নীলাম্বরীর_প্রেমে পর্ব -৫

নীলাম্বরীর_প্রেমে পর্ব -৫
#Tuhina pakira

হাতে অয়েনমেন্ট লাগানোর পর জ্বালাটা একটু কমে আয়ুর। কিন্তু ওর হঠাৎই মনে হয় ও কিছু একটা ভুলছে। কিন্তু কী ভুলছে? সারা ঘর পাইচারি করতে করতে মনে পরলো কাল সকালে ওকে স্যারের কাছে পড়তে যেতে হবে। আর স্যার কালকে বাংলার কিছু চ্যাপ্টারের প্রশ্ন লিখতে দেবে। আয়ু ছুটে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে গেলো। বেশি নয় পাঁচটা প্রশ্ন মুখস্ত করতে হবে । যদিবা ওইগুলো ওর আগেই পড়া রয়েছে। কিন্তু পড়তে পড়তে আয়ু কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছে না। কেবলই বিকেলের কথা গুলো মনে পড়ছে। বুকের বাম পাশটা কেমন যেনো খালি খালি লাগছে। রবি ঠাকুরের ‘ কর্তার ভূত’ পড়তে পড়তে এখন যেনো ওর মাথাতেই ভূত উঠে নাচছে। আয়ু বই , খাতা সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

-” ধুর, এইভাবে পড়া হয়।”

আয়ু ঢকঢক করে একগ্লাস জল খেয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে ১-১০০ পিছন থেকে সামনের দিকে গুনতে লাগলো। প্রথমে একবার , তারপর দুইবার, তিনবার , চারবার গোনার পর আয়ুর মন যেনো শান্ত হলো। আয়ুর মতে এই মুহূর্তে ওকে কোনো কঠিন বই দিলেও ও তা পড়ে সুন্দর করে মুখস্থ করে ফেলবে। আয়ু এবার শান্তি মতো পড়তে লাগলো ।

একঘন্টা পরে আয়ুর হঠাৎ মনে হলো ওর ঘরে আশ্চর্য্য জনক কিছু হচ্ছে । কিন্তু কী ? আয়ু চারিদিকটা ভালোকরে দেখলো । মনে হলো কিছু আলো ওর মুখে এসে পড়ছে । আয়ু উঠে দাঁড়ালো । ঘরের লাইটটা অফ করে দিলো । কিছুক্ষণ পর ঘরের মধ্যে লাল আলো এসে পড়ছে । আয়ু চারিদিক ভালো করে দেখে বুঝলো বারান্দার দিকের জানালাটা থেকে এই আলো আসছে । আয়ু বুঝলো এই কাজ একমাত্র ওর প্রতিবেশীর । আয়ু বারান্দায় দরজাটা খুলতে গিয়েও থেমে গেলো । ওকে যেতে হবে আচমকা। যাতে স্পর্শ দা লুকোনোর সুযোগটা না পায়। কয়েক মিনিট পর লাল আলোর সাথে সবুজ আলোর রশ্মি দেখা গেলো। আয়ু বুঝতে পারলো অপর দিকের ব্যাক্তিটা একে ডিস্টার্ব করার সব পন্থাই ভেবে রেখেছে । আয়ু এবার একগাল হেসে ছুটে দরজা খুলে বারান্দায় চলে গেলো ।

স্পর্শ আচমকা আয়ুকে দেখে চমকে গেলো । ও বেচারা লুকোনোর সময় টুকু পেলো না । আয়ু হাত গুটিয়ে স্পর্শের দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো । ও যা ভেবেছিল তাই , স্পর্শ হাতে লেসার লাইট নিয়ে এতক্ষণ আয়ুকে ডিস্টার্ব করছিল।

-” এতো সুন্দর আইডিয়া তুমি কোথায় পেলে স্পর্শ দা ?

-” যেখানেই পাই তোর কি ? কখন ধরে ডাকছি ম্যাডামকে সাড়া দিতে কী কষ্ট হচ্ছিল ? ”

আয়ু কোমরে হাত রেখে বলল ,
-” কোথায় ডাকলে ? আমি কী কানে কালা যে শুনতে পাবো না । ”

স্পর্শ একটা ছোটো প্যাকিং এর বক্স আয়ুর দিকে ছুড়ে বললো ,

-” তুই তো কালাই । এটা নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর।”

স্পর্শের ছোড়া বক্সটা গিয়ে আয়ুর মাথায় লেগে ওর পায়ের কাছে পড়ে । আয়ু মাথায় হাত দিয়ে বললো ,
-” আউচ।”

-” উহু , ওতো লাগেনি । দেখ কি দিয়েছি । ”

স্পর্শকে ভেংচি কেটে আয়ু বক্সটা পায়ের কাছ থেকে তুলে খুলতে লাগলো । সেখানে ছিল একটা নুপুর ।

-” ওয়াও !, এটা আমার ?

-” তোকে যেহেতু দিয়েছি ওটা তোরই । নে এখন ওটা পড়ে নে । খবরদার ওটা কিন্তু খুলবি না পা থেকে । ”

আয়ু কিছু ভেবে বললো ,
-” কিন্তু স্কুলের মিস তো এর ঘুঙুরের শব্দ পেলেই আমাকে বকবে । ”

স্পর্শ গালে হাত দিয়ে বললো ,
– তাও তো । তবে কি করবি ? ”

আয়ু কিছুক্ষণ কিছু ভাবার পর বললো ,
-” হ্যাঁ , পায়ে মোজার ভিতরে নুপুরটা ঢুকিয়ে রাখবো তাহলেই আর শব্দ হবে না। ”

– ” বাহ্ , মাথায় বুদ্ধি আছে। এবার নুপুর টা পড়ে তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়ি চলে আয়। মা তোকে আমাকে ডেকে দিতে বললো । ”

আয়ু পায়ে নূপুর টা পড়তে পড়তে বললো ,
-” হঠাৎ মিমি ডাকছে কেনো ? ”

– ” কেনো আবার আজ সবাই মিলে আমাদের বাড়ি একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবে তাই । চলে আয় ভারি মজা হবে । ”

আয়ু নীচের দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বললো ,
-” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।”

-” কী রে কি করছিস?”

-” দেখোনা আরেক পায়ের নুপুর পাচ্ছিনা । বোধহয় এখানে কোথাও পড়ে গেছে । ”

স্পর্শ হেসে নিজের পকেট থেকে কিছু বের করে বললো ,
-” পাবি না পাবি না । কারণ আমি তোকে এক পায়ের নুপুরই দিয়েছি । আরেক পায়ের নুপুর আমার কাছে। ”

-” ও তোমার কাছে । দাও পড়বো।”

স্পর্শ নুপুর টা আবারও পকেটে পুরে বললো ,

– ” ওটি তো হবে না । যেটা তোকে দিলাম সেটা আপাতত তোর তবে পুরোটা না । আর এইটা আমার নীলাম্বরীর । পুরোপুরি নীলাম্বরীর । তোকে কেবল ওইটা আগলে রাখতে দিয়েছি। ”

আয়ুর মনটা নিমেষে খারাপ হয়ে গেলো। তবে স্পর্শ দা এটা ওর জন্যে আনেনি। এতক্ষণ আয়ুর হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো । স্পর্শ সেই দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।

-” তবে এটা আমাকে দিলে কেনো ? তোমার নীলাম্বরী কে দাও। ”

-” আরে তোকে বললাম না , নীলাম্বরী কেবল আমার হৃদয়ের । তার রাজত্ব কেবল আমার হৃদয়ের
অন্তঃস্থলের। কিন্তু সে আমার নিজের কেউ না। তাই তার জন্যে আমার জমানো ভালোবাসাটা আমি কিছুটা তোকে দিলাম। আর কিছুটা নিজের জন্যে রাখলাম। সময় মতো সেটা তোর থেকে আমি দায়িত্ত্ব সহকারে নিয়ে নেবো। ”

আয়ু মলিন হেসে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” যদি এটা নষ্ট হয়ে যায়?”

-” আমার বিশ্বাস এর কিছু হবে না। আর যদি হয় তোকে আমি দোষ দেবো না। ”

আয়ু আর কিছু বললো না। স্পর্শের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো । স্পর্শের ও কী হলো কে জানে ও তো আগে থেকেই আয়ুর চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । হয়তো ওর চোখের গভীরতা মাপার চেষ্টা করছে ।

-” কী রে স্পর্শ দা কী করছিস? ”

পিছন থেকে কারোর গলা শুনে দুজনের হুস ফিরল । স্পর্শ পিছনে তাকিয়ে দেখলো ওর পিসতুতো ভাই দিহান দাঁড়িয়ে।

আয়ু দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” কেমন আছিস ?”

দিহান একগাল হেসে আয়ুর বারান্দার দিকে তাকালো। ও তো ভাবতেই পারেনি আয়ু এইখানে।

-” আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

-” ওই আছি। তা কখন এলি? পিমনি আসেনি? ”

-” ওই একটু আগে। আর আমি একাই এসেছি। বাবা , মা আসতে পারেনি।”

ওদের কথার মাঝেই স্পর্শ দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো ,
-” কিছু বলবি?”

-” ও হ্যাঁ , মামীমা তোমাকে ডাকছে। এসো। আর আয়ু তুই ও চলে আয়। ”

আয়ু হেসে বলল ,
-” এই তো যাচ্ছি। ”

কথাটা বলেই আয়ু নিজের ঘরে চলে গেল । আর দিহান নীচে চলে গেলো। পড়ে রইলো কেবল স্পর্শ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে স্পর্শ বলে উঠলো ,

-” নীলাম্বরীর মলিন হাসি
আমি দেখতে ভালোবাসি । ”

– ” স্পর্শ তুই ও না , যার প্রেমে আবেশিত তুই , তার মলিন হাসি তোর ভালো লাগে । কেনো আনন্দের হাসি ভালো লাগতে নেই ? ”
নিজেকে নিজে করা প্রশ্নের উত্তরে স্পর্শ বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,
-” তার জীবনের হাসি, খুশি, আনন্দ ,দুঃখ, বেদনা সবটা নিয়েই আমি তাকে ভালোবাসি । ওই আকাশের নীলাম্বরীর নীলিমাকে যতটা ভালোবাসি তার হাজার গুন আমার হৃদয়ের নীলাম্বরী কে ভালোবাসি। ”

(চলবে )
{ বিঃ : ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here