্রতি দুর্বল।

পরি ছোট করে বলল
– ওহহহ।

শেফা বেশ অবাক হয়ে আছে।
শেফা পরির এই শান্ত দৃষ্টি নিতে পারছে না।
শেফার মাথা টা খোলা হয়ে যাচ্ছে।
পরির এমন শান্ত আচারন কি করে সম্ভব?

পরি উঠে দাড়িয়ে বলল
– শেফা অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে।
বাসায় যাহহহ

শেফা কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না।
শেফা মাথা ঝাঁকিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
পরি ধীর পায়ে হেঁটে চলছে,,,,, আজকে আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলো না পরি।
হাঁটতে হাঁটতেই পরির চোখ দুটো জলন্ত লাভার মতো অগ্নিরূপ ধারন করলো।
______________________

বাসায় পৌছে ব্যাগ টা সোফা তে রাখলো পরি।
পায়ের কেইস জুতো দুটো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
পরির চোখ দুটো দেখেই মিসেস রাহেলা আঁতকে উঠলেন।
মেয়ের সচরাচর এমন অগ্নি রূপ দেখেন নি ওনি।
মিসেস রাহেলা কিছু জিঙেস করতে গিয়ে ও করলেন না।
অসম্ভব রেগে আছে পরি ,,, এই মুহূর্তে কিছু বলা মানেই পরির সমস্ত রাগ তার উপর উঠে যাবে।
তার থেকে ভালো পরি কে একা থাকতে দেওয়া।
মিসেস রাহেলা দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে রান্না ঘরে চলে গেলেন।
সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই তাই কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কফি বানিয়ে এক মগ কফি নিয়ে পরির রুমের দিকে হাঁটা লাগালেন।
রুমে এসে দেখলেন পরি নেই ,,,, বাথরুমের দরজা টা বন্ধ দেখে বুঝতে পারলেন পরি সাওয়ার নিতে গেছে।
মিসেস রাহেলা টি টেবিলে কফির মগ টা রেখে চলে গেলেন।
প্রায় দশ মিনিট পর সাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে ফিরলো পরি।
মাথা টা এখন একটু হলে ও ঠান্ডা হয়েছে।
ঐ রকম কথা শুনলে অস্বাভাবিক হয়ে পড়া টাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
টেবিলে কফির মগ দেখতে পেয়ে হালকা করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
যে পরিমান গরম পড়েছে এই মুহূর্তে একটা কুল কফির সত্যি খুব প্রয়োজন ছিল।
পরি মাথায় ভালো করে ট্রাওয়াল পেঁচিয়ে কফি হাতে নিল।
বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে বিধায় বরফ গুলো গলে গেছে।
কিন্তু এখনো প্রচন্ড ঠান্ডা কফিটা।
পরি এক নিশ্বাসে কফি শেষ করে নিলো।
কফি টা খাওয়ার দরুন পুরোপুরি শান্ত অনুভব করছে সে ।
কিন্তু মাথা তে বার বার ঘুরছে শেফা র বলা কথা গুলো।
নীল কে বলার ও উপায় নেই ,,, নীল তো একটা ম্যাসেজ এর রিপলে ও দিচ্ছে না।
পরি রোজকার মতো বেডে উপর হয়ে শুয়ে নীল কে
ম্যাসেজ দিলো।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ও নীলের রিপলে আসলো না।
পরি কপালে হাত দিয়ে ফোন টা মাথার কাছে রেখে শুয়ে রইলো।
প্রায় পঁচিশ মিনিট পর ম্যাসেজের টুং আওয়াজে পরি চমকে উঠলো।
হন্তদন্ত হয়ে ফোন হাতে নিলো।
নীলের রিপলে দেখে পরির চোখের কোনে পানি চিক চিক করতে লাগলো।
কতো দিন পর নীল রিপলে দিলো।
পরির চোখ দুটো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু খানিক পরে ই সমস্ত অভিমান আর রাগ চড়াও করে উঠলো।
পরি নিজেকে
শক্ত করে ম্যাসেজ দিলো।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ। সময় সল্পতার জন্য গল্প ছোট হচ্ছে ।
আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here