💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
part – 22
_______________________________
22,,,,,,,,,,,
নীল , নীল, নীল করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছে পরি।
আজ দু বছর পার হয়ে গেছে একটা কথা ও হয় নি ওর সাথে।
প্রতি রাতে চোখের পানি বিসর্জন দেয় পরি।
কিন্তু নীল রিপলে দেয় না,,,,,,
আজ নীলের জন্মদিন ,,,, কিন্তু নীল কে উইস করতে পারছে না এমন নয় ,,, পরি উই করেছে কিন্তু নীল রিপলে দিচ্ছে না।
পরির কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে,,,,
নীল পরির উইস টা সিন করে ও রিপলে দিলো না।
মধ্য রাতে পরি ব্যস্ত লোকালয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো।
রোজ ই কাঁদে,,,, আর ওর সঙ্গ দেয় চাঁদ, তাঁরা রা।
এস এস সি পরীক্ষার সময় চোখের দেখা দেখেছিলো ,,,,, সেটা ও যে এক বছর হয়ে গেল।
পরি অঝোরে কাঁদতে লাগলো,,,,, হঠাৎ ই তুমুল বর্ষন এ পরি হতচকিয়ে উঠলো।
পরি চমকে আশে পাশে তাকালো,,,,,,
নীল কে পাশে বসে থাকো দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গেল।
হঠাৎ ই সমস্ত ঘটনা মনে পড়তেই পরি নিঃশব্দে হাসলো।
নীলের পাশে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল পরি ।
আর স্বপ্নে ভেসে উঠেছিল তার লাল নীল রঙা অতীত।
পরি এখনো ভাবতে পারছে না নীল তার পাশে বসে আছে তাও তার স্বামী হিসেবে।
নীল চোখ পিট পিট করে তাকাতেই দেখলো তুমুল বৃষ্টি তে পরি আর নীল ভিজে যাচ্ছে।
আজ পরির কাঁধে মাথা রেখে এতো টাই শান্তির ঘুম দিয়েছে যে দু মিনিট ধরে যে বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে যাচ্ছে তাতে ও ঘুম ভাঙে নি।
নীল পরির দিকে তাকাতেই পরি চোখ সরিয়ে নিলো।
নীল পরির হাত ধরে ছাঁদের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল।
এখনো আকাশে আধৌ আধৌ আঁধার বিরাজ করছে।
রক্তিম আকাশে সূর্য এখনো পরিপূর্ণ ভাবে উঠতে পারে নি।
বৃষ্টি তে ভিজেই পরি কে নিয়ে নীল সূর্য উঠার দৃশ্য দেখতে লাগলো।
পরি কে পেছন থেকে ধরে রাখায় নীলের মুখ থেকে পানি গড়িয়ে পরির মুখে পড়ছে।
পরি তা স্বাদরে গ্রহন করছে ,,,,,,
কি শান্তি এ দৃশ্যে ,,,,,,, সূর্য পরিপূর্ণ ভাবে উঠে গেলেই পরি কে নিয়ে নীল রুমে চলে আসে ।
দুজনেই ভিজে কুটকুট হয়ে আছে।
নীল পরি কে বলল
– তুমি চেন্সজ করে নাও আমি অন্য ওয়াসরুমে চেন্সজ করতে যাচ্ছি।
পরি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
কাবাড থেকে জামা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
নীল পরির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মৃদু হেসে অন্য রুমে চলে গেল।
_______________________
রান্না ঘরে রান্না করছেন মিসেস রেজিনা।
তাকে সাহায্য করছে বাসার কাজের মেয়েটা।
নাম ময়না, বয়স সতেরো হবে ,,,, গায়ের রঙ খানিক চাঁপা কিন্তু মুখের গড়ন সুন্দর।
আর দেখে মনে ই হয় না ,,, কাজের মেয়ে।
ময়নার বাবা মা আর ছোট ভাই টা ও এ বাসাতে কাজ করে আজ দু বছর প্রায়।
পদ্মার পাড়ে ছিল ওদের বাড়ি ,,, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নদী ভাঙ্গনে ঘর ছাড়া হয় ওরা।
তারপর থেকেই ওরা এ বাড়িতে কাজ করে।
কিন্তু ওদের দেখলে মনে হয় না ওরা যে কাজের লোক।
ময়না নবম শ্রেণীতে পড়ে ,,,, আর ওর ছোট ভাই মানিক পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
দু বছর পড়াশুনা তে পিছিয়ে গেছে ওরা।
নীলের বাবা হানিফ আহমেদ ওদের আবার স্কুলে ভর্তি করে দেয়।
পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট খাটো কাজ ও করে দেয় ওরা।
মিসেস রোজিনা আটা মাখতে মাখতে বললেন
– ময়না চা টা একটু দেখ তো ,,,,,,,,,
ময়না টেবিল গুছাচ্ছিল ,,,, মিসেস রোজিনার ডাকে বলল
– জি খালা আম্মা।
মিসেস রোজিনা রুটি বানাতে ব্যস্ত।
বাড়িতে মানুষ ভরপুর ত্রিশ টার ও বেশি রুটি বানাতে হবে তাকে।
ভোর সাড়ে ছয় টা বেজে গেছে ,,,, আট টার মধ্যে নাস্তা সার্ভ করতে হবে।
পরি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল।
হানিফ আহমেদ কে সোফায় বসে পেপার পড়তে দেখে সালাম জানালো।
এ বাড়িতে সবাই এতো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তা পরির জানা ছিলো না ।
হানিফ আহমেদ মৃদু হেসে বললেন
– এখন ঠিক আছিস মা ?
পরি মাথা ঝাকালো,,,,
হানিফ আহমেদ পরি কে ইশারা করে বসতে বললেন।
পরি হানিফ আহমেদের পাশে বসতেই হানিফ আহমেদ পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– আমি কিন্তু তোকে নিজের মেয়ে ভেবে নিচ্ছি।
তুই আবার শশুর ভাবিস না ,,, নিজের বাবা ভাব্বি।
হানিফ আহমেদের কথা তে পরির চোখে কিঞ্চিত পানি চলে আসলো।
এই মানুষ টা ও এতো আপন করে নিয়েছে তাকে।
পরির চোখের কোনে পানি দেখে হানিফ আহমেদ খানিকটা কঠোর গলাতে বললেন
– আমি আমার মেয়ের চোখে পানি দেখতে চাই না।
এক ফোঁটা পানি ও যেন না পড়ে ,,,, তাহলে খুব বকা দিবো।
হানিফ আহমেদের কথা তে পরি ফিক করে হেসে দিলো।
হানিফ আহমেদ ও হাসলেন।
পরি নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।সমস্ত ঘটনা তার কাছে আবছা হলে ও পরি জানে নীল সব কিছু যেন বুঝেই করছে।
নীলের প্রতি অঘাত বিশ্বাস পরির, যদি ও গত তিন বছর দেখা হয় নি আর প্রায় চার বছর কথা হয় নি।
পরি হাসি থামিয়ে বলল
– কি খাবেন আব্বু ?
হানিফ আহমেদ ভ্রু কুঁচকে বললেন
– তুমি করে বলবি,, তোর আব্বু কে কি তুই আপনি করে বলিস?
পরি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– উহুমমম ।
– তাহলে আমাকে আপনি করে বলিস কেন ?
পরি – আর ভুল হবে না আব্বু।
এখন বলো নাস্তা তে কি বানাবো।
– মা তুই অসুস্থ এখন তোকে কিছু বানাতে হবে না।
আর তোর আম্মু তো নাস্তা বানাচ্ছেই।
পরি – তাহলে আম্মু কে সাহায্য করি।
পরির কথাতে হানিফ আহমেদ মৃদু হেসে বললেন
– আচ্ছা যাহহ।
দেখ কাজ করতে দেয় কি না।
পরি উঠে দাড়িয়ে বলল
– জোড় করে করবো।
হানিফ আহমেদ হালকা হাসলেন।
পরি কে অনেক আগে থেকেই চেনেন ওনি।
মেয়েটার সাথে কখনো কথা না হলে ও মেয়ে টা কতো টা নম্র ভদ্র আর মিশুক তা ওনি জানেন।
আর সম্পূর্ণ ভালোবাসার কাঙাল ।
একটু ভালোবাসা পেলেই আঁকড়ে ধরে।
পরি কে তো প্রথম দিন থেকেই ওনার পছন্দ। তাই তো চেয়েছিলেন পরির সাথে নীলের সমন্ধ পাকা করে রাখতে।
কিন্তু ছেলের জন্য পারেন নি।
নীল সেদিন বাঁধ না সাজলে হয়তো আজ এভাবে ওদের বিয়ে টা হতো না।
হানিফ আহমেদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে পেপার পড়তে লাগলেন।
_______________________
মিসেস রাহেলা আর আফজাল হোসেন সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন।
কালকের ঘটনাটা তাদের মাথায় ঢুকছে না।
কোথায় থেকে ঐ ছেলেটা এসে পড়লো।
আর কেই বা এই ছেলে ,,,, মাথা টা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
মেয়েটার যে কোনো ক্ষতি হবে না এই বিষয়ে ওনারা নিশ্চিত।
কারন নীল পরি কে বিয়ে করে নিয়েছে,,,, তাছাড়া পরি কোনো বাঁধা ও দেয় নি।
তার মানে নীল কে পরি আগে থেকেই চিনে।
নীলের সাথে যদি পরির সম্পর্ক থেকেই থাকে তাহলে মিসেস রাহেলা যখন পরি কে জিঙেস করছিলো তখন পরি বলে নি কেন।
যদি ও বললে ও প্রান্তের সাথে ই ওনারা বিয়ে দিতে চাইতেন।
ওনার মায়ের ইচ্ছে ছিল যে ,,, ওনারা ই বা কি করতে পারতেন।
কেউ কি চায় সংসার এ অভিশাপ লেগে যাক।
আফজাল হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– রাহেলা আমি কমিশনার সাহেবের থেকে খবর নিচ্ছি ,, নীল টা কে।
আর আমার মেয়ে কে আমি ফেরত চাই।
কি পেয়েছি কি ,,, বিয়ে টা কি কোনো ছেলে খেলা।
আমি যতদূর যাওয়া দরকার যাবো।
মিসেস রাহেলা তেমন কিছু বললেন না।
তিনি ভাবছেন
– ছোট থেকেই তো মেয়ে কে বলেছি কখনো জোড় করে বিয়ে দিবো না।
মেয়েকে সব সময় আসসাস দিয়েছি,,, নিজের সংসার ধ্বংস হওয়ার ভয়ে মেয়ে টার সাথে অন্যায় করছিলাম নাতো ?
তার মাথা টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।
সুলতানা বেগম রাখে গজ গজ করছেন।
এই এতো দিনের সাজানো প্ল্যান ঐ নীল বলে ছেলেটা ভেঙে দিলো।
সব কিছু শেষ মূহুর্তে এসে শেষ হয়ে গেল।
ছেলেটা বিয়ের খরচ বাবদ পনের লাখ টাকার চেইক ধরিয়ে দিয়ে পরি কে বিয়ে করে নিলো।
আর উনি সেটা চুপচাপ দেখে নিলেন।
সুলতানা বেগমের ইচ্ছে করছে সমস্ত কিছু ছুড়ে ফেলে দিতে।
উপর থেকে নেমে ভাইয়ের পাশে বসলেন।
আফজাল হোসেন এক পলক চেয়ে আবার ভাবনাতে বিভোর হলেন।
সুলতানা বেগম রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন
– দেখ আফজাল তোর মেয়ে টা সবার সামনে আমাদের নাক কেটে দিলো।
আমার প্রান্তের কোন দোষ আছে বল ?
আমার বাড়িতে কি ভালো থাকতো না ?
আমার তিন ছেলে মেয়ের পর প্রান্ত ,,, সবার আদরের ও,,,, পরি কি আমার বাসাতে আদর পেতো না।
কিন্তু তা না করে ঐ ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেল ।
আফজাল হোসেন বোনের কথা তে খানিকটা বিরক্ত হলেন।
আর যাই হোক না কেন তার মেয়ে পালিয়ে যায় নি।
যদি ও পরি বিয়েতে বাঁধা দেয় নি,,, কিন্তু এতে বলা যায় না পরি পালিয়ে গেছে।
ছেলেটা তো সবার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তারপর বিয়ে করেছে।
আফজাল হোসেন ধীর কন্ঠে বললেন
– দেখ আপা পরি পালিয়ে যায় নি।
সুলতানা বেগম কথা টা শুনে খুব বেশি খুশি হতে পারলেন না।
তিনি বললেন
– তা পরি কে কবে ফিরিয়ে আনবি।
বিয়ে টা তো দিতে হবে তাই না ?
সুলতানা বেগমের কথায় মিসেস রাহেলা রেগে গেলেন।
নিজের রাগ কে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিত করে বললেন
– আপা এটা কিহহ ধরনের কথা ,,,, পরির তো বিয়ে হয়ে গেছে।
এখন সামনে কি হবে তাই নিয়ে চিন্তা ,,, তারপর না প্রান্তের সাথে বিয়ে।
তাছাড়া পরির খবর টা তো পেতে হবে।
মেয়ে টার কি হলো,,, কেমন আছে কিছুই তো জানি না আমরা।
আর কে ই বা ছেলেটা , বাসা কোথায় , পরির সাথে কিসের সম্পর্ক,,, সমস্ত টা জানতে হবে তো।
মিসেস রাহেলার কথাতে সুলতানা বেগম ভরকে গেলেন।
তিনি হালকা রাগি কন্ঠে বললেন
– দেখো এতো শতো বুঝি না ,,,, মায়ের ইচ্ছে ছিলো তাই এতো জোড়াজোড়ি।
আমি চাই না সংসারের ক্ষতি হোক।
মিসেস রাহেলা চুপ করে রইলেন।
এই মূহুর্তে মেয়ে টাকে খুঁজে পাওয়া জরুরি।
সংসার নিয়ে মাথা ব্যাথা করতে চাচ্ছেন না ওনি।
ওনার তো মনে হচ্ছে মেয়ের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিতে চাওয়া টাই ঠিক হয় নি।
আফজাল হোসেন নিজের ভাবনাতে মশগুল।
তিনি সমস্ত কিছু মেলাতে লাগলেন।
সুলতানা বেগম আর কিছু বললেন না।
তিনি নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।
_______________________
কমিশনার কে বার কয়েক বার ফোন করেছেন আফজাল হোসেন কিন্তু কমিশনারের ফোন বন্ধ বলছে।
উপায় না পেয়ে কমিশনারের অফিসে ফোন করেন।
একজন কর্মকর্তা জানান কমিশনার জরুরি মিটিং এ ব্যস্ত।
আফজাল হোসেন পরিবার নিয়ে পরির নানু বাসাতে চলে আসে।
ঐ খানে থাকলেই কিছুক্ষণ পর পর লোক জন এসে জিঙেস করছে নানান কথা।
এই পরিস্থিতি তে ওনি উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত।
তাই বাধ্য হয়েই পরির নানুর বাসাতে চলে আসেন।
______________________
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে।
পরি রান্না ঘরের আশে পাশে ঘুর ঘুর করছে।
মিসেস রোজিনা কিছুতেই কাজ করতে দিচ্ছেন না।
এই মানুষ গুলো কে ঘিরে পরির অনেক স্বপ্ন ছিলো ,,,, একটা সময় তো ভেবেই নিয়েছিল নীল তার হবে না।
কিন্তু কি হয়ে গেল ,,,, বার বার সমস্ত টা গুলিয়ে যাচ্ছে।
সবার সাথে খানিকটা স্বাভাবিক হলে ও নীলের সাথে হয়ে উঠে নি।
আজ কে বিকেলে অনেক গেস্ট আসবেন।
পরি রান্না ঘরে আসতেই মিসেস রোজিনা আড় চোখে পরি কে দেখে নিলেন।
তারপর কঠোর স্বরে বললেন
– কি হয়েছে পরি,,, আবার কেন এসেছিস?
পরি কাঁচুমাচু করে উত্তর দিলো।
– আম্মু বিকেলে তো গেস্ট আসবে ,,,, তাহলে স্ন্যাকস টা আমাকে বানাতে দিয়ো।
মিসেস রোজিনা সোজা সাপটা বারন করে দিলেন।
পরি এসে মন খারাপ করে সোফা তে বসে রইলো।
নীল মাত্রই বাইরে থেকে বাসাতে ঢুকল।
সকালে নাস্তা করে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।
পরি কে সোফার এক কোনো মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে নীল ভ্রু কুঁচকালো।
ঘেমে একাকার হয়ে গেছে নীল ,,,,, শার্টের দুটো বোতাম খুলে বলল
– পরি মন খারাপ কেন ?
পরি নীলের কন্ঠ শুনতে পেয়ে নিজে কে সামলে নিয়ে দাঁড়ালো,,, মাথা নিচু করে বলল
– নাহহ তেমন কিছু না।
নীল সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো।
মিসেস রোজিনা টেবিল গোছাতে গোছাতে বললেন
– মেয়ের অভিমান হয়েছে ,,,
নীল – কেন ?
মিসেস রাহেলা পরির কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– পরি মা তুই অসুস্থ আছিস।
এখন রান্না ঘরে কাজ করলে আর ও অসুস্থ হয়ে যাবি।
পরি অপরাধীর মতো চেয়ে বলল
– কিন্তু আম্মু ,,,,,
মিসেস রোজিনা শুনতে নারাজ,,, তিনি বারন করে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
পরি চুপচাপ দাড়িয়ে
রইলো ।
নীল কিছুক্ষণ পরির দিকে চেয়ে থেকে মৃদু হাসলো।
তারপর বলল
– পরি আমি আম্মু কে বলছি ,,,, তুমি মন খারাপ করো না।
পরি এক পলক নীলের দিকে চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
নীল রান্না ঘরে যেতেই পরি মলিন হাসলো।
সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।
আচ্ছা স্বপ্ন ভেঙে গেলেই কি সব মিথ্যে হয়ে যাবে ?
হঠাৎ করেই পরির বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।
ইসসস আব্বু আম্মু খুব রেগে আছে না ?
কিন্তু পরি তো প্রান্ত কে বিয়ে করতে চায় নি,,, তাহলে ও কেন জোড় করে বিয়ে দিতে চায়।
পরির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
আম্মু আব্বু কে খুব ভালোবাসে ও ,,,,,,
কখনো চাই নি ওদের কষ্ট দিতে।
এই মূহুর্তে উচিত অনুচিত কিছুই বুঝতে পারছে না ,,,,, নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নেওয়া টাই উত্তম।
নীল কে কিচেন থেকে ফিরতে দেখেই পরি চোখের পানি আড়াল করে নিলো।
নীল এক পলক পরির দিকে চেয়ে থেকে বলল
– পরি হাফসার রুমের পাশের রুম টা তোমার।
তুমি রুমে গিয়ে গোসল করে নাও ।
আর আম্মু রাজি হয়েছে।
পরি নীরবে কৃতঙ্গ জানিয়ে,,, মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো তারপর উপরে উঠে গেল।
নীল পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মলিন হাসলো।
নীল জানে পরি ওকে ভালোবাসে তবু ও ওর সময়ের প্রয়োজন।
এক ই ঘরে থাকা টা পরির কাছে অস্বস্তিকর হবে।
নীল নিজের মনে বলতে লাগলো।
আহহহ নিজের বিয়ে করা বউ কে নিজের থেকে আলাদা রাখতে হচ্ছে।
উফফফ শশুর মশাই খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের বুঝাতে হবে দেখছি।
আর ফুপি শাশুড়ি আপনি তৈরি থাকুন ,,, জামাই রাজা আসছে খুব তাড়াতাড়ি।
এই টুকু বলেই নীল বাঁকা হাসলো যার অর্থ কেউ জানে না ।
_______________________
দুপরের শেষ সময় অনিক ছাঁদে দাড়িয়ে আছে।
এই গ্রামিন পরিবেশ টা তার বেশ মনে ধরেছে যদি ও এই পুরো বাড়িটাই আধুনিকতায় ভরপুর ।
আশে পাশে ও বেশ আধুনিকতা রয়েছে ,,, দীর্ঘ সতেরো বছর লন্ডনে ছিলো কি না।
সেই আট বছর বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে নিজ দেশ ছেড়ে লন্ডনে পারি দিয়েছে।
গত সতেরো বছরে পৃথিবীর বহু দেশে ঘুরলে ও নিজ জন্মভূমিতে আশা হয় নি।
বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো বলে দাদা তাদের মেনে নেয় নি।
ত্যয পুত্র করে ছিল,,, অনিকের বাবা মা আলাদা করেই সংসার গড়েন।
তারপর অনিক হয় ,,,, অনিকের যখন আট বছর তখন ওর দাদা মারা যান।
অনিকের বাবা মা যখন দেখতে যায় তখন ওর কাকা রা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
অনিকের বাবা রাগে অভিমানে তখনি বউ বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
কিছুদিনের মাঝেই লন্ডন যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।
সেই থেকেই ওদের লন্ডনে পথ চলা।
অনিক ছাঁদের এক কোনে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
সিগারেটে সুখ টান দিচ্ছিলো আর তখনি এক জোড়া চোখ অনিকের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
অনেকটা কাছে হওয়া তে সিগারেটের ধোঁয়া তে কাশতে লাগলো ।
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে অনিক সিগারেট ফেলে দিলো।
পেছন ফিরে তাকাতেই হাফসা কে দেখতে পেল।
হাফসা কে দেখে সৌজন্য মূলক হাসি দিলো।
হাফসা কাশি থামিয়ে বলল
– আপনি স্মোকিং করেন?
হাফসা র কথাতে অনিক ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
কেন স্মোকিং করতে পারে না সে ?
পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি লম্বা,,, উজ্জল ফরসা গায়ের রঙ,,, লন্ডনের স্মাট ছেলে যে বড় বড় কনফারেন্স মিটিং তুরি মেরে করে নেয়,, সে হাফসা র সামান্য কথার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
হাফসা ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ কথা মিলিয়ে অনিক বলল
– কেন আপনাদের দেশে কেউ বুঝি স্মোকিং করে না ?
অনিকের কথাতে হাফসা থ হয়ে গেল।
হাফসা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– আপনাদের দেশ বলতে?
অনিক মৃদু হেসে বলল
– আমি লন্ডনে সিটিজেন পাপ্ত।
আট বছর বয়স থেকে লন্ডনে আছি।
হাফসা কিছুক্ষণ ভেবে বলল
– তাহলে ভাইয়া যে বলল আপনি ওর ফ্রেন্ড।
– হুমমম আমি আর নীল মাস্টার্স এক সাথে শেষ করেছি।
হাফসা অবাক হয়ে বলল
– তারমানে আপনি ই ভাইয়ার বিজনেস এর সেয়ার হোল্ডার?
অনিক হালকা হেসে বলল
– হুমম।
বেশি নয় 25% এর ,,,,,
আগে জানলে 50% ই নিয়ে নিতাম হাহা,,,,,
হাফসা অনিকের শেষ কথাটা বুঝতে পারলো না।
হাফসা কৌতুহল হয়ে বলল
– মানে ?
– মানে হলো ,,, নীল গত তিন বছরে যে সাফল্য পেয়েছে তা আমার বাবা সতের বছর ধরে ও পায় নি।
অবশ্য নীল অনেক বেশি পরিশ্রমি আর লাস্ট ইয়ারের রেজাল্টে তো আমরা সবাই হতবাক।
যেহেতু নীল বিডি তে ভালো স্টুডেন্ট ছিল না ,,, সেখানে লন্ডনের মতো দেশে এমন অবিশ্বাস্য রেজাল্ট ।
হাফসা মুগ্ধ হয়ে সব কথা শুনছিল ।
ভাইয়ের নামে প্রশংসা নেহাত ই মন্দ নয়।
হাফসা মৃদু হেসে বলল
– আচ্ছা সব ই বুঝলাম।
এখন নিচে চলুন।
অনিক পকেটে হাত দিয়ে বলল
– এখন কেন ?
একটু পরে যাই ,,,,
হাফসা ফোনে টাইম দেখার পূর্বেই নীল এসে হাজির।
নীল অনিকের সাথে হাত মিলিয়ে বলল
– অনিক সব ঠিক ঠাক তো ?
কোনো সমস্যা হচ্ছে কি ?
অনিক মৃদু হেসে বলল
– নো ব্রো।
অল ইজ ওয়েল ,,,,,
নীল হালকা হেসে বলল
– ওকে।
কাল থেকে তোকে নিয়ে সব জায়গাতে যাবো।
সকালে ঘুমিয়ে ছিলি তাই ডাক দিই নি।
এখন নিচে চল ,,,,,
তারপর সবাই ছাঁদ থেকে নিচে চলে আসলো।
( আসসালামুআলাই রির্ডাস ।গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক দিয়ে পাশে থাকুন )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ