কনফিউশন পর্ব ১৭

0
632

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ১৭

কাব্য সেই যে গেলো, এখনো আসেনি। তাকে ফোন করার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই রশ্নি কল করলো।
“হ্যালো ভাবী।”
“কতদূর গেলি?”
“বলতে পারছি না।”
“সাবধানে যাস।”
“হুম।”
“তুই ফিরে এসে আর একা থাকতে হবে না। তুই আসলেই আমি বাবুকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে যাবো।”
আরশি খুশি হয়ে বললো,
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। আর বাবুর জন্য একটা সুন্দর দেখে নাম রাখিস তো।”
“আচ্ছা।”
“রাখি, পরে আবার ফোন করবো।”
“শোনো ভাবী।”
“হ্যাঁ বল।”
“একটা অপছন্দের মানুষকে কি ভালোবাসা যায়?”
রশ্নি হেসে বললো,
“ভালোলাগা তাহলে ভালোবাসা হয়েই গেলো?”
“জানিনা, তবে ব্রেইন থেকে তাকে এক মূহুর্ত সরাতে পারছি না।”
“আমি সেই ভাগ্যবান মানুষটার ব্যাপারে জানবো কবে?”
“দেরি আছে।”
“অপেক্ষা যে সয়না সখি।”
“ভাবী আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাওনা।”
“সম্ভব রে বাবা সম্ভব। ব্যাপারটা আসলে এমন না যে মানুষটাকে পছন্দ নয়, হয়তো তার কোনো স্বভাব বা অভ্যাস অথবা বিহেভিয়ার তোর পছন্দ না। সেক্ষেত্রে ভালোবাসা তো আর আটকে রাখা যাবে না।”

কাব্য একটানা ৪ টা সিগারেট খেয়ে দেখে প্যাকেটে আর একটামাত্র সিগারেট আছে। সেটাও ধরিয়ে খালি প্যাকেট টা ফেলে দিলো। ঠিক তখনই আরশি ফোন করলো।
“হ্যালো।”
“আপনি কোথায় চলে গেলেন?”
“আছি আশেপাশেই।”
“কেবিনে আসুন।”
“কিছুক্ষণ পর আসি। স্মোক করেছি। এখন গেলে তোমার মাথাব্যথা হবে।”
আরশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কী করে জানলেন?”
“তিরা বলেছিল।”
আরশি চুপ। কাব্য বললো,
“কি করছো?”
“কিছু না।”
“সামনে একটা স্টেশনে ট্রেন থামবে। আমি নামবো, তোমার জন্য কিছু আনবো?”
“লাগবে না।”
“চিপস?”
“আছে।”
“চকলেট?”
“চকলেট খাই না।”
“জুস?”
“বোতলের জুসও খাইনা।”
“তাহলে কিছুই খাবে না?”
আরশি হেসে বললো,
“আমি যা খাই সবই আছে আমার কাছে।”
“ঠিকাছে। স্টেশন এসে গেছে, রাখছি।”
“আচ্ছা।”
কাব্য নেমে কতোগুলো চকলেট কিনলো। জীবনে কোনোদিন সিগারেট খেয়ে চকলেট খায়নি সে। কিন্তু এখন তো খেতেই হবে। নাহয় আরশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। ধুর হুট করে এতোগুলো সিগারেট খাওয়া উচিত হয়নি। হাতের আধখাওয়া সিগারেট টা ফেলে দিলো কাব্য। তারপর চকলেট মুখে দিয়ে ট্রেনে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলো, সে আরশির জন্য যা করেছে তা কখনো কারো জন্য করেনি, এটাই ধ্রুবসত্য। তাই আর ভাববে না এ ব্যাপারে। সব সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিলো, যা হবার হবে। বেশি ভাবতে গেলেই পাগল পাগল লাগে।

কাব্য আরো ঘন্টাখানিক ট্রেনের মধ্যে ঘুরেফিরে আরো কিছু চকলেট খেয়ে কেবিনে গেলো। দরজায় টোকা দেয়ার সাথে সাথেই কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। পরেরবার একটু জোরেই টোকা দিলো। এরপর আরশি এসে দরজা খুললো। আরশির চোখে ঘুম, চুলগুলো এতক্ষণ খোঁপা করা ছিলো এখন খোলা। কাব্য বললো,
“ঘুমিয়েছিলে?”
আরশি বললো,
“ঘুম আসছিলো, আপনার আসতে দেরি হবে শুনে দরজাটা লাগিয়ে একটু শুয়েছিলাম। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।”
“ধুর জানলে এখন আসতাম না। ঘুমের বারোটা বাজলো তোমার!”
“কিছু হবেনা।”
“আবার ঘুমোও নাহয়। ভোরে উঠেছো।”
“লাগবে না। আপনার ঘুম পাচ্ছে না?”
“আমার তো ঘুম আসলে ঘুমিয়ে নেবো।”
আরশি আর কিছু বললো না। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জানালায়। কাব্য মুগ্ধ চোখে দেখছিলো আরশির সদ্য ঘুম ভাঙা মুখ। আর ওই এলোচুলে আরশি যতটা অনাড়ম্বর ততোটাই সুন্দর! ভাগ্যিস এই সময়েই ফিরেছিলো কাব্য নাহয় সব মিস করে যেতো।
কাব্যর মনে হলো এই দৃশ্য সে বারবার দেখতে চায়। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে হুট করেই একটা ছবি তুলে ফেললো। আরশি চমকে তাকাতেই কাব্য বললো,
“সরি পারমিশন নিতে গেলে এতো সুন্দর ছবিটা পেতাম না।”
কাব্য ক্যামেরাটা এগিয়ে দিলো। আরশি ক্যামেরা হাতে নিলো না, দূর থেকেই ছবিটা দেখলো৷ দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো! আরশির এই লজ্জায় লাল হওয়াটা কাব্যর চোরাচোখ এড়ালো না। কাব্য জিজ্ঞেস করলো,
“সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছো?”
“হুম তবে সহনীয়।”
কাব্য হেসে ফেললো। তারপর আচমকাই জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা তুমি সবসময় এমন সাদা টাইপের কাপড় পরো কেন?”
“সাদা কোথায়? এটা তো লেমন কালার।”
নিজের গায়ের জামাটা দেখিয়ে আরশি বললো।
“এটা লাইট লেমন কালার, তোমাকে সবসময় সাদা অথবা হালকা আকাশী এইসব রঙের কাপড় পরতেই দেখি। কখনো লাল পরোনা?”
“না।”
“কালো?”
“না।”
“মেরুন, ডার্ক ব্লু অর বটল গ্রীন?”
“না।”
“গাঢ় কোনো রঙই পরোনা?”
“না।”
“কেন?”
আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“লজ্জা লাগে।”
কাব্য এতোটা অবাক হলো যে কথা বলতেই ভুলে গেলো। একটা অল্প বয়সী মেয়ের গাঢ় রঙ পরতে লজ্জা কেন লাগবে এটাই বুঝতে পারছিলো না সে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here