💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 25
________________________________
25,,,
সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই, সবাই মিলে নীলের বাসার পেছনে বাগানে বসে আছে।
বাগান টা বেশ বড় হওয়াতে কেমন যেন জঙ্গল জঙ্গল অনুভূতি আসে।
সবাই হাসি ঠাট্টা তে মেতে উঠেছে।
রিহান হাসতে হাসতেই বলল
– আচ্ছা দাদা ভাই আজকে রাতের প্ল্যান কী ?
নীল মুখ গোমড়া করে বলল
– আমার পকেট খালি করার ধান্দা করিস না আবার।
নীলের কথা তে সবাই হাসতে লাগল।
অনিক মাথায় হাত গুঁজে বলল
– আচ্ছা যেহেতু বাসা তে থিয়েটার রুম আছে।
তো সিনেমা দেখলে কেমন হয় ?
হাফসা উৎসাহ নিয়ে বলল
– সেইইই আইডিয়া।
এই ভাইয়া শোন না প্লিজ আমাকে কালারফুল পপ্পন এনে দিবি আজকে।
সেই হবে সিনেমার সাথে পপ্পন উফফ ,,, সাথে সফট ড্রিক্ হলে তো উরে ই যাবো।
নীল হাসতে হাসতে বলল
– একটু কম খা,,,,, যে গন্ডার এর মতো শরীর ছিলো।
অনেক কষ্ট করে এই চিকনি চামেলি হয়েছিস।
আবার না ফুলে যাস,,,,
সবাই এক যোগে হাসতে লাগলো।
হাফসা মুখ গোমড়া করে বলল
– ভাইয়া ,,, আমি একা নাহহহ পরি ও মটু ছিলো।
পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– এইইই আমি মোটে ও মোটা ছিলাম না।
আমি তো গুলুমুলু ছিলাম ,,,,
হাফসা চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল চুপ থাকতে।
কিন্তু পরি চুপ হলো না,,, ভাই রে ভাই একটু গুলুমুলু ছিল বলে ও সবাই মোটা নামক উপাধি ঝুলিয়ে দিয়েছিল।
এখন এতো গুলো মানুষের সামনে মানসম্মান খোয়ানো যাবে না।
হাফসা বেচারা মুখ গোমড়া করে রইলো।
অনিক হাফসা কে এক নজরে দেখে বলল
– হাফসা ইউ নো যারা মোটা তাদের কি বলা হয় ?
হাফসা কিছু বলল না,,, এই অনিক আবার কোন উপাধি দিতে যাচ্ছে কে জানে।
অনিক ভ্রু নাচিয়ে বলল
– যারা মোটা তাদের কে এক্সট্রা কিউট বলা হয়।
হাফসা অনিকের দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকালো।
ইসসস কেউ তো একজন হাফসা কে সাপোর্ট দিলো।
হাফসা নীল কে ভেঙ্চি কেটে দিলো ,,,,,, নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
নীল বোনের কাছে গিয়ে বসল তারপর বলল
– হাফসা বাবু রাগ করে না ,,, অনিক ই রাইট তুমি এক্সট্রা কিউট ই ছিলে।
তো আবার এক্সট্রা কিউট হয়ে যাও তো।
এই কথা বলতেই সবাই হাসতে লাগলো।
হাফসা রাগি চোখে তাকাতেই সবাই দমে গেল।
নিশাত বলল
– তো ফাইনাল তো রাতে সিনেমা দেখবো?
সবাই সম্মতি জানালো ,,,,,
রনি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে চেয়ে বলল
– তো কি মুভি দেখা হবে?
সবাই ভাবতে লাগলো ,,,,, নীল পরির দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল
– অবিয়াসলি হরোর মুভি।
হরোর মুভি শুনতেই পরির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
পরি শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল
– কেনন ? অন্য মুভি নয় কেনন?
হরোরর মুভি ক্যানসেল।
অনিক ভেবে বলল
– ওকে তাহলে কি দেখা যায়।
পরির চোখ মুখে খুশির ঝলকানি ফুটে উঠলো ।
নীল ভ্রু কুঁচকে বলল
– ক্যানসেল কেন হবে ?
অবশ্যই আমরা হরোর মুভি দেখবো।
পরি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল
– নাহহহ অন্য মুভি।
নীল পরির দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবোচক সুরে বলল
– কেন পরি ?
তুমি বুঝি ভয় পাও।
পরি শুকনো ঢোক গিলে নিলো।
পরি অসহায় দৃষ্টি তে চেয়ে
বলল
– মোটে ও না।
আমার ভালো লাগে না তাই বলছি।
নীল বাঁকা হেসে বলল
– বুঝেছি ভয় পাও কিন্তু বলবে না।
এই এই হরোর মুভি বাদ,,, পরি ভয় পায়।
পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– মোটে ও আমি ভয় কেন পাব?
নীল ভ্রু কুঁচকে বলল
– তো বলছো ভয় পাও নাহ্?
পরি একটু ভাব নিয়ে বলল
– নাহহহ ভয় পাই না।
নীল মুচকি হেসে বলল
– তো আর কি হরোর মুভি ই ডান।
পরি তো ভয় পায় নাহহ।
পরি অসহায় দৃষ্টি তে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নীল বাঁকা হাসলো ,,,, পরির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।
এই হালকা শীতের মধ্য ও ,,,,
পরি তো বার বার করে চাইছে যাতে কোনো ভাবে হরোর মুভি দেখা বাদ হয়ে যায়।
_______________________
সন্ধ্যার নাস্তা বানাতে ব্যস্ত রোজিনা বেগম ।
বাড়িতে এতো গুলো মানুষ সবার জন্য হালকা পাতলা নাস্তা তো বানাতেই হবে।
আবার রাতে নাকি মুভি দেখবে তাই ডিনার করবে কি করবে না তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
একটু ভারী নাস্তাই বানাচ্ছেন ওনি ,,, কাজে সাহায্য করছে বাসার সার্ভেন্ট।
চপ ভাজতে ভাজতে রোজিনা বেগম বললেন
– কলি শোন আমি তোর ভাইজান কে কফি দিতে যাচ্ছি।
একটু চপ গুলো দেখ তো।
কলি বলল
– আসছি আপা,,,
রোজিনা বেগম কফি হাতে নিয়ে বললেন
– পারবি তো ?
কলি সম্মতি জানিয়ে বলল
– হো আপা পারুম।
আপনি চিন্তা কইরেন না,, কাম তো প্রায় শেষ ই।
রোজিনা বেগম কফি হাতে যেতে যেতে বললেন
– আচ্ছা আমি যাচ্ছি তুই খাবার গুলো সাজিয়ে রাখিস।
কলি সম্মতি জানাতেই রোজিনা বেগম উপরে উঠে গেলেন।
হানিফ আহমেদ রুমে বসে কাজ করছেন।
বি ডি তেই তার ছোট খাটো বিজনেস আছে।
মাঝে মাঝে দেশের বাইরে ও যেতে হয়।
রোজিনা বেগম কফি দিতেই হানিফ আহমেদ মৃদু হেসে বললেন
– বসো,,,,,
রোজিনা বেগম হানিফ আহমেদের পাশে বসলেন।
হানিফ আহমেদ কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
– ছেলে মেয়েরা ভালো থাকলেই আমাদের শান্তি।
ওদের মুখের হাসি দেখলে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
রোজিনা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন
– হুমম।
এখন সব ভালোই ভালোই হলেই হয়।
হানিফ আহমেদ কফি টা অর্ধেক শেষ করে কফি কাপ সাইটে রেখে আবার লেপটপের কাজে মজে গেলেন।
রোজিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন
– একি কফি শেষ করে কাজ করো।
হানিফ আহমেদ কাজ করতে করতে বললেন
– নাহহহ কাজ টা
শেষ করতে হবে।
তোমার ছেলের বিজনেস এর কিছু সেয়ার বি ডি তে সেট করবে।
আর তাই এতো কাজ ,,,,,,
তাছাড়া নীল তো এখন আর বছরের পর বছর ধরে লন্ডনে থাকবে না।
লন্ডন এ মেইন বিজনেস থাকবে,,, যখন দরকার হবে যাওয়া আসা করবে।
রোজিনা বেগম হেসে বললেন
– হুমম। আচ্ছা তুমি কাজ করো আমি সবাই কে ডেকে নিয়ে নাস্তা দেই।
আর তুমি তো তেল মসলা খাবে না ,,, তো একটু সুপ বানিয়ে দেই?
হানিফ আহমেদ সম্মতি জানাতেই রোজিনা বেগম নিচে চলে গেলেন।
_______________________
আফজাল হোসেন সহ পরিবারের সবাই এক সাথে জড় হয়ে আছে।
আমান আর নিশা দুজনেই কাঁদছে।
আমান বলল
– আব্বু আপু যখন কাঁদছিল তখন অনেক বলেছিলাম এভাবে জোড় করো না কিন্তু তোমরা শুনলে না।
নিশার কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে।
কথা বলতে পারছে না,,,, ভাই বোনের সাথে ঝগড়া মারামারি হলে ও দিন শেষে একে অপর কে খুব ভালোবাসে ওরা।
নিশা আধৌ আধৌ বুলি তে বলল
– আমি নীল ভাইয়া কে আগে দেখেছি।
আপু আমাকে একবার দেখিয়েছিল কিন্তু কিছু বলে নি।
নিশার কথাতে আফজাল হোসেন থমকে গেলেন।
তবে কি নীলের সাথে পরির রিলেশন ছিলো?
নাকি অন্য কিছু,,,,, পরি কেন বলে নি তাদের।আফজাল হোসেন চিন্তা তে পরে গেলেন।
যত ই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না।
বার বার চিন্তা এসে মাথায় হানা দিচ্ছে।
_______________________
হাফসা করিডরে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে।
অনিক এসেই হাফসা র পাশে বসে পড়ল।
হাফসা অনিক কে একবার দেখে মিষ্টি হাসি দিলো।
অনিক ও মিষ্টি হেসে বলল
– গান শুনছো ?
হাফসা মাথা ঝাকালো,,, অনিক মৃদু হেসে বলল
– কি গান ?
হাফসা কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে বলল
– আমার সব থেকে ফেবরেট সং জাস্টিন বিবার এর বেবি সং।
উফফফফফ জাস্ট অসাম।
অনিক অবাক হয়ে বলল
– ওহহ রিয়েলি?
হাফসা মাথা ঝাকালো,, অনিক হেসে বলল
– আমার ও।
হাফসা ভ্রু কুঁচকাতেই অনিক বলল
– রিয়েলি আমি এই সং টা খুব ভালো গাইতে ও পারি।
হাফসা অবিশ্বাসী চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলল
– মজা করছেন ?
অনিক মৃদু হেসে বলল
– মজা কেন করবো ?
সত্যি আমি এটা খুব ভালো গাইতে পারি।
ওকে তোমাকে শুনাবো নে তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে।
হাফসা সম্মতি জানালো,, তারপর কিছুক্ষণ গল্প করলো।
হাফসা ফোনে টাইম দেখে বলল 9:30 বাজে ভাইয়া এখনো আসে না কেন ?
সব কিছু ঠিক ঠাক করতে ও তো এক ঘন্টা লাগবে।
অনিক চিন্তিত স্বরে বলল
– দেখছি নীল কোথায়।
নীল কে ফোন লাগাতে ই নীল এসে হাজির।
হাতে এক গাদা জিনিসপত্র।
হাফসা র উপর ফেলে দিয়ে অনিকের পাশে বসে পড়লো নীল।
নীল কে দেখেই অনিক পিঠ চাপরে বলল
– বাজে কয়টা? এখনি তো ফোন দিচ্ছিলাম ,,,,,,
নীল রাগী ভঙ্গিতে বলল
– চুপ কর বেটা।
এতো সব আনতে গিয়েই তো লেট হলো।
কোথায় একটু আপ্যায়ন করবি তা নাহহহ উল্টো প্রশ্ন করিস।
অনিক বাকা হেসে বলল
– কেন ভাই ভাবি কি আদর যত্ন করে নাহ্।
নীল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল
– ছোট বোন আমার সামনে ,,, আর তুই।
হাফসা চোখ নাচিয়ে বলল
– এমন ভাব ধরছো মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বলো না।
পিচ্ছি কাল থেকেই সব বলো আর এখন তো আমার বান্ধবী কেই বিয়ে করেছো।
তোমার ফাও পেঁচাল শোনার মতো সময় আমার নেই।
আমি গেলাম
এই বলেই হাফসা ভেঙ্চি কেটে দিলো।
তারপর ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে গেল।
নীল আর অনিক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
অনিক হাসি থামিয়ে বলল
– কোন মুভি দেখবো আমরা?
নীল শান্ত স্বরে বলল
– দ্যা রং হাউস
অনিক চোখ বড় বড় করে বলল
– ইংলিশ হরোর মুভি।
ভাই ওরা তো ভয়েই শেষ হয়ে যাবে।
নীল বাঁকা হেসে বলল
– এটাই তো চাই ।
অনিক মৃদু হাসলো ,,, সাথে নীল ও।
( আসসালামুআলাই রির্ডাস। আমে দুঃখিত ছোট চরে দেওয়ার জন্য। ছোট ভাই সারাক্ষণ ফোন হাতে বসে থাকে। সব কিছু মিলিয়ে গল্প লিখতে পারি নি।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ