বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-৪১শেষাংশ

0
4049

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 40
& Last part
_______________________
40 পার্ট শেষাংশ

ফিরোজা রঙা গ্রাউন পড়ে আছে পরি।
মুখে ব্রাইডাল প্রশাধনীর ছোঁয়া ।
একদম রাজকন্যার মতো দেখতে লাগছে পরি কে।
মেহেন্দির অনুষ্ঠান বলে কথা,,, একটু সাজ গোঁজ না হলে চলে।
মুখে লাজুকতা হাসি,,, বন্ধু বান্ধবী আত্মীয় স্বজনে টুইটুম্বর পুরো বাড়ি।
বিশাল অনুষ্ঠান হচ্ছে,,,,সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার মাঝে নীলদের বাসার সবাই পরিদের বাসায় চলে আসলো।
তরুন তরুণীরা নীল ও তার বন্ধু বান্ধবের সাথে ফাজলামি টে ব্যস্ত।
পরি একা একা বোর হচ্ছে,,,,,
মনে হচ্ছে পরি নিতান্তই সাজানো পুতুল।
নীল আড়চোখে পরি কে দেখে যাচ্ছে,,,, শ্যালক শ্যালিকাদের পাল্লায় পড়ে বউ কে দেখার ও সুযোগ পাচ্ছে না।
আধ ঘন্টা পর কোনে মতে উঠে এসেছে নীল।
অন্যদিকে হাফসা আর অনিকের এনগেন্সমেন নিয়ে ব্যস্ত সবাই।
এই ফাঁকে পরির হাত ধরে আড়ালে নিয়ে যায় নীল।
পরি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে
– আহহ কি করছেন কি ?
বাড়ি ভর্তি মানুষজন,,,

নীল ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল
– তোহ ?

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– মানে টাহহহ কি ? লোকে দেখলে বিষয়টা কি হবে।
ছাড়ুন তো এখন ,,,,,

নীল – এতো সহজে ছাড়ছি নাহহ। আমার বউ আমি ধরেছি তাতে কার কি ? হুমমম
তবে এক শর্তে ছাড়তে পারি।

– কিহহ শর্ত ? একটু ফাস্ট বলুন প্লিজ কেউ এসে না পরে।

নীল – তুমি করে বলো। মিসেস নীল তুমি তোমার বর কে তুমি করে বলবে সেটা ও এই মুহূর্তেই ।

নীলের কথা শুনে পরির বুক ধুকপুকানি শুরু করে দিলো।
নীল কে তুমি বলতে বেশ অস্বস্তি তে পড়তে হয় পরির।
অথচ এক সময় তুই করে ও বলেছে।

নীল পরির দু পাশের দেয়ালের হাত রেখে সামান্য ঝুঁকে বলল
– বলো ।

পরি নীলের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে তুতলিয়ে বলল
– পারবো নাহহ।
আমার অস্বস্তি হয়,,,, আপনি ই ঠিক ঠাক।

নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– আচ্ছা সমস্যা নেই তো এই ভাবেই থাকো।

পরি চোখ বড় বড় করে বলল
– মানেননন?

– মানে আমার দু হাতের বাঁধনে ই আটকে থাকো। দেখি কতোক্ষন থাকতে দেখে পারো।
অবশ্য আমার কোনো সমস্যা ই নেই। সমস্ত টাই তোমার ইচ্ছে মিসেস নীল।

পরি ভেঙ্চি কেটে বলল
– আমার ও সমস্যা নেই।

পাঁচ মিনিট যেতেই এই দিকটায় কারো আসার আওয়াজ পেলো পরি।
পরি হুরমুরিয়ে বলল
– এই এই কে যেন আসছে ছাড়ুন প্লিজ । এসে এই ভাবে দেখলে পুরো ঘেটে যাবে । বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে ছাড়ুন প্লিজ।

নীল – পারবো না।

– মানে ।

নীল – তুমি ও তো বললে পারবো না।
তো আমি ও বললাম পারবো না।

পরির ইচ্ছে হচ্ছে নীলের মাথা টা ফাটিয়ে দিতে।
কেমন লেগে লেগে কথা বলছে
পরি হাত দিয়ে নীল কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো।
অন্যদিকে কারো আসার আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে।
পরি তাড়া দিয়ে বলল
– প্লিজ ছাড়ুন। প্লিজ,,,,,,,

কিন্তু নীল ছাড়তে নারাজ।
অগত্যা পরি হার মেনে নিলো।
পরি কয়েকবার দম নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল
– নীল ছাড়ো প্লিজ ,,,,,,

পরির কথাতে নীলের মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি ফুটে উঠলো।
পরি চোখ মেলে তাকিয়ে বলল
– এই বার তো ছাড়ো প্লিজ।

নীল ছাড়ার বদলে পরি কে উল্টো আরো আঁকড়ে ধরলো।
পরি নীলের দু হাত সরাতে সরাতে বলল
– কেউ এসে পরবে। আর আমি তো তোমার শর্ত মেনেছি।প্লিজ ছাড়ো নাহহহ প্লিজ ,,,,নীল।

নীল পরি কে আরেকটু কাছে টেনে বলল
– উহুমমম আসবে না।

পরি ব্যগ্র হয়ে বলল
– একটু আগেই তো কারো পায়ের শব্দ পাচ্ছিলাম।

নীল মুচকি হেসে উঠলো।
পরি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকাতেই নীল বাঁকা হসলো।
নীলের এই হাসির মানেটা পরি ঠিক ঠাত্তর করতে পারলো না।

নীল চোখ নাচিয়ে পকেট থেকে ছোট্ট একটা রিমোট বের করে দেখালো।
বাকিটা বুঝতে পরির আর অসুবিধা হলো না।
নীল একটু দূরে ছোট্ট একটা রেকর্ডার রেখে ছিলো যার থেকেই পায়ের আওয়াজ আসছিলো।
পরির ইচ্ছে হলো নিজের গালে নিজেই ঠাস ঠাস করে চর বসিয়ে দিতে।
পরি এতো ভীতু কেন ?
কেউ আসলে কি পরি একাই লজ্জা পেতো নীল ও তো পেতো।
পরি নীলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিশা আর আমান এসে হাজির।

আমান আর নিশা কে দেখে পরি দমে গেল।
নিশা ব্যস্ত কন্ঠে বলল
– হাফসা আপুর আর অনিক ভাইয়ার রিং একচেন্সজ করবে।
সবাই তোমাদের খুঁজছে,,, পরি নীলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে হন হনিয়ে চলে গেল।
নিশা আমান আর নীল পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে ই খিল খিল করে হেসে উঠলো।
_______________________

রাত নয়টা সবাই জড়ো হয়েছে মেহেদী দেওয়ার জন্য।
পরি কে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে। পরির বরাবর নীল পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।
নীলের সাথে বেশ কয়েক বার পরির চোখাচোখি হয়ে গেছে।
যতবার চোখাচোখি হচ্ছে নীল ততোবার ই ফ্লাইং চুমু কিংবা চোখ মারছে।
কি লজ্জা জনক বিষয় কেউ দেখে নিলে,,,। নীলের লাগামহীন কন্ঠে পরি বার বার লজ্জা আর অস্বস্তি তে নুইয়ে যাচ্ছিলো
এভাবেই নীলের খাম খেয়ালি পানা কান্ঠ সহ্য করতে করতে পরির মেহেদী দেওয়ার পর্ব শেষ হয়ে যায়।
ডিনার করার সময় পরি পরে মহা মুশকিলে ।
হাতে মেহেদী দিয়ে কি করে খাবে পরি,,,, মিসেস রাহেলা খাবার নিয়ে এগিয়ে আসলেই নীল সামনে এসে হাজির হয়।
পরি ভ্যাবলার মতো নীলের দিকে তাকাতেই নীল মেকি হাসি দেয়।
মিসেস রাহেলার উদ্দেশ্যে নীল বলল
– আন্টি আপনি ডিনার সেড়ে নিন আমি পরি কে খাইয়ে দিচ্ছি ।

মিসেস রাহেলা কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারলেন না।
ওনার ই অস্বস্তি হচ্ছে ওনি মৃদু হেসে নীলের হাতে খাবার দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন।
পরি হা হয়ে তাকিয়ে আছে,,,, কি হয়ে গেল। নীল চোখ মারতেই পরি মাথা নিচু করে নেয়।

এভাবেই হাসি মজা হৈ হুল্লর উল্লাস এ কেঁটে যায় মেহেন্দির অনুষ্ঠান।
হলুদের দিন হয় আরেক কান্ড,,,,
নীল পরি কে হলুদ লাগাতে চলে আসে।
তার বউ এর গায়ে প্রথম হলুদ টা নাকি সেই লাগাবে।
নীল তো নিজের মতো স্বাভাবিক ই আছে।
কিন্তু পরি লজ্জায় কুকরে যাচ্ছিলো বড় ছোট সবাই মিলে পরি কে আরো ও লজ্জা দিয়ে যাচ্ছিলো।
হলুদ দেওয়ার সময় নীল পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলল
– তৈরি থেকো কাল কে আর ছাড়ছি নাহহহ।

নীলের কথাতে পরির নিশ্বাস ভারী হয়ে যায়।
শরীরে অস্বাভাবিক কম্পন শুরু হয়,,,
এই নীলের ভালোবাসায় পরি মরেই যাবে।
তবু ও বারং বার নীলের ভালোবাসা পরির চাই ই চাই।
_________________________

পরি কে বধুর বেশে সাজানো হচ্ছে।
লাল টকটকে রঙা বেনারসির সাথে ভারী গয়না,,, সাথে রয়েছে ব্রাইডাল মেকআপ।
কি অদ্ভুত পরির বিয়ের সাত মাস হয়ে গেলে ও কিন্তু পরি বউ সাজে নি।
আজ প্রথম বউ সাজছে পরি,,,
পরির ভেতর অসম্ভব লজ্জা কাজ করছে। যার খানিক টা রেশ মুখে ও দেখা যাচ্ছে।
নীলের সামনে গেলেই বোধহয় সে জ্ঞান হাড়াবে।
সাজ কমপ্লিট হলে বিউটিশিয়ান মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে মাশআল্লাহ।
বিউটিশিয়ান পরির থুতনি উচু করে বলল
– পরি আজ তোমায় পরিপূর্ণ লাগছে।
সেইদিন এতো সুন্দর লাগার পর ও কোথায় যেন খামতি ছিল।
আজ কোনো কিছুর কমতি নেই।
তোমাদের গল্প শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম।
আল্লাহ তোমাদের জীবন সুন্দর করুক।

বিউটিশিয়ানের কথায় পরির মনে স্নিগ্ধতা চলে আসে।
সত্যি সে খুব খুশি ,,,,,, নীলের মতো কাউকে জীবনে পেয়ে পূর্ন পরি।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এমন একজন কে তার করে পাঠানোর জন্য ।

কিছুক্ষণ আগেই নাকি বরযাত্রী এসেছে।
পরি কে ফেলে ই সবাই বরের কাছে চলে এসেছে।
পরি বোরিং ফিল করছিলো তখনি হাফসা রুমে ঢুকে পরি কে জড়িয়ে ধরে।
চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে পরির কানের পিঠে লাগিয়ে বলল
– মাশআল্লাহ আমার ভাবির দিকে কেউ নজর না দিয়ে দেয়।

পরি মিষ্টি হেসে বলল
– তোর ভাই ই দিবে দেখে নিস।

পরি কে হালকা ধাক্কা দিয়ে হাফসা বলল
– সে তো দিবেই অনেক কিছুই দিবে আজকে।

পরি হাফসার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হাফসা দমে যায়।
কিছুক্ষণের মাঝেই কাজি চলে আসেন বিয়ে পড়াতে।
অবশেষে পবিত্র সেই তিন কবুল উচ্চারণ করে ধর্ম মতে পরি আর নীল বিয়ে নামক পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়।
কবুল বলার সময় পরির চোখ দুটো ভরে যায় অশ্রু তে।
এ চোখের পানি খুশির পানি ,,,, পবিএতার পানি , পূর্নতার পানি , দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের পানি।
__________________

বিদায় দেওয়ার সময় পরি অপ্রতিরোধ্য ভাবে কান্না করে।
মিসেস রাহেলা , নিশা আর আমান ও অনড়গল কান্না করতে থাকে।
আফজাল হোসেন চোখের কোনের পানি টুকু আড়াল করে মিসেস রাহেলার থেকে পরি কে ছাড়িয়ে আনেন।
মেয়ে মানেই একটা সময় পর অন্যের হাতে তুলে দেওয়া।
মেয়ে মানে শান্তি, পবিএতা, স্নিগ্ধতা তবে একদিন সেই মেয়েটিকে অন্যের ঘর আলো করার জন্য পাঠাতে হয়।
কি অদ্ভুত এ পৃথিবী ,,,, যেই মেয়েটা তার বাবার ঘর আলো করে রাখে সেই মেয়েটিকে একটা সময় পর সেই ঘর ছেড়ে দিতে হয়।
পরি আফজাল হোসেন কে জড়িয়ে কেঁদে উঠে ।
এই পরিবার কে অনেক বেশি ভালোবাসে পরি। এদের ছাড়া পরি যে অসম্পূর্ণ ।
আফজাল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– পরি মা জীবন টা অনেক কঠিন রে।
দেখ না আমার সেই ছোট্ট পরির সাথে আমি কতোটা অন্যায় করে ছিলাম।
একজন সফল পিতা নই আমি ,,,,, তবে বিশ্বাস কর তোকে খুব ভালোবাসি।

পরি আফজাল হোসেন কে শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– আব্বু তুমি নিজেকে দোষারোপ করো না।

আফজাল হোসেন মৃদু হেসে বললেন
– খুব সুখি হবি মা।

রাত সাড়ে আটটা বিদায় না দিলে গুলশান পৌঁছাতে খুব দেরি হয়ে যাবে ওদের।
আফজাল হোসেন নিজের আবেগ সামলিয়ে পরি কে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলেন।
নীলের হাতে মেয়ের হাত দুটি দিয়ে বললেন
– আমি পিতার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি নি বাবা।
পরির ভালো থাকা তোমার হাতে দিলাম।

নীল মুচকি হেসে আফজাল হোসেন কে আসস্ত করে বললেন
– চিন্তা করবেন না বাবা ,,, দায়িত্ব যখন নিয়েছি তখন পরির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ও ঝরতে দিবো না।
অপরাধী তো আমি ও ছিলাম,,,,
তবে স্বামী হিসেবে কোনো অভিযোগের সুযোগ দিবো না।

নীলের কথাতে আফজাল হোসেন স্বস্তির হাসি হাসলেন।
তিনি জানেন নীল নামের ছেলেটির কাছে তার মেয়ে সব থেকে বেশি ভালো থাকবে , সব থেকে নিরাপদে থাকবে।

পরি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সবাই বিদায় জানালো।সবার চোখের কোনেই পানি চিক চিক করছে,,,, এই বিদায় প্রতি টি মেয়ে কেই স্পর্শ করবে।
প্রতি টি মেয়ে ই তার বাবার রাজকন্যা থেকে অন্যের ঘরের রানী হতে যাবে।
কারো জীবনে রানী নামক স্থান আসবে তো কারো জীবনে সেই সৌভাগ্য আসবে না।
তবু ও বাবার ঘর ছেড়ে যেতেই হবে ।
_________________

পরি অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।
নীল পরির হাত টা নিজের হাতের সাথে মিশিয়ে বলল
– কেঁদো না পরি,,, আমার কষ্ট হয়।

পরি কে এক হাতে বুকে জড়িয়ে নীল বলল
– এমন ভাবে কাঁদলে চলে ?
একটু রেস্ট নেও পরি,,,,,,

পরি নীলের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে নিলো।
সারাদিনের ক্লান্ততা তার ওপর কান্না করাতে নীলের বুকেই পরি ঘুমিয়ে পড়ল।
নীল মুচকি হেসে পরি কে দু হাত জড়িয়ে নেয়।
এই মেয়েটা কে কখনো কাঁদতে দেবে না নীল,,, কখনো নাহহ ।

রাত দশটা বিশ মিনিটে গুলশানের কম্পার্টমেন্টের সামনে পৌছায় সবাই।
পরি অতলে ঘুমিয়ে আছে নীলের ইচ্ছে হয় না পরি কে জাগাতে ।
তাই কোলে করেই নীল পরি কে নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আছে তারপর কম্পার্টমেন্ট এ ঢুকে লিফ্ট এ সতেরো তলাতে চলে আসে।
ড্রয়িং রুমে আসতেই পরির ঘুম ভেঙে যায়।
আশে পাশে এতো মানুষ জনের মাঝে নিজেকে নীলের কোলে দেখে পরি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
নীল পরি কে নামিয়ে দেয় ,,,, পরি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
বেশ কিছু ফরমালিটিস পূরন করার পর পরি কে রুমে নেওয়ার জন্য দাঁড় করানো হয়।
পরি এক পা আগাতে অনিক সামনে পা দিয়ে দেয় ।
যার ফলে পরি সোজা গিয়ে পরে নীলের বুকে,,,,, পুরো সিনেমার মতো।
আর সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সুন্দর একটি ফটো তুলে নেয় ক্যামেরা ম্যান।
সমস্তটাই অনিক যে প্ল্যান করে করিয়েছে তা বুঝতে কারোই অসুবিধা হলো না।
এতো মানুষ জনের সামনে পরির ইচ্ছে হচ্ছিলো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে।
নীলের দিকে তাকাতেই নীল বলল
– অনিক কে দেখাচ্ছি মজা।

নীল তেড়ে অনিকের দিকে যায়।
আর অনিক ও ছুট লাগায়,,,,
করিডোরে এসে অনিক থেমে যায়।
অনিক হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
– দেখ ভাই কিল ঘুসি মারিস নাহহহ।

নীল অনিকের সামনে এসে অনিক কে চমকে দিয়ে বলল
– দূর শালা মারুম কেন,,, তরে তো চুম্মা দিতে মন চাইতেছে।
এই প্রথম একটা কাজের কাজ করছোস ,,,,,

অনিক তব্ধা খেয়ে যায়।
নীল কি বলছে কি ,,,,,
অনিক মুখ কুঁচকে বলল
– তাহলে আমার পেছনে এভাবে ছুটছিলি কেন ?

নীল – চুম্মা দিতে,,,,

– এহহহহ

নীল – এহহহ নয় হ্যাঁ।

তারপর দুজন ই অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে।
__________________

রাত প্রায় বারো টা,, পরি কে বাসর ঘরে বসানো হলো।
পরির এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে ।
বার বার নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে ,,,,,
মন উথাল পাথাল করছে।
দম নিতে ও কষ্ট হচ্ছে ,,,, মনে হচ্ছে শ্বাস রোধ হয়ে এখনি মারা যাবে।
নীল বন্ধুদের সাথে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো সাড়ে বারোটা বেজে যাওয়া তে সবাই নীল কে ঘরে পাঠিয়ে দিলো।
দরজা খোলার আওয়াজে পরি জড়োসড়ো হয়ে বসলো।বুকের ভেতর কেমন ধিম ধিম করছে। রঙিন আলোর সাথে কাঁচা ফুলের এক অদ্ভুত মোহনীয়তা কাজ করছে ।
নীল দরজা লক করে ধীর পায়ে বেডের দিকে আসতে থাকে।
নীল যতো এগোচ্ছে পরির বুক ধুকপুকানি ততো বেড়ে চলেছে।
নীল পরির পাশে এসে বসতেই পরির শ্বাস আটকে যাচ্ছিলো।
বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করলো।
নীরবতা ভেঙে নীল বলল
– পরি সারা দিন অনেক ধকল গেছে ফ্রেস হয়ে এসো।

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
বাথরুমের দিকে আগাতেই নীল বলল
– পরি আমি যদি জুয়েলারি গুলো খুলে দেই কোনো সমস্যা হবে ?

পরি মাথা ঝাঁকালো নীল মুচকি হেসে পরির হাত ধরে বেডে বসিয়ে দিলো।
এর আগে ও নীল পরির অনেক কাছাকাছি ছিলো কিন্তু আজ এইটুকু তেই পরির দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কেমন অদ্ভুত সব অনুভূতি হচ্ছে পরির ।

নীল সযত্নে পরির কান থেকে দুল খুলে দিলো।
গলার হাড় খোলার সময় নীলের হাত পরির গলাকে স্পর্শ করতেই পরি কেঁপে উঠলো।
অদ্ভূত ভাবে অঙ্গ জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল পরির।
নীল বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো।
ধীরে ধীরে সমস্ত গহনা খুলে দিলো।
নীলের হাত যতবার ই পরিকে স্পর্শ করছিল পরি ততো বার ই কেঁপে উঠছিলো।
নীল একটা শপিং ব্যাগ পরির হাতে দিয়ে বলল
– ফ্রেস হয়ে এসো ,,,
পরি শপিং ব্যাগ নিয়ে ওয়াসরুমে চলে আসলো।
প্রায় পঁচিশ মিনিট পর পরি ওয়াসরুম থেকে বের হলো।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পরি কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই নীল পেছন ঘুরে তাকালো।
পরির দিকে চোখ যেতেই নীলের চোখে ঘোর লেগে গেল।
নেশার মতো লাগছে পরি কে ,,,,, নীলের মনের অবাধ্য ইচ্ছে গুলো চরাও হতে লাগলো।

নীলের লাগামহীন চোখের চাহনি তে পরির অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।
নীলের দেওয়া ব্যাগ টা তে ছিল স্কাই ব্লু রঙের স্লিক শাড়ি।
শাড়ি টা স্লিক এর হওয়াতে শরীরের বেশ কিছু অংশ ফুটে উঠেছে।
পরি বার বার শাড়ি ঠিক করতে লাগলো।

নীলের অদ্ভুত চাহনি পরির মনের ভেতর ঝড় তুলে দিচ্ছে।
শরীর অস্বাভাবিক ভাবে উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলো।

নীল ধীর পায়ে পরির দিকে এগিয়ে আসলো।
পরির কাছে এসে নীল নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না।
নীল পরির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
পরির হাত খোঁপা করা চুল গুলো খুলে দিতেই বেয়ে নেমে ছড়িয়ে পড়লো পুরো পিঠ জুড়ে।
নীলের চোখে অসম্ভব পরি কে পাওয়ার নেশা।
পরি কে পেছন ঘুরিয়ে নিলো নীল।
পরির চুল গুলো সাইট করে পরির অর্ধ উন্মুক্ত পিঠে উষ্ণ ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
সঙ্গে সঙ্গে পরির শরীর অষাঢ় হয়ে গেল,,, নীলের ঠোঁটের উষ্ণতা পেয়ে পরির চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল ।
পরি পেছন দিয়ে নীলের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।
নীল উথাল পাথাল হয়ে পরির গলা তে চুমু দিতে লাগলো।
পরির মনে হচ্ছে পুরো শরীরে কেউ বিদ্যুত লাগিয়ে দিয়েছে।
নীল নেশাক্ত চোখে পরি কে দেখে যাচ্ছিলো।
নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই নীলের। উতাল পাথাল ভাবে পরি কে স্পর্শ করে যাচ্ছে নীল।
পরির কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে পরি কে জড়িয়ে ধরলো।
যার ফলে নীলের হাত পরির পেট কে স্পর্শ করলো।
পরি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
নীল কে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো।
নীলের অবাধ্য হাত জোড়া বার বার পরির স্পর্শ কাতর জায়গায় ছুঁইয়ে যাচ্ছে।
আর পরি আবেশে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।
নীল ঘোর লাগানো কন্ঠে পরি কে বলল
– পরি তুমি কি আমাতে হাড়াতে রাজি?
আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করতে রাজি ?
তোমাকে নিয়ে প্রেম সাগরের বুকে পাড়ি দিতে চাই আমি।
দেবে কি আমায় সেই সুযোগ?
হাড়িয়ে যেতে চাই তোমার ভালোবাসায়,,,,

নীলের কথাতে পরির হার্ট বিট বেড়ে গেলো।
লজ্জায় পরির গাল রাঙা হয়ে গেল,,,,,
নীল অধীর আগ্রহে সম্মতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

পরি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো।
নীল কে খামচে ধরে বলল
– আমি ও চাই,,,,,,

পরির সম্মতি পেয়ে নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
আজ আর কোনো বাঁধা নেই ।
যায়েজ সম্পর্কে দুজনেই দুজন কে আপন করে পেতে চাচ্ছে।
দুটি বিতৃষ্ণা মন বার বার নিজেদের তাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
নীল পরির চুলের ভেতর এক হাত দিয়ে দিলো।
অন্য হাত দিয়ে পরি কে জড়িয়ে পরির ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
পরি কেঁপে উঠে নীল কে সর্বশক্তি দিয়ে খামচে ধরলো।
দুজনেই ভালোবাসার স্বাদ নিতে থাকলো।
পরি কে কোলে করে বেডে শুইয়ে দিলো নীল।
দুজনের ভালোবাসা যায়েজ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে লাগলো।
প্রেম সমুদ্রে পাড়ি জমালো দুজনেই।
যার সাক্ষী হয়ে রইলো সুন্দর এ রাতের নক্ষত্ররা।
চারদিকে ছেয়ে গেলো মোহনীয় ভালোবাসার সুঘ্রান।

ফাতেমা তুজ
সমাপ্ত
💗

আমার পরবর্তী গল্প প্রেমাসক্তি। এতো দিন পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
গল্প কেমন হয়েছে এতো দিন কমেন্ট না করে থাকলে ও আজ কে কমেন্ট করে জানাবেন ।
সবার সুস্থতা কামনা করছি ,,,,, পূর্নতা পাক পৃথিবীর সমস্ত পবিএ ভালোবাসা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here