বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-৩৪

0
2539

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 34
______________________________
34,,,,

পাখির কিচিরমিচির আর তীক্ষ্ম সূর্যের কিরনে চোখ মেলে তাকায় নীল।
পরি নীলের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
ঠিক যেন পাখির ছোট্ট বাচ্চা টা ,,, শুয়ে আছে।
নীল পরির মাথায় চুমু দিয়ে হাত বুলাতে থাকলো।
কিছুক্ষণের মাঝেই নীলের ফোন বেজে উঠলো।
যার ফলে পরি ও জেগে উঠলো।
নীল ফোন রিসিপ করে কথা বলতে লাগলো।

পরি আড়মোড়া ভেঙে বনানীর ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই বহুলপরিচিত রাস্তা টা আজ একটু বেশি ই মুগ্ধ করছে পরিকে ।
হয়তো প্রিয় মানুষটি পাশে আছে বলে।
ব্যালকনির কোনাতে রাখা বনি প্রিন্স এর আধফোটা কলির দিকে চোখ যেতেই পরির মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।
তিন তিন টে বছর ধরে এতো যত্ন করার পর ও এই গাছ ফুল দেয় নি।
আর আজ সেই গাছ ব্যালকনি টা কে পূর্ন করে দিলো।
তবে কি নীলের সাথেই সংযোগ মিলন ছিলো এই ফুলের।
পরি মুগ্ধ হয়ে আধফোটা কলিটি কে দেখে যাচ্ছে।
ঠিক যেন বসন্তের ফুটন্ত রঙিন ছবি ।

হঠাৎ ই নীল পরির কোমর জড়িয়ে ধরে পরির ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলে
– কি দেখছো?

পরি নীলের দু হাত আঁকড়ে ধরে বলল
– দেখুন নাহহ কি সুন্দর আজ কলি ফুটেছে।
এতো দিন যত্ন করার পর ও এই গাছ ফুল দেয় নি।
আর আজ পরিপূর্ণ করে দিলো।

নীল মুচকি হেসে পরিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে বলল
– এর বিশেষত্ব কি তাহহ জানো ?

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– নাহহ ।

নীল পরির মাথাতে চুমু দিয়ে বলল
– আমি বলছি।

তারপর পরি কে নিয়ে দোলনাতে বসে পরির আঙুলের মাঝে আঙুল দিয়ে নীল বলল
– এর বিশেষত্ব হলো আমাদের সার্থকতা।
আমরা দুজন দুজনার হয়ে ও দূরে ছিলাম। কেউ নিজেদের অনুভূতি জানান দেই নি।
আর তাই এই ফুল গাছটা ও অভিমান করে ছিলো আমাদের উপর।
কিন্তু আমাদের মাঝে এখন আর কোনো বাঁধা নেই তাই বনি প্রিন্স ও জানান দিচ্ছে যে তোরা দুজন মুগ্ধ যুগলবন্দি।
তোদের কাছে আমার অভিমান ও হার মেনে নিয়েছে।

নীলের কথা শুনে পরি খিলখিল করে হাসতে থাকে।
আর নীল বরাবরের মতো প্রেয়সীর ভুবনভোলানো হাসিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
_______________________

শীতের কুয়াশা কে ছাড়িয়ে কিছুটা রোদ্দুর প্রকৃতি কে আলোকিত করে যাচ্ছে।
ছাদে দাড়িয়ে কোমল রোদ্দুর অনূভব করছে পরি।
মনে তৃপ্তি,, মুখে হাসি ,, আর সাথে স্নিগ্ধ পরিবেশ।
সব কেমন যেন স্বপ্নের মতো ,,,,,
নীল কে ভালোবাসি কথাটা আজ ও বলা হয় নি।
এই একটি কথার মাঝে কি কখনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ?
হয়তো নাহহহ
অনেক সময় চোখের কৌতুহল দেখে ও মেপে নেওয়া যায় সে তাকে ভালোবাসে।
তবু ও এই ভালোবাসি কথাটা অতি মূল্যবান।
যা শোনার জন্য কতো প্রেমিক প্রেমিকারা মাসের পর মাস বছরের পর বছর অপেক্ষা করে থাকে।
কেউ এর সার্থকতা পায় তো কেউ পায় না।
তবু ও অপেক্ষা করে থাকে।
পরি মনে মনে স্থির করে নিলো নীল কে ভালোবাসি কথাটা খুব তাড়াতাড়ি বলে দিবে।
কোনো রকম খামতি রাখবে না ওদের সম্পর্কে।
পরি কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে আসলো।

আমান আর নিশা জামা কাপড় সিলেক্ট করতে ব্যস্ত।
আপু আর দুলাভাই এর সাথে ঘুরতে যাবে ফিলিংস ই ভিন্ন।
পরি রুমে আসতেই নীল তাড়া দিয়ে বলল
– পরি ফাস্ট রেডি হও।
সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হবে তো।

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
তারপর রেডি হতে চলে গেল।
_______________________

গুলশানের বিশাল এক রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে এক ঝাঁক পাখিরা।
সবার হাতেই ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস।
মাঝে মাঝেই সবাই খিল খিল করে হেসে উঠছে।

নীল মুচকি হেসে বলল
– মিস শ্যালিকা রা আপনাদের বান্ধবীর একটু সিক্রেট খবর গুলো দিন তো।

রিনি আপসোস এর সুরে বলল
– সেকি দুলাভাই দশ বারোদিন সংসার হয়ে গেল আর এখনো সিক্রেট জানতে পারলেন না।

নীল মুখ গোমড়া করে বলল
– কি আর বলবো শ্যালিকা সাহেবা আপনার বান্ধবী কে গত সাত বছর ধরে দেখে আসছি তাও চিনে উঠতে পারলাম না।

মলি মুখ কুঁচকে বলল
– সে কি ভাইয়া কি হয়েছে?

নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– হায় আর কি বলব।
যখন তেরো চৌদ্দ বছরের পিচ্ছি বালিকা ছিলো তখন আমায় তুই করে বলতো।
আর এখন আঠারো তে পা দিচ্ছে তারপর ও আপনি করে বলছে।
এখন মনে হচ্ছে সত্যি এক পিচ্ছি কে বিয়ে করে ফেলেছি আর আমি হয়ে গেছি বৃদ্ধ মহাশয়।

নীলের কথাতে সবাই অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো।
আর পরি হতাশ হয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।
বেচারা পরির অবস্থা নাজেহাল করেই ছাড়বে এরা।

তিন্নি হাসি থামিয়ে বলল
– এ কেমন কথা দুলাভাই বউ এর মুখ থেকে তুমি বলাতে পারলেন না।

নীল হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলল
– উফফফ শালি সাহেবা দুলাভাই বলবেন না।
কলিজায় বড্ড লাগে,,,

নীলের কথা শুনে সবার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেছে।
তিন্নি বিঘ্ন কন্ঠে বলল
– সেকি দুলাভাই,,, বউ বুঝি আজকাল মিষ্টি বেশি ই দিচ্ছে।
সুগারের প্রবলেম হয়ে যাচ্ছে নাকি।

তিন্নির কথার প্রতিউত্তরে নীল বলল
– ঝাল মিষ্টি টক সব ই দিচ্ছে শালি সাহেবা।
কিন্তু আপনি বলে বর থেকে বুরো বানিয়ে দিচ্ছে যে।

এতোক্ষন পরি চুপ থাকলে ও এবার আর থাকতে পারলো না।

পরি চোখ রাঙিয়ে বলল
– এই তোরা থামবি ,,,,
তোদের পাশে যে দুটো বাচ্চা আছে দেখছিস না।

রিনি মুখ দিয়ে ওউউউ শব্দ করে বলে
– হায় হায় আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার ডার্লিং যে পাশেই আছে।

আমান ভেঙ্চি কেটে বলল
– তোমায় আমি আর বিয়েই করবো না।
হবু বর কে ভুলে যায় যে তাকে বিয়ে করে দেখবো আমি আছি বর যাত্রী আছে কিন্তু বউ ই নেই।

আমানের কথায় সবাই অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো।
পরির চোখের সাথে নীলের চোখাচোখি হতেই পরি নীল কে ভেঙ্চি কেটে দেয়।
আর নীল চোখ মুখ কুঁচকে ইশারা তে চুমু দেখিয়ে দেয়।
পরির লজ্জায় ব্লাশিং হতে থাকে।
যার ফলে পরির বান্ধবীরা পরি কে পিন্চ কাটতে থাকে।
পরি বেচারি অসহায়ের মতো সব সয়ে নেয়।
কিছু বললেই আখেরে এরা পরি কে লজ্জায় ফেলে দিবে।
তার থেকে চুপ থাকাটাই শ্রেয় ।

দুটো ওয়েটার এসে খাবার সার্ভ করে দিলো।
সবাই একসাথে লান্স করে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসে।

গুলশান এক নাম্বারে আসতেই বিশাল বড় একটা কম্পার্টমেন্ট চোখে পড়ে পরির।
এই কম্পার্টমেন্ট টার কাজ চলছে ,,,, পুরো কম্পার্টমেন্ট টার ডিজাইন ইউ এস এর মডেলের।
আঠারো তলার এই বিশাল বিল্ডিং যে কারো নজর কারতে সক্ষম।
রাস্তার ধার দিয়ে যারাই যাচ্ছে তারাই এই বিল্ডিং এর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকছে।
বিডিতে আমেরিকান মডেলের বিল্ডিং সবাই কে বিচলিত করছে।
পরি অবাক হয়ে দেখছে সব ,,,,
নীল মুচকি হেসে বলল
– কি দেখছো?
পরি মৃদু হেসে বলল
– এক দেড় বছর আগে আমি এই রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম।
তখন এই প্লট টা খালি ছিলো আর আজ কি সুন্দর এই বিশাল মাপের কম্পার্টমেন্ট তৈরি হয়ে গেছে।

নীল মৃদু হেসে বলল
– বালিকনা জমতে জমতেই বিশাল বড়ো দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
ঠিক তেমনি সূক্ষ্ম ভালোবাসা জমতে জমতে বিশাল মাপের ভালোবাসা তৈরি হয়।
অর্থাৎ সব কিছুই সূক্ষ্ম থেকে বৃহত্তর হয়।

পরি মুচকি হেসে বলল
– আজকাল আপনি বড্ড বেশি বুঝেন।

নীল পরি কে চোখ মেরে বলল
– আগে থেকেই শুধু তোমাকে ই বুঝতে দেই নি।

পরি ভ্রু বাঁকিয়ে বলল
– ঢং।

নীল হাসতে হাসতে বলল
– সেটা ও তো তোমার অংশ।

– ইসসসস

– আচ্ছা পরি এই এপারটমেন্ট টা কি সত্যি ই খুব সুন্দর হয়েছে ?
তোমার ভালো লেগেছে ?

পরি ভাবলেশহীন ভাবে বলল
– অবশ্যই।
আমেরিকান মডেলের প্রতিটি জিনিস ই অনেক সুন্দর হয়।

নীল কপালে হাত দিয়ে বলল
– আয় হায় কি বলো।
এখন আমি নিজেকে কি করে আমেরিকান মডেল বানাই বলো তো।

নীলের কথাতে পরি মুচকি হেসে বলল
– আমার আমেরিকান মডেলের বর চাই না।
ইনফেক্ট অন্য কাউকেই চাই না।

নীল মুচকি হেসে বলল
– নতুন করে প্রেমে পড়ছো বুঝি।

পরি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল
– মোটে ও নাহহহ

নীল হাসতে হাসতে বলল
– সামথিং সামথিং।

পরি মুখ ঘুরিয়ে বলল
– নাথিং নাথিং

তখনি আমান আর নিশা এসে হাজির।
হাতে এক গাঁদা জিনিসপত্র।
নীল মুচকি হেসে বলল
– কি সব ঠিক ঠাক তো।

আমান আর নিশা মাথা ঝাকিয়ে বলল
– 100% ঠিক ঠাক এটিএম কার্ড।

ওদের কথা শুনে নীল আর পরি হাসতে লাগলো।
তারপর সবাই গাড়িতে উঠে বনানীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
_______________________

রাতে ডিনার কমপ্লিট করে ঘুমাতে এসেছে নীল ও পরি।
পরি বেশ ক্লান্ত,,,, সারাদিনের ঘোরাফেরার কারনে চোখ দুটো অষাঢ় হয়ে গেছে।
পরি বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ও ঘুম কে আটকে রাখতে পারলো না ।
মূহুর্তের মাঝেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।
নীল ল্যাপটপ হাতে কাজ করে যাচ্ছে।
বিডিতে বেশ কয়েকটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে ওর কম্পানি তার ওপর বিডিতে মেইন বিজনেস সেট করবে।
সব কিছু মিলিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে নীল কে।
নীল কাজের ফাঁকে ফাঁকে পরি কে দেখে নিচ্ছে।
ক্লান্ত ভরা শরীরটা পরির মায়াবি মুখটার কাছে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নীল মুচকি হেসে পরির কাছে এসে বসলো।
ঘুমন্ত পরির মুখটা আরো ও বেশি মায়াবী লাগছে।
নীল টুপ করে পরির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
কি ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে পরিকে,, রোজ মনে হচ্ছে একটু একটু করে সৌন্দর্য আরো ও বেড়ে যাচ্ছে।
লোকে বলে মানুষের অনুভূতি নাকি দিন কে দিন বিলীন হয়ে যায় ।
কিন্তু নীলের অনুভূতি তো দিন কে দিন গাঢ় হচ্ছে।
ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে চলছে ,,,,

নীল দু হাত দিয়ে পরির গাল দুটো আকড়ে ধরে বলল
– মায়াবিনী এতো মায়া কেন তোমার মাঝে?
এই দহনে ঝলসে যাচ্ছি আমি।
এই অনুভূতি আমায় শেষ করে দিচ্ছে ।
কি করলি মিলিবে শান্তি ?
অশান্ত বুকে তোমার মাথা গুঁজে শান্ত করো আমায়।
আমি যে নিশ্বেষ হয়ে যাচ্ছি ,,,,
এই সব বুলি আওরাতে আওরাতে নীল পরি উপর ই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তা নীলের অজানা।

শীত কালের শীতের মাঝে দুজন দুজনার উষ্ণতা পেয়ে একে অপর কে আঁকড়ে ধরে নিলো।
দুজনেই ঘুমের মাঝে একে অপরকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে থাকলো।
__________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
ভেবেছিলাম দ্বিতীয় গল্প টাতেই 2000 ফলোয়ার হয়ে যাবে।
কিন্তু হায় তার কোনো রেশ ই দেখছি না।
প্লিজ সবাই বেশি বেশি ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here